Skip to main content

কুরু-পান্ডবের যুদ্ধের আদলে মতুয়ারা লেখক- প্রদীপ কুমার বিশ্বাস

কুরু-পান্ডবের যুদ্ধের আদলে মতুয়ারা
লেখক- প্রদীপ কুমার বিশ্বাস
       প্রথমেই মতুয়াদর্শনে বিশ্বাসী অসংখ্য মানুষের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছিকারণ, এই  পর্যালোচনায় আপনারা হয়তঃ আঘাত পেতে পারেন। কিন্তু আমার মুখ্য উদ্দেশ্য মতুয়ারা কিভাবে চক্রান্তের ফাঁসে আটকে ধ্বংস হচ্ছে তার দিকগুলি নির্দেশিত করা। আর মতুয়াদের ধ্বংসের পিছনে কে বা কারা তা বোঝানোর জন্য এই উপস্থাপনা। এই উপস্থাপনায় কোনো মতুয়াকে অসম্মানিত করা আমার উদ্দেশ্য নয়। বরং মতুয়াদেরই ভবিষ্যতের বিপদ থেকে সতর্ক করাটাই আমার উদ্দেশে। তাই অসংখ্য মতুয়াদের কাছে বিনীত আবেদন কোন প্রসঙ্গ উপস্থাপনায় আপনারা অসহিষ্ণু হবেন না। আপনারা বিচার বুদ্ধি দিয়ে বিষয়টা আন্তরিকভাবে ভেবে দেখবেন।

    অবতারনা করছি, কুরু- পান্ডবের ভ্রাতৃঘাটি যুদ্ধের।

 ধৃতরাষ্ট্র ও পান্ডুর দুই ভাই (বিদূর নামে অন্য এক ভাইও ছিল)ধৃতরাষ্ট্রের সন্তানেরা কৌরব বা কুরু নামে পরিচিত। পান্ডব সন্তানেরা পান্ডব নামে পরিচিত। অর্থাৎ জ্যাঠতুতো কাকাতুতো ভাইদের মধ্যে রাজ্যপাট এবং ক্ষমতার জন্য কুরু-পান্ডবদের মধ্যে যুদ্ধই কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ।
    কৌরব বা কুরু পক্ষের মুখ দূর্যোধন, পান্ডব পক্ষের মুখ যুধিষ্ঠীর। দূর্যোধন-এর প্রধান পরামর্শ দাতা নিজ মামা শকুনি। যুধিষ্ঠীর প্রধান পরামর্শ দাতা শ্রীকৃষ্ণ। মহাভারত এবং কুরুক্ষেত্রের সমগ্র ঘটনা থেকে ১২৭টি রাজ্যের রাজা এবং তাদের  সৈন্যবাহিনী কুরু- পান্ডবের দু’পক্ষের এক এক  পক্ষে জড়িয়ে পড়েছিল। এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া সেইসব রাজারা এবং তাদের সৈন্যবাহিনী মারা যায় এবং তাদের রাজ্যপাটও ধ্বংস হয়। পার্শবর্তী ওই সব রাজ্য এবং রাজা যদি অংশগ্রহণ না করত তাহলে অবশ্যই কুরু-পান্ডবের মধ্যে ভ্রাতৃঘাতি কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধটাই হ’ত না। অর্থাৎ ঐ সব রাজ্য এবং রাজা নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে পারেনি। যদি পারত তাহলে দু’পক্ষের পরামর্শ দাতা শকুনি এবং শ্রীকৃষ্ণের কোনো চাতুরী কার্যকরী হ’ত না। কেননা তখন কোন পক্ষেরই   অস্ত্রবল, লোকবল, অর্থবল কোনটাই যথোপযুক্ত ছিল না। আর এই জিনিসগুলো না থাকলে যুদ্ধ হয় না। স্বভাবতই কুরুক্ষেত্রের ভ্রাতৃঘাতি যুদ্ধটাই হ’ত না।
    তবুও কুরু-পান্ডবের মধ্যে ভ্রাতৃঘাতি যুদ্ধ হয়েছিল। আর এই যুদ্ধের পিছনের মূল কারণটাই আমরা জানিনা।
    মহাভারতে কৌরব- পান্ডবেরা ব্রাহ্মণ ছিলনা। তারা ছিল মূলনিবাসী ভারতীয় রাজ বংশজাত। অর্থাৎ ভারতীয় অনার্য ক্ষত্রিয়। কুরু-পান্ডবের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী রাজ্য এবং রাজা সবই ছিল মূলনিবাসী ভারতী। অর্থাৎ অনার্য রাজাদের রাজ্য। এই যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী রাজ্যের রাজারা, তাদের সৈন্যবাহিনী বা বীর যোদ্ধারা সবাই ছিল ব্রাহ্মণহীন অনার্য ভারতবাসী। প্রত্যেকে ছিল মূলনিবাসী ভারতীয়। কেউ ব্রাহ্মণ্য জাতির ছিলনা। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের পর বৈদিক আর্যরা তথা ব্রাহ্মণ্য শ্রেণি কৌশলগতভাবে বৈদিক বর্ণাশ্রমের ক্ষত্রিয় সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐ সব মূলনিবাসী ভারতীয় জাতিকে ঢুকিয়ে নেয় তাদের রচিত বৈদিক শাস্ত্র গ্রন্থের মাধ্যমে।
   কুরু-পান্ডবের যুদ্ধে সম্পূর্ণ কৌরব বংশের পুরুষ সন্তান পঞ্চ পান্ডব বাদে, সমস্ত পান্ডব বংশের সমস্ত বীরসন্তান, যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী রাজারা, রাজ্যের বীর যোদ্ধারা মারা যায়। যারা সবাই ছিল মূলনিবাসী রাজা ও বীর যোদ্ধা। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের সময়ে বহিরাগত বোদিক আর্যজাতি “ঋষি এবং ব্রাহ্মণ নাম নিয়ে যাগ, যজ্ঞ, পূজা ইত্যাদির মাধ্যমে মূলনিবাসী ভারতীয়দের অন্দর মহলে প্রবেশ করে ছিল এবং যুদ্ধের পক্ষে যড়যন্ত্রে ব্যস্ত ছিল। তাই কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের শেষে মূলনিবাসী  ভারতীয় রাজা, যোদ্ধা বা বীরদের শূন্যতায় বৈদিক আর্য-ব্রাহ্মণ্যেরা কুরুক্ষেত্রের সমগ্র অংশের এবং পার্শবর্তী রাজ্যের রাজা হয়ে রাজ ক্ষমতার অধিকারী হয়।
তাই দেখা গেছে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের পরবর্তী অল্প সময় কালের মধ্যে অসহায়তা এবং স্বজন হত্যার অপরাধবোধে পঞ্চপান্ডব রাজ্যপাট তাগ করতে বাধ্য হয়েছে। অপর দিকে অনার্য বা মূলনিবাসী ভারতীয় রাজা, বীরদের শূন্যতার সুযোগ নিয়ে অংশুমতী নদীর তীরে আর্যজাতির নেতা বা ব্রাহ্মণ্য শ্রেণির নেতা ইন্দ্র অনার্য মূলনিবাসী শ্রীকৃষ্ণকে নির্মমভাবে হত্যা করে। শ্রীকৃষ্ণ যে ইন্দ্রের হাতে অংশুমতী নদীর তীরে পরাজিত ও নিহত হয় তার প্রমান রয়েছে ঋকবেদে। 
   
     কুরু-পান্ডবের দু’পক্ষের মতো ভারতের ঠাকুরনগরেও ভ্রাতৃঘাতি বা আত্মঘাতী প্রতিযোগিতা   বা অনৈতিক লড়াই শুরু হয়েছে। এর ফলে কিন্তু ধ্বংস হবে  সারাভারতবর্ষে ছড়িয়ে থাকা দেড় কোটির বেশি মতুয়ারা। কুরু-পান্ডবের যুদ্ধে ধ্বংস হয়েছিল মূলভারতীয় অনার্য জাতির রাজ্যপাট। ঠাকুরনগরে দু’পক্ষের স্বার্থান্বেষী আত্মঘাতী যুদ্ধে অন্য মতুয়াদের কুরু-পান্ডবদের যুদ্ধে মূলনিবাসী রাজা এবং রাজ্যের মতো অংশগ্রহণ করাটা ঠিক নয়। ঠাকুরনগরে দু’পক্ষের আত্মঘাতী যুদ্ধে বাইরের ব্যক্তি বিশেষ এবং কোনো সংগঠন যদি কোনো পক্ষকেই সহযোগিতা না করেন বা পাশে  না দাঁড়ান তাহলে দু’পক্ষই শক্তিহীন, অর্থহীন, লোকবলহীন হয়ে পড়বে। তখন দু’পক্ষই  সার্বিকভাবে শক্তিহীন হয়ে নিজেদের পারিবারিক স্বার্থ ছেড়ে সঠিক পথে আসতে বাধ্য হবে। এক কথায় হরিচাঁদ- গুরুচাঁদ ঠাকুরকে সম্মান জানিয়ে ঠাকুর বাড়ির দু’পক্ষের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলন। যা কিনা প্রকৃত পক্ষে সমগ্র মতুয়া সমাজের মঙ্গল সাধিত হবে। এমত অবস্থায়ও যদি কেউ শকুনি, শ্রীকৃষ্ণের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন, কোন সংগঠন যদি কুরু-পান্ডবদের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী কোনো রাজ্য বা রাজার মতো কোন পক্ষ অবলম্বন করে ভূমিকা পালন করেন তাহলে বুঝতে হবে আমরা চোখ থাকতেও অন্ধ। নিজেদেরকে শিক্ষিত পন্ডিত বলে দাবি করলেও আসলে আমরা মুর্খ।
     বর্তমানে রাজ্যের এবং কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন ব্রাহ্মণ্যবাদী রাজশক্তি শকুনি, কৃষ্ণের মতো  কয়েকটি মুখোশ ঠাকুরনগরে মতুয়া ধ্বংসের ভ্রাতৃঘাতি যুদ্ধে প্রতিনিধি করে রেখেছে। কিন্তু সাধারণ মতুয়ারা এই ব্রাহ্মণ্যবাদী শক্তির মতুয়াদের ধ্বংসের গভীর ষড়যন্ত্র বুঝতে পারছেন না বলে আমার মনে হয়।  
    তাই ব্যক্তি বিশেষ এবং বিভিন্ন সংগঠনের কাছে ও অসংখ্য মতুয়াদের পক্ষ থেকে বিনীত আবেদন আত্মঘাতী পথ থেকে যেন আমরা সরে থাকি। নিজেদের মধ্যে দূরত্ব তৈরী না করে সবাই যেন সংযত বাক্য ব্যবহার করি। মহাভারতের কর্ণ, ভীষ্ম অনেকেই ছিল বীর যোদ্ধা, সৎ। কিন্তু কুরুক্ষেত্রের ভ্রাতৃঘাতি যুদ্ধে নিরপেক্ষ না থেকে পক্ষ অবলম্বন করায় যুদ্ধের ঘটনা প্রবাহে কর্ণ, ভীষ্ম ও আরো অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে নিহত হন। যুদ্ধ না হলে এঁরা কি কেউ নিহত হতেন?
    আমার মনে হয় ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থিত মতুয়াদে নিয়ে সর্বভারতীয় মতুয়া সম্মেলন করা একান্ত প্রয়োজন। চার-পাঁচ দিনের সময়কাল নিয়ে সর্বভারতীয় মতুয়া সম্মেলনের গঠন মূলক আলোচনাই পারে মতুয়াদে সঠিক কর্মসূচী ও দিশা দেখাতে।
    তাই দম্ভ, আত্ম অহংকার, আত্মঘাতী মন্তব্য বাদ দিয়ে হরিচাঁদ ঠাকুরের-  
স্বার্থশূন্য নামে মত্ত মতুয়ারগণ।
ভিন্ন সম্প্রদায় রূপে হইবে কীর্ত্তন।।
      এই মহান মতুয়া আদর্শ প্রতিষ্ঠার লক্ষে আসুন সবাই একত্রিত হই।
আশাকরি, এই লেখার মাধ্যমে আমি যে কথা বলতে চেয়েছি সেটা আপনারা অনুধাবন করতে পেরেছেন।
                                __________________



Comments