বিষয়ঃ- বাংলায় সাম্যবাদী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে হরিচাঁদ ঠাকুর, গুরুচাঁদ ঠাকুর (মতুয়া ধর্ম) ও মহাপ্রাণ যোগেন্দ্রনাথ মন্ডলের অবদান। লেখক- জগদীশচন্দ্র রায়
বিষয়ঃ-
বাংলায় সাম্যবাদী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে হরিচাঁদ ঠাকুর, গুরুচাঁদ
ঠাকুর (মতুয়া ধর্ম) ও মহাপ্রাণ যোগেন্দ্রনাথ মন্ডলের অবদান।
ভূমিকাঃ- বাংলার সাম্যবাদী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে
মহাপ্রাণ যোগেন্দ্রনাথ মন্ডল হচ্ছেন, মধ্য মণি। কারণ, বাংলায় বৌদ্ধ শাসক, পাল
রাজাদের শাসন চলেছিল প্রায় সাড়ে চারশো (৭৫০-১১৬২) বছর
ধরে। সেই শাসন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে শুরু হয় ব্রাহ্মণ্য শাসন ব্যবস্থা। যার প্রমুখ
হচ্ছে বল্লাল সেন। তার শাসনকালে বাংলার বৌদ্ধদের উপর নেমে আসে কঠোর অত্যাচার। সেই
অত্যাচার থেকে মুক্তি পেতে পালিয়ে জঙ্গলে এসে বসবাস করতে বাধ্য হয় এক সময়ের
প্রতাপশালী বৌদ্ধগণ। তাঁরা ধর্মহীনে পরিণত হন। তারপর হরিচাঁদ ঠাকুরের মতুয়া ধর্ম আন্দোলন এবং গুরুচাঁদ ঠাকুরের শিক্ষা ও সামাজিক
আন্দোলনে পতিতরা নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার
স্থান দখল করে। সেই স্থান বা ফাউন্ডেশনের উপর যে রাজনৈতিক বৃক্ষের বিজ রোপন করা
হয়েছিল সেটাকে পূর্ণাঙ্গ বৃক্ষ হিসাবে দাঁড় করেন মহাপ্রাণ যোগেন্দ্রনাথ মন্ডলের
নেতৃত্বে বাংলার মূলনিবাসীরা। সেই বৃক্ষকে
আরো বিস্তারিত করার জন্য মহাপ্রাণের অক্লান্ত ও নিঃস্বার্থ বলিদানে সমর্থ হলেন
বাবা সাহেব আম্বেদকরকে সংবিধান সভায় পাঠাতে। বাবা সাহেব সংবিধানের মাধ্যমে
প্রতিনিধিত্বের (Representation)
সুযোগ করেদিলেন সমগ্র ভারতের পিছিয়ে রাখা
মানুষদের। সে জন্যই এই হরিচাঁদ ঠাকুরের আন্দোলন থেকে বাবা সাহেবের সংবিধানে প্রতিনিধিত্বের
(Representation) ব্যবস্থা পর্যন্ত যে আন্দোলন সেই আন্দোলনের মধ্য মণি হচ্ছেন মহাপ্রাণ যোগেন্দ্রনাথ।
এই আন্দোলনের ধারায় কারো অবদানই কম নয়। আর এক
জনকে বাদ দিয়ে সম্ভবও নয়। যদিও এই আন্দোলন রূপী গাছের ফুল ফল যারা উপভোগ করছেন
তাদের একটা বিরাট অংশ চাইছেন গাছটাকেই স্বমূলে ধ্বংস করতে। তারা নতুন বল্লাল সেনের
সঙ্গে হাত মিলিয়ে এই গাছকে উপড়ে ফেলতে চাইছেন; যেটা পাল শাসনকালের শেষদিকে ঘটেছিল।
এখন আপনাদেরই ভাবতে হবে কি করবেন? বল্লাল সেন যেমন বাংলার মূলনিবাসীদের বিতাড়িত
করে পতিত করেছিল। বর্তমাজনে সংরক্ষণকে সমাপ্ত করা হচ্ছে, আর সঙ্গে নেমে আসছে NRC-National Register of
Citizens এর কোপ। এই হচ্ছে এই আন্দোলন রূপী গাছের বিষয়। এবার বিস্তারিত ভাবে প্রবেশ করা যাক সেই
আন্দোলন সম্পর্কে।
পতিতপাবন হরিচাঁদ
ঠাকুরঃ-
১৮১২ সালে ১১ই মার্চ
জন্মগ্রহণ করেন হরিচাঁদ। তিনি তাঁর আত্ম উপলব্ধিতে বুঝছিলেন যে, এই ধর্মহীনদের
পাতিত্ব থেকে এবং ব্রাহ্মণ্যবাদী চক্রান্ত থেকে উদ্ধার করতে হলে এবং এদের সংগঠিত
করতে হলে একটা ধর্মের প্রয়োজন। তাই তিনি বুদ্ধের মতাদর্শে প্রতিষ্ঠা করেন এই ধর্মহীন পতিতদের জন্য মাত্র ১৮ বছর বয়সে
১৮৩০ সালে ‘মতুয়া’ ধর্ম। তিনি এই
ধর্মে ১২টি আজ্ঞা ও ৭ টি নিষেধাজ্ঞা দেন। মোট ১৯টি। যেটা আমরা বৌদ্ধধম্মে দেখতে
পাই বাবা সাহেব ২২ প্রতিজ্ঞা দিয়েছেন। যার মূল মন্ত্র হচ্ছে- সত্য, প্রেম ও
পবিত্রতা।
তিনি ব্রাহ্মণ্যবাদীদের কবল থেকে
মুক্ত করার জন্য সংগ্রাম শুরু করেন। তিনি ঘোষণা করেন-
কুকুরের
উচ্ছিষ্ট প্রসাদ পেলেও খাই।
বেদ
বিধি শৌচাচার নাহি মানি তাই।।
অর্থাৎ আমি কুকুরের এটো খাবার খেতেও রাজি আছি,
কিন্তু আমি বেদ ও তার বিধান বা নিয়ম নীতিকে মান্য করিনা। এই ঘোষণার মধ্যে দিয়েই
শুরু হয় হরিচাঁদ ঠাকুরের আন্দোলন।
তৎকালীন
অস্পৃশ্যদের জন্য তৈরি হয় আন্দোলনের প্লাট ফর্ম।
তাঁর কাছে
সকল মানুষই সমান ছিল। তিনি তাঁর আন্দোলনে ধর্মকে হাতিয়ার করলেও তিনি ধর্মকে আকড়ে
না ধরে মানবতার ধর্মকে প্রতিষ্ঠার লক্ষে অগ্রসর হন। তাই তার ধর্মের আর একটা মূল
কথা হচ্ছে- ‘হাতে কাম মুখে নাম’। অর্থাৎ কর্মই ধর্ম।
তিনি যে,
সকল মানুষকে সমানভাবে দেখতেন তার প্রমান স্বরূপ তিনি ঘোষণা করেন-
জীবে
দয়া নামে রুচি মানুষেতে নিষ্ঠা।
ইহা
ছাড়া আর যত সব ক্রিয়া ভ্রষ্টা।।
অর্থাৎ
প্রতিটি প্রাণীকে ভালোবাসা, প্রতিটি মানুষকে সমান দৃষ্টিতে শ্রদ্ধা করা। কোনো
ভেদাভেদ না করা। আর নামে রুচি অর্থাৎ বিজ্ঞানের প্রতি যত্নশীল হওয়া। এই তিনিটি ছিল
প্রধান মন্ত্র। বাকী সব কৃয়াকর্মকে তিনি ভ্রষ্ট বলে উল্লেখ করেছেন।
এই বিজ্ঞানের প্রতি যত্নশীল হওয়ার ক্ষেত্রে
আমরা দেখতে পাই
পূর্বে
ছিল মূনিগণ করেতেন ধ্যান।
এবে
সেই ধ্যান হয় জ্ঞানেতে বিজ্ঞান।।
অর্থাৎ
পূর্বে যে সব মূনিগণ ছিলেন, তাঁরা ধ্যানের মাধ্যমে জ্ঞানের উৎপত্তি ঘটাতেন। আরে
সেই জ্ঞানের মধ্য থেকে বিজ্ঞানের উদয় ঘটত।
হরিচাঁদ
ঠাকুর ১৮৮৭ সালে ৬ মার্চ মাত্র ৬৬ বছর বয়সে মহাপরিনির্বাণ ঘটে।
শিক্ষা ও সামাজিক আন্দোলনের
অগ্রদূত গুরুচাঁদ ঠাকুরঃ-
হরিচাঁদ
ঠাকুরের এই আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যান তাঁর সুযোগ্য পুত্র গুরুচাঁদ ঠাকুর। হরিচাঁদ
ঠাকুর মহাপরিনির্বাণের পূর্বে এই আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাবার দায়িত্ব দেন। আর দুঃখ প্রকাশ করেন যে, তিনি শিক্ষার আন্দোলন করে
যেতে পারলেন না। তাই গুরুচাঁদ যেন শিক্ষার
জন্য আন্দোলন করে। কারণ, তিনি বুঝেছিলেন, শিক্ষা ব্যাতীত কোনো জাতির প্রগতি সম্ভব
নয়।
গুরুচাঁদ ঠাকুর তাঁর পিতার আদেশকে শিরোধার্য
করে শুরু করেন সমাজের বঞ্চিতদের মধ্যে শিক্ষা প্রসারের আন্দোলন। এই আন্দোলন করতে
গিয়ে প্রথমেই ঘোষণা করেন,
খাও বা না খাও তাতে দুঃখ নেই।
ছেলে
মেয়েকে শিক্ষা দাও এই আমি চাই।।
ছেলে
মেয়েকে দিতে শিক্ষা শিক্ষা।
প্রয়োজনে করবে ভিক্ষা।।
অর্থাৎ তিনি
আর্থিক দারিদ্র থেকে শিক্ষার দারিদ্রতাকে মুখ্য বলে ঘোষণা করেন। তাই খাবার না
পেলেও সেটা কে গুরুত্ব না দিয়ে শিক্ষা অর্জনকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। আর তার জন্য
বলেছেন, প্রয়োজন হলে ভিক্ষা করেও সন্তানদে শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে।
যেকথার মিল
খুঁজে পাই আমরা মহাত্মা জ্যোতিরা ফুলের কাছে-
বিদ্যাবিনা মতি (বুদ্ধি) গেছে
মতিবিনা নিতি (আদর্শ) গেছে
নিতিবিনা গতি (দিশা) গেছে
গতিবিনা বিত্ত (সম্পত্তি) গেছে
বিত্তবিনা শূদ্রের পতন হয়েছে
এতো সব অনর্থ একমাত্র অবিদ্যার জন্য হয়েছে।
বাংলার অনুন্নতি অশিক্ষিত লোকেরা ব্রাহ্মণ্যবাদী
জ্বালে ফেঁসে গিয়ে দেব-দেবীর কাছেই সমস্যার থেকে মুক্তির জন্য প্রার্থনা করত।
কিন্তু গুরুচাঁদ ঠাকুর বললেন,
তাই
বলিভাই মুক্তি যদি চাই
বিদ্যান হইতে
হবে।
পেলে বিধ্যাধন
দুঃখ নিবারণ
চির সুখি হবে
ভবে।। -গুরুচাঁদ চরিত- পৃঃ ১৩০
অর্থাৎ
মুক্তি পেতে হলে বিদ্যান হতে হবে। বিদ্যা অর্জন করতে পারলে সব দুঃখ দূর হবে।
গুরুচাঁদ
ঠাকুরের এই আন্দোলনে সহযোগীতা করার জন্য ওখানকার গিরিশ ঘোষ বলনে, তিনি একটা
হাসপাতাস নির্মাণ করে দিতে চান। কিন্ত গুরুচাঁদ ঠাকুর বলেন,
অজ্ঞান ব্যাধিতে ভরা আছে এই দেশ।
জ্ঞানের আলোকে ব্যাধি তুমি কর শেষ।। -গুরুচাঁদ চরিত- পৃঃ
১৩৭
তুমি
যদি এই অজ্ঞানতার ব্যাধি থেকে মুক্ত হ’তে চাও তাহলে তুমি একমাত্র জ্ঞানের আলোদিয়েই
এই ব্যাধি থেকে মুক্তি পাবে।
১৮৭২
সালে সার্বিক শিক্ষার দাবিতে বাংলায়
গুরুচাঁদ ঠাকুরের নির্দেশে মতুয়াদের নেতৃত্বে বিদ্রোহ হয়। সেইজন্য ইংরেজ
সরকার নবপ্রবর্তিত ইংরেজী শিক্ষা সরবস্তরের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত
ঘোষণা করা হয়। এই বিদ্রোহের ফলে অনুন্নত
শ্রেণীর মানুষকে নিজেদের উদ্যোগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার আহ্বান জানান হয়।
- (গুরুচাঁদ চরিত পৃঃ
নং (VII ও XIV)
(1873) the Chandals made a general strike in the district
(Faridpur), resolving not to serve any body of the upper
caste in whatever capacity, unless a better position among the Hindu caste than
what they at present occupy was given to them. (W.W.
Hunter:Ibid,p.285) চন্ডালেরা
ফরিদপুর জেলায় সাধারণ ধর্মঘট করেছিল- তাদের দাবি সমাজে তাদের মর্যাদার আসন দিতে
হবে। অন্যথায় উচ্চরর্ণের কোন প্রকারের কাজকর্ম করবে না। C.
A. Kelly I C S এই
গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক তথ্যটি স্যার হান্টারকে লিখিত ভাবে জানান। (Hunter:
Ibid p. 255) এখানে মাত্র এইটুকু জানিয়ে রাখি এটাই ভারতবর্ষের প্রথম ‘সাধারণ ধর্মঘট’ বা general strike.এই তথ্য লোকে হয়ত জানেনাঃ যারা
জানে তারা তুলে ধরে না- কারণ উচ্চবর্ণের শোষণ ও দূর্ব্যবহারের বিরুদ্ধে এই সাধারণ
ধর্মঘট। তাই প্রকৃত
গুরুত্ব সহকারে এর পটভূমিকা তুলে ধরে, শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাসে ঠাঁই দিলে
উচ্চবর্ণের মুখের উজ্জ্বল প্রসাধন খসে পড়ার ভয়। দেবশিশুসুলভ অমলকানি চেহারার
অন্তরালে ঢাকা আসল কদাকার রূপটা বেরিয়ে পড়বে।
১৮৮০
সালে নভেম্বর মাসে তিন নিজের বাড়িতে প্রথম পাঠশালা তৈরী করেন।
১৮৮১
সালে খুলনা জেলার দত্তডাঙায় ঈশ্বর গাইনের বাড়িতে শ্রদ্ধানুষ্ঠান উপলক্ষে এক বিশাল
জাগরণী সভার আয়োজন করা হয়। এই সভায় গুরুচাঁদ ঠাকুর সভাপতিত্ব করেন। যেখানে
প্রায় পাঁচ হাজার প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। আর এই মহাসম্মেলনের পরই কমিশনার
(ততকালীন আসাম) ৯ সেপ্টেম্বর ১৮৮৩ সালে
নির্দেশ দেন যে, ‘চণ্ডালের’ পরিবর্তে ‘নমঃশূদ্র লিখতে হবে। ১৮৮১ সালে
গুরুচাঁদ ঠাকুরের নির্দেশে খুলনা শহরে Namasudra
Welfare Association গঠিত হয়। উক্ত সংগঠনের তৎকালীন ২২টি
জেলার প্রতিনিধি যোগদান করেন। শিক্ষা ও জাগরণের এই সম্মেলনের পর সর্বত্র
সর্বশিক্ষা অভিযানের বার্তা ছড়িয়ে পড়ে।
১৯০৭
সালে গুরুচাঁদ ঠাকুরের নির্দেশে “নমঃশূদ্র সুহৃদ” নামে পত্রিকা প্রকাশ শুরু হয়।
১৯০৮
সালে ওড়াকান্দীতে একটি নারী শিক্ষা ট্রেনিং স্কুলও স্থাপন করা হয়। এই সময় প্রসূতি
মা ও শিশু সেবার জন্য মাতৃমঙ্গল প্রতিষ্টান করা হয়।
মুসলমানদের মতো নমঃশূদ্রদের সম্পূর্ণ আলাদা সম্প্রদায় হিসাবে স্বীকৃতির
দাবী পেশঃ-
আসাম ও পূর্ববঙ্গের নমঃশূদ্র
প্রতিনিধিবর্গ পূর্ববঙ্গ
ও আসামের লেফটেন্যান্ট গভর্নরকে 1911 সালেরসেন্সাসের পূর্বে আবার স্মারকলিপি পেশ
করলেন। বাংলার মহামান্য ছোটলাটের সামনে তারা দাবি জানালোঃ মুসলমানদের মতো
আমাদের সম্পূর্ণ আলাদা সম্প্রদায় হিসাবে স্বীকৃতি দিন। হিন্দু জাতি থেকে আমরা আলাদা। মুসলমানদের মতো আলাদা
রাজনৈতিক সুযোগ- সুবিধা দিন।
১৯১০ সালে তৎকালীন
ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার স্যামুয়েল ন্যাথান ওড়াকান্দী পরিদর্শনে আসেন।
গুরুচাঁদ ঠাকুর তাঁর কাছে শিক্ষা, ছাত্রাবাস ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রের জন্য দাবী
জানান।
১৯১০
সালে মার্চ মাস নাগাদ (বাংলা ১৩১৬ সাল), বারুনীর সময় অর্থাৎ হরিচাঁদ ঠাকুরের
জন্মদিন পালনের মাসে (১৩ই মার্চ) গুরুচাঁদ
ঠাকুর পতিত জাতির মধ্যে বিধবা বিবাহ প্রচলন করেন। আর বাল্য বিবাহ বন্ধ করতে
নির্দেশ দেন।
গুরুচাঁদ
ঠাকুরের উদ্যোগে গঠিত স্কুল সংখ্যাটা আমরা বর্তমান দশম শ্রেনির ‘স্বদেশ
পরিচয় ও পরিবেশ’ –বইতে দেখতে পাই- ‘তাঁর উদ্যোগে ৩৯৫২টি বিদ্যালয়
প্রতিষ্ঠিত হয়।’
১৯১১ সালে
চন্ডাল গালি মোচন, পরিবর্তে নমঃশূদ্র নাম সরকারী নথীতে অন্তর্ভুক্ত করান গুরুচাঁদ
ঠাকুর। লোকগণনায় বাংলায় চন্ডালদের নমঃশূদ্র সম্প্রদায় হিসাবে চিহ্নিত করা হয় এবং
তাদের হাজার বছরের চন্ডাল গালি মোচন করা হয়।
১৯১২
সালে পঞ্চম জর্জ গুরুচাঁদ ঠাকুরকে সমাজ সেবার জন্য “দরবার মেডেল” উপহার
দেন।
তিনি
বিবাহ ও শ্রদ্ধানুষ্ঠানে ব্যয়ভার কম করার নির্দেশ দেন।
রাজনীতি
সম্পর্কে গুরুচাঁদ ঠাকুরের ভাবনাঃ-
ধনহীন
বিদ্যাহীন যারা এই ভবে।
রাজনীতি
ক্ষেত্রে তার শান্তি নাহি পাবে।।
আত্মোন্নতি
অগ্রভাগে প্রয়োজন তাই।
বিদ্যাচাই,
ধন চাই, রাজকার্য চাই।। -গু.চ. ৫৭৩
বিচার
পরিবর্তন হচ্ছে যেমন সব পরিবর্তনের মূল। তেমনি রাজনীতি হচ্ছে সব ক্ষমতার উৎস। এই
মৌলিক কথাকে কিন্তু গুরুচাঁদ ঠাকুর ভীষণভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। কিন্তু সেই
ক্ষমতার উৎসে পৌঁছানোর জন্য যে সব উপকরণ একান্ত প্রয়োজনীয় সে সব অর্জনের জন্য তিন
আন্দোলন শুরু করেন। কারণ, সব ধনের মধ্যে বিদ্যা হচ্ছে মহাধন। তাই সেই ধনকে প্রথমে
অর্জন করতে হবে। বিদ্যাধন অর্জিত হলে আর্থিক ধনও এসে যাবে। তখন রাজনৈতিক অধিকারের
জন্য সংগ্রামে লিপ্ত হওয়া যাবে। তাই তিনি এই বিদ্যাহীনদের জাগানোর জন্য আরো
জানিয়েছেন যে, পৃথিবীর কোনে কোনে যদি প্রত্যক্ষ করা যায় তাহলে দেখা যাবে যে যারা
বিদ্যা ধনে ধনি নন, যারা অর্থ ধনে ধনি নন, তারা কখনোই দেশের পরিচালনার মুখ্য
দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারেনা। আর যদিও কোনো প্রকারে ঐ ক্ষমতার অধিকারী হয় তাহলে তারা
সঠিকভাবে দেশ পরিচালনা করতে পারবেনা। তাই আত্মোন্নতির অগ্রভাগে সবচেয়ে প্রয়োজনীয়
বিষয় হচ্ছে বিদ্যালাভ করা। এই বিদ্যালাভ করতে পারলে ধনও আসবে আর দেশ পরিচালনার
জন্য ক্ষমতার অধিকারীও হওয়া যাবে। এই কথায় সব সমস্যা সমাধানের চাবি হচ্ছে শিক্ষিত
হওয়া। তবে সেই শিক্ষা শুধু পুথিগত বিদ্যা অর্জনই নয়, সঙ্গে সামাজিক শিক্ষায়ও
শিক্ষিত হতে হবে। তা না হলে কোনো ক্ষেত্রে শান্তি আসবে না।
এই উদ্ধৃতির মধ্য দিয়ে গুরুচাঁদ ঠাকুর একটি
সূক্ষ্ম সংকেত দিয়েগেছেন যে, আপনাকে শুধু শিক্ষিও ও সম্পদ শালী হলেই হবে না।
আপনাকে রাজনৈতিক ক্ষমতাকেও দখল করতে হবে। কারণ, সেখানেই শাসন ব্যবস্থার ও দেশের
প্রগতির সব ক্ষমতা গচ্ছিত আছে। আপনাকে সেটাকে পাওয়ার জন্য সংগ্রাম করতে হবে।
গুরুচাঁদ ঠাকুর বুঝেছিলেন
ধর্মীয় আবেগে মানুষ বেশি সংগঠিত হবে। সংগঠিত হলেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধিত হবে।
তিনি ধর্মকে
হাতিয়ার হিসাবে নিয়েছেন, তবে তিনি ধর্ম বিশ্বাসের উপর দাঁড়াননি। মানুষকে
জাগ্রত করার, শিক্ষার মধ্যে নিয়ে যাবার
জন্য, বৈষম্য দূর করার জন্য তিনি ধর্মকে
এক ধরনের ভাষা অর্থাৎ প্রকাশের মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন। যার ফলে পিছিয়ে রাখা
মানুষেরা তাদের অধিকার ফিরে পাওয়ার লড়াই করতে পারে। আর সেই অধিকার শুপ্ত আছে রাজনৈতি ক্ষমতার মধ্যে। যেটা
অর্জিত হতে পারে সংবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করলে।
তাই- তিনি বলেছেন,
যে জাতির দল নেই, সে জাতির বল নেই।
যে জাতির নেই রাজা সে জাতি হয় না তাজা।
কোন সমাজ বা জাতিকে প্রগতি করতে হলে দলগতভাবে সংগ্রাম করতে হবে। সেই দলগত
সংগ্রামের ফলে অধিকার অর্জন করা যাবে। কিভাবে? কারণ, সমস্ত ক্ষমতা রয়েছে
পার্লামেন্টে। সেখানে পৌঁছাতে পারলে সাংবিধানিক প্রকৃয়ায় দেশ সমাজ ও জাতির উন্নতি
করা যাবে। আর যদি সংগঠিত হয়ে আন্দোলন করা না যায়, তাহলে সর্বদা নিজেদের মধ্যে
দলাদলিতে নিজেরাই বিনাশ প্রাপ্ত হতে হবে। তাই সবাইকে একদল একবল হয়ে জাতির উন্নতির
জন্য সকল বিভেদ ভুলে গিয়ে এগিয়ে আসছে হবে।
তবে তিনি এই
কাজের ক্ষেত্রে আরো সতর্ক বাণী করেছেন যে,
মধ্য স্বত্য জমিদারী
ধর্ম্ম ক্ষেত্রে নাই।
ভিন্ন ভিন্ন দল কেহ করোনা গোঁসাই।।
-গু.চ. ৫৭৪
প্রথমেই
বলেছি যে, তিনি ধর্মকে হাতিয়ার হিসাবে গ্রহণ করলেও তিনি ধর্ম বিশ্বাসের উপর
দাঁড়াননি। এখানে আমরা এই অশিক্ষা ও অজ্ঞনতার অন্ধকার, দারিদ্রতা থেকে মুক্তি, ও
সার্বিক ক্ষমতা লাভের যে স্তর সেখানে পৌঁছানোর জন্য সে দলবদ্ধ আন্দোলনের কথা
বলেছেন, অর্থাৎ এই সব প্রতিবন্ধকতা থেকে প্রতিকারকেও ধর্ম আন্দোলন হিসাবে যদি ধরে
নেই; তাহলে দেখতে পাবো সেখানে যে প্রতিবন্ধকতা আসতে পারে তার জন্য গুরুচাঁদ ঠাকুর
সতর্ক বাণী দিয়েছেন যে, এই আন্দোলনের কাজ কিন্তু নিজেদেরই সংবদ্ধ হয়ে করতে হবে।
সেখানে অন্য কাউকে অংশিদার করলে সেটা বিপথে চালিত হবে। সাফলের চুঁড়ায় পৌঁছানো
যাবেনা। যার জন্য তিনি ভিন্ন ভিন্ন দল করতে নিষেধ করেছেন।
বাস্তবে
আমরা গুরুচাঁদ ঠাকুরকে কয়জনে জানি? আর কয়জনে মানি? তাঁকে জানতে হলে বুঝতে হলে তাঁর
জীবন ও কর্মের গভীরে আমাদের প্রবেশ করতে হবে। তাঁর এতো বড়ো সতর্কবাণী কিন্তু এখনো
আমরা হৃদয়ঙ্গম করতে পারিনি। তাঁর আজীবনের সংগ্রামকে আমরা শুধু উপভোগ করছি, কিন্তু
তাঁকে প্রগতি দানের জন্য কিছু করছিনা। যার জন্য সমাজ ও জাতি এখনো পিছিয়ে আছে। বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে আছে। আর
মধ্য স্বত্য জমিদারী করছে সেই স্বার্থান্বেষী ভন্ডের দল। আমরা আজও তাদের চিনতে
পারলাম না। আর চিনলেও তাদের ছাড়তে পারছিনা। এটাই কোনো সমাজ ও জাতির প্রগতির
ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড়ো বাঁধা।
ঈশ্বরে ব্যাখ্যা ও
গুরুচাঁদ ঠাকুর।
বিশ্বভরে
এই নীতি দেখি পরস্পর।
যে
যা’রে উদ্ধার করে সে তার ঈশ্বর।। (গু.
চ. পৃঃ ৫২৯)
অর্থাৎ
ঈশ্বর এখানে কোন অলীক কেউ নন। ঈশ্বর হচ্ছেন উদ্ধার কর্তা। আর এই উদ্ধার কর্তাকেই
লোকে ভক্তি শ্রদ্ধা করেন।
মহাপ্রাণ যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল
হরিচাঁদ ঠাকুর ও গুরুচাঁদ ঠাকুরের এই
আন্দোলনকে রাজনৈতিকভাবে আরো এগিয়ে নিয়ে যান
বাংলার
আম্বেদকর মহাপ্রাণ যোগেন্দ্রনাথা মন্ডল। তিনি বাল্যকাল থেকেই সংগ্রামী
ছিলেন। দারিদ্রতার সংগ্রাম করে তিনি
নিজেকে সমাজের সামনে তুলে ধরেন। তিন বলেন,
“ব্রাহ্মণের পদধূলি গ্রহণ এবং মন্দিরে প্রবেশের দ্বারা আপনাদের কোনও উপকার ও
দুঃখ-কষ্ট লাঘব হইবে না। কে আপনাদের দুঃখ-কষ্টের অবসান করিবে এবং অন্যান্যদের
সঙ্গে সমান অধিকার প্রদান করিবে, তাহাই চিন্তা করিতে হইবে।”
-বই- মহাপ্রাণ যোগেন্দ্রনাথ মন্ডল ২য় খন্ড।
লেখকঃ- জগদীশচন্দ্র মন্ডল।
তিনি আরো
বলেছেন, “আত্মীয় ও বন্ধু যতই প্রিয় হউক জাতির বৃহত্তর স্বার্থ তদপেক্ষা
প্রিয়তর-এ কথা সর্বদা স্মরণে রাখিবেন। জাতীয় স্বার্থকে বলি দিয়া আত্মীয়তা বা
বন্ধুত্বের খাতিরে যদি কেউ ভুল পথে চালিত হন তবে তিনি জাতির ঘোরতর শত্রুতা
করিবেন।”
-বই- মহাপ্রাণ যোগেন্দ্রনাথ
মন্ডল ২য় খন্ড। লেখকঃ- জগদীশচন্দ্র মন্ডল। প্রৃষ্ঠা নং- ১৫৪
আর এই মহামানবকে নিয়ে থিসিস করেছেন নাগপুরের ডঃ সঞ্জয়
গাজভিয়ে। তিনি মহাপ্রাণ সম্পর্কে বলেছেন- “সাংবিধানিক ভারতের নির্মাতা বাবাসাহেব ডঃ আম্বেদকর ও মহাপ্রাণ যোগেন্দ্রনাথ মন্ডল।”
আবার নাগপুর উনিভারসিটির
অধ্যাপক ডঃ প্রদীপ আগলাবে বলেছেন-
“বাবাসাহেব ডঃ আম্বেদকর সামাজিক রাজনৈতিক শৈক্ষনিক ধার্মিক ইত্যাদি সব ক্ষেত্রে যে পরিবর্তন আনার জন্য ঐতিহাসিক আর ক্রান্তিকারী কাজ করেছেন; সেই মহান ক্রান্তিকারী কাজ করার জন্য যে মহামানব বাবাসাহেবকে সহযোগীতা করেছেন, সেই মহাপ্রাণ যোগেন্দ্রনাথ মন্ডলের আবদান খুব মহত্ত্বপূর্ণ । যদি মহাপ্রাণ যোগেন্দ্রনাথ মন্ডলের এই সহযোগীতা বাবাসাহেব না পেতেন, তাহলে তিনি সংবিধান তৈরী করতে পারতেন না । ঐতিহাসিক সত্য । আর বাবাসাহেব যদি সংবিধান সভায় যেতে না পারতেন তাহলে এই দেশের সংবিধান ব্রাহ্মণদের পক্ষেই লেখা হ’ত। তাই যোগেন্দ্রনাথ মন্ডল আম্বেদকরী আন্দোলনে যে সহযোগীতা করেছেন এবং মূলনিবাসীদের উদ্ধারের জন্য যে কাজ করেছেন সেটা অসাধারণ কাজ।”
“বাবাসাহেব ডঃ আম্বেদকর সামাজিক রাজনৈতিক শৈক্ষনিক ধার্মিক ইত্যাদি সব ক্ষেত্রে যে পরিবর্তন আনার জন্য ঐতিহাসিক আর ক্রান্তিকারী কাজ করেছেন; সেই মহান ক্রান্তিকারী কাজ করার জন্য যে মহামানব বাবাসাহেবকে সহযোগীতা করেছেন, সেই মহাপ্রাণ যোগেন্দ্রনাথ মন্ডলের আবদান খুব মহত্ত্বপূর্ণ । যদি মহাপ্রাণ যোগেন্দ্রনাথ মন্ডলের এই সহযোগীতা বাবাসাহেব না পেতেন, তাহলে তিনি সংবিধান তৈরী করতে পারতেন না । ঐতিহাসিক সত্য । আর বাবাসাহেব যদি সংবিধান সভায় যেতে না পারতেন তাহলে এই দেশের সংবিধান ব্রাহ্মণদের পক্ষেই লেখা হ’ত। তাই যোগেন্দ্রনাথ মন্ডল আম্বেদকরী আন্দোলনে যে সহযোগীতা করেছেন এবং মূলনিবাসীদের উদ্ধারের জন্য যে কাজ করেছেন সেটা অসাধারণ কাজ।”
তাঁর জীবনের বিভিন্ন কাজের মধ্যে আমি সর্বাধিক গুরুত্ব
দেই দু’টো কাজকে; যে কাজ দু’টো বিশেষ করে দেশের পিছিয়ে রাখা সকল মানুষের উদ্ধারের
জন্য তিনি করেছেন সেই কাজ হচ্ছে-
(১) ডা. বাবা
সাহেব আম্বদেকরকে সংবিধান সভায় পাঠানো।
(২) লকুর কমিটির রিপোর্টকে কার্যকরী হতে না দিয়ে
সমগ্র নমঃশূদ্র, দাস, রাজবংশী ও সুড়ি বা সাহাদের তফশিলিদের মধ্যে রাখা।
কিন্তু তাঁর এই অসামান্য অবদানের
গুরুত্বকে তাঁর নিজের লোকরা উপলব্ধি করতে না পারলেও ব্রাহ্মণ্যবাদীরা সেটাকে হাড়ে
হাড়ে বঝতে পেরেছে। যার জন্য বাবা সাহেবকে যে যশোর খুলনা বরিশাল ফরিদপুর জেলা থেকে
প্রতিনিধিরা নির্বাচিত করেছিলেন সেই অংশকে ভারতের বাইরে রাখার জন্য শুরু হলো
চক্রান্ত।
হিন্দু মহাসভার সভাপতি শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীর ঘোষণা করল ‘দেশভাগ হোক না
হোক বাংলাকে অবশ্যই ভাগ করতে হবে।” কারণ?
প্রথম কারণঃ- বাংলা
প্রান্তে মুসলিম এবং পিছিয়ে পড়া শ্রেনীর(বিশেষ করে নমঃশুদ্র) লোকদের সংখ্যা
সর্বাধিক ছিল । সেখানে মুসলিম লীগের সরকার ছিল। যদি বাংলার বিভাজন না হয় তাহলে মুসলিম আর পিছিয়ে পড়া শ্রেনীর সত্তা
চিরস্থায়ী হবে। সেখানে উচ্চবর্ণীয়দের কোন অধিকার থাকবে না ।
দ্বিতীয় কারণঃ- বাংলার খুলনা, যশোর, ফরিদপুর, বরিশাল এই এলাকা থেকে বাবা সাহেবকে নির্বাচিত করে সংবিধান সভায় পাঠানো হয় । তাই বাংলা বিভাজন করে বাবাসাহেব যে ক্ষেত্র থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন সেখান থেকে বাবাসাহেবের সদস্য পদ খারিজ করার উদ্দেশ্যে বাংলা ভাগ করে ছিল ।
তৃতীয় কারণঃ- যে নমঃ(শুদ্র)রা বাবাসাহেবকে সংবিধান সভায় নির্বাচিত করে পাঠিয়েছেলেন তাদেরকে সাজা দেওয়ার জন্য যাতে তারা আজীবন মুসলমানদের আধীন থাকে, এই শিক্ষা দেওয়ার জন্য বাংলা ভাগ করেছিল ।
দ্বিতীয় কারণঃ- বাংলার খুলনা, যশোর, ফরিদপুর, বরিশাল এই এলাকা থেকে বাবা সাহেবকে নির্বাচিত করে সংবিধান সভায় পাঠানো হয় । তাই বাংলা বিভাজন করে বাবাসাহেব যে ক্ষেত্র থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন সেখান থেকে বাবাসাহেবের সদস্য পদ খারিজ করার উদ্দেশ্যে বাংলা ভাগ করে ছিল ।
তৃতীয় কারণঃ- যে নমঃ(শুদ্র)রা বাবাসাহেবকে সংবিধান সভায় নির্বাচিত করে পাঠিয়েছেলেন তাদেরকে সাজা দেওয়ার জন্য যাতে তারা আজীবন মুসলমানদের আধীন থাকে, এই শিক্ষা দেওয়ার জন্য বাংলা ভাগ করেছিল ।
আর একটা কারণ, সেটা আপনারা
মানুন আর নাইবা মানুন; সেটা হচ্ছে-
যোগেন্দ্রনাথ মন্ডল
হচ্ছেন বাংলার আম্বেদকর। তাঁর ক্ষমতা কত সুদূর প্রসারী ও শক্তিশালী, সেটা তাঁর
থেকে উপকার প্রাপ্তরা কতটা বুঝেছেন বলা মুশকিল। তবে উচ্চবর্ণীয়রা সেটা হাড়ে
হাড়ে বুঝতে পেরে ছিলেন বাখার গঞ্জ
কেন্দ্রের জয় থেকে শুরু করে বাবা সাহেবকে সংবিধান সভায় পাঠানো পর্যন্ত। যার
জন্য তারা হর পল মহাপ্রাণের লাগামকে নিজেদের কন্ট্রোলের বাইরে যেতে দেয়নি। বরং সব
সময় যোগেন্দ্রনাথে বিরুদ্ধে নিজের জাতির লোক দিয়ে যেমন বিরোধীতা করিয়েছে। তেমনি তারা বুঝতে পেরেছিল, বাংলা ভাগ
না হলে কোন দিনই উচ্চবর্নীয়দের কব্জায় বাংলার শাসন ক্ষমতা আসবে না। তাই গোদের উপর
বিষ ফোড়াটাকে স্বমূলে নির্মুল করার জন্য
বাংলা ভাগ করা তাদের কাছে অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে। এখানে আর একটা কথা বলে রাখি ঐ সময়ে
নেতাজীর অন্তরধান হওয়া উচ্চবর্ণীয়দের বাংলা ভাগ করার কাজটি সুগম হয়।
এই দিকে
গান্ধীজি আর এক চক্রান্ত করে জানালেন, “দেশ বিভাগ যদি
হয়, তবে আমার মৃতদেহের উপর দিয়েই তা হবে। আমি যতক্ষণ বেঁচে আছি, ততক্ষণ কিছুতেই
দেশ বিভাগে সম্মতি দেব না” সেই গান্ধীর উপস্থিতিতে ১৯৪২
সালে ১৫ই জুন, কংগ্রেসের অধিবেশনে দেশভাগের প্রস্তাব গৃহীত হল। কংগ্রেস অধিবেশনে এ
প্রস্তাব সমর্থন করলেন স্বয়ং গান্ধী। (তথ্যঃ- মহাপ্রাণ যোগেন্দ্রনাথ ৩য় খণ্ড লেখক- জগদীশ
চন্দ্র মন্ডল পৃ.১২/১৩)
মহাপ্রাণ শত চেষ্টা করেও বাংলা ভাগকের বন্ধ করতে পারলেন না।
কিন্তু বাবা সাহেবকে বাংলা থেকে সংবিধান সভার জন্য নির্বাচিত করার ফলে দেশ ভাগের
জন্য বাবা সাহেবের সদস্য পদ রদ হলেও কংগ্রেস বাধ্য হয়ে বাবা সাহেবকে পুনরায়
নির্বাচিত করতে। আর বাবা সাহবে সংবিধানের সমস্ত পিছিয়ে পড়া শ্রেণির মানুষদের জন্য
দিলেন সাংবিধানিক রক্ষা কবচ সংরক্ষণের মাধ্যমে। এই কারণে ব্রাহ্মণ্যবাদীদের
গাত্রদাহ শতগুণ বৃদ্ধি পেল। তাই শুরু হল অত্যাচার। যে মানুষদের সংগ্রামের ফলে একটা
জাতি জেগে উঠেছিল, তাদের স্বমূলে বিনাশ করার জন্য দেশভাগের বলি স্বরূপ তাদের
পাঠানো হলো উড়িষ্যার কালাহাণ্ডি, মহারাষ্ট্রের গড়চিলোরী, আন্দামান, নৈতিতাল
ইত্যাদি গহন জঙ্গলে। যার ফলে হাজার হাজার মানুষের প্রাণ গেল অনাহারে। পশুর মতো
বদতরো জীবন যাপন করতে বাধ্যে হলো তারা।
তবে এই জাতির একটাই গুণ এরা সহজে ধ্বংস হয়না। তাই ধীরে ধীরে গড়ে তুলল আবার
বসবাসোপযোগী ব্যবস্থা। তারা ভুলে যায়নি গুরুচাঁদ ঠাকুরের শিক্ষা আন্দোলনকে। তাই তারা
সন্তানদের শিক্ষিত করে তুলল। আর বাবা সাহেরের দেওয়া সাংবিধানিক রক্ষা কবচ
সংরক্ষণের জন্য সুযোগ পেলে শিক্ষা গ্রহণ ও
সরকারী চাকরিতে। অতি কষ্টে হলেও ধীরে ধীরে তারা ফিরে পেতে চলেছিল পুরানো অধিকারকে।
মহাপ্রাণের এই নিঃস্বার্থ বিলিদানকে ব্রাহ্মণ্যবাদী
চক্তান্তে কালিমালিপ্ত করা হচ্ছে। যে কাজে সামিল হয়েছে তাঁরই স্বজাতির লোকেরা।
তাদের জবাব দিয়ে যোগেন্দ্রনাথ তাঁর জীবনের শেষ ভাষণে (5th
October 1968, Helencha, 24 parganas-N.) জানিয়েছন –
"হে আমার হিন্দু মুসলমান ভাইবোনেরা। প্রথমে সকলকে আমার শ্রদ্ধা ও
ভালবাসা জানাই। আমি বাগদহ কেন্দ্রে পূর্বেও দাঁড়িয়েছি। হেরেও গিয়েছি। নির্বাচণী
লড়াইয়ে হার জিত আছে। হেরেছি বলে আমি দুঃখীতও নই, ভেঙ্গেও পড়িনি। কারণ আমি চার বার মন্ত্রী হয়েছে। দু'বার রাজ্যে, দু'বার কেন্দ্রে। একবার মন্ত্রী হলে অনেকেই গাড়ী বাড়ী
ব্যাঙ্ক ব্যালান্স করে থাকেন। আমি চার বার মন্ত্রী হয়েও নিজের জন্য কিছুই করিনি।
সারা জীবন অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছি এবং প্রতিকারের চেষ্টা করেছি।
যুগ যুগ ধরে অনুন্নত অবহেলিত নিপিড়িত জনগোষ্টি
যাঁরা সামাজিক ও আর্থিক অবস্থায় দূর্বল ও পিছিয়ে রয়েছেন। শিক্ষার আলো পাননি।
শিক্ষার অভাবে চাকুরীতে অধিকার ছিল না। তাদের জন্য সংরক্ষণের বিশেষ সুবিধা আদায়
করার চেষ্টা করেছি। তারা যদি শিক্ষিত হয়, চাকুরী পায় তাহলে তাদের আর্থিক ও সামাজিক
উন্নতি হবে। এতে তাদের প্রতি যে হিংসা বিদ্বেশ ও অস্পৃশ্যতার অভিশাপ আছে তা থেকে
মুক্ত হবে।
বর্ণহিন্দু ভাইয়েরা সামাজিক আর্থিক শিক্ষা ও চাকুরী ক্ষেত্রে উন্নত আছেন ।
তাদের ভাগের কিছুই ক্ষতি হয়নি। তাদের ভাগের অংশও কেড়ে নেইনি। পিছড়ে বর্গের লোকেদের
কোটা মাফিক সামান্য কিছু সুযোগ সুবিধা আদায় করতে সংরক্ষণ বা রিজার্ভেশনের জন্য
সংগ্রাম করেছি।
একটা নিদির্ষ্ট সীমা রেখা থেকে যদি
সবল ও দূর্বলের প্রতিযোগিতা হয় তবে, দূর্বল ব্যক্তি কোনক্রমেই লক্ষ্য স্থানে পৌঁছতে পারবে না। তাই
তাদের কোটা মাফিক বিশেষ সুবিধা দিয়ে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছি। এতে অন্যায় কোথায়? এর ফলে বর্ণবিদ্বেশ হিংসা নিন্দা
কমবে। সামাজিক সার্বিক সাম্য আসবে।
যে হরিজনদের প্রতি উপদেশ বানী দিয়ে গান্ধীজি
হয়েছেন মহাত্মা, আর আমি সে কাজ কার্যে পরিনত করতে গিয়ে হয়েছি দুরাত্মা ও সাম্প্রদায়িক।
ইহাই অদৃষ্টের পরিহাস।
যখনই কোন বর্ণহিন্দু ভাই আমার কাছে কোন চাকুরী বা কোন সুযোগ, সুবিধার জন্য গিয়েছেন, আমি অগ্রভাগে তাদের কাজ করে দিয়েছি। কারণ কেহ বলতে
না পারেন মন্ডল তার নিজের জাতের লোক ছাড়া অন্য সম্প্রদায়ের কাজ করে না।
বর্ণ হিন্দু ভাইয়েদের কাছে আমার অনুরোধ আমাকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করুন। দেশ ভাগের জন্য আমাকে দায়ী করা হয়। মন্ডল দেশ ভাগ করেছে। সে
সম্বন্ধে বলি, দেশ ভাগের ব্যাপারে আমার কোন ক্ষমতা ছিল না। কংগ্রেস
কমিটি ও মুসলিম লীগ উভয় পার্টির নেতাগণ
মিলিত সিদ্ধান্ত নিয়ে বৃটিশ সরকারের কাছে স্বাধীনতার দাবী জানায়। বৃটিশ সরকার
মুসলিম লীগ ও কংগ্রেস উভয়ের দেশ ভাগের দাবী মেনে ভারত ও পাকিস্থানের জন্য পৃথকভাবে
স্বাধীনতা দেয়। তাই ভারত ভাগ করে ভারত ও পাকিস্থান পৃথক রাষ্ট্র তৈরী হয়। তবুও দেশ
ভাগের জন্য আমাকে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হয় কেন?
আমি
যোগেন মন্ডল বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন করেছি। এ জন্য আমাকে বহু কটুক্তি
শুনতে হয়েছে। যেমন “বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে যোগেন মন্ডলের ওকালতি।” আমি বুঝেছি বঙ্গ
ভঙ্গ হলে হিন্দু মুসলমান উভয়েই
ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। বিশেষ করে অশিক্ষিত ও গরীব যারা সামান্য চাষ আবাদ করে জীবিকা
নির্বাহ করেন তাদের ভাগ্যে চরম দূর্দশা নেমে আসবে। তখন কংগ্রেস ও কমিউনিষ্ট পার্টি
বঙ্গ ভঙ্গ সমর্থন করে আমাকে গালমন্দ করেছেন।
দেশ ভাগের পরে আমি পূর্বঙ্গে গেলাম কেন?
ইহার উত্তর বহু জন সভায় বহুবার দিয়েছি। দেশ ভাগ যখন অবধারিত হয়ে গেল তখন আমার নেতা
ডঃ বি. আর. আম্বেদকরের সাথে আলোচনা করি
এবং পরামর্শ নেই। তিনি বলেন, “মিঃ মন্ডল কংগ্রেস ও লীগের দেশ ভাগের প্রস্তাব বৃটিশ
সরকার নেমে নিয়েছেন। আমাদের কথা শোনেননি। এক্ষেত্রে আমরা কি করতে পারি? কাজেই তুমি
পূর্ব বঙ্গে যাও। দেখো পূর্ব বঙ্গে বহু অনুন্নত হিন্দু থেকে যেতে বাধ্য হবেন। তুমি
গিয়ে তাদের সেবা করো।” তাই আমি পূর্ববঙ্গে যাই। আমাকে লীগ মন্ত্রীসভায় আইন মন্ত্রী পদে বহাল
করেন। ১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীন হল, আর ১৯৫০ সালে পুনরায় ভারতে আসি। আমি পাকিস্থানে
করাচি থাকাকালীন পূর্ব বঙ্গে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু
হল। ঢাকা ত্রিপুরা নোয়াখালী খুলনা ফরিদপুর প্রভৃতি জেলায় হিন্দুদের উপর চরম
অত্যাচার খুন হত্যাকান্ড চলতে লাগল। অসহায় হিন্দুরা আমাকে বহু চিঠিপত্র টেলিগ্রাম
করাচিতে পাঠাতে লাগল। পাক সরকার কৌশলগত ভাবে আমাকে জানতে দেয়নি। যখনই আমি জানতে
পারলাম তখনই পূর্ববঙ্গে ছুটে গিয়ে অসহায় হিন্দুদের পাশে দাঁড়িয়েছি। দাঙ্গা
বিদ্ধস্ত এলাকায় ঘুরে ঘুরে বহু জনসভা করে বক্তৃতা দিয়ে তাদের শান্তনা দিয়েছি। আমার
অনেক বক্তৃতার অংশই শাসকগোষ্ঠির কাছে
দেশোদ্রহিতার রূপ নিয়েছিল। আমি করাচি পৌঁছানোর আগেই আমার
বিরুদ্ধে গোয়েন্দা রিপোর্টের পাহাড় জমে গেছে।
ইত্যাদি বহু ঘটনার পরে যখন বুঝতে পারলাম পাকিস্থানে হিন্দুদের বসবাস নিরাপদ
নহে। পাকিস্থান থেকে সংখ্যালঘুদের কল্যানের জন্য যত দাবিই করেছি, পাক সরকার তা
মানেনি। কথা দিয়েও কথা রাখেনি। যে হিন্দুদের কল্যানের জন্য পাকিস্থানে গিয়েছি
তাদের দুঃখ দুর্দশার প্রতিকার করতে না পারলে সেখানে থাকা উচিত হবে না বিবেচনা করেই
ভারতে চলে আসি। ভারতে এসে অল্প কয়েকদিন পরেই আমার সমস্ত অভিযোগ লিপিবদ্ধ করে পাক
সরকার প্রধান মঃ লিয়াকৎ আলীর কাছে পদত্যাগ পত্র পাঠিয়ে দিয়েছি। সমস্ত হিন্দু
ভাইদের ভারতে আসার আহ্বান জানিয়েছি। আমার পদত্যাগ পত্রের কপি বাংলা ইংরাজী বহু
সংবাদ পত্রেই প্রকাশিত হয়েছে।
আমি ভারতে আসার পরেও তিন বছর ভারত ও পাকিস্থানের যাতায়াতের দরজা খোলা ছিল।
কেন এখনও পূর্ব বঙ্গে হিন্দুরা রয়েছেন? ইহার কারণ ঐ উক্ত একই বঙ্গভঙ্গের অভিশাপ।
বাগদাবাসী ঘোষ কপালিক মাহিষ্য ভাইদের কাছে আমার আবেদন আপনারাতো গান্ধীজির
কথায় একই হিন্দুদের মধ্যে ভেদাভেদ নেই বলে তাঁর সাথে পংতিভোজের মাধ্যমে জল চলের
সামিল হয়েছেন। কিন্তু শিক্ষায় ও চাকুরী ক্ষেত্রে আমাদের চেয়েও পিছে পড়ে আছেন। আসুন
আমাকে ভোট দিন। আপনাদের উন্নতির জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করবো।
মুসলমান ভাইদের বলছি- আপনারা আমাকে ভোট দিবেন না কেন? আপনারাও আমার অবহেলিত
ভাইদের একই জমির পাশাপাশি চাষ আবাদ করি।
চাষবাসের গল্প করি। একই জমির আলে বসে নাস্তা খাই। আপনাদের ও আমাদের অবস্থা একই
প্রকার। সে জন্যই আমি লীগ মন্ত্রী সভায় যোগদান করি। তার জন্য আমাকে “যোগেন আলী মোল্লা”
খেতাব নিতে হয়েছে। লীগ মন্ত্রী সভায় হিন্দু মন্ত্রীও ছিলেন, যেমন ফজলুল হক মন্ত্রী
সভায় শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী ছিলেন। তাকে বলা হত “শ্যামাহক মন্ত্রী সভা”। তারা কেউই
মোল্লা পদবীতে ভূষিত হননি। আপনারা আমাকে ভোট দিন। আপনাদের কল্যানের জন্যও চেষ্টা করবো। আমি জয়ী হতে পারলে হিন্দু মুসলমান
জাতিধর্ম নির্বিশেষে জন সেবা করবো। ইাই আমার
বাসনা।
পুনরায় বলি আমি চার চার বার মন্ত্রী হয়েও জনহিতকর কাজ ছাড়া নিজের জন্য কিছু
করিনি। এক ভদ্রলোক সৌজন্য বশতঃ থাকার জন্য আমাকে একটা ঘর দিয়েছেন। সামান্য একটা এম.
এল. এ. হলেই ধন্য হব মনে করিনা। জনহিতকর কর্মই আমার জীবনের ব্রত। কিছু ক্ষমতা না
পেলে কিছু করা যায় না। তাই আমাকে ভোট দিয়ে জয়ী করে আইন সভায় পাঠান।
সকলকেই আমার শ্রদ্ধা ভালবাসা জানিয়ে বক্তব্য শেষ করছি।”
(তথ্য
সংগ্রহ – লেখক- মুকুন্দ লাল সমাদ্দার, মহাপ্রাণের আন্দোলনের সংগী, হেলেঞ্চা
নিবাসী)
উপসংহারঃ- হরি-গুরুচাঁদ, মহাপ্রাণ ও বাবা সাহেবের আন্দোলন
প্রসুত অধিকারকে হরণ করার জন্য শুরু হয়,
সংরক্ষণ সমাপ্তিকরণ ও ২০০৩ সালের কালা কানুন, নাগরীক সংশোধন বিল। সেই বিল আরো কঠোর হয়ে উঠল আজকের দিনে। শুরু হল NRC National Register of Citizens যেখানে ঘোষণা করে হয়েছে, যারা ভারতে এসেছে অন্য দেশ থেকে আর
তারা যদি বৈধভাবে নাগরিকত্ব গ্রহণ না করে তাহলে তারাতো বেনাগরিক, এমনকি তাদের
সন্তানরাও বেনাগরিক। আমরা জানি, ইন্টার নেশানাল নাগরিকত্বের নিয়মানুসারে যদি
প্লেনে যাতায়াত কালে কোন বাচ্চা জন্ম গ্রহণ করে, তবে যেই দেশের উপর দিয়ে সে সময়ে
প্লেন যাচ্ছিল সেই দেশের নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকারী। আর এখানে বলা হচ্ছে, পিতা মাতা
যদি বৈধ নাগরিক না হয় তাহলে তাদের সন্তানরাও অবৈধ নাগরকি। যারা ভারত বর্ষে বিগত
৫০/৬০ বছর ধরে বসবাস করছে স্থায়ীভাবে আর তারা সকলে বেনাগরিক বলে পরিগণিত হচ্ছে। এর
থেকে মর্মান্তিক পরিস্থিত আর কি হতে পারে?
এইভাবে বাংলার সমতাবাদী
আন্দোলনকে পুনরায় ধ্বংস করে দেবার চেষ্টা শুরু হয়েছ। শুধুবাংলা নয়, ভারতের সমস্ত
মূলনিবাসীদের পুনরায় গোলাম বানানোর গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। কিন্তু গোলামী থেকে মুক্ত
হওয়ার জন্য বামসেফ ও অন্যান্য সমতাবাদী বিচার ধারার যে আন্দোলন চলছে তাতে একদিন এই
আন্দোলন সফল হবে বলে আশাকরি।
________________________
Comments
Post a Comment