Skip to main content

“মতুয়া ধম্ম” স্বতন্ত্র ধম্মের স্বীকৃতি প্রসঙ্গে লেখক - প্রদীপ কুমার বিশ্বাস


“মতুয়া ধম্ম” স্বতন্ত্র ধম্মের স্বীকৃতি প্রসঙ্গে
প্রদীপ কুমার বিশ্বাস
    শুরুতেই প্রশ্ন আসতে পারে “মতুয়া ধর্ম” না বলে আমি কেন “মতুয়া ধম্ম” বলছি। এক্ষেত্রে অবশ্যই জানা দরকার “ধম্ম” এবং “ধর্ম” কখনই এক নয়। ‘ধর্ম’ শব্দটা সংকীর্ণ অর্থে ব্যবহৃত হয়। ধর্ম একজন ব্যক্তি বিশেষের মত। তাছাড়া ‘ধর্ম’ শব্দের মধ্যে রয়েছে কাল্পনিক, অবৈজ্ঞানিক, জন্মান্তরবাদ, কুসংস্কার যুক্ত ভাবধারা। কোনো ব্যক্তি কখনই সর্বজ্ঞানী হতে পারে না।  তাই কোনো ব্যক্তি নির্দেশিত নির্দেশিকা ত্রুটিমুক্ত নয়। ধর্মের মধ্যে রয়েছে কর্মকে তুচ্ছ করে মৃত্যুর পর অবাস্তব আত্মার অবস্থান নিয়ে মানুষকে ঠকানো। অপর দিকে ‘ধম্ম’ কোনো ব্যক্তি  বিশেষের মত বা নির্দেশ নয়। ‘ধম্ম’ শব্দের অন্তর্নিহিত দর্শন হ’ল সৎজ্ঞান, সৎকর্ম এবং উভয়ের সমন্বয়ে সমস্ত মানুষের হিত বা কল্যান সাধন করা। যেখানে কোনো জন্মান্তরবাদ, স্বর্গ-নরক এই  ধরণের কোনো কল্পনার স্থান নেই। তাই সংকীর্ণ অর্থে ‘ধর্ম’ মানুষের মধ্যে সামাজিক বা সম্প্রদায়গত বিদ্বেষ তৈরি করে। যার বর্তমান স্বরূপ সারা বিশ্বে ধর্মীয় মৌলবাদের মতো অকল্যানকারী অসাম্যবাদের বিভিষীকাময় রূপ। যে সংকীর্ণ ধর্মীয় মৌলবাদের বিষ ভারতবর্ষে প্রকটভাবে দৃশ্যমান।

     হরিচাঁদ ঠাকুর “ধর্ম” নয়, “ধম্ম” দর্শনের কথা বলেগেছেন। যে “ধম্ম” দর্শনের চিন্তাদর্শন জ্ঞানপুরুষ তারক সরকার সুকৌশলে “হরিচাঁদ চরিত্র সুধা” গ্রন্থে তুলে ধরবার প্রয়াস করেছিলেন। কিন্তু তারক সরকারের মূলচিন্তা দর্শনের প্রায় সবটাই পরিবর্তন ঘটিয়েছেন হরিবর  সরকার, যাদব বিশ্বাস এবং নেপথ্যে ভূমিকা পালন করেন শশীভূষণ ঠাকুর। তারক সরকারের লেখা “হরিচাঁদ চরিত্র সুধা”  গ্রন্থের নাম পরিবর্তন করে “শ্রীশ্রী হরিলীলামৃত” নাম দিয়ে হরিবর সরকার সেটা প্রকাশ করেন।
 তারক সরকারের লেখার যে বারবার পরিবর্তন করা হয়েছে তার প্রমান পাই “শ্রীশ্রী  হরিলীলামৃত” গ্রন্থে।
 যাদব বিশ্বাস হয় এ গ্রন্থ লেখক।
মল্লিক লেখায় তারে হইয়া পাঠক।।
                (শ্রীশ্রী হরিলীলামৃত ১ম সংস্করণ, পৃষ্ঠা সংখ্যা ২৪৮)
 *  *   *  *  *  *   * *   *
হরিবর সরকার পূর্ব্বেতে লিখিত।
লেখক যাদব হন তস্যবংশ জাত।।
হরিবর যাদবের হন খুল্লতাত।
পুনর্ব্বার এই গ্রন্থ তার করাঙ্কিত।।
বর্ণাশুদ্ধি সংশোধক এই হরিবর।
বহু পরিশ্রম করি লিখে চারিবার।। (ঐ পৃঃ ২৪৯)

     এর থেকেই প্রমানিত হয় হরিলীলামৃত গ্রন্থে তারক সরকারের লেখা খুব বেশি নেই। বার বার তারক সরকারের লেখার উপর কলম চালানোর সৌজন্যে “হরিচাঁদ চরিত্র সুধা” গ্রন্থের মধ্যে হরিচাঁদ ঠাকুর তথা তারক সরকারের চিন্তাদর্শনের অপমৃত্যু ঘটে। যা কিনা পরিবর্তিত  ‘শ্রীশ্রীহরি লীলামৃত’ গ্রন্থ রূপে প্রকাশিত হয়। 
  
    তারক সরকার হরিচাঁদ ঠাকুরের দর্শনকে কখনই ‘ধর্ম’ বলেননি। বলেছিলেন ‘ধম্মতারক সরকারের ‘ধম্ম’ শব্দটির বিকৃত ঘটিয়ে ‘বর্ণাশুদ্ধি সংশোধন’ নামে হরিবর সরকার ‘ধম্ম’ শব্দটির সঙ্গে ‘রেফ-র’ চিহ্নটি জুড়ে দিয়ে ‘ধর্ম্ম’ লেখেন। ‘ধম্ম’ শব্দের সূক্ষ্মতত্ত্ব না বুঝে হরিবর সরকার ‘ধর্ম্ম’ লিখে ‘ধর্ম’ বলে হরিলীলামৃতে প্রকাশ করেছেন।

    হরিচাঁদ ঠাকুর, আর্য পূর্ব বা বৈদিক সভ্যতা প্রতিষ্ঠার পূর্বে ভারতবর্ষে যে সাম্যবাদের দর্শন ছিল সেই চিরন্তর দর্শনই প্রচার করতে চেয়েছিলেন। তাই তারক সরকার লিখলেন-
প্রচারিল গূঢ়গম্য সূক্ষ্ম সনাতন ধম্ম। (ঐ পৃঃ ২)  

    প্রসঙ্গত জেনে রাখা দরকার এই পংতির ‘ধম্ম’ শব্দটির বিকৃতি ঘটিয়ে হরিলীলামৃতে হরিবর সরকার ‘ধর্ম্ম’ লিখেছেন। যা সম্পূর্ণরূপে অর্থগত ও ব্যাকরণগত দু’ভাবেই সঠিক নয়। ‘সূক্ষ্ম’  শব্দের অর্থ অনেক জ্ঞাণী মানুষের গবেষণালব্ধ সুগভীর জ্ঞান। ‘সনাতন’ শব্দের অর্থ চিরন্তন সত্য। আর চিরন্তন সত্য হচ্ছে সৃষ্টি তত্ত্বের মাটি, জল, বাতাস, তাপ। এই চার উপাদানের সমন্বয়ে জীবনের সৃষ্টি বা জন্ম। সৃষ্টি বা জন্ম যেমন সত্য, তেমনি সৃষ্টি বা জন্ম নেওয়া জীবের (প্রাণী, উদ্ভিদ) মৃত্যু বা ধ্বংস হবে এটাও সত্য। সৃষ্টির জীব ধ্বংস হয়ে মহাশূন্যে বিলীন বা স্ব স্ব উপাদানে মিশে যাবে। অর্থাৎ ক্ষিতি (মাটি), অপ (জল), তেজ (তাপ বা আলো), মরুৎ (বায়ু) ও ব্যোম  (মহাশূন্য) এই পঞ্চভুতের ভূমিকাই চিরন্তন সত্য অর্থাৎ সনাতন। এই সৃষ্টিতত্ত্বে এবং বিনাশতত্ত্বে পঞ্চভুতের বাইরে কিছু নেই। পঞ্চভুতের মধ্যে বিপরীত দু শক্তি ঋণাত্মাক ও ধনাত্মাক শক্তি অর্থাৎ পিতৃশক্তি ও মাতৃশক্তির সমন্বয়ে জীবজগতের সৃষ্টি প্রকৃতির নিয়মে সৃষ্টি, প্রকৃতির নিয়মে বিনাশ; এটাই সূক্ষ্ম সনাতন দর্শন। যাকে বলে চিরন্তন সত্য 
    এই “সূক্ষ্ম সনাতন” – অর্থাৎ চিরন্তন সত্যকে মেনে নিয়ে সৃষ্ট জীবের সার্বিক কল্যানের জন্য সৎজ্ঞা, সৎকর্ম – এ দু’য়ের সমন্বয়ে সৃষ্ট জীবের কল্যান সাধন করার চিন্তাদর্শনই “ধম্ম”
     তাই “সূক্ষ্ম সনাতন ধম্মে” কোনো ব্যক্তি বিশেষ নয়; অনেক জ্ঞানী মানুষের সাধনা বা ধ্যান বা পরীক্ষিত গবেষণা লব্ধ জ্ঞানই গ্রহণ যোগ্য। তাই হরিচাঁদ ঠাকুর বলেছেন-
পূর্ব্বে ছিল মুনিগণ করিতেন ধ্যান।  
এবে সেই ধ্যান হয় জ্ঞানেতে বিজ্ঞান।। (ঐ পৃঃ ৩৬)
     এই উদ্ধৃতি প্রমান করে হরিচাঁদ ঠাকুর বহিরাগত আর্য সভ্যতা তথা সংকীর্ণ বৈদিক ধর্মের বিপক্ষে অবস্থান করে “সূক্ষ্ম সনাতন ধম্ম” দর্শনের কথাই প্রচার করেছেন। প্রচলিত অর্থে জাতি, ধর্ম, বর্ণ বিশেষে তিনি কোনো বিভাজন করেননি বা রাখেননি। অর্থাৎ হরিচাঁদ ঠাকুর ছিলেন  সাম্যবাদের প্রতীক।
    কিন্তু দুঃখের বিষয় হরিচাঁদ ঠাকুরের সাম্যবাদী সূক্ষ্ম সনাতন ধম্মকে হরিবর সরকার, যাদব  বিশ্বাস বৈদিকতার মোড়কে আবদ্ধ করে হরিলীলামৃত গ্রন্থ প্রকাশ করে হরিচাঁদ ঠাকুরের ধম্ম দর্শনকে বৈদিক ধর্মের দ্বারা চাপা দিয়েছেন। আর বিশ্বাস ঘাতকতা করেছেন তারক সরকারের লিখিত গ্রন্থ “হরিচাঁদ চরিত্র সুধা”-র সঙ্গে। শুধু তাই নয় হরিচাঁদ চরিত্র সুধা গ্রন্থের পান্ডুলিপিও নষ্ট করেছেন।
    
    হরিলীলামৃত গ্রন্থে বৈদিক বিরোধী যে বাণী এবং সূক্ষ্মসনাতন ধম্মের স্বপক্ষে যে বাণী, সেটুকুই  তারক সরকারের লেখা তথা হরিচাঁদ ঠাকুরের বাণী বলে আমি মনে করি। আমাদের সকলেরই তাই ধরে এবং মেনে নেওয়া ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই বলে আমি দৃঢ়ভাবে তা বিশ্বাস করি। সমস্ত মতুয়াদের কাছেও তা স্বীকার করে নিতে বিনীতভাবে আবেদন জানাই।  

“মতুয়া ধম্ম” স্বতন্ত্র ধম্মের আবেদনের প্রসঙ্গেঃ-
     “মতুয়া ধম্ম”কে “মতুয়াধর্ম” নাম দিয়ে সতন্ত্র ধর্মের স্বীকৃতি পাওয়া সম্ভব নয়। স্বতন্ত্র ধর্মের স্বীকৃতি পেতে গেলে ভারতবর্ষে দু’টি পথ রয়েছে।

 (১) ভারতের সর্বোচ্চ বিচারলয়ের (সুপ্রিম কোর্ট) অনুমোদন।
(২) সংসদের উভয় কক্ষে (লোকসভা ও রাজ্যসভা) বিল পাশ হবার পর রাষ্ট্রপতির অনুমোদন।

    দু’টি পথের কোন ক্ষেত্রেই মতুয়াদের পক্ষে মসৃণ নয়। সর্বোচ্চ বিচারালয়ে স্বতন্ত্র ধর্মের স্বীকৃতির দাবি নিয়ে গেলে “মতুয়াধর্ম স্বতন্ত্র ধর্ম”- এর পক্ষে কোনো প্রমান্য ধর্ম গ্রন্থ নেই। ‘শ্রীশ্রী হরিলীলামৃত’ গ্রন্থ “মতুয়াধর্ম স্বতন্ত্র ধর্ম”-এর সহায়ক গ্রন্থ কোনভাবেই নয়। কারণ হরিলীলামৃত গ্রন্থে হরিচাঁদ ঠাকুরকে প্রচলিত হিন্দু ধর্মের নাগপাশে বেঁধে রাখা হয়েছে। প্রচলিত হিন্দু ধর্মের রাম; পরবর্তীতে কৃষ্ণ রূপে জন্ম নিয়েছে। কৃষ্ণ, পরবর্তীকালে চৈতন্যদেব রূপে জন্ম নিয়েছে।   চৈতন্যদেব পরবর্তীকালে হরিচাঁদ ঠাকুর রূপে জন্ম নিয়েছে। রাম, কৃষ্ণ, চৈতন্যদেব এবং হরিচাঁদ ঠাকুর – একই ব্যক্তি জন্মান্তরবাদে নাম এবং স্থান পরিবর্তন হয়েছে মাত্র। তাই বর্তমানে যে হরিলীলামৃত; তাকে সর্বোচ্চ বিচারালয়ে মতুয়াদের স্বতন্ত্র ধর্ম গ্রন্থ হিসাবে এবং মতুয়া ধর্ম স্বতন্ত্র ধর্ম, এর কোনটাই প্রমান করা যাবেনা। সর্বোচ্চ বিচারালয় তাই কোন ভাবেই “মতুয়া ধর্ম’-কে  স্বতন্ত্র ধর্ম হিসাবে অনুমোদন দেবে না।

     (আমি ব্যক্তিগতভাবে ও বিশ্বস্ত সূত্রে জানি) প্রসঙ্গত অবশ্যই জেনে রাখা ভালো ‘রামকৃষ্ণ মিশন’ থেকেও চেষ্টা করা হয়েছে স্বতন্ত্র ধর্মের দাবী নিয়ে। রামকৃষ্ণ মিশন থেকে স্বতন্ত্র ধর্মের যে নামের পক্ষে যে গ্রন্থ প্রমান্য হিসাবে দেখিয়েছে তা প্রচলিত হিন্দু ধর্মের গ্রন্থের থেকে আলাদা বা ভিন্ন কিছু নয়। বিচারালয় তাই রামকৃষ্ণ মিশনের আবেদনকে খারিজ করে দেন। যদিও রামকৃষ্ণ মিশন কী নামের দাবিতে আবেদন করেছিল, সেটা খুব ধোঁয়াশার।
     রামকৃষ্ণ মিশনের সার্বিক ক্ষমতা মতুয়াদের থেকে কত বেশি তা পরিমাপ করা যায়না। সেখানে মতুয়া ধর্মের দাবী খুবই শক্তিহীন।
     শিখ ধর্মের- গ্রন্থসাহেব, ইসলাম ধর্মের– কোরান, খৃস্টান ধর্মের বাইবেল। বৌদ্ধ ধম্মের ত্রিপিটক প্রভৃতি ধর্মের/ধম্মের নির্দিষ্ট ধর্ম গ্রন্থে প্রচলিত হিন্দু ধর্মের কোন চরিত্রের নাম নেই। ভারতবর্ষে প্রচলিত হিন্দু ধর্মের চালক ব্রাহ্মণদের অত্যাচারে শিখ ধর্ম, বৌদ্ধ ধম্ম, জৈন ধর্মের উৎপত্তি। তাদের ধর্ম গ্রন্থে রাম- কৃষ্ণ- চৈতন্যদেব এবং তাদের পার্শ চরিত্র কোন দেব দেবীর উল্লেখ পর্যন্ত নেই। কিন্তু হরিলীলামৃতে রাম, কৃষ্ণ, চৈতন্য সহ বিভিন্ন দেব দেবীর সমর্থন রয়েছে।  তাই বিচার ব্যবস্থা থেকে “মতুয়া ধর্ম এক স্বতন্ত্র ধর্ম” হিসাবে হরিলীলামৃত কে সামনে রেখে সেই অধিকার পাওয়া সম্ভব নয়।
    আমি যতদূর জানি চৈতন্যদেব প্রবর্তিত ধর্ম; ইতিহাস, সাহিত্যে স্বীকৃত। সংবিধান স্বীকৃত নয়।  কেননা সরকারী কোনো কাগজপত্রে ‘ধর্ম’ এর স্থানে বৈষ্ণব লেখা হয়না। কাস্ট (caste) সেখানে জেনারেল(General) শব্দটি লেখা হয়। অর্থাৎ বৈষ্ণবরাও ধর্মের স্থানে লেখেন হিন্দু, কাস্ট(caste)  এর স্থানে লেখেন জেনারেল বা সাধারণ। তাহ’লে বোঝা যায় যে, বৈষ্ণব ধর্মও স্বতন্ত্র স্বীকৃত ধর্ম নয়মতুয়াধর্মও সেই পথের অনুসারি। যদিও মতুয়া ধর্ম আলাদা বা স্বতন্ত্র ধর্মের স্বীকৃতি পেতে পারে; সে পথের উপায় ও মতামত পরে অভিহিত করছি।

    এবার আসাযাক দ্বিতীয় পথ – সংসদের উভয় কক্ষে বিল পাশ হবার পর রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের প্রেক্ষাপটে।
     ভারতবর্ষের সংসদের উভয় কক্ষে “মতুয়া ধর্ম, এক স্বতন্ত্র ধর্মের পক্ষে বিল উত্থাপন বা দাবী তোলার মত মতুয়াদের মধ্যে কোনো প্রতিনিধি নেই। মতুয়া পরিবার থেকে বিধায়ক, সাংসদ হন ব্রাহ্মণ্যবাদী রাজনৈতিক দলের নিয়ন্ত্রনাধীন হয়ে। তারা ব্রাহ্মণ্যবাদী শক্তির পদ সেবায় নিজেদের উৎসর্গ করে রেখেছেন।
    ব্রাহ্মণ্যবাদী চক্রান্তও আছে। মতুয়ারা যদি প্রচলিত হিন্দু ধর্ম থেকে বেরিয়ে যায় তাহলে ভারতবর্ষে হিন্দুর সংখ্যাটা সরকারী হিসাবে কমে যাবে। যে কারণে বৈষ্ণবদেরও প্রচলিত হিন্দু ধর্ম থেকে বেরিয়ে যেতে দেওয়া হয়নি। তাই ব্রাহ্মণ্যবাদী শক্তি ভারতবর্ষের দলিত সম্প্রদায় (মূলনিবাসী ভারতীয়) এর কোন সম্প্রদায়কে হিন্দুত্বের তকমা থেকে স্বাধীনতা দেওয়া হয়নি। ব্রাহ্মণ্যবাদী রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে থেকে কোনো বিধায়ক, সাংসদ যদি দলের নির্দেশ অমান্য করেন, তাহলে তাদের পরিস্থিতি হবে রামায়নে বর্ণিত শম্বুক এবং মহাভারতে বর্ণিত একলব্যের মতো। 

     “মতুয়াধম্ম স্বতন্ত্র ধম্মের স্বীকৃতি” পেতে পারে দু’টি পথেঃ-
                        (১) প্রমান্য স্বতন্ত্র গ্রন্থ।
          হরিলীলামৃত গ্রন্থে বৈদিক বা হিন্দু ভাবধারার সম্পূর্ণ বিষয় বাদ দিয়ে হরিলীলামৃত গ্রন্থ নবরূপে প্রকাশ করতে হবে। অর্থাৎ বৈদিক অবতার, দেব দেবী, জন্মান্তরবাদ – এই ধরণের কোনো বিষয় থাকবে না। এই ধরণের সূক্ষ্ম–সনাতনী ধম্মের ভাবনায় হরিচাঁদ ঠাকুরের দর্শন সম্বলিত গ্রন্থ প্রকাশ করতে হবে। তবেই দেশের সর্বোচ্চ বিচারালয়ে “মতুয়া ধম্ম” কে স্বতন্ত্র ধম্ম (মতান্তরে ধর্ম) হিসাবে দাবী করা যাবে। কারণ, আইনগত সুবিধা পাওয়ার জন্য হরিলীলামৃতের সংশোধন ও সংযোজন প্রয়োজন।
      
                       (২) মতুয়াদের আন্দোনের ধরণ।
      সমস্ত রকম কাগজ-পত্রে ধর্মের স্থানে “হিন্দু” না লিখে “মতুয়া” লিখতে শুরু করতে হবে।  আর ধর্মের স্থানে “মতুয়া” লিখতে না দিলে মতুয়াদের গণআন্দোলন বা বিভিন্ন সরকারী ভবনে গণআন্দোলন শুরু করতে হবে।
     এই দু’টি পথের কোনোটাই যদি মতুয়ারা করতে না পারেন তাহলে “মতুয়া ধম্ম স্বতন্ত্র ধম্ম” (মতান্তরে ধর্ম) হিসাবে কোনোদিনই স্বীকৃতি পাবেনা।

     প্রসঙ্গত বিশেষভাবে জানা দরকার “হিন্দু” ধর্মের প্রেক্ষাপটে ভারতের সুপ্রীম কোর্টে দীর্ঘ দিন ধরে শুনানি চলছে। সুপ্রীম কোর্ট “হিন্দু’ একটি ধর্ম এই মর্মে রায় ঘোষণা করতে পারেনি।
সুপ্রীম কোর্ট 1992, 1995, 2002, 2014 সালে সংবিধানের ১২৩ ধারার (Sub- Section - 3), 1951 Act অনুযায়ী বিভিন্ন সময়ে বিচারপতি T. S. THAKUR, J. S. VERMA, M. B. LOKUR, S. A. BOBDE, A. K. GOEL. U. U. LALIT, D. Y. CHANDRACHUD, L. NAGESHWAR RAO, A. K. PATNAIK, S. J. MUKHOPADHAYA, DIPAK MISRA, IBRAHIM KALILFULLA – যা বলতে চেয়েছেন তা হ’ল-
“HINDUTWA/HINDUISM IS A WAY OF LIFE OF THE PEOPLE IN THE SUBCONTINENT AND IS A STATE OF MIND – NOT A RELIGION.” অর্থাৎ হিন্দু/হিন্দুত্ব, জীবন ধারণের একটি পথ বা আদর্শ। হিন্দু রাষ্ট্র একটি ভাবনা। কিন্তু হিন্দু কখনই ধর্ম নয়।

সুপ্রীম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের মাননীয় বিচারপতিগণও এখনও পর্যন্ত “হিন্দু” কি “ধর্ম”? না  ধর্ম নয়- তার স্পষ্ট রায় দিতে পারেননি।  
     তাই মতুয়ারা বিতর্কিত হিন্দু ধর্ম বা হিন্দুত্বের ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে সূক্ষ্ম সনাতন ধম্মের অনুকরণে হরিচাঁদ ঠাকুরের “মতুয়া ধম্ম স্বতন্ত্র ধম্ম”-এর ভাবনায় ভাবিত হলে “মতুয়া ধম্মকে স্বতন্ত্র ধম্ম” হিসাবে প্রতিষ্ঠা করা সহজ হবে বলে মনে হয়।
_________________
  
       
      

       

     

Comments

  1. তারক গোঁসাই রচিত মূল 'হরিলীলামৃত'-র পাণ্ডুলিপি কি আপনি দেখেছেন ? না অন্য সকলের মতো ধারণা করছেন ?

    ReplyDelete

Post a Comment