মতুয়া ধর্ম
দর্শন এবং ‘সোঁটা’
লেখক –
প্রদীপকুমার বিশ্বাস
মতুয়া
দর্শনে নিশান, নিশানকে ধারন করবার কুড়া বা সড়কি,
কাঁসর, ডঙ্কা, শিঙ্গা(শিঙা) এর গুরুত্বপূর্ণ অন্তর্নিহিত অর্থ রয়েছে। তেমনি মতুয়া দলপতিদের হাতে সোয়া একহাত (২২.৫ ইঞ্চি) দন্ড থাকে। যে দন্ডটি সোঁটা (stick) (এটাই সঠি বানান) নামে মতুয়া সমাজে পরিচিত। এই সোঁটা নামক দন্ডটি মতুয়া দর্শনে গুরুত্বপূর্ণ অর্থবাহক। সোঁটা তৈরির বিধান বা কারণ না জানলে প্রতিবাদী অবৈদিক মতুয়া দর্শনের বিশেষত্ব অনুধাবন করা যাবেনা।
কাঁসর, ডঙ্কা, শিঙ্গা(শিঙা) এর গুরুত্বপূর্ণ অন্তর্নিহিত অর্থ রয়েছে। তেমনি মতুয়া দলপতিদের হাতে সোয়া একহাত (২২.৫ ইঞ্চি) দন্ড থাকে। যে দন্ডটি সোঁটা (stick) (এটাই সঠি বানান) নামে মতুয়া সমাজে পরিচিত। এই সোঁটা নামক দন্ডটি মতুয়া দর্শনে গুরুত্বপূর্ণ অর্থবাহক। সোঁটা তৈরির বিধান বা কারণ না জানলে প্রতিবাদী অবৈদিক মতুয়া দর্শনের বিশেষত্ব অনুধাবন করা যাবেনা।
প্রথমে জানা দরকার সোঁটার নির্মাণ শৈলী। সোঁটা
অবশ্যই তৈরি হতে হবে নিম ও বেল কাঠের যৌথ সংমিশ্রণে। সোয়া একহাত বিশিষ্ট নিম ও বেল
কাঠের অর্ধবৃত্তাকার লম্বা অবয়ব আকারের মিলন ঘটিয়ে লম্বা গোল আকৃতির সোঁটা(দন্ড)
নির্মাণ হতে হবে। সুদক্ষ
কাঠ শিল্পী এমনভাবে তৈরি করেন দেখে মনে হবে একটিমাত্র কাঠ দিয়ে তৈরি। আসলে ওটা নিম
ও বেল কাঠের মিশ্রণ যা হল সোঁটা। এরকম সোঁটা প্রথম দেখতে পাই দেশভাগের বিষময়
ফলস্বরূপ পূর্বপাকিস্থান(অধুনা বাংলাদেশ) থেকে আগত নদীয়া জেলার একটি পারিবারিক
হরিমন্দিরে। তৎকালীন সময়ে অস্পৃশ্য সমাজের
নিম ও বেল কাঠ ব্যবহারের অধিকার ছিলনা। নিম
ও বেল গাছের পাতা, ছাল, ফল, শিকড়, নির্যাসে (রস) ৮১ রকমের রোগ সারে। এক কথায় নিম ও
বেল গাছের সবটাই বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক। এমন গুরুত্বপূর্ণ দু’টি গাছের ব্যবহারে
সর্বময় কর্তা ছিল অমানবিক ষড়যন্ত্রকারী ব্রাহ্মণ সমাজ। বৈদিক ধর্মের
স্বার্থান্বেষী বৈদিক বেদ বিধানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ স্বরূপ নিম- বেল গাছের সার্বিক
ব্যবহারের অধিকার দিলেন হরিচাঁদ ঠাকুর।
প্রতিবাদী প্রতীক হিসাবে দলপতিদের, পাগল, গোঁসাইদের হাতে তুলে দিলেন নিম-বেল কাঠের সংমিশ্রণের দন্ড; যার নাম দিলেন সোঁটা।
নিম ও বেল কাঠের সংমিশ্রণে তৈরি সোঁটা মতুয়া পাগল-গোঁসাইগণ পরিষ্কার জলে ধুয়ে
একরাত জলে ভিজিয়ে রেখে সেই জল খালি পেটে বিভিন্ন ব্যাধিগ্রস্থ মানুষকে সেবন
করাতেন। অর্থাৎ হরিচাঁদ ঠাকুর রোগমুক্তির উপায় স্বরূপ বেল ও নিম গাছের ব্যবহার
মতুয়াদের বুঝিয়ে ছিলেন। আর এখানেই হরিচাঁদ ঠাকুরের দূরদর্শিতা বিজ্ঞান ভাবনার
প্রমান পাওয়া যায়। বর্তমানে চিকিৎসা বিজ্ঞানও হরিচাঁদ ঠাকুরের জ্ঞানকে কাজে লাগাচ্ছে।
সোঁটা নামকরণের অন্তর্নিহিত তাৎপর্যঃ-
“সোঁটা” শব্দের অর্থ হল দন্ড। দন্ড শব্দটির
আভিধানিক প্রতি শব্দ হল সোঁটা। সোঁটা শব্দটিকে
ভাঙ্গলে হয় সোঁ- টা। সোঁ-এর আভিধানিক অর্থ হল ‘বেগে গমন করবার অনুকার শব্দ’। টা- হল
সংখ্যা বোধক শব্দ। অর্থাৎ মতুয়া দলপতি সোঁটাটিকে যেদিকে নির্দেশিত করবেন বাকি
মতুয়া সৈন্য বা ভক্তদের সেই দিকে দ্রুত বেগে ধাবিত হতে হবে। উদ্দেশ্য সাম্য
প্রতিষ্ঠা, অধিকার রক্ষা। পাশাপাশি অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা। তাই দর্শনগত
ভাবনা থেকে মতুয়া সমাজে দন্ডটির পরিচিত সোঁটা নামে।
দলপতির হাতে
কেন সোঁটা?
বিভিন্ন সেনা বাহিনীর পোশাক ও বিভিন্ন চিহ্ন
দেখে সেনাপতি বা দলপতিকে চেনা যায়। তেমনি মতুয়া দলের সেনাপতিরূপ দলপতিকে চেনার
উপায় হল ঐ সোঁটা। দলের বুদ্ধিমান জ্ঞানী, সাহসী, মতুয়া দর্শনকে সঠিকভাবে বুঝতে পারা ও দলকে সঠিক পথে পরিচালিত করবার
দূরদর্শিতা সম্পন্ন ব্যক্তি হবেন দলপতি। আর সেই অভিজ্ঞ দলপতির হাতে থাকবে সোঁটা।
অর্থাৎ শৃঙ্খলা পরায়ণতা মতুয়াদের বিশেষ গুণ থাকতে হবে। বর্তমান মতুয়াদের মধ্যে
শৃঙ্খলতার বড়ই অভাব।
কিন্তু অতীব পরিতাপের বিষয় সোঁটার গুণগত ও
দর্শনগত ভাবনার মতুয়া দলপতির বড় অভাব। তাই মতুয়া সমাজ আজ দিক ভ্রান্ত।
হরিচাঁদ-গুরুচাঁদ দর্শন উপলব্ধিতে অসমর্থ অজ্ঞানতার অতলে নিমজ্জিত মতুয়া নামধারী
স্বঘোষিত ব্যক্তি বৈদিকবাদীদের সেবায় সদা ব্যস্ত। ফল স্বরূপ মতুয়া সমাজ আজ শোষিত,
বঞ্চিত। তাদের কোনো দেশ নেই। তাঁরা আজ বেনাগরিক!!
----------------------
Comments
Post a Comment