Skip to main content

আধুনিক ভাতের ধার্মিক সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক ক্রান্তির প্রণেতা হরিচাঁদ ঠাকুর এবং গুরুচাঁদ ঠাকুর।




আধুনিক ভাতের ধার্মিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক ক্রান্তির প্রণেতা হরিচাঁদ ঠাকুর এবং গুরুচাঁদ ঠাকুর।
সামাজিক পৃষ্ঠ ভূমিঃ-
     উনবিংশ তথা বিংশ শতাব্দীর ইতিহাস হচ্ছে আধুনিক তারত নির্মাণের ইতিহাস। এই দুই শতাব্দীতে ভারতবর্ষে যে যে সমাজ ক্রান্তিকারী, সমাজ চিন্তক এবং সমাজ সুধারক জন্ম নিয়েছেন, তাদের মধ্যে পতিত পাবন হরিচাঁদ ঠাকুর এবং তৎপুত্র গুরুচাঁদ ঠাকুরের নাম বিশেষ উল্লেখ যোগ্য। হাজার বছর ধরে মুঠিভরা (হাতের মুঠি) জনসংখ্যার ব্রাহ্মণরা সকল ভারতবাসীর উপর ধর্ম এবং সাংস্কৃতির নামে যে অনিয়ন্ত্রিত ক্ষমতা স্থাপন করেছিল; তার বিরুদ্ধে গত দুই শতাব্দী ধরে বিদ্রোহ করার মহান নেতাদের মধ্যে বাংলার প্রথম বিদ্রোহী ছিলেন- হরিচাঁদ ঠাকুর।
    বাস্তবে 2500 বছর পূর্বে ব্রাহ্মণ ধর্ম এবং ব্রাহ্মণ্যবাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের পতাকা উঠিয়ে ছিলেন তথাতগ গৌতম বুদ্ধ। তিনি ব্রাহ্মণ্যবাদকে স্বমূলে নষ্ট করে নতুন মানবতাবাদী সংস্কৃতি তথা আচরণ মূলক ধম্মের স্থাপন করেছিলেন। কিন্তু ধীরে ধীরে বুদ্ধের ক্রান্তির সুফল কমতে থাকে আর 185 খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে ব্রাহ্মণ সেনাপতি পুশ্যমিত্র শুঙ্গ মৌর্য বংশের শেষ সম্রাট নাবালক বৃহদ্রথকে প্রকাশ্য রাজ সভায় হত্যা করে সম্পূর্ণরূপে ব্রাহ্মণ্য ধর্মের স্থাপন করে।
     উনিশ শতাব্দীর প্রারম্ভে এই ব্রাহ্মণী ধর্ম এতটা বিকৃত রূপ ধারণ করেছিল যে, তার কল্পনা করলেও ভয়ে মন কেঁপে ওঠে। বুদ্ধ (563 B.C.) এবং হরিচাঁদের (11th March 1812) জন্মের সময়ের মাঝে ভারতে অনেক সাধু-মহামানব জন্ম গ্রহন করেছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় এটা হচ্ছে যে, এই সাধু-মহামানবেরা কখনও কখনও ব্রাহ্মণী ধর্মের বিরুদ্ধে আলোচনা করেছেন; কিন্তু ব্রাহ্মণ্যবাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের পতাকা হাতে নিয়ে সংঘর্ষ করার সাহস সামান্য কয়েক জনই দেখিয়েছেন। বাবাসাহেব আম্বেদকরের কথায় বলতে হয়,-“এই মহাত্মারা অনেক ধূলা উড়িয়েছেন, কিন্তু লোকের সামাজিক স্তরকে কখনও উঁচু করেননি।” তথাগত বুদ্ধের পরে প্রায় 25০০ বছর পরে মহারাষ্ট্রে যেমন মহাত্মা জ্যোতিরাও ফুলে (11th April 1827) এই সাহস দেখিয়েছেন, তেমনি একই সময়ে বাংলায় ধর্মহীন পতিত লোকদের ব্রাহ্মণ্যবাদী উৎপিড়ন থেকে উদ্ধার করার জন্য ঠাকুর হরিচাঁদ আন্দোলন শুরু করেছিলেন।
বেদকে অস্বীকার
হরিচাঁদ ঠাকুর প্রথমেই বেদ এবং তার নিয়মকে অস্বীকার করেন। তিনি বলেন-
কুকুরের উচ্ছিষ্ট প্রসাদ পেলেও খাই।
বেদবিধি শৌচাচার নাহি মানি তাই।।
                                                                         (লীলামৃত, ১ম সংস্করণ, পৃষ্ঠা নং-১০৪)
অর্থাৎ আমি কুকুরের উচ্ছিষ্ঠ বা এটো খাবার খেতেও রাজী আছি; কিন্তু বেদ এবং তার বিধানকে (নিয়ম-নীতি) মানতে রাজী নইতিনি বেদকে কুকুরের এটো খাবারের থেকেও নিকৃষ্ট মনে করেছেন। সে জন্যই তিনি আধুনিক ভারতের সামাজিক ক্রান্তিকারীদের মধ্যে স্থান প্রাপ্ত করেছেন।
পতিত পাবন ঠাকুর হরিঁচাদের জন্মের পূর্বে বাংলার পরিস্থিতঃ-
সেই সময় বাংলায় সাধারণ মানুষের  সামগ্রিক পরিস্থিতি ভীষণ ভয়াবহ ছিল। তার মধ্যে-
No.-1 সাউথ ইন্ডিয়ান ব্রাহ্মণ বল্লাল সেন, বাংলার ক্ষমতা দখল করার পর, পাল রাজাদের সময়ের বুদ্ধিষ্ট নমঃজাতির লোকের তার প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে মানতে অস্বীকার করলে এই নমঃজাতির লোকদের চন্ডাল বলে ঘোষণা করে দেয়।
No.-2 বৈষ্ণব ধর্মের প্রভাবে সমাজে ব্যাভিচার বেড়ে গিয়েছিল। আর ব্রাহ্মণরা গরীব লোকদের ধার্মিক শৃঙ্খলে বেঁধে রেখেছিল। মানুষের সঙ্গে পশুর থেকেও খারাপ ব্যবহার করত।
No.-3 জমিদার লোকেরা গরীব কিষাণ মজুরদের উপর অমানবিক অন্যায় অত্যাচার করত। এদের কাছে তখন মানবিকতা নামক শব্দ বলে কিছু ছিলনা।
জন্মঃ-
উপরে বর্ণিত এরকমই এক অন্যায়, অত্যাচার, অবিচার ও অমানবিক সংকুল পরিস্থির মধ্যে 1812 সালের 11ই মার্চ, বাংলার ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহাকুমার অজ পাড়াগায়ে সফলাডাঙ্গা  নামক গ্রামে পতিত পাবন ঠাকুর হরিচাঁদ জন্মগ্রহন করেন।
    তাঁর পিতার নাম যশোমন্ত (Jashomanta) ঠাকুর আর মাতার নাম অন্নপূর্ণাআর হরিচাঁদের ঠাকুরদার নাম ছিল মোচাই ঠাকুর
শ্রীমোচাই হোতে পেল ঠাকুর উপাধি।
গোড়াতে রহিল কিন্তু বিশ্বাস পদবী।।
                                                                           (হরিচাঁদ তত্ত্বামৃত পৃষ্ঠা নং-249)
অর্থাৎ হরিচাঁদ ঠাকুরের ঠাকুরদা শ্রীমোচাই এর সময় থেকে “ঠাকুর” পদবী শুরু হয়। আর এর পূর্বে বিশ্বাস পদবী ছিল  

 

Comments