Skip to main content

গুরুচাঁদের শিক্ষা আন্দোলনের ফলভোগী বর্তমান প্রজন্ম কি জানে এই ফল কিভাবে হয়েছে? - লেখক - জগদীশচন্দ্র রায়


 গুরুচাঁদের শিক্ষা আন্দোলনের ফলভোগী বর্তমান প্রজন্ম কি জানে এই ফল কিভাবে হয়েছে?
লেখক- জগদীশচন্দ্র রায়
 (আমার লেখা বই 'গুরুচাঁদ ঠাকুরের শিক্ষা আন্দোলন' থেকে তুলে দিলাম) 

 আমরা দীর্ঘক্ষণ জানলাম গুরুচাঁদ ঠাকুর পিতৃ আজ্ঞা পালন করার জন্য অর্থাৎ শিক্ষা আন্দোলনকে প্রসারিত করার জন্য কিভাবে প্রাণপণ চেষ্টা করেছিলেন। উচ্চবর্ণীয়দের ষড়যন্ত্রের কাছেও তিনি হার মানেননি। কিন্তু দুঃখের বিষয় আজ একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে যারা এই  মহামানবের অবদানের সুফল ভোগ করে শিক্ষিত হয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন তারা কি কখনও পিছন ফিরে দেখেছেন, এই অসম্ভব কাজ কিভাবে সম্ভব হয়েছে>

    না এটা শুধু আমার মুখের কথা নয়। কবি মহানন্দ হালদারই এই প্রশগুলো তপশিলীদের  কাছে তুলে ধরেছেন। 

আজি যারা তপশীলী জাতি সাজিয়াছে।

শিক্ষা ছাড়া উন্নতি কি সম্ভব হয়েছে।।

শিক্ষার প্রেরণা তারা কোথা হতে পায়।

আদি-গুরু গুরুচাঁদ আদি-শিক্ষা দেয়।।   -গুরুচাঁদ চরিত- পৃঃ ১৪৫    

    আজ আপনারা যারা তফশিলী certificate বের করে তফশিলী হয়েছেন, তারা কখনও  ভেবে দেখেছেন কি শিক্ষা ছাড়া আপনাদের উন্নতি কখনও হয়েছে কি? আর এই শিক্ষা গ্রহণের প্রেরণার উৎস কি? তিনিই আপনাদের প্রথম শিক্ষা গুরু, গুরুচাঁদ ঠাকুর। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই শিক্ষা গুরুকে চিনেছেন বা জেনেছেন কি? আর যদি জেনে শুনে থাকেন, তাহলে তাঁর প্রতি তাঁর অবদানের প্রতি নুনতম শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেছেন কি?

    আপনারা তো জানেন গাছের উপরে তার ফলটি থাকে। যেটা খেতে অত্যন্ত সুস্বাদুযে ফুল গাছের ফুল দেখলে আপনার চোখ জুড়িয়ে যায়। কিন্তু কখনও ভেবে দেখেছেন কি ঐ ফলের গাছে ফল ফলানোর জন্য কি কি করতে হয়েছে?  যে ফুল দেখে আপনি মুগ্ধ হয়েছেন, সেই মুগ্ধতা  আনার পিছনের শ্রমকে কখনও অনুধাবন করেছেন কি?

    আপনারা একবার ভেবে দেখুন তো-

এক সময়ে যে সমাজ অন্ধকারে ডুবেছিল। বিশের কাছে যাদের কোন পরিচয় বলে কিছু ছিলনা।  মানুষ হয়েও পশুর মত জীবন অতিবাহিত করতে বাধ্য হয়েছিল। যাদের ধন-মান কিছুই ছিলনা। যাদের কোন সহায় সম্বল ছিলনা। যাদেরকে সর্বহারা বানিয়ে রেখে ছিল। যারা অন্তরের  জ্বালা নিয়ে বোবা হয়ে মুখ লুকিয়ে পড়ে থাকত। আজ তাদের জন্য ঘরে ঘরে কে সঞ্জিবনী সুধা এনে দিয়েছে? মৃত প্রায়কে মানুষ হয়ে বেঁচে থাকার সব অধিকার কে এনে দিয়েছে। যাদেরকে শিক্ষা দিয়ে জ্ঞান দিয়ে ধন-মান দিয়ে তেজদীপ্ত করে গড়ে তুলেছেন, তিনি কে? আজ এই বঙ্গদেশে যারা মান সম্মান পাচ্ছেন, রাজ ক্ষমতাও চালাচ্ছেন তারা কি কখনও এক বারের জন্য ভেবে দেখেছেন এসব কি করে সম্ভব হ’ল?

আসলে এ সব তারা জানবেন কি করে। তারা তো সব সুবিধা গ্রহণ করে নিজের জাত পরিচয় লুকিয়ে রেখে হীনমন্যতায় ভুগছেন। যদিও এরকম হওয়ার কথা তো ছিল নাকারণ,  

আত্মশক্তি-পরিচয় নহে হীন বল।

‘তপশীলী’ বলি যারা আছে এক দল।।

বিশ্বের সভায় যারা পেয়েছে আসন।

তারা কি করেছে মনে সে চিন্তা কখন?

 কে সে শক্তিধর যাঁর চরণ পরশে।

জাগিয়া উঠিল প্রাণ নবীন হরষে?

কোন আলোধারী ঘরে জ্বেলে দিল আলো?

কোন সে-দরদী দীনে এত বাসে ভালো?

সে-তরুর মূল কোথা গাঢ় অন্ধকারে।

প্রাণ-ক্ষয়ে রস এনে বাঁচায় শাখারে।।

ফুল হাসে ফল নাচে জুড়ায় নয়ন।

কে সে রস দেয় তাহা করে কি স্মরণ।।

তপশীল-জাতি মধ্যে যা’ কিছু হয়েছে।

হরিচাঁদ-কল্পবৃক্ষে সকলি ফলেছে।।   -গুরুচাঁদ চরিত- পৃঃ ১৪৫    

    যে তপশিলীরা বিশ্বের দরবারে উচ্চস্থান পেয়েছেন; তাদের অনেকেই আত্মপরিচয়কে গোপন রাখেন। ভিতরে ভিতরে এই পরিচয় লুকিয়ে রাখার জন্য হীনমন্যতায় ভোগেন। কিন্তু আত্মপরিচয় প্রকাশ করা তো হীন বল নয়। সেটা তো গর্বের বিষয়। আসলে এরা তো নিজেদের সঠিক  ইতিহাসই জানেন না। তারা কি কখনও চিন্তা করে দেখেছে যে, কোন শক্তিধরের পদস্পর্শে মৃতপ্রায় সমাজের মধ্যে সঞ্জিবনী প্রকাশ করল নতুন উদ্দমে? কোন উজ্জল জ্যোতিষ্ক এসে গভীর অজ্ঞানতা অশিক্ষার অন্ধকারকে দূর করে জ্ঞানের আলো শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিল?

যে কোন দীন দরদী, সে তার দেশবাসিকে এত গভীর ভালবাসে? সেটা কোন গাছ? যে গাছের ফল ফুল পেয়ে সবাই আনন্দিত; আর যার মূল লুকিয়ে আছে গহন অন্ধকারের মধ্যে? যে মূল নিজের প্রাণ ক্ষয় করে রস এনে দিয়ে শাখাকে বাঁচিয়ে রেখেছে।

সেই গাছের ফুলের শোভায় আর ফলের স্বাদে চোখ জুড়িয়ে যায় আর ফলের স্বাদে তৃপ্ত হওয়ার বেশিরভাগ লোকেরা জানেই না এত কিছু কে দিয়েছে? তবে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করুন বা না করুন জেনে নিনি, সেই জ্যোতিষ্ক, সেই পরম শক্তিধর, দেশ ও সমাজের জননী, সেই রস, ফল ও ফুল দানকারী বৃক্ষ সেই দীন দরিদ্রের কান্ডারী হচ্ছেন- হরিচাঁদ কল্পবৃক্ষহ্যা, তপশিলি জাতির মধ্যে যত ধরনের প্রগতি হয়েছে তার মূলে হচ্ছেন এই হরিচাঁদ নামক কল্পবৃক্ষ। আর সেই কল্পবৃক্ষের যে ফল ফলেছে সেই ফল বিতরন করেছেন সেই পরমপুরুষ গুরুচাঁদ ঠাকুর।

 কিন্তু দুঃখের বিষয়-

কেন হেন হল কেন জাগিয়েছে জাতি।

কে করেছে প্রাণদান জেগে দিবারাতি।।

আজ কেহ নাহি করে তাহার সন্ধান।

শুধু শুধু হল নাকি সবে মান্যবান?

সরল-সহজ সত্য তাই আজি বলি।

গুরুচাঁদ কৃপাগুণে হয়েছে সকলি।। -গুরুচাঁদ চরিত- পৃঃ ১৪৫/৪৬     

তপশিলী সমাজের মধ্যে এই যে, প্রগতি হয়েছে, সেই প্রগতির পিছনে কে নিজের জীবনকে বাজি রেখে সারাটা দিনতার সমাজকে জাগানোর জন্য নিরলস সংগ্রাম করেছেন, সেকথা কেউ আর জানতে চায়না। তারা ভাবতে চায়না এসব কি এমনি এমনি করে হয়ে গেলে? তাদের কাছে খুব সহজ সরল ভাষায় জানিয়ে দিতে চাই যে, গুরুচাঁদ ঠাকুরের অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্যই এত কিছু প্রগতি হয়েছে।

 


Comments