Skip to main content

কিছু মতুয়ার বুদ্ধ ও আম্বদেকরের নামে এলার্জি? নাকি জ্ঞানের অভাব?

কিছু মতুয়ার বুদ্ধ আম্বদেকরের নামে এলার্জি? নাকি জ্ঞানের অভাব?
গত তিন বছর আগে মুম্বাই থেকে বগুলাতে হরিচাঁদ ঠাকুরের দ্বিশত জন্মদিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠান করেতে আসেন কিছু শিক্ষিত মানুষ স্থানীয় কিছু মতুয়ার কাছ থেকে তাঁদের শুনতে হয়, এই শিক্ষিত লোকেরা এই মতুয়াধর্মের মধ্যে ঢুকে সবকিছুর সর্বনাশ করে দেবে  সর্বনাশ না আশীর্বাদ সেটা এই তিন বছরে অনেক কিছু বোঝা যাচ্ছে  
    আর বর্তমানে আর একটা কথা ঘুরে ফিরে আসছে, হরিচাঁদ ঠাকুরের নামের সঙ্গে বুদ্ধকে কেন জড়ানো হচ্ছে? তারপর আবার এই শিক্ষিত নামধারী মতুয়ারা আম্বেদকরকেও গুরুচাঁদ ঠাকুরের সঙ্গে এক আসনে বসাচ্ছে?”
 এনাদের যদি বলি, লীলামৃতের লেখা লাইনগুলিকেই শুধু না দেখে সঙ্গে তার অন্তর্নিহিত কথাটাকে উপলব্ধি করার চেষ্টা করুন তাহলে হয়তো অনেক কথার সঙ্গে একথাও বলা হবে –‘এই  পন্ডিতের আবার কোথা থেকে উদয় হলো কি বোঝে হরি-গুরুচাঁদের তত্ত্বকথা?’  আমি স্বীকার করছি, আমি আপনাদের মত অতো জ্ঞানী নই কিন্তু বুঝতে পারছি না গুরুচাঁদ ঠাকুরের মহাপরিনির্বাণের পর থেকে গত তিন বছর পূর্ব পর্যন্ত আপনারা কি কি করেছেন?
তবে কিছু জিনিস একটু একটু বুঝতে পেরেছি, সেটা হচ্ছে,- হরি-গুরুচাঁদের নাম ভাঙিয়ে আপনারা অনেকে আখের গুছিয়ে নেবার ধান্দায় মেতেছেন আর এই ধান্দায় দুদেশেরই বেশ কিছু ডিগ্রিধারীরা তাঁদের পসার জমিয়ে নিয়েছেন
   আর তাঁরা যখন দেখছেন কিছু লোক মতুয়াধর্ম দর্শনকে সঠিকভাবে তুলে ধরতে শুরু করেছেন তখনই এঁদের এলার্জির চুলকানি শুরু হয়ে গেছে আসলে এঁরা বুঝতে পারছেন যে তাদের ধান্দায় এই লোকগুলো জল ঢেলে দিচ্ছেন তাই অন্যের শয়তানি বুদ্ধিতে প্রভাবিত হয়ে আবোল তাবোল বকতে শুরু করেছেন।।
  এই এলার্জি ওয়ালাদের যদি বলি, “ সত্যি সত্যি যদি মতুয়াধর্ম তার দর্শনকে বুঝে আন্দোলন করতে চান তাহলে লীলামৃত কে যেমন গভীরভাবে অধ্যয়ন করা দরকার, আর সেই সঙ্গে ডা.   মনীন্দ্রনাথ বিশ্বাসেরহরিচাঁদ তত্ত্বামৃত কে জানতে চেষ্টা করুন কথা শুনলে হয়তঃ  আবার অনেক টক ঝাল বাণী আমাদের প্রতি ভেসে আসবে
আসলে এঁরা হরি-গুরুচাঁদের দর্শন কর্মকে কতটা বুঝেছেন সেটাই আমার বোধগম্য হচ্ছে না এঁরা কথায় কথায় বলেন, লীলামৃতের তো লেখা আছে- রাম হরি, কৃষ্ণ হরি গৌরাঙ্গ হরি অতএব হরিচাঁদও এই রাম কৃষ্ণ গৌরাঙ্গের মতই একজন এঁরা পরের লাইনকে বুঝতে চান না যে, কবি লিখেছেন- হরিচাঁদ আসল হরি হরিচাঁদ যদি আসল হরি হন্‌, তাহলে বাকিগুলো নকল নয় কি? কবি তারক সরকার কত সুন্দরভাবে এই বিষয়টাকে একটা শব্দআসললিখে বাকিদের প্রকান্তরে নকল বলে দিয়েছেন
এবার আপনাদের কাছে একথা জানতে ইচ্ছা করছে যে, আপনারা কি রাম, কৃষ্ণ গৌরাঙ্গের আসল চরিত্র কিছুই জানেন না ? যদি জানেন, আর ঘটে যদি কিছু থাকে তাহলে এঁদের সঙ্গে হরিচাঁদ ঠাকুরকে তুলনা করে তাঁর অপমান করছেন না কি ?
 আপনারা একথা হয়তো শুনে থাকবেন- হরিচাঁদ ঠাকুর বেদ-বিধিকে মানতে অস্বীকার করেছেন  
হরিচাঁদ ঠাকুর একটা আন্দোলন করেছেন সেই আন্দোলন একদিকে যেমন ধর্মহীন পতিতদের জন্য ধর্ম আন্দোলন; তেমনি তাঁদের জন্য সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক আন্দোলনও যে আন্দোলনের প্রেরণা তিনি বুদ্ধের দর্শন থেকে গ্রহণ করেছেন যার জন্য তিনি মতুয়াধর্ম নতুন নাম দিলেও বুদ্ধের বিচারধারার আঙিনায় এই ধর্ম দর্শনকে সাজিয়েছেন
 আর গুরুচাঁদ ঠাকুর, পিতার নির্দেশিত কর্মকে অগ্রগতিদানের ব্রত গ্রহণ করে তিনি শিক্ষার আন্দোলনের সঙ্গে অর্থনৈতিক রাজনৈতিক আন্দোলনের বীজ বপন করে গেছেন যার ফলে এই আন্দোলনের ঢেউ যতদূর পর্যন্ত পৌঁছেছে ততদূ্রের মানুষ অনেকাংশে শিক্ষায় সম্পদে সাবলম্বী হয়ে উঠেছে  
কিন্তু তারপর ? গুরুচাঁদ ঠাকুরের কোন বংশধর এই আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়েছেন কি ? তাঁদের এগিয়ে নেবার দায় বা কি? তাঁরা তো পসার বসিয়ে পূর্বপুরুষের নাম ভাঙিয়ে ব্যবসায় মেতে উঠেছেন আর আদি লীলামৃতকে গুলিয়ে ঘুলিয়ে ব্রাহ্মণ্যবাদের অনুপ্রবেশের শেষ যেটুকু বাকি ছিল তার ষোলকলা পূর্ণ করেছেন সেটা আপনারা আদি লীলামৃত পরবর্তীকালে প্রকাশিত  লীলামৃতকে  পাশা পাশি রেখে  পড়লেই বুঝতে পারবেন যদি ঘটেতে কিছু থাকে  
    গুরুচাঁদ ঠাকুরের পরবর্তীতে বাংলায় সাড়া জাগানো কার্জকরী আন্দোলন করেছেন যোগেন্দ্রনাথ মন্ডল যাকে মহাপ্রাণ উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে এই যোগেন্দ্রনাথের নাম শুনলেই আপনাদের অনেকের আবার এলার্জির চুলকানি শুরু হয়ে যাবে সেখানেও একই ব্যাপার তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারগুলোকেই আপনারা সত্য বলে মেনে নিয়েছেন কিন্তু এই যোগেন মন্ডল ছিলেন বলেই শুধু বাংলা নয়, সারা ভারতের তফশিলিরা আর কিছু করে কম্মে খাচ্ছেন তাঁর অবদানের জন্য বুঝলেন না তাই না ?
    যোগেন্দ্রনাথ মন্ডল এন্ড বাহিনীই তো সংগ্রাম করে আম্বদেকরকে সংবিধান সভায় পাঠিয়ে ছিলেন আর আম্বেদকর সংবিধানে সংরক্ষণের সুবিধা দিয়ে আপনাদের কৃতার্থ করেছেন যার জন্য আজ আপনাদের এলার্জির চুলকানি জেগে উঠছে যোগেন মন্ডল, আম্বেদকরের নাম শুনলে তাঁদের দেওয়া সুবিধা নিতে কোন লজ্জা নেই কিন্তু তাঁদের বিরুদ্ধে লজ্জা জনক গালি দিতে আপনাদের জুড়ি নেই
   কোন আন্দোলনই এককভাবে  সম্পন্ন করা সম্ভব নয় প্রত্যক্ষ অপ্রত্যক্ষভাবে এর সঙ্গে  আরো অনেকে জুড়ে  থাকেন পরিস্থিতি অনুযায়ী কারো অবদান কোনও অংশে কম নয়  
তাই বুদ্ধ-হরি-গুরুচাঁদ যোগেন্দ্রনাথ আম্বদেকরের আন্দোলন একটা পরিণতির ফল আর এই  ফলকে যারা উপভোগ করে এই আন্দোলনকারিদের নামে এলার্জি করেন, তাঁরা দেশ সমাজের জন্য ভয়ঙ্কর তথা প্রগতির পরিপন্থী তাই এঁদের থেকে সাবধান থাকা দরকার আর পরিপন্থীদের পিছনে ফেলে বুদ্ধ হরি-গুরুচাঁদ যোগেন্দ্রনাথ আম্বেদকরের আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে হবে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য নতুন জাতপাতহীন বিভেদ হীন সমাজ গড়ার জন্য সমতা স্বতন্ত্রতা বন্ধুতা  ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য   
_________________________



Comments