Skip to main content

কুকুরের উচ্ছিষ্ট প্রসাদ পেলে খাই।/ বেদ বিধি শৌচাচার নাহি মানি তাই।।-হরিচাঁদ ঠাকুর

     কুকুরের উচ্ছিষ্ট প্রসাদ পেলে খাই।
  বেদ বিধি শৌচাচার নাহি মানি তাই।। -হরিচাঁদ ঠাকুর
                                                                       (শ্রীশ্রীহরিলীলামৃত – ১ম সংস্করণ, পৃ. ১০৪)
আজ থেকে একশ বছররেরও অধিক আগে যে কথা কবি লীলামৃতে লিখেছেন, সে কথা সেই  যুগে দাঁড়িয়ে বলার সাহস দেখানো মানে মৃত্যু অনিবার্জ; সেখানে কবি তারক সরকার লিখে জানিয়ে দিলেন যে, হরিচাঁদ তাঁর আদর্শে বেদকে কুকুরের উচ্ছিষ্ট বা এটো খাবারের থেকেও  নিকৃষ্ট বলে ঘোষণা করেছেন। তিনি বেদ ও তার বিধানকে অস্বীকার করেছেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যিনি বেদকে মানেনি তাঁর উপর কোন অলৌকিকত্ব আরোপ করা কিভাবে সম্ভব? সেই গবেষণামূলক দৃষ্টি দিয়ে কি আপনারা কখনো ভেবে দেখেছেন? শুধু উপরে উপরে দেখেই যদি সেটা নিয়ে মাতামাতি করেন তাহলে সাধারণ মানুষের থেকে আপনাদের পার্থক্য কোথায়? শিক্ষিত হওয়া এক জিনিসআর জাগৃত হওয়া কিন্তু সম্পূর্ণ অন্য জিনিস । শিক্ষিত আমরা অবশ্যই । যে লিখিত জিনিস পড়ে তাকে ‘লেখা’ পড়া  বলা হয়। আর যে লিখিত বস্তুর থেকে তার ভিতরের অর্থ বের করে তাকে বুদ্ধিজীবী বলা হয়। BETWEEN THE LINE AND BEHIND THE LINE যে পড়ে তাকে বুদ্ধিজীবী বলে । কারণ লেখা জিনিস তো যেকেউ পড়তে পারে। কিন্তু তার অন্তর্নিহীত অর্থ যে খুঁজে বের করে সে হচ্ছে প্রকৃত বুদ্ধিজীবী হরিলীলামৃত সবাই পড়তে পারেন এবং পড়েন । যাঁরা পড়ে গতানুগতিক অর্থ বোঝেনতাঁরা শুধু শিক্ষিত ব্যক্তি । কিন্তু যাঁরা তার মধ্যে লুকিয়ে থাকা অর্থকে প্রকাশ করেন তাদেরকে বলা হয় বুদ্ধিজীবী ।  তাই BIHIND THE LINE AND BETWEEN THE LINE বোঝা দরকার।  
  
    এবার আসি হরিচাঁদ ঠাকুরের ভগবান আখ্যা সম্পর্কে।
গতানুগতিকতাকে মাথায় রেখে যদি আমরা কোন যুক্তিকে তুলে ধরি সেটা কতটা যুক্তিযুক্ত হবে সেটা আমাদের ভেবে দেখা উচিত নয় কি? সাধারণতঃ ভগবান বা ঈশ্বর বলতে কোন অলৌকিক শক্তিকে বোঝানো হয়। কিন্তু লীলামৃতে আমরা দেখতে পাই যে 'যাহারে ভক্তি করে সে তার ঈশ্বর।'( পৃঃ ১) এখানে কিন্তু সেই গতানুগতিকতাকে ধরা হয়নি। এবিষয়ে গুরুচাঁদ চরিতে উল্লেখ আছে-
                                   “বিশ্বভরে’ এই নিতি দেখি পরস্পর। 
                                যে যা’রে উদ্ধার করে সে তার ঈশ্বর।।” (৫৭২ পৃষ্ঠায়)
মতুয়া ধর্মে ব্যবহৃত কিছু কিছু শব্দের সাথে সনাতন হিন্দু ধর্মীয় শব্দের সাদৃশ্য দেখা যায়। কিন্তু মতুয়া ধর্মে সে সব শব্দের মর্মার্থ আলাদা। যেমন ঈশ্বরহরিঅবতারব্ৰহ্মব্ৰহ্মাধর্মসনাতন ইত্যাদি। মনে রাখা দরকার সূক্ষ্ম সনাতন মতুয়া ধর্মের সাথে সনাতন হিন্দু ধর্মের কিছু শব্দসাদৃশ্য আছে মাত্র কিন্তু মর্মার্থে হুবহু এক নয়। বাইরে থেকে দেখতে similar but not the same. এই বাহ্যিক সাদৃশ্য দেখে মতুয়া এবং অমতুয়ার মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। স্বাদেগুণেব্যবহারেচিন্তায়প্রয়োগেমতুয়া ধর্ম দর্শন ও সমাজব্যবস্থার ফল আলাদা। উদাহরণ - শ্রীশ্রী গোপালচাঁদ বলেছেন ‘আকাশে ঈশ্বর খুঁজতে যেয়ো নাঈশ্বর আকাশে থাকে নাঈশ্বর খোঁজ মানুষের মধ্যে।
এখানে কি বলা হচ্ছে- বিশ্বভরে’ এই নিতি দেখি পরস্পর/যে যা’রে উদ্ধার করে সে তার ঈশ্বর।  অর্থাৎ সারা বিশ্বে দেখা যায় যে যাহাকে উদ্ধার করে সেই তার ঈশ্বর। এই ঈশ্বর কি কোন কাল্পনিক বৈদিক ঈশ্বর? যে মানুষেরা এক সময় প্রতাপ প্রতিপত্তিশালী ছিলেন, যারা বৌদ্ধ ধম্মের অনুরাগী ছিলেন। কালের চক্রে তাঁদের এই ধম্ম থেকে বিতাড়িত করে পতিত করে দেওয়া হয়। যাদের উপরে ব্রাহ্মণী বৈদিক অত্যাচার নিরন্তর চলতে থাকে। মানুষ হিসাবে পরিচয় দেওয়াও যেন অন্যায় বলে বিবেচিত হত তখন সমাজ শোষণকারীদের কাছে। সেরকম একটা অমানুষিক পরিস্থিতি থেকে ধর্ম হীন পতিত মানুষদেরকে হরিচাঁদ ঠাকুর নতুন ধর্ম দিলেন। তাদের মানুষ  হিসাবে জীবন যাপনের স্বপন দেখালেন। তাদের বেঁচে থাকার জন্য কাজ করার নির্দেশ দিলেন। কিছু নিয়ম নির্দেশিকা দিলেন। এ সব কি কোন বৈদিক ঈশ্বর করেছে। একটা কথা বলা হয় সেই  সময় ১১ কোটি নিপীড়িত লোক ছিল। আর বৈদিকবাদীদের ৩৩ কোটি দেবতা আছে। অংকের হিসাবে এক এক জন নিপীড়িতের ৩ জন করে দেবতা পড়ে। তাহলে কোন দেবতা কেন তাদের এই পাতিত্য, চন্ডালত্ব, এবং বৈদিকতার অমানুষিকতার নির্জাতন থেকে উদ্ধার করেনি। উদ্ধার কেন এক জন মানুষকে করতে হল। এখন সেই মানুষকে যদি নির্জাতিতরা ঈশ্বর বা ভগবান বলে তাতে কি অন্যায় করল তারা? না কি আপনাদের ব্যাখ্যায় এই শব্দ মেলে না। কারণ আপনারাতো নাস্তিক। আপনাদের মত নাস্তিক আমি নই বলেই এসব লিখতে বাধ্য হচ্ছি। কারণ রোগমুক্ত হতে গেলে রোগের কারণ অবশ্যই জানতে হবে। আর সেই কারণ অনুসন্ধানকে যদি পরনিন্দা বলেন বলতে পারনে।  অন্যায় যাঁরা প্রতিনিয়ত করে চলেছেন সেই সনামধন্য ডিগ্রীধারীরা, যাঁরা মতুয়া ধর্মের নাম নিয়ে হরি-গুরুচাঁদের আদর্শকে ধুলায় লুন্ঠিত করে ব্যবসা করছেন। আর যাদের মধ্যে এখনও শিক্ষার আলো প্রবেশ করেনি, জ্ঞানের আলো জ্বলেনি তাঁদের যে বৈদিকতায় ডুবে আছে, সেটা এই ডিগ্রীধারিদের প্রভাবের জন্য। এদের গুরু সাজার জন্য। তাই তাঁদের বিরুদ্ধে কলম চালান। সমাজকে সঠিক দিশা দেখান। শুধু ঝাল ঝাড়লে কিন্তু আপনাদের নাম যষ বাড়তে পারে; সমাজের তাতে ভাল কিছু হবে বলে মনে হয়না। তাই আসুন সকলে মিলে হরি-গুরুচাঁদের সঠিক ধর্ম ও দর্শনকে দেশ তথা সমাজের সামনে তুলে ধরে জ্ঞানের আলো জ্বালিয়ে দেই সকলের অন্তরে।

Comments