Skip to main content

বাবাসাহেব কেন মতুয়া ধর্ম গ্রহণ করেননি? লেখক – জগদীশ রায়


 

বাবাসাহেব কেন মতুয়া ধর্ম গ্রহণ করেননি?

লেখক – জগদীশ রায়

    সমাজে এই প্রশ্নটা মুখে মুখে ঘুরছে- বাংলা থেকে বাবাসাহেবকে সংবিধান সভার জন্য নির্বাচিত করা হলো। সেই কাজে মতুয়া তথা নমঃশূদ্ররা অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেন। কিন্তু তিনি কৃতজ্ঞতা স্বরূপ নমঃশূদ্রদের জন্য কিছু করেননি। ধোকা দিয়েছেন। তাঁকে নির্বাচিত করার জন্য মতুয়ারা সাহায্য করল; কিন্তু তিনি কেন মতুয়া ধর্ম গ্রহণ করলেন না?

প্রশ্নগুলোর উত্তর আমার মতো করে একে একে দেওয়ার চেষ্টা করছি।

প্রথমেই জানাই বাবাসাহেব কেন মতুয়া ধর্ম গ্রহণ করেননি।

আমার এই লেখা যিনি পড়ছেন, তাঁকে বলছি- ধরুন, আপনি মারাঠী পড়তে পারেন না। গাড়্গে বাবার নামও জীবনে শোনেননি। আমি আপনাকে বলছি, গাড়্গে বাবা মহারাষ্ট্রের একজন সন্ত বা সমাজ সংস্কারক। তিনি থামস্‌আপ ছিলেন। অর্থাৎ আঙ্গুঠা ছাপ। লেখাপড়া জানতেন না।  কিন্তু তাঁর নামে মহারাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয় আছে। তিনি বলেছেন- “ভগবানের জন্য খরচ করো না। ঐ পয়সা শিক্ষার জন্য ব্যয় কর। পয়সা মন্দিরে না দিয়ে কোনো ছাত্রছাত্রীকে দাও। ভক্তির প্রচার ভালো নয়। শিক্ষার প্রসার অতি ভালো।”

এই কথাগুলো আপনি জানলেন কিভাবে? আমি জানালাম তাই। কারণ, আমি এখানে থাকি  আর এ বিষয়ে জেনেছি। যদিও বর্তমান যুগে উন্নত টেকনোলজির মাধ্যমে ঘরে বসে কোনো ভাষা না জানলেও সেইভাষার বিষয়ে অনেক কিছু  জানা সম্ভব। কিন্তু ১৫/২০ বছর আগেও এই কথা ভাবাও প্রায় অসম্ভব ছিল।

তাহলে ধরুন, পাঠক জানলেন গাড়্গে বাবা সম্পর্কে কয়েকটি কথা  আমার এই লেখা পড়ে। এবার ভাবুন, বাবা সাহেব ১৯৫৬ সালে স্বধর্মে প্রত্যাবর্তন করেন বা ধর্ম পরিবর্তন করেন। সেই সময় তাঁকে মতুয়া ধর্ম সম্পর্কে কেউ কি তথ্য জানিয়েছিলেন? বাংলা ছাড়া অন্য কোনো ভাষায় সেই সময়ে কোনো তথ্য ছিল কি? সেই সময় তো অনেক দূরের কথা বর্তমানেই বা অন্য ভাষায় মতুয়া ধর্ম সম্পর্কে কতটা আছে বলুন?  

হ্যাঁ সেই সময়ে এক সঙ্গে সংসদে ছিলেন, পি. আর. ঠাকুর। যিনি তৎকালীন ব্যারিস্টার। মতুয়া ধর্মের প্রতিষ্ঠিতা হরি-গুরুচাঁদের বংশধর। সুশিক্ষিত। তিনি কি বাবা সাহবেকে মতুয়া ধর্ম সম্পর্কে কিছু জানিয়েছিলেন? তথ্য দিন। তথ্য পাবেন না। কারণ থাকলে তো পাবেন। তাহলে কি করে বলছেন বাবাসাহেব কেন মতুয়া ধর্ম গ্রহণ করেন নি। আর একটা কথা মতুয়া ধর্ম কি এখনো স্বীকৃত ধর্ম? না। তাহলে স্বীকৃত ধর্ম প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা আজ পর্যন্ত কি করেছি? এসব না করে বাবাসাহেব কেন মতুয়া ধর্ম গ্রহণ করেন নি একথা  মাথা আসে কিকরে বলুন? বাবাসাহেব ছাড়ুন, আপনি নিজে কি ধর্ম হিসাবে আইনত ‘মতুয়া’ লিখতে পারেন?    

এবারের প্রশ্ন বাবাসাহেব মতুয়া তথা নমঃশূদ্রদের দ্বারা নির্বাচিত হয়েও তিনি তাদের জন্য কেন কিছু করেন নি?

বাবাসাহেবকে যাঁরা নির্বাচিত করেছিলেন সংবিধান সভায় প্রেরণের জন্য তার মধ্যে কে কে  মতুয়া ছিলেন বলুন তো? আর নমঃশূদ্র তো মহাপ্রাণ যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল, মুকুন্দ বিহারী মল্লিক ও  দ্বারিকনাথ বারুরী ছিলেন। নগেন্দ্র নারায়ণ রায় ও ক্ষেত্রনাথ সিংহ ছিলেন রাজবংশী। গয়ানাথ বিশ্বাস-এর বাড়ি ছিল ময়মন সিংহ। আর বীর বিরসা ছিলেন মুর্শিদাবাদের। এঁদের মধ্যে প্রথম দুজন বাদে আর কারোরই মতুয়া সম্পর্কে তেমন কিছু জানার কথা নয়। কিন্তু যাঁর জন্ম মতুয়া ও নমঃ পরিবারে তিনি গিয়ে দাঁড়ালেন বাবাসাহেবের বিপক্ষে গণগরিষদের নির্বাচনে। তাহলে কোন   যুক্তিতে বলা যেতে পারে বাবাসাহেব মতুয়া তথা নমঃদের দ্বারা নির্বাচিত হয়েও তাদের জন্য কিছু করেন নি। একটা যুক্তিতে বলা যেতে পারে, সেটা হচ্ছে- সাধারণ মানুষকে ভুল বুঝিয়ে।

     মতুয়া তথা নমঃদের জন্য বাবাসাহেব কিছু যদি না করে থাকেন তাহলে কয়জন ভারতীয়  মতুয়া তথা নমঃ সাংবিধানিক প্রতিনিধিত্বকে গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছেন বলুন? সাংবিধানিক  প্রতিনিধিত্ব তথা অন্যান্য অধিকার বাবাসাহেব মতুয়া তথা নমঃদের জন্য তো করেছেনই। বাকি  পিছিয়ে রাখাদের জন্যও সারা ভারতবর্ষে অধিকার দিয়েছেন। আর জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকল মহিলাদের জন্যও অধিকার দিয়েছেন। সমস্যা হচ্ছে, অধিকার গ্রহণের সময় দাতার কথা জানার  প্রয়োজন পড়ে না। পরে জানলেও তখন হাত ধুতে থাকেন উপরে ওঠার জন্য।

    আসলে সমাজে বিভেদ সৃষ্টি করার জন্য কিছু ধুর্তলোক এই ধরণের প্রশ্ন সমাজে ছড়িয়ে দিয়ে তাদের ষড়যন্ত্রকে কার্যসিদ্ধি  করতে চায়। সাধারণ মানুষ আগে পিছে না ভেবে এই ধুর্তদের ফাঁদে পড়ে। যার ফলে দেশ ও সমাজের প্রগতি রুদ্ধ হয়ে যায়। (আমার এই লেখা পড়ে এই ধুর্তরা আমার বিরুদ্ধেও মতুয়া বিরোধী বলে প্রচার চালাতে পারে। কারণ, শয়তানের ছলনার অভাব হয় না।)

অবশেষে গুরুচাঁদ ঠাকুরের একটা বাণী দিয়েই শেষ করছি এই প্রতিবেদেন- 

কি বলি দুঃখের কথা বুক ফেটে যায়।

শত্রু কি বান্ধব এরা চেনে না’ক হায়।। (গুরুচাঁদ চরিত পৃ. ১৭০)

ইতর পশুরা আছে বেঁচে যেই ভাবে।

তোরাও তাদের মত কাজে কি স্বাভাবে।।

এমন জীবনে বল বেঁচে কিবা ফল?

 আকারে মানুষ বটে পশু একদল।। ( গুরুচাঁদ চরিত পৃ. ২২১)

গুরুচাঁদ ঠাকুর যে গভীর বেদনা নিয়ে এই কথাগুলো বলেছিলেন সেটা বর্তমানেও কম প্রযোজ্য নয়। এই কথা থেকে যদি শিক্ষা গ্রহণ করতে পারতাম তাহলে নিজেদের তথা সমাজ ও দেশের অনেক কল্যাণকর কাজ করা সম্ভব হতো।

আপনাদের কাছে একটা প্রশ্ন রেখে যাই, বাবাসাহেব বাংলা থেকে সংবিধান সভায় নির্বাচিত হয়ে তিনি নিজের জন্য কী কী করেছেন জানাবেন কৃপা করে।

আর যে মহাপ্রাণের সংগ্রামের ফলে বাবাসাহেব সংবিধান সভায় যেতে সমর্থ হয়েছিলেন, সেই মহাপ্রাণকে আপনারা কয়জনে শ্রদ্ধা করেন? সুবিধা গ্রহণের সময় তো বলে দিতে হয় না। কিন্তু কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতে কেন এতো দ্বন্দ্ব? 

    বাবাসাহেব মতুয়া ধর্ম সম্পর্কে জানতেন কিনা তেমন তথ্য এখনো আমার কাছে আসেনি। তবে তিনি নমঃদের সম্পর্কে ভালোই জানতেন। যার জন্য তাঁর Writhing and speeches Vol 2. এর 499 পৃষ্ঠায় দেখতে পাই – পুরির জগন্নাথ মন্দিরে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। সেখানে লেখা আছে –  IV. Depressed Class in Bengal

13. In regard to the depressed classes of Bengal there is an important piece of evidence to which I should like to call attention and which goes to show that the list given in the Bengal Census of 1911 is a correct enumeration of caste which have been traditionally treated as untouchable castes in Bengal. ------    on the 28th of April 1809 which gives the following list of castes which were debarred from entering the temple of Jagannagth at Puri: (1)Loli or Kashi, (2) Kalala or Sunri, (3) Machhua, (4) Namasudra or Chandal,------

 


আবার নমঃদের সম্পর্কে একটা উক্তি পাই, সেটা হচ্ছে-  

 “Nama Sudra of Bengal are much more educated that the Caste Hindus of Maharashtra.” (তথ্য সূত্র- সমাজ বিপ্লবের অন্যবদ্য পথিকৃৎ (ডাঃ গুণধর বর্মণ)

https://www.facebook.com/roy.1472/posts/2183107145108224

 










 

 

Comments