Skip to main content

আজ (১৫ জুন) বাবা দিবস — ব্যক্তিগত কিছু কথা। লেখক- জগদীশচন্দ্র রায়

 


আজ (১৫ জুন) বাবা দিবস — ব্যক্তিগত কিছু কথা

লেখক- জগদীশচন্দ্র রায় 

আমাদের সংসারে ছিল চরম দারিদ্র্য। ছয় ভাইবোনের মধ্যে বড়দাকে আর্থিক সংকট সামলানোর জন্য ও বাকিদের পড়াশোনা চালিয়ে নিতে বাবা বাধ্য হয়ে বড়দাকে উপার্জনের কাজে লাগায়। সহায়-সম্পত্তি বলতে কিছুই ছিল না। দিন এনে দিন খাওয়া—এই ছিল বাস্তবতা

তবু বাবা সবসময় একটাই কথা বলতেন—
"
আমার কোনো জমিজমা বা সম্পত্তি নেই। তোমরাই আমার সম্পদ। তোমাদের কাছে একটাই অনুরোধ—তোমরা শিক্ষিত হও। যতই কষ্ট হোক, আমি সহ্য করব; কিন্তু তোমরা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হবে না।"

গুরুচাঁদ ঠাকুর বলতেন—
খাও বা না খাও, তাতে আমার দুঃখ নাই,
ছেলে-পিলে শিক্ষা দাও, এই আমি চাই।গুরুচাঁদ চরিত

গুরুচাঁদ ঠাকুরের এই বাণী যেন আমার মা, বাবা এবং বড়দার জীবনের মূলমন্ত্র হয়ে উঠেছিল। এই আদর্শকেই অনুসরণ করে তাঁরা আমাদের শিক্ষিত করেছেন

একটা ঘটনা আজও স্মরণে ভেসে ওঠে—
বাবা একদিন একটি বাড়িতে জোন (কৃষিশ্রমিক) হিসেবে কাজ করছিলেন। হঠাৎ শুনলেন, সেই বাড়ির ছোট ছেলে স্কুল পালিয়ে এসেছে। তার মা তাকে বকছে—
তুই লেখাপড়া না শিখে মূর্খ হয়ে থাকবি? এখনই স্কুলে যা!”
এই কথাগুলো বাবার হৃদয়ে গভীর ছাপ ফেলেছিল। বাড়ি ফিরে আমাদের এই ঘটনা শোনালেন। বললেন—
দেখো, লেখাপড়ার গুরুত্ব কতো। সকলেরই শিক্ষিত হওয়া দরকার

আরও একটা ঘটনা মনে পড়ে—
পাড়ার কিছু তথাকথিত ‘শিক্ষিত’ মানুষ বাবাকে বলত,
এই বয়সে এত কষ্ট করছো কেন? তোমার ছেলেরা তো বড় হয়েছে, তাদের লোকের বাড়িতে কাজ করতে পাঠাও।”
বাড়ি ফিরে বাবা আমাদের বলতেন,
আমি চাই না তোমরা অশিক্ষিত থেকে যাও। দেখো অমুকের কিছুই অভাব নেই, তবুও তার ছেলেরা কেউ লেখাপড়া শেখেনি—এটাই কি জীবন?”

আমি জানি না, কতটা ‘শিক্ষিত’ হতে পেরেছি। তবে এটুকু জানি—বাবার ওই কথাগুলো আজও আমার জীবনের পথপ্রদর্শক। তাঁর স্বপ্ন আর প্রেরণাকেই অবলম্বন করে আমরা এগিয়ে চলেছি শিক্ষার আলোয়

Comments