নমঃজাতির লোকেরা কি বৌদ্ধ ধম্মাবলম্বী ছিল?
এবিষয়ে
বিভিন্ন লেখকদের কটুক্তি সম্পর্কে।
নমঃশুদ্রদের চন্ডাল গালি প্রসঙ্গে বিভিন্ন জনের
বিভিন্ন মত আছে। তার থেকেও বেশি বিরোধিতা শুরু হয়েছে যে নমঃজাতির লোকেরা বৌদ্ধ
ধম্মাবলম্বী কখনোই ছিল কি না। কারণ, নমঃদের না কি বৌদ্ধরা বিতাড়িত করেছে আর না কি
বৌদ্ধ সাহিত্যে কুকুরের মাংস খাওয়া চন্ডাল বলা হয়েছে!!!!
আবার
বলা হয়েছে নমঃরা যদি বৌদ্ধ ধম্মাবলম্বী হয়, তাহলে চিন, জাপান, ব্রহ্মদেশ, শ্রীলংকা
প্রভৃতি দেশে বৌদ্ধরা খুব প্রতিপত্তির সাথে বসবাস করত। নমঃজাতির মানুষ যদি বৌদ্ধ
ধম্ম পালন করত তাহলে এদের এই দুর্দশা হওয়ার কথা নয়। এরকম বহু কথার ফুল ঝরিয়ে
দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে নমঃরা কোনদিন বৌদ্ধ ধম্মাবলম্বী ছিলনা। বৌদ্ধরা নমঃদের
প্রতি অত্যাচার করেছে। আর যেহেতু অন্যান্য বৌদ্ধ রাষ্ট্র নমঃদের প্রতি অত্যাচারের
প্রতিবাদ করেনি তাই নমঃরা বৌদ্ধ হতে পারেনা।
নমঃদের পূর্ব পুরুষেরা কি ছিলেন তার বিস্তারিতি
বিবরণ আমার লেখা ‘নমঃশূদ্রদের পূর্ব পরিচয়’ http://matuaism.blogspot.in/2017/01/blog-post.htmlঅংশে দেখিয়েছি। যেটা আচার্য
মহানন্দ হালদার রচিত ‘শ্রীশ্রী গুরুচাঁদ চরিত’ থেকে যথা সম্ভব তুলে ধরে তার ব্যাখ্যা ও
বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছি। সেই লেখার সামান্য অংশ আবার তুলে দিচ্ছি- যে কথা
গুরুচাঁদ ঠাকুর 1881 সালে দত্তডাঙার ঈশ্বর গাইনের বাড়িতে
শ্রদ্ধানুষ্ঠান উপলক্ষ্যে জানান যে,
নমঃশূদ্র
কবে হল পূর্বে তারা কিবা ছিল
সংক্ষেপেতে সেই কথা বলিব সভায়। - গুরুচাঁদ চরিত পৃঃ ১২৩ একদা ভারত খন্ডে আসিয়া উত্তর বঙ্গে
রাজার আলয় জন্মে জ্ঞান-অবতার।
বুদ্ধ নামে পরিচিত করিলেন জীব-হিত
ভেদাভেদ ভুলি সবে হল একাকার।। - গুরুচাঁদ
চরিত পৃঃ ১২৪
ব্রাহ্মণ্য ধর্মের নামে ভারতের পুণ্য ভূমে
বৌদ্ধ ধম্ম নাশ করে সবলে পিষিয়া।। -
গুরুচাঁদ চরিত পৃঃ ১২৪
তার যত বংশধর দূরে থাকি পরস্পর
নিরালয়ে বসিয়া কিছু পালে রীতিনীতি।
ধনবান বলবান করিবারে হতমান
আখ্যা দিল তা সবারে ‘অপবিত্র জাতি’।। - গুরুচাঁদ
চরিত পৃঃ ১২৪
কালচক্র ঘুরে আসে নিরুপায় অবশেষে
হিন্দুধর্ম কবলেতে বৌদ্ধ আসে ফিরে।
ভারতের ইতিহাসে বঙ্গ বা অপর দেশে
হিন্দুরূপী বৌদ্ধ দেখা যায় ঘরে ঘরে।। -
গুরুচাঁদ চরিত পৃঃ ১২৪
তাই দেখি সর্বদেশে যা’ দিগে অস্পৃশ্য ভাষে’
হিন্দুর সকল নীতি নাহি জানে তারা।
কিছু হিন্দু কিছু বৌদ্ধ এই নীতি দেশশুদ্ধ
বৌদ্ধ সবে মানি লয় হয়ে দিশেহারা।। - গুরুচাঁদ
চরিত পৃঃ ১২৪
বঙ্গদেশে নিষ্ঠাবান ছিল যত মতিমান
ধম্ম ছাড়ি প্রাণ রক্ষা করিতে না চাহে।
ধম্ম তরে দূরে যায় কত অত্যাচার সয়
ধম্ম-তরে বন মধ্যে হীন হয়ে রহে।।
এই ধম্মবীর যারা সেই বংশে জন্মি মোরা
কালের কুটীল চক্রে হয়ে আছি হীন।
বহু দিন গত হয় সবে মহা দুঃখ সয়
এই ঘরে এল তাই হরি ভক্তাধীন।। - গুরুচাঁদ চরিত পৃঃ ১২৪
এবার আসি
নমঃজাতি ও বৌদ্ধদের সম্পর্কে। তবে তার আগে একটু গুরুচাঁদ চরিত-এ
দৃষ্টি পাত করি।
গৃহীরে করিতে শুদ্ধ ওড়াকান্দী হরি-বুদ্ধ
আসিয়াছে বহু যুগ পরে।। (পৃঃ ৫০১)
আমরা জানি মতুয়া ধর্মের একটা বড় স্থান হচ্ছে গৃহ। অর্থাৎ পরিবার থেকেই প্রথমে নৈতিক শিক্ষা শুরু হয়। যার জন্য মতুয়াদের
‘গৃহধর্ম রক্ষা’ করার কথা বলা হয়েছে। আর সেই
গৃহীদের শুদ্ধ করার জন্য ‘হরি-বুদ্ধ’
এর জন্ম হয়েছে বহু যুগ পরে। ‘হরি-বুদ্ধ’, অর্থাৎ বুদ্ধের গুণ ও কর্মকে বাস্তবায়িত
করার জন্য হরিচাঁদ ঠাকুর তাঁর দর্শনকে সাজিয়েছেন।
আবার তারক সরকার রচিত ‘শ্রীশ্রী হরিলীলামৃত’-এর অভ্যন্তরে প্রবেশ করে আমরা দেখতে পাই-
বুদ্ধের কামনা তাহা
পরিপূর্ন জন্য।
যশোমন্ত গ্রহে হরি হৈল
অবতীর্ণ।। (১৫ পৃষ্ঠা, ১ম
সংস্করণ)
অর্থাৎ বুদ্ধের কামনাকে পূর্ণ করার জন্য হরিচাঁদ
ঠাকুর জন্ম গ্রহণ করেন। প্রশ্ন হচ্ছে- বুদ্ধের কামনা কি ছিল? সংক্ষেপে আমরা বলতে
পারি,- বুদ্ধের কামনা হচ্ছে- সমতা সতন্ত্রতা বন্ধুতা ও ন্যায়; এই চারটির প্রতিষ্টা
করা। আমরা হরিচাঁদ ঠাকুরের জীবনেও সেই একই লক্ষ্যের নিদর্শন তাঁর কর্ম জীবন ও
বাণীর মধ্য দিয়ে দেখতা পাই। যার জন্য তিনি বলেছেন-
জীবে দয়া, নামে রুচি,
মানুষেতে নিষ্ঠা।
ইহা ছাড়া আর যতো সব ক্রিয়া
ভ্রষ্ঠা।। (১১ পৃষ্ঠা, ১ম
সংস্করণ)
অর্থাৎ এই তিন মহৎ কর্মই শ্রেষ্ঠ কর্ম; বাকী সব
মিথ্যা।
তবে তিনি এ কাজ করতে গিয়ে প্রথমেই ঘোষণা করেছেন-
কুকুরের উচ্ছিষ্ট প্রসাদ
পেলেও খাই।
বেদ বিধি শৌচাচার নাহি
মানি চাই।। (১০৪ পৃষ্ঠা, ১ম
সংস্করণ)
অর্থাৎ
তিনি দৃপ্ত কন্ঠে ঘোষণা করেছেন- ‘আমি কুকুরের খাওয়া এটো খাবার খেতে রাজি আছি। তবুও
আমি বেদ ও তার বিধানকে মানতে রাজি নই।’
এখন প্রশ্ন আসে বেদ ও তার বিধান কি? বেদ হচ্ছে
ব্রাহ্মন্যবাদী ধর্ম ব্যবস্থায় জাতি ও বর্ণবাদের দলিল। যেখানে মানুষকে তার কর্ম
নয়; জন্মের কারণে উচু নীচু করে উল্লেখ করেছে। নিচু মানুষদের পশুর থেকেও চরম অধম
বলে গণ্য করেছে। তাই এই অমানবিক বিধানকে হরিচাঁদ ঠাকুর কুকুরের উচ্ছিষ্ট থেকেও
নিকৃষ্ট বলেছেন।
এইসব উধৃতি আমাদের সমাজের কিছু বড় বড় লেখক করতে
চাননা। তাঁরা খুঁজে বেড়ান কোন কথা লিখলে ব্রাহ্মণ্যবাদের পদধৌত করা যাবে। আসলে
এটাতো বাস্তব সত্য যে, কাঠ কাটতে যেমন কুঠারের হাতলটা কাঠের হয়। অর্থাৎ জাত ভাই না
হলে কি আর ভাইকে মারা যায়। এঁরা হচ্ছেন আমাদের সমাজের নব্য ব্রাহ্মণ।
হ্যাঁ, যে কথা বলতে গিয়ে এই কথা লিখতে বাধ্য হ’লাম;
সেই কথায় ফিরে আসি।
সেটা হচ্ছে যে, বৌদ্ধ ধম্মের জন্ম এই অবিভক্ত
ভারতে। আর যার বিস্তার এশিয়া মহাদেশকে অতিক্রান্ত করেছিল এক সময়। আজ সেই বৌদ্ধ
ধম্মাবলম্বীদের খুঁজতে গেলে দুর্বিন যন্ত্র ছাড়া খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাহলে সেই
বৌদ্ধরা গেলেন কোথায়? তাঁরা কি আকাশে বিলিন হয়েগেছে? না কি ধর্তি তাদের গ্রাস করে
নিয়েছে? না কি এই আকাশ ও ধর্তির ভূমিকা পালন করেছে ব্রাহ্মণ্যবাদি ব্যবস্থা? এটা
হয়তঃ এই নব্য ব্রাহ্মণদের ভেবে দেখার দরকার নেই। তাদের উদ্দেশ্যতো শুধু বৌদ্ধদের বদনাম করা। একবার
ভেবে দেখুনতো যে বৌদ্ধ ধম্মকে ভারত থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে; যে নালন্দা, তক্ষশীলা
বিশ্ববিদ্যালয়কে জ্বালিয়ে দিয়ে সমস্ত বৌদ্ধ সাহিত্য সম্ভারকে ভষ্মে পরিণত করা
হয়েছে। সেই বৌদ্ধদের সম্পর্কে আজ যে সাহিত্য পাওয়া যায় তার মধ্যে দুধ কতটা আর জল
কতটা ভেবে দেখেছেন কি ? আপনাদের তো আবার ওসব ভাবার সময় নেই। আপনাদের কাজ তো শুধু
বিষ উগ্রানো।
এ ক্ষেত্রে “শ্রীশ্রীহরিলীলামৃত”-এর মহাকবি
তারক সরকারকে ধন্যবাদ জানাতে হয় এই জন্য যে, তাঁর লেখায় দুধ আর জল মেশানো আছে
সেটা অকপটে উল্লেখ করার জন্য। যার জন্য
তিনি বলেছেন-
শ্রোতাগণ
হংসবৎ দোষ ছাড়ি গুণ যত,
দুগ্ধবৎ করুন গ্রহণ। (৩৯ পৃষ্ঠা, ১ম
সংস্করণ)
অর্থাৎ শ্রোতা বা পাঠকগণ হরিলীলামৃতের মধ্যে লিখিত বিষয়ের দোষকে ছেড়ে দিয়ে
রাজহাসের মতো শুধুমাত্র দুধ স্বরূপ গুণটাকে গ্রহণ করুন।
আপনারা নব্য ব্রাহ্মণেরা বর্তমানে দুধের খোঁজ
করা তো দূরের কথা জলটাকে নিয়েই ঘোলাঘুলি শুরু করেছেন। তাই খুঁজে খুঁজে তুলে ধরার
চেষ্টা করছেন যতো Negative কে। একটা কথা আপনারা জানেন কি?
যিনি লিখিত জিনিস পড়েন তাঁকে পড়া লেখা বলা হয়। আর যিনি লিখিত বিষয় পড়ে তার ভীতরের
অর্থ বের করেন তাঁকে বুদ্ধিজীবী বলা হয়। অর্থাৎ BETWEEN THE LAIN AND BEHIND THE LINE
যিনি পড়েন তাঁকে বুদ্ধিজীবী বলে। কারণ লেখা নিজিস তো যে কেউ পড়তে পারেন। কিন্তু তার অন্তর্নিহীত অর্থ যিনি খুঁজে বের
করেন তিনি হচ্ছেন প্রকৃত বুদ্ধিজীবী। উদাহরণ স্বরুপ- হরিলীলামৃত সবাই পড়তে পারেন এবং পড়েনও অনেকে। যাঁরা পড়ে গতানুগতিক অর্থ বোঝেন, তাঁরা শুধু শিক্ষিত
ব্যক্তি। কিন্তু যাঁরা তার মধ্যে লুকিয়ে থাকা
অর্থকে প্রকাশ করেন, তাঁদের বলা হয় বুদ্ধিজীবী। তাই BIHIND THE
LINE AND BETWEEN THE LINE বোঝা দরকার।
আপনার কোন
reference দিয়ে বলেছেন অমুক এই বলেছেন, তমুক ঐ বলেছেন। কিন্তু
তাঁরা এটা কেন বলেছেন, তাঁদের এই বলার উদ্দেশ্যই বা কি সেটা কি ভাববেন না?
এ
প্রসঙ্গে বুদ্ধের একটা কথা না বলে পারছিনা- তিনি বলেছেন, “কোন কথাকে গভীরভাবে
বিচার বিশ্লেষণ না করে মেনে নিও না। কোন মহান ব্যক্তি বলেছেন বলে মেনা নিও না।
যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি বিষয়ের সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণ না পাবে ততক্ষণ তাকে সঠিক বলে মেনে নিওনা।”
আমরা কি
করছি, কিছু কিছু নামভারী দেখে তাঁদের লেখার reference তুলে
ধরছি। কখনো তার যৌক্তিকতা নিয়ে গবেষণা মূলক দৃষ্টিভঙ্গিতে কি বিচার বিশ্লেষণ করছি?
সে সব কিছুর সময় কোথায়! নিজের দায় সারার জন্য অন্যকে ঢাল করে তুলে ধরা। সেই ঢালে নিজেকে আড়াল করা যায় কিন্তু তার ছিদ্র
দিয়ে যে গরল প্রবেশ করছে সেটা একটা সমাজ ও জাতিকে ধ্বংস করার জন্য বদনাম করার জন্য
slow poison এর মতো কাজ করছে।
আপনারা
প্রশ্ন তুলেছেন বিভিন্ন রাষ্ট্র বৌদ্ধ ধম্মাবলম্বী থাকা সত্বেও নমঃরা যদি বৌদ্ধ হয়
তাহলে তাদের প্রতি অত্যাচারকে বন্ধ করার জন্য এগিয়ে আসেনি কেন?
ভালো
প্রশ্ন। কিন্তু সময়টা কখন? সে সময়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা কি ছিল? সংবাদ মাধ্যম কি ছিল? যেখানে গত দশ বছর পূর্বেও
পোষ্টকার্ড/ইনল্যান্ড লেটার এর খবর দিতে নিতে হ’তো। টেলিগ্রাম (Developed in the 1830s and 1840s by Samuel Morse)
কবে আবিষ্কৃত হোল? আর তার বিস্তার কোথায় ছিল? সেটা কি ভাববেন না? নাকি আজকের অত্যাধুনিক যুগে দাঁড়িয়ে বিচার
করবেন সে যুগের কথা? এ প্রসঙ্গে বলতে হয়, একজন বই লিখেছেন যে শ্রীশ্রী হরিলীলামৃত
লিখতে হরিচাঁদ ঠাকুর নিষেধ করেছিলেন। তাই
সেটা লেখা উচিন নয়। তিনি তাঁর যুক্তিবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে বর্তমান প্রেক্ষাপটে
দাঁড়িয়ে কবি তারক সরকারকে তুলোধনা করেছেন। হরিচাঁদ ঠাকুর তখন কেন বই লিখতে নিষেধ
করেছিলেন তার কোন ব্যাখ্যা ঐ লেখক করেননি। আরে কবি তারক সরকার যে বই লিখতে গিয়ে
বলেছেন শ্রোতারা রাজহংসের মতো জল ফেলে দিয়ে শুধু দুধটাকে গ্রহণ করুন। লেখক সেই
দুধকে গ্রহণ না করে জল ঘোলা করেই বই লিখেছেন। তিনিতো যুক্তিবাদী তাই তাঁর
খুরধার যুক্তিকে উত্থাপন করেছেন। এভাবে বই লেখা যায়। ইতিহাসকে তুলে ধরা যায় না। কোন কিছু বিকৃত ব্যাখ্যা করা যায়। কিন্তু তার
সঠিক মুল্যায়ন করা যায়না। যদিও বাহবা দেওয়ার
মতো লোকের অভাব হয়না আপনাদের জন্য। এটাই কোন সমাজের পক্ষে অন্তরায় স্বরূপ।
যার জন্য আজও একটা শৌর্য বীর্যশালী জাতির
এই করুন পরিণতি। আর এর জন্য এই লেখক সাহিত্যি কবি ও নেতারা কম দায়ী নন। এখানে
সাধারণ জনগণের দোষ দিয়ে নিজেকে ঐ ঢাল করার কোন কৃতিত্ব নেই বলে মনে করি। কারণ,
দিশা দেখানোর লোকেরাই যদি ভ্রষ্ট পথ দেখান
তাহলে সাধারণ লোকে কার কথা শুনবেন?
এবার আমার
একটা প্রশ্নের জবাব দিনতো আপনারা।
ভারত ভাগ
তথা বাংলা ভাগ হওয়ার পূর্বে অবিভক্ত বাংলার হিন্দুরা যখন উভয় বাংলায় একই ছিল। আর
দেশভাগের বলি হয়ে পূর্ব বাংলা ছেড়ে সেই ৪৭
সাল থেকে আজও পশ্চিমবঙ্গে তথা ভারতে যারা
আসছেন তাদের সংখ্যা গরিষ্ঠ অংশ তো হিন্দু। সেই হিন্দুদের জন্য এদেশে আপনারা
হিন্দুপ্রেমীরা কি করছেন? আর যে হিন্দুরা
বর্তমান বাংলাদেশে রয়েছে; মাঝে মাঝে তাদের উপর অত্যাচারের খবর আসছে। তার
প্রতিকারে আপনারা কি করছেন? কয়েকটা পথ সভা, মিছিল ছাড়া আর কি করছেন বলুনো? আর তাতে
পীড়িতদের কি উপকার হয়েছে? রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কি করছেন আপনারা? তখনতো না হয় অন্য বৌদ্ধ রাষ্ট্র, বৌদ্ধ
নমঃদের সাহায্যে এগিয়ে আসেনি। আপনারা এই
অত্যাধুনিক যুগে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কি
করছেন? উল্টা প্রায়ই হুমকি দেওয়া হচ্ছে তাদের বাংলাদেশ ফেরত পাঠানো হবে বলে। তাদের
জন্য ২০০৩ সালে নাগরিকতার কালা কানুন বানানো
হলো কেন? তারাওতো হিন্দু বলে নিজেদের।
আসলে
আপনারা যে সব প্রশ্ন তোলেন; সে সব প্রশ্ন আপনাদের মগজের নয়। অন্যে আপনাদের মগজে এসব প্রশ্ন ঢুকিয়ে দেয়। কিন্তু আমি যে
প্রশ্ন করলাম সেটা আপনাদের মগজে কেন আসবে না? যদি না আসে তাহলে কি মনে করবো আপনাদে বলুন।
বর্তমানে
আরো কিছু প্রশ্ন তুলেছেন- সেটা এরকম- যারা হরিচাঁদ ঠাকুর ও গুরুচাঁদ ঠাকুরের
সঙ্গে ডা. বাবা সাহেব ভীম রাও আম্বদেকরকে একাসনে বসাচ্ছেন, তারা বলুনতো আম্বদেকর
কোথায় একটা লাইন হরি-গুরুচাঁদকে নিয়ে লিখেছেন?
এখন আমি
আপনাদের বলি -আম্বেদকর যদি একটা লাইন লিখে দিতেন তাহলেই কি সব উদ্ধার হয়ে যেত? না
কি আম্বদেকর যে কাজ করেছেন, সেই কাজের ফল ভোগ করে চলেছে অন্যান্যদের সঙ্গে
হরি-গুরুচাঁদের ভক্তরা; সেটা কি বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়?
জানি, এ
প্রশ্নও আপনাদের নয়, এটাও আপনাদের দিয়ে তোলানো হচ্ছে। যারা এই প্রশ্ন আপনাদের দিয়ে তোলাচ্ছে তারা জানে কাদের গলায়
ঘন্টা বেধে দিলে সেই ঘন্টা তারা অনবরত বাজিয়ে চলবে। কারণ, তারা, না কখনো ঘন্টা
বাধতে না দেওয়া চেষ্টা করবে; আর না কখনো সেই ঘন্টায় নিজেদের সর্বনাশ বুঝে খোলার
চেষ্টা করবে।
একবার
ভাবুনতো হরিচাঁদ ঠাকুরের আন্দোলনকে গুরুচাঁদ ঠাকুর এগিয়ে নিয়ে যান মূলত শিক্ষা
আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। কিন্তু তারপর সেই আন্দোলনের কি হোল? গুরুচাঁদ ঠাকুর সরাসরি
রাজনীতি না করলেও তিনি রাজনীতি করার কথা
বলেছেন। আর সেই কাজটি করেছেন মহাপ্রাণ যোগেন্দ্রনাথ মন্ডল। তিনি Scheduled
Caste Federation এর মাধ্যমে আন্দোলন গড়ে তোলেন। আর এই মহাপ্রাণ ও
ফেডারেশনের সংগ্রামী সাথীদের প্রচেষ্টার ফলে বাবা সাহেব সংবিধান সভায় যেতে সক্ষম
হন। সংবিধানে বাবা সাহেব সকল SC,
ST দের জন্য সংরক্ষণের
ব্যবস্থা করেন শিক্ষা, চাকরি ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে। সেই ব্যবস্থার সুযোগ
যেমন বাংলার কোন SC তথা মতুয়ারা পাচ্ছেন, তেমনি সারা ভারতের
সকল SC ST রা পাচ্ছেন। তাহলে এই পাওয়ার পিছনে আমরা দেখতে
পাচ্ছি একটা আন্দোলনের ধারাবাহিকতাকে। যার পরিণতি এই সাংবিধানিক সংরক্ষণ বা সেফ
গার্ড।
আপনারা
একদিকে সংরক্ষণের সুবিধা নিচ্ছেন, আবার বাবা সাহেবের সরাসরি বিরোধীতা না করতে পেরে
প্রশ্ন তুলছেন- আম্বেদকর কোথায় এক লাই হরি-গুরুচাঁদকে নিয়ে লিখেছেন? এবার আপনারাই
বলুন না এই মহামানবদের অবদানের ফল ভোগ করে Pay back to the society এর জন্য কি কি করেছেন? কান চিলে নিয়ে গেছে শুনেই চিল ধরতে ছুটছেন কেন?
এই সব কথা
কেন বলছি? কারণ, এতদিন জানতাম সাহিত্য হচ্ছে সমাজের দর্পণ। কিন্তু এখন দেখছি সেই
দর্পণের ছবিটা কিন্তু অন্য। আর বাস্তব অন্য।
এতদিন
জানতাম ভারত গনতান্ত্রিক দেশ। বর্তমানে সেই গনতন্ত্রকে হাতিয়ার করে কিভাবে তার
ধাজিয়া ওড়ানো হচ্ছে সেটা আপনারা হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করতে পারছেন আশাকরি। এবার
আপনারা যদি এই
ধাজিয়া ওড়ানোর দলের মতই কাজ করেন তাহলে আর আপনাদের ওদের মধ্যে পার্থক্য কোথায়?
আপনারা
বলতে পারেন আমি অনেক বড়ো বড়ো কথা বলছি। না বড়ো বড়ো কথা আমি নয়, আপনারা বলেছেন।
কিন্তু সেগুলোর মধ্যে বড়ো বড়ো ফাঁক রয়েগেছে। আমি শুধুমাত্র সেই ফাঁকগুলো পূর্ণ
করার কথা বললাম।
আমি এবার
একটা উধৃতি দিয়ে এই লেখা সমাপ্ত করতে চাই। পূর্বেই নমঃশূদ্রদের পূর্ব পরিচয়ে তুলে
ধরেছি। সেটা আবার একটু তুলে ধরছি-
ভারতের
ইতিহাসে বঙ্গ বা অপর দেশে
হিন্দুরূপী বৌদ্ধ দেখা যায় ঘরে ঘরে।। -
গুরুচাঁদ চরিত পৃঃ ১২৪
কিছু হিন্দু কিছু বৌদ্ধ এই নীতি দেশশুদ্ধ
বৌদ্ধ সবে মানি লয় হয়ে দিশেহারা।। - গুরুচাঁদ
চরিত পৃঃ ১২৪
এই ধম্মবীর যারা সেই বংশে জন্মি মোরা
কালের কুটীল চক্রে হয়ে আছি হীন। - গুরুচাঁদ
চরিত পৃঃ ১২৪
এবার
আপনারাই বলুনতো গুরুচাঁদ চরিতে, গুরুচাঁদ ঠাকুরের মুখ দিয়ে যে কথা বলানো হয়েছে,
সেটা যদি না মানেন তাহলে কেন তার বিরোধীতা করছেন না? আর যদি মানেন তাহলে কেন
আপনাদের reference এ সেটা উঠে আসছে না? যেখানে স্পষ্ট করে
বলা হয়েছে- ‘এই ধম্মবীর যারা সেই বংশে জন্মি মোরা’। অর্থাৎ এই ধম্মবীরদের বংশধর আমরা। অর্থাৎ
আমাদের পূর্ব পুরুষ বৌদ্ধধম্মাবলম্বী ছিলেন।
বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় একটা প্রবাদ আছে,
সেটা হচ্ছে- বিচার ব্যবস্থায় ন্যায় নয়, নির্ণয় দেওয়া হয়। অর্থাৎ আগেই নির্ণয় গ্রহণ
করা হয়। আপনাদের লেখার মধ্যেও সেই ধরণের উদ্দেশ্য দেখতে পাচ্ছি। সেখানে ন্যায়ের
দৃষ্টিতে গবেষণামূলক ভাবনায় দেখা হয় না। সেখানে আগেই নির্ণয় গ্রহণ করা হয় কাকে ছোট
দেখাতে হবে বদনাম করতে হবে আর কাকে তুলে ধরে গুণগান করতে হবে। যেটাকে
ব্রাহ্মণ্যবাদী সাহিত্য বলা যেতে পারে।
তাই আপনাদের যদি নুনতম সামাজিক
দায়িত্ববোধ থাকে তাহলে ন্যায় মূলক সাহিত্য ও ইতিহাস তুলে ধরবেন। যার ফলে দেশ সমাজ
ও জাতির মঙ্গল হবে।
________________________
Comments
Post a Comment