Skip to main content

 


*মতুয়াধর্ম দর্শন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামী যোদ্ধা সোনার মানুষ গোপাল সাধু*

(৯ জুন এই মহামানবের মহাপ্রয়াণ দিবস উপলক্ষে শ্রদ্ধাঞ্জলি)

লেখক- জগদীশচন্দ্র রায়

প্রবাদ আছে কারো সাফল্যের পিছনে অন্যের অবদান না থাকলে সেটা সম্ভব হয়ে ওঠে না। আজ আমরা হরিচাঁদ ও গুরুচাঁদ ঠাকুর দ্বারা প্রবর্তিত মতুয়াধর্ম ও দর্শন নিয়ে যে চর্চা করছি, তার পিছনে যে মানুষটির সব থেকে বড় অবদান বলে আমি মনে করি; তিনি হচ্ছেন – গোপাল হালদার। যাকে আমরা ‘সোনার মানুষ গোপাল সাধু’ বলে জানি। তবে তাঁর অবদান সম্পর্কে আমরা জানার আগ্রহ প্রকাশ করি না বললেই চলে। তাঁর অবদানের বিশাল সমুদ্র থেকে সামান্যই এই লেখার মধ্যে তুলে ধরতে চেষ্টা করছি। কারণ, আজ এই মহান ত্যাগীর মহাপ্রয়াণ দিবস। তাঁকে অন্তরের শ্রদ্ধা জানাতে এই পুষ্পাঞ্জলি নিবেদন।

জন্মঃ- ১২৮০ বঙ্গাব্দের ২৪শে বৈশাখ গোপালচাঁদের জন্ম। ইং ১৮৭৩ সালের ৫ মে।

লক্ষ্মীখালী নামে গ্রাম খুলনা জিলায়।

বার শত আশি সালে আসি জন্ম লয়।

পিতা তাঁর শুদ্ধ শান্ত শ্রীরাম চরণ।

উপাধি হাওলাদার-ধনী একজন। (গুরুচাঁদ চরিত পৃ. ৩১৯)

 বাদাবনের জল হাওয়ায় শিশু গোপাল বড় হতে থাকে। প্রকৃতি গোপন অভিসারের মতো ক্ষণে ক্ষণে তার চিত্তবিশ্বকে দোলা দিয়ে যায়। ডাগর ডাগর চোখে তিনি তাকিয়ে থাকেন উদার অসীম নীলাকাশের দিকে। দূরে বাদাবন হাতছানি দিয়ে ডাকে। খালবিল, নদীর নোনাজলে কুল কুল সুরে তাঁর মনের ভুবনে কি যেন এক অজানা সুরের ঢেউ তোলে থেকে থেকে। নীলের আবির মাখানো আকাশের গ্রহ নক্ষত্র মিতি মিটি হেসে জানান দেয়, তোমাকে যে ব্যথিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে; দুঃখীজনের দুঃখ দু’হাতে মোচন করতে হবে; অসহায় অশিক্ষিত মানুষের ঘরে ঘরে সোনালী শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে হবে। শিশু গোপাল বুঝতে পারেন প্রকৃতি কিছু একটা বলতে চায় কিন্তু বুঝে উঠতে পারেন না।

গরুর পাল নিয়ে মাঠে যান গোপাল। কিন্তু বালক গোপালের মনের ভুবন জুড়ে চলে শুধু আলোড়ন; চলে প্রবল দ্বন্দ্ব। কোথায় ছিলাম? কোথায় এলাম? কি আমার করণীয়? এরকম হাজারো প্রশ্নের দ্বন্দ্ব সংঘাতে কখন যে ধ্যানমগ্ন হয়ে পড়েন তা নিজেও বুঝতে পারেন না।
এরকমভাবেই কেটে যায় ষোল বছর। তারপর ১২৯৬ বঙ্গাব্দের আষার মাসের শুভ বুধবারে সংসার জীবনে আবদ্ধ হলেন কাঞ্চন মালার সঙ্গে।’ (তথ্য- ‘সোনার মানুষ গোপাল সাধু’ পৃ. XiV)

 

গোপালের কর্ম-কাণ্ড দেখে পাষণ্ডদের হিংসার উদ্রেকঃ-

গোপালনের ভাব দেখি পাষণ্ডের রোষ।

দূরে দূরে তারা সবে খোঁজে তাঁর দোষ।।

দেব দেবী মানামানি কোন কিছু নাই।

‘বাব হরিচাঁদ’ বলে সদা ছাড়ে হাই।

জাতি ধর্ম্ম সব নাশ হবে কালে কালে।

সময় থাকিতে ঠাণ্ডা কর এই দলে।।” (গুরুচাঁদ চরিত পৃ. ৩২২)

গোপাল কোনো দেবদেবী মানতেন না। তাঁর একমাত্র আরাধ্য ছিলেন হরিচাঁদ ঠাকুর। তাই ক্ষণে ক্ষণে তিনি বাবা হরিচাঁদ বলে হাই তুলতেন। এসব দেখে পাষণ্ডরা মনে করে যে, যদি গোপালকে থামানো না যায় তাহলে তাদের জাতি ধর্ম নষ্ট হয়ে যাবে। তাই তাঁকে সময় থাকতে ঠাণ্ডা করতে হবে। এই কথা ভেবে পাষণ্ডরা এক জোট বেধে গোপালের নামে নালিশ জানায় নায়েবের কাছে।

পাষণ্ডেরা বলে গিয়ে নায়েবের ঠাঁই।

“গোপালের গৃহে আজ এসেছে গোঁসাই।।

উভয়েরে ডেকে আন এ কাছারী বাড়ী।

অপমান, জরিমানা করে দেও ছাড়ি।।

পেয়াদা পাঠাও তুমি তাদের গোচরে।

ইচ্ছাতে না আসে যদি তবে আন’ ধরে।।

দশ টাকা নজরানা রাখিলাম মোরা।

আর দশ টাকা দেব কাজ হ’লে সারা।।” (গুরুচাঁদ চরিত পৃ. ৩২২)

 

(১) লীলামৃত ছাপানোয় গোপালচাঁদের অবদান-

লীলামৃত ছাপানোর জন্য গুরুচাঁদ ঠাকুর ভক্তগণের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করেন। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় সামান্য টাকাই সংগৃহীত হয়। ঘটনাচক্রে গুরুচাঁদ ঠাকুর বলেন-

 শুন হে গোপাল আমি কহি তব ঠাঁই।

      আমার পিতার কীর্ত্তি ছাপাইতে চাই।। (গুরুচাঁদ. চরিত. পৃ.৩৩৪)

তখন গোপাল সাধু ঠাকুরের কাছে জানতে চান বই ছাপাতে কত টাকা লাগবে।
প্রভু বলে “টাকা চাই পঞ্চ শতাধিক। (পৃ. ঐ)

গোপাল এক বাক্যে সেই টাকা দিতে রাজি হয়ে যান। তখন গুরুচাঁদ অবাক হয়ে বলেন-

প্রভু বলে “টাকা দাও কিসের কারণ?”

গোপাল কহিছে “শুন পতিন পাবন।

    চিরকাল কত ভাবে ক্ষয় হ’ল ধন।

কিন্তু তার কোন চিহ্ন নাহিক এখন। (পৃ.৩৩৫)

    তাই যদি এই মহৎ কাজে আমার সামান্য অবদান থাকে তার জন্য নিজেকে ধন্য মনে করব। গুরুচাঁদ ঠাকুর গোপাল সাধুকে মাত্র এক সপ্তাহ সময় দেন এই টাকা সংগ্রহের জন্য। গোপাল, ঠাকুরের কাছে থেকে বিদায় নিয়ে ঘরে গিয়ে জীবন সঙ্গীনী কাঞ্চনমালাকে সব কথা জানান।
গোপালের কথা শুনে কাঞ্চনমালা বলেন-


আপনার কথা শুনে প্রাণে শান্তি এল।

আমি বলি ধান চা’ল যাহা কিছু আছে।

এই টাকা দেহ’ প্রভু সব-কিছু বেচে।।

ভিক্ষা করে খাই খা’ব তাতে নাই দুঃখ।

গ্রন্থ ছাপা হ’লে মনে পা’ব স্বর্গসুখ।” (গু. চ. ৩৩৬)

তারপর –

শেষাবধি ঠি হ’ল কিছু ধান চাল।

বিক্রয় করিয়া টাকা আনিবেন কাল।

এইভাবে এক করে টাকা দেড়শত।

বাকি টাকা পায় কোথা ভাবে অবিরত।।

হেনকালে এক ব্যক্তি এসে বাড়ি পরে’।

গরু বিক্রি আছে নাকি” তা’ জিজ্ঞাসা করে।।

 (সোনার মানুষ গোপাল সাধু পৃ. ৪৩১ )


তারপর গোয়ালের গাভী ও বলদ গুরু দুটোকেই বিক্রি করে দেন মাত্র সাড়ে তিনশত টাকায়। এইভাবে গোপাল সাধু ৫০০ টাকা জোগাড় করে ঠাকুরের দেওয়া সময় মতো নিয়ে পৌঁছান;

লীলামৃত গ্রন্থ ছাপানোর উদ্দেশ্যে।


শুধু ভক্তি করলেই ভক্ত হওয়া যায় না। বহিরঙ্গের বেশ-ভূষায় নিজের কিছু ফায়দা হলেও সেটা মহৎ উদ্দেশ্যকে পূর্ণ করে না। তার জন্য দরকার আত্মত্যাগ ও বলিদান- জাতি, সমাজ ও দেশের কল্যাণের জন্য। মতুয়াদের মধ্যে বর্তমানে সেটা নেই বললেই চলে।

(২) ঠাকুরনগর স্থাপনে গোপালচাঁদের অবদান-

আমরা জানি ঠাকুরনগরের স্থাপনের প্রধান ব্যক্তি হচ্ছেন পি.আর. ঠাকুর। কিন্তু আমরা এটা কি জানি, যে ব্যক্তির শ্রদ্ধার দান সে সময়ের ২৫০০০ হাজার টাকা এই কাজে মহত্ত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল? সে সময়ের উদ্বাস্তুদের মাথাগোজার স্থান করেদিয়েছিল?
উঃ ২৪ পরগণার ঠাকুর নগর প্রতিষ্ঠায় গোপাল সাধুর ২৫০০০ টাকা দান দস্তুর মতো উদ্বাস্তু দরদীমনের পরিচয়। এই ২৫০০০ টাকার একটা অংশে ঠাকুর বাড়ির পত্তন হয়। উদ্বাস্তু মানুষের মধ্যে যে সব জমি বন্টন করে তাদের স্থায়ী বসবাসের ব্যবস্থা করা হয়েছিল- তার নেপথ্যে এই ২৫০০০ টাকার অবদান কম নয়। (তথ্য-সোনার মানুষ গোপাল সাধু পৃ.XX )

(৩) মতুয়া ভক্ত কেমন হওয়া উচিত সে সম্পর্কে গোপাল সাধু ও কাঞ্চনবালার নিদর্শনঃ-

গুরুচাঁদ ঠাকুর লক্ষ্মীখালীতে বিভিন্ন ভক্তদের বাড়িতে যান। তিনি যেদিন গোপাল সাধু ও (গোপাল সাধুর জীবন সঙ্গী) কাঞ্চন মাতার বাড়িতে সকাল বেলা উপস্থিত হন; সেদিন ছিল কালীপূজার দিন। তাই, ঠাকুর বলেন-


   মোর মনে এই ইচ্ছা হয়েছে গোপাল।

আয়োজন কর তাই সকাল সকাল।।

আমরাও কালীপূজা করিব আজিকে।

আমাদের পূজা মাতা নিবেন পুলকে।।”

 (শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ চরিত পৃঃ ৫২৬)

ঠাকুরের কথা শুনে সকলে খুব আনন্দ পায়। কিন্তু –

কাঞ্চন জননী তা’তে তুলিলেন দ্বন্দ্ব।

মাতা কয় “এই কার্য মনে নাহি লয়।।

মতো’ বাড়ী অন্য পূজা কবে কোথা’ হয়?” (পৃঃ ঐ)

তারপর মাতা কাঞ্চনআরো বলেন-

কিন্তু কালীপূজা মোরা কিছুতে না করি।

আমরা পুজিব মাত্র গুরুচাঁদ হরি।।”

জননীর কথা শুনে দ্বিগুণ আনন্দ।

কাটিলা জননী তবে ভক্ত-মন-সন্দ।। (ঐ পৃঃ ৫২৭)

একটা বিষয় পাঠকগণ লক্ষ্য করুন, কবির বর্ণনানুসারে আমরা দেখতে পাচ্ছি- গুরুচাঁদ ঠাকুর কালীপূজা করার নির্দেশ দিলে একমাত্র মাতা কাঞ্চন জানাচ্ছেন,- “একথা আমি মেনে নিতে পারছিনা। মতুয়াদের বাড়িতে আবার কোন দিন অন্য পূজা হয়েছে নাকি?” তাই তিনি বলেন, যে, “কালীপূজা আমরা কিছুতেই করব না। আমরা শুধু পূজা করব হরিচাঁদ ও গুরুচাঁদ ঠাকুরকে।”আসলে ঠাকুর এখানে ভক্তের মনের দৃঢ়তার পরীক্ষা করলেন। সেটা হচ্ছে- ভক্ত যে ঠাকুরের অনৈতিক কথার প্রতি প্রশ্ন তোলার সাহস দেখাতে পারেন তার পরীক্ষা। কাঞ্চন মাতার এই যুক্তি শুনে সকলে দ্বিগুণ আনন্দ করে। আর ভক্তদের মনের সন্দেহ দূর হয়।
এখানে দুটো বৈপরিত্য ঘটছে। গুরুচাঁদ ঠাকুর বললেন কালীপূজা করতে। আর কাঞ্চন মাতা বললেন- সেটা কিছুতেই করা সম্ভব নয়। এটা মতুয়াদের বাড়িতে হয়না। মতুয়ারা শুধু হরি-গুরুচাঁদের পূজা করে।


তাহলে কি আমরা এটা ধরে নেব যে, গুরুচাঁদ ঠাকুর যে কালীপূজা করতে বলছেন আসলে সেটা কালীপূজাই ছিল? আসলে সেটা কালীপূজা ছিল না। তিনি ভক্তদেরকে পরীক্ষা করছেন মতুয়া ধর্ম দর্শনের প্রতি তাদের আস্থা কতটা গভীর। দ্বিতীয় আর একটি কথাও আমরা ভাবতে পারি সেটা হচ্ছে, আমরা কোনো দেব-দেবীর পূজার সময় যদি বলি- ‘মতুয়াদের এ সব করা ঠিক নয়।’ তখন কেউ কেউ বলেন, ‘তাহলে এর কিছু বিকল্প দরকার। বিকল্প না পেলেতো মানুষ ঐ দেব-দেবী বা বৈদিকবাদী আকর্ষণে আকৃষ্ট হবে।’ তাহলে আমরা ভাবতে পারি না কি, গুরুচাঁদ ঠাকুর কালীপূজার দিনে বিকল্প ব্যবস্থা করলেন?

ঠাকুর উৎসবের প্রচলনঃ-

মাতা কাঞ্চনের পূজা সমাপ্ত হলে গুরুচাঁদ ঠাকুর গোপাল সাধুকে ডেকে বলেন-
এই পূজা ক’রো তুমি প্রত্যেক বছরে।”

তদবধি লক্ষ্মীখালী কালীপূজা দিনে।

 ঠাকুর উৎসব” করে মিলি ভক্তগণে।। (ঐ পৃঃ ৫২৮)

আমরা কি দেখতে পাচ্ছি? কালীপূজার দিনে এইভাবে এক মহাজাগরণী উৎসব হয়। যে উসবের নাম “ঠাকুর উৎসব”। যেটা করতে গুরুচাঁদ ঠাকুর নিজে নির্দেশ দিয়েছেন। আর সেই থেকে কালীপূজার দিনে এই “ঠাকুর উৎসব” হয়ে আসছে।

(৪) বিধবা বিবাহে গোপাল সাধুর অবদানঃ-

চণ্ডাল গালি মোচনের জন্য মীড সাহেবের পরামর্শ মতো গুরুচাঁদ ঠাকুর বারুণীর সময়ে ভক্তগণকে নির্দেশ দেন গ্রামে ফিরে গিয়ে বিধবাদের বিবাহ দেওয়ার জন্য। এ কাজে অনেকেই ইতস্তত করেন। কিন্তু গোপাল সাধু ঠাকুরের এই আজ্ঞাকে মাথা পেতে গ্রহণ করেন। তাই –

গোপালের মত নিয়া শ্রীনাথ করিল বিয়া

আর বিয়া করে কতজন।

ফরিদপুর, খুলনা বরিশাল এক থানা

ত্রিশ জনে বিবাহ করিল। (গুরুচাঁদ চরিত –পৃ. ২৫৪)

এই বিধবাবিবাহ কাজ সম্পন্ন করে দেবীচাঁদকে সঙ্গে নিয়ে গোপাল সাধু ওড়াকান্দী যান। দেবীচাঁদ ঠাকুরকে বলেন-

আপনার আজ্ঞা পেয়ে শীঘ্র নিজ দেশে গিয়ে

বিয়া দিল সকলের আগে।।” (গুরুচাঁদ চরিত –পৃ. ২৫৪)


গোপাল অবদানের তুলনা শুধু তাঁর সঙ্গেই চলে। তাঁর অবদানের সামান্য অংশই এখানে তুলে ধরলাম। এই কির্তীমান মহামানবের ১৩৫৩ সালের ২৬শে জৈষ্ঠ। ১৯৫৬ ৯ জুন। ৮৩ বছর বয়য়ে মহাপ্রায়াণ ঘটে।

ভক্তদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে শ্রীশ্রী গোপালচাঁদ বললেন:-


(সৌজন্যে- শ্রীশ্রী গোপালচাঁদ চরিত্র সুধা। লেখক_ শ্রী শ্রীকান্ত ঠাকুর।


সম্পদনায়- ডাঃ সুধাংশু শেখর মালাকার, পৃষ্ঠাসংখ্যা-৫২৬-৫৩০)

প্রশ্ন : হরিনাম করেন, ভাল কথা, কিন্তু মতুয়ারা উন্মত্তের মতো লাফালাফি করে কেন?
উত্তর : আপনারা ম’তোগে ছন্দময় নৃত্যকে কন্ লাফলাফি? কিন্তু অ’য়ের (ওর) এট্টা কারণ আছে
পৃঃ ১৯০


এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির মূল ধারাকে মাথায় রাখে’ ম’তোরা ঐ ভাবে হরিনামে হুংকার দিয়ে ঊর্ধ্ববাহু নৃত্য করে। বাজনার তালে তালে ম’তোরা যে ছন্দে নাচানাচি করে ওতে শরীরে ব্যাম্ (ব্যায়াম) হয়। হাড়ের ব্যাম্, রক্তের ব্যাম্, স্নায়ুতান্ত্রিক ব্যাম্, কি না হয় ওতে! ঐ ভাবে যে করবে, তাঁর শরীর-মন ভাল হবেই এবং ব্যারাম-পীড়া ধারে ঘেঁষ্‌তি পারবে না। স্বয়ং মহাদেবও ঐ নাচ কত্তেন। আমি বলি ভাই, একবার করে দেখেন, হাতে হাতে ফল পাবেন।


প্রশ্ন : আপনি রোগ ব্যাধিতে যে ব্যবস্থা দেন, ডাক্তারী মতে তো ঐ রোগ আরো বেড়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু আপনি ব্যবস্থা দিলে তা নিরাময় হয়। এটা কি আপনার ঐশ্বরিক ক্ষমতাবলে? না দ্রব্যগুণে?
উত্তর : বিষে বিষ ক্ষয়। কেন ডাক্তারবাবুরাও তো জানে, যে বিষে শরীর অসুস্থ হয়, শরীর থিকে তা তাড়াতি হ’লি, ঐ রকম আর একটা বিষ লাগে। সেই রকম দ্রব্য নির্বাচনটা ঠিক্‌ঠাক্‌ হ’লিই কাজ হয়। এতে অলৌকিকের কি আছে? তবে সেই সঙ্গে হরিনামের বিধান থাকে। হরিনাম ভিন্ন মনের জোর বাড়াবার কোন পথ নেই। আর মনের জোর বাড়লি রোগ প্রতিরোধের শক্তিও বা’ড়ে যায়।
প্রশ্ন : মতুয়া ধর্মের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য কি ?


উত্তর : উদ্দেশ্য তো পরিষ্কার - যে দেশে কতিপয় উচ্চবর্ণের লোকেরা অনুন্নতদের পায়ের তলায় রাখিচে, সেই অবস্থা থেকে দলিত মানুষকে মুক্ত করাই উদ্দেশ্য। তা’গের আত্ম উন্নয়নের পথ করে দেওয়াই মতুয়া আন্দোলনের লক্ষ্য।


প্রশ্ন : মতুয়াদের কাজ কি?


পৃঃ ১৯২


উত্তর : হরিনামের প্রেম প্লাবনে নিজে ভেসে সবাইকে ভাসা’য়ে (ভাসিয়ে) নিয়ে যাওয়া। হরিচাঁদের পতাকাতলে সবাইকে জড়ো করা। দেশে শান্তি ও ঐক্য গড়ে তোলা।


প্রশ্ন : ফোঁটা কাটা, নামাবলি, ভেকধারী, জটাধারী, চুল-দাড়ি, করঙ্গমালা, যাগ-যজ্ঞ, পূজা-পার্বণ, আচার-অনুষ্ঠান এই সব সংস্কার কি নিছক বন্ধন নয়?


উত্তর : এ সব ধর্মরাজ্যে ঢোকবার ব্যাকরণ। কেউ বলে বহিরাবরণ। এই সব বিধানের বন্ধন পার হ’য়ে তাঁর কাছে পৌচুতি হবে। কেবল তিনিই রসস্বরূপ। ঠাকুর (শ্রীশ্রী গুরুচাঁদ) বলতেন,
পৃঃ ১৯৪ ....“হরিনামের রস খাও। হাতে কাম, মুখি নাম, এই ভাবে চল।”


প্রশ্ন : লোকে বলে মতুয়া ধর্ম শুধু নমঃশূদ্রদের জন্য, এটা কি ঠিক?
উত্তর : তা কেন? কত কামার, কুমোর, ধোপা, নাপিত, তেলি, মালি এই মতে আছে। সমস্ত অনুন্নত মানুষজনের জন্যিই তো মতুয়া আন্দোলন। তবে নমঃশূদ্রগো সংখ্যা বেশি। অনেক কায়েত বামুনরাও মতুয়া অইচে। মতুয়া ধর্মে কোন জাতবিচার নেই। হরিনামে যে পাগল হ’তি চাবে, তাঁকে এই দলে আসতি হবে। এটা হ’ল হরিনামে পাগল-হওয়া দল। আমাগো ঠাকুর মন্দির হল অচ্ছ্যুত জাতির জন্যি।

________

 

Comments