মাটি নাকি মা’টি তাহা বল দেখি ভাই।
লেখক- জগদীশচন্দ্র রায়
এ
সম্পর্কে গুরুচাঁদ ঠাকুরের ব্যাখ্যা
“দেশ-মাতৃকার তরে স্বদেশী সাজিবে।
“দেশ মাতা” বলে কারে বুঝিয়াছ সবে।।
মাটি নাকি মা’টি তাহা বল দেখি ভাই।
‘দেশ মাতৃকার’ ব্যাখ্যা বুঝে নিতে চাই।।
যে মাটিতে নাহি কোন মানব বসতি।
কেবা তারে ডাকে মাতা কে তার সন্ততি।।
দেশ নহে মাটি মাত্র “দেশ”-দেশ বাসি। -গুরুচাঁদ চরিত পৃঃ
৩৫০
দেশমাতার
জন্য আপনারা স্বদেশী হতে চান, ভাল কথা। কিন্তু এই ‘দেশমাতা’ কে বা কি? সেটা
আপনারা কিছু কি বুঝেছেন? দেশের মাটিই কি দেশ? নাকি দেশের জনগণকে নিয়ে দেশ? এটা
আপনারা একটু বলুন তো? কারণ, যে মাটিতে কোন মানুষ বসবাস করে না, সেই মাটিকে কেউকি
‘মা’ বলে ডাকে? আর সেই মাটির সন্তানরাই বা কারা? আপনারা এবার এই কথা ভাল করে বুঝুন
যে, দেশের মাটি দেশ নয়। দেশবাসী বা দেশের জনগণ হচ্ছে আসল দেশ। ( এই একই কথা আমরা
দেখতে পাই রবীন্দ্রনাথের ‘আত্মপরিচয়’ গ্রন্থে-“দেশ মানুষের সৃষ্টি। দেশ মৃন্ময় নয়,
সে চিন্ময়। মানুষ যদি প্রকাশমান হয় তবে দেশ প্রকাশিত।----- দেশ মাটিতে তৈরী নয়,
দেশ মানুষে তৈরী।” সংগ্রহ-মনের নিয়ন্ত্রন যোগ মেডিটেশন- লেখক প্রবীর ঘোষ পৃঃ ১২)
দেশ দেশ করে যারা সবে দেশ-মান্য।
আমাদিগে’ দেশ মধ্যে করে নাকি গণ্য।।
কত অত্যাচার করে জমিদার গণ।
কেহ কি তাহাতে বাঁধা দিয়াছে কখন?
ছুঁয়োনা ছুঁয়োনা বলে ব্রাহ্মণ কায়স্থ।
কেহ কি ক’রেছে তার হৃদয় প্রশস্ত।।
পশু হতে হীন ভাবে দেখে মো’ সবারে।
ভাই হ’লে এই ভাব করে কি প্রকারে?
তাই বলি স্বদেশীতে কাজ কিছু নাই।
তা’তে দেশে স্থান মোরা পাই বা না পাই।।
যেদিন বুঝিব সত্য আমাদের দেশ।
প্রাণ দিয়া ঘুচাইব জননীর ক্লেশ।। -গুরুচাঁদ চরিত পৃঃ
১৭৪
এই যে, যারা দেশ দেশ বলে কুম্ভিরাশ্রু ত্যাগ
করছে; তারা সকলে কিন্তু দেশের কাছে এক একজন
মন্য গণ্য ব্যক্তি। কিন্তু আমরা এই দেশের মধ্যে কোন কিছুতে গণ্য হই কি? এই যে যে,
জমিদাররা, তারা আমাদের প্রতি যা ইচ্ছা তাই করে অত্যাচার করে। কিন্তু এই অত্যাচার
বন্ধ করার জন্য কেউকি কখনও প্রতিবাদ করেছে? উল্টা ব্রাহ্মণ কায়স্থরা তো আমাদের
অচ্ছুৎ করে রেখেছে। পশুর চেয়েও হীন ভাবে আমদের সঙ্গে ব্যবহার করে। তারা যদি
আমাদেরকে তাদের ভাই মনে করত, তাহলে কি তারা আমাদের প্রতি এই ধরণের অমানবিক
অত্যাচার করতে পারত? সেজন্যই আমি আপনাদের বলতে চাই যে, আমাদেরকে ‘স্বদেশী
সাজার’ কোন দরকার নেই। আর এর জন্য যদি আমরা এদেশে থাকতে পারি বা না পারি তাতে
কোন কিছু আসে যায় না। তবে হ্যাঁ, সত্যি
সত্যি সেদিন আমরা উপলব্ধি করতে পারব যে, এই দেশ আমাদের। আমাদেরও এই দেশের মানুষ
বলে গণ্য করা হয়। তখন সেদিন আমরা দেখিয়ে দেব দেশ কাকে বলে। তখন দেশের জন্য আমরা
প্রয়োজনে প্রাণকে বলিদান করে দেশের মান-মর্যাদাকে উপরে তুলে রাখবো। যেমন আমাদের
পূর্বপুরুষেরা তাদের ধম্ম ও স্বাভিমানকে রক্ষা করার জন্য সংগ্রাম করেছিলেন। কিন্তু
নিজেদের আত্মর্যাদাকে লুন্ঠিত হ’তে দেননি।
Comments
Post a Comment