Skip to main content

লীলামৃত: মানব জীবনে উত্তোরণের সোপান লেখক- জগদীশচন্দ্র রায়

 


লীলামৃত: মানব জীবনে উত্তোরণের সোপান

লেখক- জগদীশচন্দ্র রায়

 

     যে যে মহামানব আমাদের পতিত পিড়িত নিষ্পেষিত সমাজের মানুষকে  সামাজিক, সাংস্কৃতিক, আর্থিক ও ধর্মীয় শৃঙ্খল থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য  জীবনকে বাজি রেখে প্রতিকূল সমাজ ব্যবস্থার  বিরুদ্ধে কঠোর সংগ্রাম করে আমাদের পশু থেকে মানুষের পর্যায়ে উন্নিত করেছেন সেই মহামানব  পতিত পাবন হরিচাঁদ ঠাকুর, গুরুচাঁদ ঠাকুর, মহাপ্রাণ যোগেন্দ্রনাথ মন্ডল, বাবা সাহেব আম্বেদকর এবং সর্বোপরি মহান দার্শনিক গৌতম বুদ্ধকে শ্রদ্ধা জানাই।  আমি  কখনো পাঠকগণকে  শ্রোতাদের মতো দেখতে চাইনা কারণ, শ্রোতা আর বুদ্ধিজীবি (অর্থাৎ বিচারধারায় প্রভাবিত)  মানুষের  মধ্যে পার্থক্য আছে। রাজহাসকে দুধ আর জল মিশিয়ে দিলে সে দুধটাকে চুষে খায়। আর জল পড়ে থাকে। এই প্রবাদ যদি সত্যি হয় বা না হয়, এর থেকে শিক্ষনীয় বিষয় হচ্ছে,   দুধ আর জলকে আলাদা করে বোঝার ক্ষমতাবানদের আমি এখানে বুদ্ধিজীবি বলছি। অর্থাৎ এখানে বৈদিকতায় মিশ্রিত জল থেকে যুক্তিসংগত দুধকে আলাদা করে নিয়ে সমাজ ও দেশের কাজে লাগাতে পারেন আর বৈদিকবাদকে হাসের ডানা ঝাপ্টার মতো নিমেশে দূর করতে পারেন তাঁরাই বুদ্ধিজীবী। তাই মহাকবি তারক সরকার লীলামৃত লিখতে গিয়ে বলেছেন-  

                                       শ্রোতাগণ হংসবৎ           দোষ ছাড়ি গুণ যত

                                                             দুগ্ধবৎ করুন গ্রহণ। 

                                         (-শ্রীশ্রীহরিলীলামৃত ১ম সংস্করণ, পৃ.৩৯)                                              

     লীলামৃত এমনই একটা গ্রন্থ যেটার মূল্য কিন্তু পয়সার মাধ্যমে নির্ণয় করা যায় না। কারণ এর মূল্য হচ্ছে অমূল্য। অর্থাৎ যার গুরুত্ব অপরিসীম। আজ থেকে ১০০ বছরেরও অধিক পূর্বে এই গ্রন্থটি  কবি তারক সরকার রচনা করেছিলেন বলেই একটা জাতির ইতিহাস, তার সামাজিক, সাংস্কৃতিক,  সর্বোপরি ধর্মীয় অবস্থাকে সকলে জানতে পারছি। আর হরিচাঁদ ঠাকুরের মতুয়াধর্ম ও দর্শনকে জানতে ও বুঝত পারছি। তাই এই গ্রন্থ মতুয়াদের কাছে  অমূল্য রতন স্বরূপ। মূল আলোচনায় প্রবেশের পূর্বে লীলামৃত সম্পর্কে আমার একটি কবিতা তুলে ধরছি।

 

*শতবর্ষে লীলামৃত*  

লীলামৃত; একটি যুগান্তকারী প্রতিবাদের প্রজ্জ্বলমান শব্দ

আজ তোমার সৃষ্টির শতবর্ষে, তোমায় স্বাগত

স্বাগত জানাই তোমার স্রষ্টা, মহামতি তারক সরকারকেও

তুমি তো নও শুধু একটা কাব্য,  

তুমি একটা বিপ্লব, একটা প্রচণ্ড প্রতিবাদ

তুমি নির্বাকের ভাষা, অত্যাচারীর দুঃস্বপ্ন

তোমার অভ্যন্তরে নিহীত আছে যে মহার্ঘ মণি-মুক্তা,

তাকে খুঁজতে হবে দুঃসাহসী ডুবুরীর মতো

রাজ হংসের মতো আবর্জনা নিংড়ে শুষে নিতে হবে শুধুই দুধটাকে

তাই পাঠককে হতে হবে বিচক্ষণ, বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী

তবেই উপলব্ধ হতে পারে তোমার প্রকৃত আকুতি 

লীলামৃত, তুমি হরিচাঁদ নামক প্রখর নক্ষত্রের জীবনালেখ্য 

তুমি তো একটা উজ্জ্বল জ্যোতিষ্কের তীব্র আলো

তোমার আলোর দ্যুতিতে দূরীভূত হবে অত্যাচারের কুটিলতা 

জেগে উঠবে নিপীড়িত সমাজ, সঠিক মতুয়া দর্শন’ এর নামান্তরে

সেই আলো ছড়িয়ে যাবে দিক হতে দিগন্তে  

তোমার অভ্যন্তরে নিহীত দ্বাদশ আজ্ঞা ও সপ্ত নিষেধাজ্ঞা

বহু কালের নিদ্রিত জাতির বিনিদ্র প্রহরী 

তোমাতে লিখিত শিক্ষার বাণী, নিয়ে আসবে আলোর বন্যা  

আজ এই চরম বিচ্ছিন্নতার দিনে তোমাকে আরো বেশি করে কাছে পেতে চাই

তুমিই হবে বঞ্চিতের একমাত্র মুক্তিদাতা 

তোমাকে অনুসরণ করলে ধুয়ে মুছে যাবে সকল বৈদিকতার শৃঙ্খল 

সেদিন তুমি শুধু জীবনী, ধর্ম, বিপ্লব, সাহিত্য গ্রন্থ বলেই শুধু নয়,

তুমি প্রতিষ্ঠিত হবে, মানব ধর্মের সোপান বলে 

তখন মুছে যাবে সমস্ত জাতি ব্যবস্থা

অজ্ঞানতার অন্ধকার পেরিয়ে শুরু হবে নব বুদ্ধের যুগ 

আর সেদিন তুমি শুধু হরিলীলামৃত রইবে না,

  তুমি হবে মানব ধর্মের প্রতীক

               ---  

      লিলামৃত যেমন পিছিয়ে রাখা সমাজের দর্পণ, তেমনি ব্যবস্থা চালানো বর্ণবাদীদের কাছে মৃত্যু বাণ স্বরুপ। যে মহামানবকে নিয়ে এই গ্রন্থ রচিত হয়েছে, তিনিও একদিকে যেমন বর্ণবাদীদের কাছে ব্রাত্য অন্যদিকে তাঁর এই সংগ্রামকে একটা জাতির মধ্যে সীমাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। তবে গ্রন্থকার মহাকবি তারক সরকার গ্রন্থের মধ্যে তাঁর সুকৌশলী লেখনির মাধ্যমে হরিচাঁদ ঠাকুরের ধর্ম- দর্শন ও সমাজ-দর্শনকে গড়ে তুলেছেন বিশ্বজনীনতার পর্যায়ে। আমাদেরকে তৎকালীন সমাজ  ব্যবস্থার প্রেক্ষাপট ও কবির দৈনন্দিন জীবনকে সামনে রেখে অগ্রসর হওয়া দরকার। কারণ, কোনো লেখক বা কবি তার ব্যক্তিগত জীবন ও ভাবনার ঊর্ধে নন। কিন্তু এই গ্রন্থে তিনি সেটাকেও অনেক ক্ষেত্রে অতিক্রম করতে পেরেছেন। যদিও সেটা বুঝতে হলে বা অনুধাবন করতে হলে পাঠককে অনেক গভীরে প্রবেশ করতে হবে। লেখনীর মধ্যে যে সব অসামঞ্জস্যপূর্ণতা চোখে পড়ছে সেটাকে দূরে সরিয়ে দিয়ে জাতি ও সমাজ জাগরণের উপাদানগুলোকে দুধের মতো তুলে নিতে হবে। তাহলে আর কোনো সমস্যা থাকবে না। লীলামৃতের  BETWEEN THE LINE AND BEHIND THE LINE কে বুঝতে চেষ্ঠা করতে হবে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমরা নিজেরাই পংকিলতা থেকে মুক্ত হতে পারিনি।  তাই দুধকে কিভাবে চুষে নিতে হবে সেটা বুঝিনা। কারণ, আমরা বৈদিকতার পংকিলতার নেশায় ডুবে এখনো বুদ হয়ে আছি। এর থেকে আমাদের মুক্তি পেতে হলে নিজেকেই চেষ্টা করতে হবে। তা না হলে ঘোলা জলে হাবু ডুবু খেতে থাকতে হবে। আর নিজের দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে পরিত্রাণের উপায় খুঁজতে হবে। তখন ঘোলা জলে মাছই ধরাই সার হবে। মনি-মুক্তা খুঁজে পাওয়া যাবে না।  

      লীলামৃতের মহাকবির প্রখর ও সুকৌশলী বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে একটি কথা বলব। তারপরে যে মহান পতিত উদ্ধার কর্তার জীবন, কর্ম ও তাঁর ধর্ম দর্শনকে কবি কিভাবে উদ্ভাসিত করে তুলেছেন তার কিছু আলোকপাত করব।    

 বন্দনাঃ লীলামৃত শুরু হয়েছে বন্দনা দিয়ে। এই বন্দনা কী? কেন করা হয়? কার বন্দনা?     অন্যান্য তথাকথিত ধর্মগ্রন্থের শুরুতে বিভিন্ন দেবদেবীর স্তুতি করা হয়েছে। সেইসব দেবদেবীর কাছে চাওয়া পাওয়ার বিভিন্ন আকুতি থাকে। আর লীলামৃতের বন্দনায় কোনো দেবদেবীর উল্লেখ বা চাওয়া পাওয়ার আকুতি তো দূরের কথা, প্রথাগত নত মস্তকে প্রণামও করা হয়নি। এখানে মানবের বন্দনা করা হয়েছে। মানবের জয় গান করা হয়েছে। আর এই মানব কিন্তু একজন নয়। এখানে সমষ্টি বা গোষ্ঠী শক্তির জয়গান করা হয়েছে।  

     একটা জিনিস লক্ষ্য করুন, এখানে পূজা বা প্রার্থনা বলা হয়নি। বন্দনা বলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আমরা যদি এই বন্দনার ব্যাখ্যা এরকম মনে করি তাহলে কেমন হয়-         

ধরুন, আমরা যদি এই বন্দনা স্থলে কোনো মূর্তি বা ফটো রেখে আগরবাতি জ্বালিয়ে ও ফুল দিয়ে সাজাই, মোমবাতিও জ্বালাই তার অর্থ কি আমরা এই ভাবে করতে পারি-   

    আমরা হাত জোড় করে মহামানবদের প্রতি কোনো প্রার্থনা করছি না। টাকে আমরা “বন্ধনা” বলছি। প্রার্থনার অর্থ কিছু চাওয়া (request), আর বন্দনার অর্থ, অভিবাদন করা। বন্দনা করে আমরা প্রতিজ্ঞা গ্রহ  করি। তাঁরা যেটা করেছেন ও বলেছেন, সেই বিষয়কে উপলব্ধি করার  জন্য চিন্তন-মনন করি।  বারবার সেই কথাগুলো উচ্চারণ করি, যাতে তাদের আদর্শ থেকে পথ ভ্রষ্ট না হই

     আবার আমরা যদি আগরবাতি জ্বালাই সেটা কিন্তু কোনো দেবতাকে প্রশন্ন করার জন্য নয়। আগরবাতি যেমন নিজে জ্বলে এবং সুগন্ধ বিতরণ করে; সেই রকম আমাদেরও কাজ হবে মানবিকতার সুগন্ধ বিতরণ করা। এই ভাবনার প্রতীক হচ্ছে আগরবাতি  

    মোমবাতি কিন্তু প্রদ্বীপ নয়, প্রদ্বীপে তেল ও সল্‌তে দেওয়া হয় আমরা মোমবাতি এই জন্য জ্বালাই যে, সেটা যেমন নিঃস্বার্থভাবে নিজে জ্বলে এবং আলো দেয়, বিশেষ কোন প্রকার ক্ষতি করে না;  তেমনি আমাদের জীবন যেন অন্য মানুষকে জাগাতে  সাহায্য করে, আমাদের দ্বারা অন্যের জ্ঞানের আলোর প্রকাশ ঘটে। এই উদ্দেশ্যে আমরা মোমবাতি প্রজ্বলন করি

    আমরা দেবতাকে প্রশন্ন করার জন্য ফুল অর্পণ করি না। তবে ফুল যেমন তার সল্পায়ুতে  মানুষের মনকে প্রফুল্লিত করে তোলে, সুগন্ধ বিতরণ করে, আনন্দ প্রদান করে। আর সময়ের অন্তরালে নষ্ট  হয়ে যায়; তেমনি আমাদের এই মানব জীবনও মানুষের উপকারের জন্য সমর্পিত হোক এই আশা করে আমরা ফুল দেই।  

আমরা তাঁদেরকে পূজা নয়, তাঁদের অসীম উপকারকে শ্রদ্ধা জানাই। এঁরা আমাদের কাছে মহামানব। আমাদের দেবতা নয়। আমরা তাঁদের বন্দনা করি, পূজা  বা প্রার্থনা করি না।   

আমরা যে বন্দনা করি, সেই বন্দনার অর্থ হচ্ছে- মহামানবদের উপকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করা। এখানে কোন মানত করা হয় না কিছু পাওয়ার আশায়। তাঁদের কাছে কিছু চাওয়া হয় না কোন সংকট থেকে মুক্তি লাভের আশায়। এখানে কোন যজ্ঞ করা হয় না। আর কোন জীবকে ক্রুরভাবে বলি দেওয়া হয় না কোন দেবতাকে প্রশন্ন করার জন্য। আমরা আমাদের মহামানবদের বন্দনা করি তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রদান করার জন্য। তাদের উপকার যেন ভুলে না যাই সেজন্য এবং তাদের আদর্শ অনুসরণ করে মানব কল্যানে যাতে নিজেকে নিয়োজিত রাখতে পারি সে জন্য।

 

সূক্ষ্ম সনাতন-  

সর্ব্ব ধর্ম্ম লঙ্ঘি এবে করিলেন স্থুল।

শুদ্ধ মানুষেতে আর্ত্তি এই হয় মূল।।

জীবে দয়া নামে রুচি মানুষেতে নিষ্ঠা।

ইহা ছাড়া আর যত সব ক্রিয়া ভ্রষ্টা।।

এই সূক্ষ্ম সনাতন ধর্ম্ম জানাইতে।

জনম লভিলা যশোমন্তের গৃহেতে।। -লীলামৃত  পৃ. ১১

     এখানে হরিচাঁদ ঠাকুর কী বোঝাতে চেয়েছেন? সমস্ত ধর্মকে লঙ্ঘন করে এসে তিনি নির্ণয় গ্রহণ করলেন যে, মানুষের প্রতি ভালবাসা হচ্ছে মূল। সব ধর্মের ঊর্ধে হচ্ছে মানব ধর্ম। সেটাই সবার সেরা ধর্ম।  বৈষ্ণব ধর্মগ্রন্থে আছে-

জীবে দয়া, নামে রুচি, বৈষ্ণব সেবন। 

ইহা ছাড়া আর সব ভ্রষ্ট জানো সনাতন।। (বৈষ্ণব গ্রন্থ)

এখানে গভীরভাবে লক্ষ করুন, শুধুমাত্র বিশেষ গোষ্ঠির সেবা করার কথা বলা হয়েছে। আর মহাকবি তারক সরকার লীলামৃতে বিশ্বের সমস্ত মানুষের প্রতি নিষ্ঠা রাখার কথা বলেছেন। আর এই জীবে দয়া, নামে রুচি ও মানুষেতে নিষ্ঠাকে সমস্ত ক্রিয়ার ঊর্ধে স্থান দিয়ে বাকি সব ক্রিয়া কর্মকে ভ্রষ্ট বলে উল্লেখ করেছেন। এবিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছি-  

এক-জীবে দয়াঃ- অর্থাৎ সমস্ত প্রাণী ও উদ্ভিদ জগতের প্রতি দয়াশীল হতে হবে। একটা গাছ লাগালে তাকে প্রত্যেক দিন জল দিতে হবে, তাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য। অর্থাৎ তাকে লালন পালন করতে হবে। প্রাণী জগতের দিন দুঃখীর প্রতি যত্নবান হতে হবে। তাদের দুঃখ মোচনের কাজে নিজেকে নিবৃত থাকতে হবে।

দ্বিতীয়- নামে রুচিঃ- এই নাম শব্দটি একটি বিশেষ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। ‘নাম’ মানে এখানে হরিনাম বা কৃষ্ণনাম নয়। এখানে নাম শব্দটির অর্থ হচ্ছে-বিজ্ঞান। মানে বিশেষ জ্ঞান। আর রুচি-মানে অনুরাগ অর্থাৎ একত্রে নামে রুচি কথাটির অর্থ হচ্ছে- বিজ্ঞানের প্রতি অনুরক্ত হওয়া। যে বিশেষ জ্ঞানকে ধারণ করে মানুষ অতি প্রাচীনকাল থেকে বর্তমান কালেও যাকিছু সহজ সুন্দর সেটাকে উপভোগ করতে পারছে। হরিচাঁদ ঠাকুর সেই জীবের প্রতি ভালবাসা, বিজ্ঞানের প্রতি অনুরাগী হতে বলেছেন।

 আর তৃতীয়- মানুষেতে নিষ্ঠা- অর্থাৎ মানুষের প্রতি ভালবাসা, বিশ্বাস রাখা। তাকে আপন করে নেওয়া। তার সঙ্গে কোন জাতি, ধর্ম বা অন্য কোনো প্রকারের ভেদাভেদ না করা।

আর এই তিনটি অমোঘ বাণী ব্যাতিরেকে সব কিছুকে তিনি ভ্রষ্ঠ বলে অভিহিত করেছেন। তাঁর এই ভাবনার মধ্যে কোন বিশেষ জাতির প্রতি নির্দেশ আছে কি? নাকি তিনি সমগ্র মানব জাতির প্রতি এই অমোঘবাণী তুলে ধরেছেন? এখানেই লীলামৃত অন্যান্য ধর্মগ্রন্থ থেকে পৃথক ও শ্রেষ্ঠতার স্থান গ্রহণ করেছে। আর মহাকবি তারক সরকারও শুধু হরিচাঁদ দর্শন বা লীলামৃতের শ্রেষ্ঠ স্থানে তুলে ধরেননি, তিনি নিজেও কুশলতার পরিচয় রেখেছেন। এই মানব কল্যাণতাকেই সূক্ষ্ম  সনতানরূপে তুলে ধরেছেন। কবি সূক্ষ্ম শব্দের ব্যবহার করে হরিচাঁদ ঠাকুরের সঠিক দর্শনের প্রকাশ করে বৈদিকতা থেকে পৃথক করেছেন। যদিও বর্তমানে বৈদিক ধর্মকেই সনাতন ধর্ম হিসাবে প্রচার করা হচ্ছে। যদিও এই সনাতন ধর্ম বলে জনগণের কাছে এসে যেটা প্রচার করা হচ্ছে, সেটা বাস্তবে বৈদিক ধর্ম বা ব্রাহ্মণ্য ধর্ম। এ বিষয়ে দেখতে পাই –SANATANA DHARMA means the Eternal Religion, the Ancient law, and it is based on the Vedas, ----This Religion has also been called the Aryan Religion, --- (তথ্য – SANATANA DHARMA an elementary text-book of  HINDU RELIGION AND ETHICS. page No. 1, published 1916)

আর এই বেদ সম্পর্কে লীলামৃতে আমরা দেখতে পাই-

 

কুকুরের উচ্ছিষ্ট প্রসাদ পেলে খাই

বেদ বিধি শৌচাচার নাহি মানি তাই।

                                                                         (লীলামৃত, ১ম সংস্করণ, পৃষ্ঠা নং-১০৪)

অর্থাৎ আমি কুকুরের উচ্ছিষ্ঠ বা এটো খাবার খেতেও রাজি আছি; কিন্তু বেদ এবং তার বিধানকে (নিয়ম-নীতি) মানতে রাজি নই তিনি বেদকে কুকুরের এটো খাবারের থেকেও নিকৃষ্ট মনে করেছেন। সে জন্যই তিনি আধুনিক ভারতের সামাজিক ক্রান্তিকারী ও নবজাগরণের পথিকৃত।  

 

আর একটা কথা ঠাকুর হরিচাঁদের এই অমোঘ বাণীর প্রায় ৭০ বছর পরে বিবেকানন্দ বলেছেন-

জীবে প্রেম করে যে জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর।

স্বামী বিবেকানন্দের কথা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে গেলেও হরিচাঁদের বাণীকে কেন বদ্ধ করে রাখা হয়েছে? কেন সে বাণী প্রচার পায়নি? এর গভিরে গিয়ে আমাদের ভাবতে হবে।

 

ধর্মশক্তিঃ-

    হরি-গুরুচাঁদ ধর্মহীন পতীতদের নতুন ধর্ম দিয়ে ছিলেন সংঘবদ্ধ হওয়ার জন্য। সেটা আন্দোলনের জন্য একটা সোপান বা হাতিয়ার মাত্র। তাঁরা ধর্ম বিশ্বাসের উপর দাঁড়াননি। মানুষকে জাগ্রত করার জন্য, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সাথে সাথে সামাজিক শিক্ষা দিয়ে মূল্যবোধ জাগানোর জন্য। সামাজিক বৈষম্য দূর করার জন্য তাঁরা ধর্মকে এক ধরনের ভাষা বা প্রকাশের মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন। তাই আমরা দেখতে পাই,  

                          ধর্ম্ম শক্তি বিনা জাতি জাগেনা কখন।।” গুরুচাঁদ চতির পৃঃ ৫২৯

কিন্তু অতি দুঃখের বিষয় হচ্ছে বেশিরভাগ মতুয়া ধর্ম-দর্শনের অনুরাগীরা ধর্মটাকে বৈদিক ঘরানায় আকড়ে ধরে আছে। তার থেকে এরা বাইরে আসারও চেষ্টা করছে না। যারফলে যাকিছু দেখা যাচ্ছে সেটা শুধু বাহ্যিকতা। অন্তর্নিহিত ভাবনার প্রকাশ বা প্রসার যৎ সামান্য।

 এর পর তিনি বলেছেন-

নীচ হয়ে করিব যে নীচের উদ্ধার।

অতি নিম্নে না নামিলে কিসের অবতার।।-শ্রীশ্রী হরিলীলামৃত পৃঃ ১৫ 

যে ব্রাহ্মণ্যবাদী বিষমতার ব্যবস্থা মানুষকে জন্মগত কারণে উচ্‌ নীচ্‌ বানিয়েছে। যে নীচ্‌ মানুষদের সমস্ত মানবিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে পশুর পর্যায়ে নামিয়ে রেখেছে; সেই নিপীড়িত মানুষদের উদ্ধার করার জন্য তো আমাকে নিচে নেমেই তাদের উদ্ধার করতে হবে। সেটা যদি করতে না পারা  যায়, তাহলে আর কিসের মানবতা? এখানে এই নিপীড়িতদের উদ্ধারের যে আর্তি সেটা কি শুধুমাত্র  জাতি বিশেষের জন্য? নাকি তিনি বিশ্বের সমগ্র বঞ্চিতদের নিপীড়িতদের উদ্ধারের জন্য আহবান জানিয়েছেন?

 গৃহস্থ ধর্মঃ

 সমস্ত মানুষের জীবন জীবিকা তার পরিবারকে কেন্দ্র করে। তাই ঠাকুর হরিচাঁদ পারিবারিক        জীবনে সুখে থাকার জন্য বলেছেন-

করিবে গৃহস্থধর্ম্ম লয়ে নিজ নারী। -শ্রীশ্রী হরিলীলামৃত পৃঃ নং ৮

অর্থাৎ সংসার জীবনে সুখে থাকার জন্য নিজের স্ত্রীকে নিয়েই গৃহধর্ম পালন করতে বলেছেন। আর তিনি বলেছেন-              পরনারী মাতৃতুল্য মিথ্যা নাহি কবে।  

                            পর দুঃখে দুঃখী সচ্চরিত্র সদা রবে।। -শ্রীশ্রী হরিলীলামৃত পৃঃ নং ৮

অর্থাৎ একদিকে তিনি যেমন বলেছেন- নিজের জীবন সঙ্গীনীকে নিয়ে সুখে সংসার করতে। আবার  অন্যদিকে সতর্ক করে দিয়েছেন যে, অন্য নারীদেরকে মাতৃ জ্ঞানে শ্রদ্ধা করতে এবং সর্বদা সত্য কথা বলতে এরপর তিনি আরো বলেছেন- নিজে যেমন মিথ্যা কথা বলবেনা, তেমনি চরিত্রের স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে। অর্থাৎ চরিত্রবান হতে হবে। আর অন্যের দুঃখকে নিজের দুঃখ মনে করে সেই দুঃখীর প্রতি উদার হয়ে ভালবাসা দিয়ে তার দুঃখ মোচনের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে।

বলুনতো এখানে এসব কথা কি কোন জাতি বিশেষের জন্য বলা হয়েছে? নাকি সকলের মঙ্গলের জন্য এসব কথা বলা হয়েছে? তাহলে মতুয়া ধর্মকে কেন শুধুমাত্র বিশেষ একটি জাতি বা গোষ্ঠির মধ্যে সীমাবদ্ধ করে রাখার চেষ্টা হচ্ছে?   

 কর্মই ধর্মঃ-

    হরিচাঁদ ঠাকুরের একটা বিখ্যাত বাণী হচ্ছে-

“হাতে কাম, মুখে নাম।” -শ্রীশ্রী হরিলীলামৃত পৃঃ নং ৮

এখানে হরিচাঁদ ঠাকুর কর্মহীন অসলসতাকে দূর করে কাজ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেনআর এই কাজ হতে হবে বাস্তব বা বিজ্ঞান সম্মত আমি আগেই বলেছি ‘নাম’ অর্থ বিজ্ঞান হিসাবে দেখানো হয়েছে। তাই কাজ করতে হবে। আর সেই কাজ হবে বিজ্ঞান ভিত্তিক। কোন অলীক, অযৌক্তিকতা নয়। সম্পূর্ণ বিজ্ঞান সম্মত হতে হবে।

    হরিচাঁদ ঠাকুর একজন মানুষকে প্রকৃত মানুষ হিসাবে গড়ে ওঠার জন্য বিভিন্ন বাণী দিয়ে গেছেন। তিনি সংসার জীবনকে সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছেন। আর মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্টতাকে প্রাধান্য দিয়েছেন। তাই তিনি বলেছেন-

যত যত তীর্থ আছে অবনী ভিতরে।

সত্যবাক্য সম কক্ষ হইতে না পারে।। -শ্রীশ্রী হরিলীলামৃত পৃঃ নং ৩২

আবার দখুন, তিনি সত্য কথার উপর কতটা গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি কী বলেছেন, সারা বিশ্বে যত তীর্থস্থান বা ধর্ম স্থান আছে, সেই তীর্থ স্থানের পবিত্রতা থেকে একজন সত্যবাদী অধিক উচ্চস্থানের অধিকারী।

আবার তিনি এই চরিত্র সম্পর্কে বলেছেন-

দেহের ইন্দ্রিয় বশ করেছে যে জন।

তার দরশনে সব তীর্থ দরশন।। -শ্রীশ্রী হরিলীলামৃত পৃঃ নং ৩২

অর্থাৎ আপনাকে সৎ, পবিত্র হওয়ার জন্য মনের কালিমা দূর করার জন্য তীর্থ ভ্রমনের দরকার নেই। তার থেকে যিনি ইন্দ্রিয় সংজমী, সৎ ব্যক্তি; তার সান্বিধ্য পেলে আরো বেশি উপকৃত হবেন।

 

ঈশ্বর বা ভগবানের ব্যাখ্যা- 

 আমরা জীবনের উদ্ধার কর্থা সম্পর্কে লীলামৃতে দেখতে পাই-

“যে যাহারে ভক্তি করে সে তার ঈশ্বর -শ্রীশ্রী হরিলীলামৃত পৃঃ নং ১

আর শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ চরিত-এ দেখতে পাই-

“বিশ্ব ভরে এই নীতি দেখি পরস্পর।

যে যারে উদ্ধার করে সে তার ঈশ্বর।।” শ্রীশ্রী গুরুচাঁদ চরিত- পৃঃ ৫৭২

এখানে ঈশ্বরের ব্যাখ্যাটাকে কিন্তু গতানুগতিকতার ঊর্ধে গিয়ে বাস্তবতাকে তুলে ধরে বলা হয়েছে  যে, যে যা’রে উদ্ধার করে সে তার ঈশ্বর। অর্থাৎ ঈশ্বর এখানে কোন অলীক কেউ নন। ঈশ্বর হচ্ছেন উদ্ধার কর্তা। আর এই উদ্ধার কর্তাকেই লোকে ভক্তি শ্রদ্ধা করেন।   

      তো এই নিপীড়িত বঞ্চিতদের উদ্ধার কর্তার কথা যদি বলতে হয়, তাহলে আমরা দেখতে পাই- মহামানব গৌতম বুদ্ধ, হরিচাঁদ ঠাকুর, গুরুচাঁদ ঠাকুর, মহাপ্রাণ যোগেন্দ্রনাথ মন্ডল, বাবা  সাহেব ড. ভীম রাও আম্বেদকর, পেরিয়ার, গুরু নানক, গুরু রবিদাস, মাতা সাবিত্রিবাই ফুলে, মহাত্মা জ্যোতিরাও ফুলে ইত্যাদি। আবার বিশ্বের অন্যান্য দেশেও এরকম দেখতে পাই- যেমন- মার্টিন লুথার, জন আব্রাহাম লিঙ্কন, নেলসন মেন্ডেলা ইত্যাদি।  

এই মহামানবেরা নিপীড়িত বঞ্চিত মানুষদের  অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করেছেন। তাই এই মহামানবেরা এই অর্থে ঈশ্বর বা উদ্ধার কর্থা।  

     হরিচাঁদ ঠাকুরের কাছে শ্রেষ্ঠ ধর্ম কী? তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি বলেছেন যে,

“ঠাকুর কহেন বাছা ধর্ম্ম কর্ম্ম সার।

সর্ব্ব ধর্ম্ম হ’তে শ্রেষ্ঠ পর উপকার।।” -শ্রীশ্রী হরিলীলামৃত পৃঃ নং ১৫০

দেখুন, কতবড় গভীর ভাবনা। পর উপকার করা হচ্ছে শ্রেষ্ঠ ধর্ম। আর বাকী সব ধর্ম-কর্ম হচ্ছে তুচ্ছ, অসার।

এরকম অসংখ্য বাণীকে আমরা দেখতে পাই লীলামৃতের মধ্যে। এবার আমরা আরো একটা বাস্তব কথাকে তুলে ধরছি।

“অঙ্গ ধৌত বস্ত্র ধৌত ছাপা জপমালা।

বহিরঙ্গে বাহ্য ক্রিয়া সব ধুলা খেলা।।

যত দিন নাহি ঘুচে চিত্ত অন্ধকার।

তত দিন শৌচাচার ডুবাডুবি সার।।” -শ্রীশ্রী হরিলীলামৃত পৃঃ নং ১০৬

ধর্মপ্রাণ মানুষেরা বহিরঙ্গের শুভ্রতার নিয়ে ক্রিয়া কর্ম করে। সব সময় কোনো আরাধ্যের নাম করে। কিন্তু হরিচাঁদ ঠাকুর কী বলেছেন? যতদিন চিত্ত বা মনের অন্ধকার বা গ্লানী দূর না হবে ততদিন যতই শৌচাচার পালন করুক না কেন সে সবে কোন কাজ হবে না।  

অর্থাৎ যতদিন সঠিক জ্ঞানের আলো ভিতরের অজ্ঞানতার অন্ধকারকে দূর করতে না পারবে ততদিন কোন কাজ হবে না। কাজ করতে লে সৎ, সত্যবাদী, ইন্দ্রিয় সংজমী ও পরোপকারী না হতে পারলে চিত্তের অন্ধকার দূর হবেনা। 

    হরিচাঁদ ঠাকুর তাঁর কর্ম ধারায় নারীকেও সমান অধিকার দিয়েছেন। কোন ভেদাভেদ না রেখে সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাবার কাজ করেছেন। যার জন্য আমরা দেখতে পাই নারী-পুরুষ উভয়ে মিলেমিশে এক সঙ্গে হরিচাঁদ ঠাকুরের বন্দনা করে।

 তিনি কর্ম বিমুখতাকে মোটেই পছন্দ করেন না। তিনি সকলকে কাজ করার জন্য অনুপ্রাণিত করতেন। এইভাবে বহু বাণী ও কর্ম আমরা দেখতে পাই। যেখানে কোন বিশেষ জাতি নয়, ধর্ম নয়, সমাজ নয়; তিনি সমগ্র বিশ্বের মানব জাতির কল্যাণের জন্য কাজ করে গেছেন।

 তিনি আবার ঘোষণা করেন-

কোথায় ব্রাহ্মণ দেখ কোথায় বৈষ্ণব।

 স্বার্থবশে অর্থলোভী যত ভণ্ড সব।।

(লীলামৃত, ঠাকুরনগর, ১০ম সংস্করণ পৃ. ৯৪)  

    এখানে প্রকৃত ব্রাহ্মণ বা বৈষ্ণবদের খুঁজতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, সংখ্যাটা নগণ্য। বাকী যাদের পাওয়া যাচ্ছে তারা প্রায় সবাই স্বার্থবশে অর্থলোভী ও ভণ্ড প্রকৃত স্বার্থহীন, পরপোপকারী ব্রাহ্মণ ও বৈষ্ণবদের উদ্দেশ্যে কিন্তু এই কথা বলা হয়নি। কিন্তু এই সব গুণ ব্যাতীত যাদের দেখা যায়, তারা প্রায় সকলেই স্বার্থের জন্য অর্থলোভী। তাই এই ধরণের ব্রাহ্মণ ও বৈষ্ণবদেরকে হরিচাঁদ ঠাকুর ভণ্ড বলে উল্লেখ করেছেন।

 

আত্মা সম্পর্কে লীলামৃতের ব্যাখ্যা-

     বৈদিক গ্রন্থে আমরা দেখতে পাই, আত্মা সম্পর্কে বলা হয়েছে- মৃত্যুর পরেও আত্মার অস্তিত্ব  থেকে যায়। আত্মাকে কোনোভাবেই নষ্ট করা যায় না। আত্মা আবার পূণর্জন্ম গ্রহণ করে। ইত্যাদি ইত্যাদি। আর লীলামৃতে ৭৩ পৃষ্ঠায় (ঠাকুর নগর প্রকাশ ২০০৯) দেখতে পাই-

“তুমি-স্থুল আমি-সূক্ষ্ম উভয়ে অভিন্ন।

                           দেহ আত্মা মোরা দোঁহে মূলে নহি ভিন্ন।।”

এখানে তুমি কে? তুমি হচ্ছে আমার এই শরীর বা দেহ। আর আমি হচ্ছে- আমার এই দেহের ভিতরের চেতনা শক্তি। যাকে আত্মা বলা হয়েছে।  দেহের আকার স্থুল বা বড় কিন্তু এর অভ্যন্তরের আত্মা হচ্ছে সূক্ষ্ম, তবে এই দুটো সত্ত্বা একত্রিত। একটা ভিন্ন অন্যের অবস্থান অসম্ভব। তাই-দেহ আত্মা মোরা দোঁহে মূলে নহি ভিন্ন।  শরীরের বা দেহের মৃত্যুর পরে আত্মার ও বিনাশ ঘটে। দেহের বাইরে আত্মার অস্থিত্ব বলে কিছু নেই।   

 

    লীলামৃতের অভ্যন্তরে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে আমরা সমাজ জাগরণের জন্য মানব কল্যাণের জন্য অনেক অমূল্য রতন খুঁজে পাই। তবে এর সঙ্গে অনেক কাকড়ও আছে। কিন্তু কবি তো প্রথমেই সে কথা স্বীকার করে দুধটাকেই গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থার উপর দাঁড়িয়ে হরিচাঁদ ঠাকুরের এই সংগ্রামী চেতনা জাগরণের সোপানকে কি আমরা তাঁর চিন্তা-চেতনায় প্রভাবিত হয়ে মানব কল্যাণের জন্য অগ্রসর হতে পারি না? না কি আমরা মহাপণ্ডিত সেজে এই গ্রন্থকে ‘নিকৃষ্ট ও বিকৃত’ বলে তুলে ধরব? আসলে ওটা লীলামৃতে নয়, আমাদের অতিপাণ্ডিত্যই ‘নিকৃষ্ট ও বিকৃত’ করে তুলেছে।

----------------------

 

 

 

 

 

 

Comments