Skip to main content

ঠাকুর উৎসব ও দীপদান উৎসব কী?


ঠাকুর উৎসব ও দীপদান উৎসব

“ঠাকুর উৎসব” “দীপদান উৎসব” উপলক্ষে সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই।

     পুরানো ইতিহাসকে যতই পরিবর্তন করা হোক না কেন তার চিহ্ন থেকে যায়। যেমন বলা হয় – নদী মরে গেলেও তার রেখা থেকে যায়। তেমনই আমরা দেখতে পাই – বাংলায় কালী পূজার দিন যেটাকে অন্যত্র দীপাবলির দিন বলা হয়। আর মতুয়া বিচারধারায় এটাকে “ঠাকুর উৎসব” বলা হয়। যার প্রবর্তন করেন গুরুচাঁদ ঠাকুর ১৯০৮ সালের ২৫ অক্টোবর।

(ভিডিওটি   দেখুন)https://www.youtube.com/watch?v=gMj3jeYozyU&t=37s

 এই দিন  সাধারণত কার্ত্তিক অমাবশ্যার দিন। যে দিনে ঘরে ঘরে প্রদীপ জ্বালানো হয়। হ্যাঁ, এই প্রদীপ জ্বালানোই ইতিহাসের চিহ্ন রাখে। প্রশ্ন হচ্ছে এই দিনে কেন প্রদীপ জ্বালানো হয়?

এই প্রশ্নের উত্তরের সন্ধানের পূর্বে আমাদের জেনে রাখা ভালো যে, সারাভারত অর্থাৎ অবিভক্ত ভারত এক সময় বৌদ্ধময় ছিল। আর বাংলায় প্রায় সাড়ে চারশো বছর বৌদ্ধ শাসন ছিল। যদিও সে সব লুপ্ত প্রায়। বা সে সব ইতিহাস নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়েছে। আর সামাজিক সাংস্কৃতিক  উৎসবকে পরিবর্তন করে বৈদিক ধারায় রূপান্তরিত করা হয়েছে। অযৌক্তিক মিথ্যা গল্প গেথে দেওয়া হয়েছে সেই সব ইতিহাসের সঙ্গে। তেমনই একটা ইতিহাস হচ্ছে বর্তমানের দীপাবলি উৎসব।   

     এই উৎসবের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট আলোচনার পূর্বে জানিয়ে দেই, এই উৎসবের মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে – নিজের চেতনাকে প্রজ্জ্বলিত করা। চেতনার জাগরণ। এক কথায় “আত্মদীপভব।” প্রশ্ন থেকে যায় তাহলে দীপদান কেন? এখানে দান বলতে কী বোঝানো হয়েছে? নিজের মধ্যে চেতনার জাগরণ বা চেতনার দীপ প্রজ্বলীত বা জ্ঞানের শিখার উন্মেষ হলে সেটা দীপের শিখার মতো অন্ধকারকে দূর করে। নিজের ও পারিপার্শিকতার। সেটা শুধু সীমিত থাকে না। এক কথায় জ্ঞানকে ছড়িয়ে দেওয়া বা দান করা। যেটা ‘যতোই করিবে দান ততই যাবে বেড়ে।’

এবার ঘটনার ব্যাখ্যায় প্রবেশ করা যাক-

যেটা নিচে দেওয়া ভিডিওর কথা-

প্রচলিত দীপাবলি উৎসব—আর এক সুস্থ্য ইতিহাসের মৃত্যু।

বন্ধু, যখন আমরা কাউকে প্রশ্ন করি, দিওয়ালি বা দীপাবলি উৎসব আমরা কেন পালন করি? উত্তর আসে,  ওই দিন শ্রীরাম অযোধ্যাতে প্রত্যাবর্ত্তন করেছিলেন। ওনাকে স্বাগত জানানোর জন্য দীপ জালানো হয়েছিল। কিন্তু রামচরিত মানস’-এর পৃষ্ঠা আটে স্পষ্ট লেখা রয়েছে যে, শ্রীরামচন্দ্র বৈশাখ মাসে (যা ইংরাজি এপ্রিল মাস) অযোধ্যা প্রত্যাবর্ত্তন করেন। তাহলে, একথা নিশ্চিতভাবে বলা  যায় যে, রামচন্দ্র সম্পর্কিত কোনো ঘটনাবলির সঙ্গে দিওয়ালী সম্পর্কিত নয়। তো এতবড়  উৎসব,  যা সারা বিশ্বে পালিত হচ্ছে, তার কারন জানার জন্য যখন পড়াশুনা করলাম তো তার তিনটি প্রধান কারন সামনে এল।

১। দিওয়ালি বা দীপাবলি উৎসব কার্ত্তিক অমাবস্যাতে পালন করা হয়। কার্ত্তিক অমাবস্যার এই দিন তথাগত বুদ্ধ জ্ঞানপ্রাপ্ত হয়ে (বুদ্ধত্ব লাভ করে) নিজের রাজ্য কপিলাবস্তুতে ফিরে এসেছিলেন। ওনাকে স্বাগত জানানোর জন্য রাজ্যবাসী দীপ প্রজ্জলিত করেছিলেন।

২। এই দিনেই (কার্ত্তিক অমাবস্যা) ভিক্ষু মহামোগল্যানকে হত্যা করা হয়েছিল যিনি তথাগতের অতি প্রীয় এবং ঘনিষ্ঠ ছিলেন।

৩। যখন সম্রাট অশোক বৌদ্ধধম্মযাত্রা করেছিলেন তখন উনি পূর্বোক্ত দুটি ঘটনা সম্পর্কে অবহিত হন। তিনি স্থির করেন যে, তথাগত বুদ্ধ ও তাঁর শিষ্যদের দেওয়া ৮৪০০০ উপদেশাবলিকে জীবন্ত করবেন। সম্রাট অশোক ওনার রাজ্যে--যা ইরান, ইরাক, আফগানিস্তান পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল-- ৮৪০০০ ধম্মস্কন্দ তথা স্মৃতি চিহ্ণ তৈরি করেন। সব জায়গাতেই বুদ্ধের অস্থি রাখার ব্যবস্থা করেন। এ সব স্মৃতিচিহ্ণ স্তুপ, জলাশয়, বিদ্যালয়, বিহার ও মার্গ-রুপে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সর্বাধিক বিহার রাজধানী মগধেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যা আজ বিহার নামে পরিচিত। সম্রাট অশোক সমগ্র রাজ্যে ঘোষণা করেন যে, ৮৪০০০ ধম্মস্কন্দে কার্ত্তিক অমাবস্যাতে দীপ জালানো হবে এবং  এই দিনকে “দীপদান উৎসব” হিসাবে পালন করা হবে। ‘দীপদান’ করার অর্থ হল ‘জ্ঞানদান’,   অর্থাৎ বুদ্ধির বিকাশ, বুদ্ধের উপদেশ স্মরণ করা। আজ কিছু লোক এই উৎসবকে নিজেদের স্বার্থে পরিবর্ত্তন করে দিয়েছে। ‘দীপদান উৎসব’র আসল অর্থ বুঝে সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশ তৈরি   করুন, ভন্ডামি থেকে দূরে থাকুন, উৎসাহ-সহকারে দীপ জালান, মানব সেবাতে এগিয়ে আসুন, আতসবাজি জালাবেন না, পরিবেশকে রক্ষা করুন, প্রাণীদেরকে রক্ষা করুন। জয় দীপদান উৎসব। (নিচের ভিডিওটি দেখুন।)





 

Comments