Skip to main content

Posts

Showing posts from December, 2015

আত্ম অনুভুতি ও আত্ম দর্শন

আত্ম অনুভুতি ও আত্ম দর্শন    শৈশব কৈশোর অতিক্রান্ত করে হরিচাঁদ যৌবনে পদার্পন করেছেন। তাই শৈশবে তাঁর মধ্যে যে বিদ্রোহী ও প্রতিবাদী চেতনার প্রকাশ পাওয়া গিয়েছিল, সেই চেতনার গভীরতা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে।        সংসার জীবন আজ তিনি অতিক্রম করতে চলেছেন। কারণ তাঁর দুই পুত্র ও তিন কন্যা  হয়েছে। যার মধ্যে গুরুচাঁদ সব চেয়ে বড়। অন্যান্য ভাইদের অনুরোধে আমভিটার বসবাস স্থল ছেড়ে দিয়ে ওড়াকান্দীর পোদ্দার বাড়িতে এসে বসবাস শুরু করেছেন। কিন্তু এখন তাঁর অন্তরের মধ্যে প্রায়ই কি যেন ভাবনা ঘুরপাক খায় নিরন্তর। যার জন্য তিনি উদাস হয়ে থাকেন। এই উদাস ভাবনা বা একাকিত্বে কিছু চিন্তা বা মন্থন করা শুরু হয়েছিল ছোট বেলা থেকে।     একবার তিনি শৈশবে তাঁদের বাড়ির পাশের বড় নিমগাছের নীচে চোখ বন্ধ করে ধ্যানে বসে ছিলেন।   শৈশবেতে সকলের চক্ষু দিয়ে ফাঁকি। বৃক্ষ তলে হরিচাঁদ বসিত একাকী।। ভ্রাতাসহ সাঙ্গপাঙ্গ করে যবে খেলা। হরিচাঁদ বসে থাকে নীরবে একেলা।। ধ্যানাসনে বসে থাকে মুদি অক্ষিদ্বয়। হৃদয়েতে হয় কত ভাবের উদয়।।                                                           ( হরিচাঁদ তত্ত্বামৃত পৃষ্ঠা নং 269) তি

লোকায়ত ইতিহাস থেকে সত্যের অনুসন্ধান

লোকায়ত ইতিহাস থেকে  সত্যের অনুসন্ধান     শৈবকাল থেকেই হরিচাঁদের চিন্তা-ভাবনা, ক্রিয়া-কর্ম, চলন-বলন সব কিছুই অন্যের থেকে  পৃথক মনে হ’ত। প্রায়ই মনে হ’ত তিনি যেন কোন গভীর ভাবনার মধ্যে ডুবে আছেন। বয়ষ্ক   লোকদের কাছে গিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করতেন । কিন্তু তিনি যেটা খুঁজছিলেন, তার অনুসন্ধান বেশীরভাগ লোকই দিতে পারতেন না। যদিও অতীতের অনেক ইতিহাস গল্পাকারে লুকিয়ে আছে মানুষের মধ্যে। তবুও তিনি খুঁজে ফেরেন তার আখাংকিত তথের সন্ধানে ।        গ্রাম্য বাংলায় একটা প্রবাদ মানুষের মুখে মুখে ঘুরে বেড়ায়। বিশেষ করে ছোট বেলায় বাচ্চারা খেলার ছলে কখনও কোন শাপ দেখলেই মারত। আর সেটা যদি মেটে শাপ হয় তাহলে তো আর  কোন কথাই নেই। কারণ এই মেটে শাপের কোন বিষ নেই। তাই এই শাপ মারার সময় সকলে মিলে গান করত- কলির বাওন মেটে শাপ।    যে না মারে তার হয় পাপ।। অর্থাৎ কলিকালের বামনরা হচ্ছে মেটে শাপের মত। কারণ এদের কোন বিষ নেই। এরা মানুষকে যে দেব-দেবীর ভয় দেখায়, আসলে সে সব মিথ্যা। ভন্ডামী। বাস্তবের সঙ্গে তার কোন সম্পর্ক নেই;  বুদ্ধিমান মানুষেরা এটা বুঝতে পারেন। এই কলির বামুনরা মেটে শাপের মতই নির্বিষ। তাই এদের দেখলেই মারা উচিত

মৃতপ্রায় বিশের জীবন দান।

মৃতপ্রায় বিশের জীবন দান। শৈশবে হরিচাঁদ তাঁর প্রিয় সাথী ব্রজনাথ, নাটু আর বিশ্বনাথের সঙ্গে খেলা করতেন। একদিন খেলতে খেলতে অনেক দেরী হয়েগিয়ছে, কিন্তু তবুও বিশ্বনাথকে খেলতে আসতে না দেখে নাটুর কাছে হরিচাঁদ জানতে চান বিশে (বিশ্বনাথ) এখনও পর্যন্ত কেন খেলতে এলোনা। তখন নাটু বলল,- বিশের হয়েছে রাত্রে বিসুচিকা ব্যাধি। মৃতপ্রায় সবে করিতেছে কাঁদাকাঁদি।। ( লীলামৃত, ঠাকুরনগর, প্রকাশ 2009, পৃষ্ঠা নং- 55) অর্থাৎ বিশ্বনাথের কলেরা বা পেট খারাপ হয়েছে। সে মরনাপন্ন অবস্থায় আছে। সবাই বিশের অকাল মৃত্যুর ঘনিয়ে আসার জন্য কান্নাকাটি করছে।       এই ঘটনা 1920 সাল এর কাছাকাছি সময়ে আমরা ধরে নিতে পারি। তখন গরীব লোকদের পুকুর অথবা নদীর জল পান করতে হ’ত। টিউবওয়েল হয়তঃ রাজা জমিদার বা এই ধরণের ধনী লোকদের বাড়িত থাকত। তাই সাধারণ মানুষের নদী বা পুকুরের জলই ভরসা ছিল। যার ফলে প্রায়ই কলেরা ডায়রিয়া বা এই ধরনের রোগ লেগেই থাকত। আর একবার যদি এই ধরনের অসুখ কারো হ’ত, তার মৃত্যু অনিবার্য ছিল। কারণ তখনকার সময়ে ভাল ডাক্তার পাওয়া ছিল প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। সেজন্যই নাটু বলল- বিশের মৃতপ্রায় অবস্থা।    নাটুকে করিয়া সঙ্গে ঠাকুর চলল

মরা গরু বাঁচানোর কাহিনি

বিবাহঃ ‘ বিবাহ করিল প্রভু কৈশোর সময়।’ (লীলামৃত, ১ম প্রকাশ, পৃষ্ঠা নং ৩৩)  হরিচাঁদকে বাল্যকালেই সেই সময়কার প্রথা মত তাঁর পিতা তাকে বিবাহ দিতে প্রয়োজন  মনে করেন। জিকাবাড়ী গ্রামের লোচন প্রামানিকের কন্যা শান্তির সঙ্গে বিবাহ ঠিক হয়। যথা সময়ে বিবাহ অনুষ্ঠিতও হয়। যশোমন্ত ঠাকুর তাঁর পাঁচ পুত্র সন্তানকে এইভাবে বিবাহ দেন। পরে তাঁর জীবনাবসান ঘটে। হরিচাঁদ কৈশোর থেকে ধীরে ধীরে যৌবনে পদার্পণ করে। আর ধীরে ধীরে তাঁর সামাজিক ক্রিয়া-কর্মও বৃদ্ধি পেতে থাকে। মরা গরু বাঁচানোর কাহিনি      হরিচাঁদ তাঁর প্রিয় সাথী ব্রজনাথ, বিশ্বনাথ আর নাটুকে নিয়ে ঘুরে রেড়াতেন। গ্রামে কারো কোন সমস্যা হ’লে তার সমাধানের চেষ্টা করতেন। কখনও সবাই মিলে গাছে চড়তেন। কখনও গরু চরাতে যেতেন। আর কখনও খোলা মাঠে গলা ছেড়ে দিয়ে গান করতেন। আর এই সব করতে করতে খিদে পেলে কখনও কখনও নিজেদের বাড়ী এসে খেয়ে যেতেন। কিন্তু অধিক সময় বিশের মা এঁদের আদর যত্ন করে যা পারতেন তাই খেতে দিতেন। কারণ হরিচাঁদের জন্যই বিশে মরতে মরতে বেঁচে গেছে।   এই যে বন্ধুদের মিলন এটা প্রতিদিনই চলত। কখনও কখনও এঁরা প্রয়োজনবোধে কৃষিকাজে হাত লাগাতেন। একত্রে কাজ করে অল্

আধুনিক ভাতের ধার্মিক সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক ক্রান্তির প্রণেতা হরিচাঁদ ঠাকুর এবং গুরুচাঁদ ঠাকুর।

আধুনিক ভাতের ধার্মিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক ক্রান্তির প্রণেতা হরিচাঁদ ঠাকুর এবং গুরুচাঁদ ঠাকুর। সামাজিক পৃষ্ঠ ভূমিঃ-      উনবিংশ তথা বিংশ শতাব্দীর ইতিহাস হচ্ছে আধুনিক তারত নির্মাণের ইতিহাস। এই দুই শতাব্দীতে ভারতবর্ষে যে যে সমাজ ক্রান্তিকারী, সমাজ চিন্তক এবং সমাজ সুধারক জন্ম নিয়েছেন, তাদের মধ্যে পতিত পাবন হরিচাঁদ ঠাকুর এবং তৎপুত্র গুরুচাঁদ ঠাকুরের নাম বিশেষ উল্লেখ যোগ্য। হাজার বছর ধরে মুঠিভরা (হাতের মুঠি) জনসংখ্যার ব্রাহ্মণরা সকল ভারতবাসীর উপর ধর্ম এবং সাংস্কৃতির নামে যে অনিয়ন্ত্রিত ক্ষমতা স্থাপন করেছিল; তার বিরুদ্ধে গত দুই শতাব্দী ধরে বিদ্রোহ করার মহান নেতাদের মধ্যে বাংলার প্রথম বিদ্রোহী ছিলেন- হরিচাঁদ ঠাকুর।     বাস্তবে 2500 বছর পূর্বে ব্রাহ্মণ ধর্ম এবং ব্রাহ্মণ্যবাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের পতাকা উঠিয়ে ছিলেন তথাতগ গৌতম বুদ্ধ। তিনি ব্রাহ্মণ্যবাদকে স্বমূলে নষ্ট করে নতুন মানবতাবাদী সংস্কৃতি তথা আচরণ মূলক ধম্মের স্থাপন করেছিলেন। কিন্তু ধীরে ধীরে বুদ্ধের ক্রান্তির সুফল কমতে থাকে আর 185 খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে ব্রাহ্মণ সেনাপতি পুশ্যমিত্র শুঙ্গ মৌর্য বংশের শেষ সম্রাট নাবালক বৃহদ্রথকে প্রকা