Skip to main content

লীলামৃতের প্রথম সংস্করণের বিকৃত করণ ও অলৌকিকতার প্রচার কীভাবে করা হয়েছে তার বিশ্লেষণ। -জগদীশ রায়




লীলামৃতের প্রথম সংস্করণের বিকৃত করণ ও অলৌকিকতার প্রচার কীভাবে করা হয়েছে   তার বিশ্লেষণ। 


Jagadish Ch. Roy (Mumbai)
     যে যে মহামানব আমাদের পতিত নিপীড়িত নিষ্পেষিত সমাজের মানুষকে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, আর্থিক ও ধর্মীয় শৃঙ্খল থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য  জীবনকে বাজি রেখে প্রতিকূল সমাজ ব্যবস্থার  বিরুদ্ধে কঠোর সংগ্রাম করে আজ আমাদের পশু থেকে মানুষের পর্যায়ে উন্নিত করেছেন সেই মহামানব  পতিত পাবন হরিচাঁদ ঠাকুর, গুরুচাঁদ ঠাকুর, মহাপ্রাণ যোগেন্দ্রনাথ মন্ডল, বাবা সাহেব আম্বেদকর এবং সর্বোপরি মহান দার্শনিক গৌতম বুদ্ধকে শ্রদ্ধা জানাই।  আমি কখনো পাঠকগণকে  শ্রোতাদের মতো দেখতে চাইনা কারণ, শ্রোতা আর বুদ্ধিজীবি (অর্থাৎ বিচারধারায় প্রভাবিত)  মানুষের  মধ্যে পার্থক্য আছে। রাজহাসকে দুধ আর জল মিশিয়ে দিলে সে দুধটাকে চুষে খায়। আর জল পড়ে থাকে। এই প্রবাদ যদি সত্যি হয় বা না হয়, এর থেকে শিক্ষনীয় বিষয় হচ্ছে,   দুধ আর জলকে আলাদা করে বোঝার ক্ষমতাবানদের আমি এখানে বুদ্ধিজীবি বলছি। অর্থাৎ এখানে বৈদিকতায় মিশ্রিত জল থেকে যুক্তিসংগত দুধকে আলাদা করে নিয়ে সমাজ ও দেশের কাজে লাগাতে পারেন আর বৈদিকবাদকে হাসের ডানা ঝাপ্টার মতো নিমেশে দূর করতে পারেন তাঁরাই বুদ্ধিজীবী।  মহাকবি তারক সরকার লীলামৃত লিখতে গিয়ে বলেছেন-  
                      শ্রোতাগণ হংসবৎ           দোষ ছাড়ি গুণ যত
                                দুগ্ধবৎ করুন গ্রহণ। 
                                         (-শ্রীশ্রীহরিলীলামৃত ১ম সংস্করণ, পৃ.৩৯)                                              
লীলামৃত এমনই একটা গ্রন্থ যেটার মূল্য কিন্তু পয়সার মাধ্যমে নির্ণয় করা যায় না। কারণ এর মূল্য হচ্ছে অমূল্য। অর্থাৎ যার গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ আজ থেকে ১০০ বছরেরও পূর্বে এই গ্রন্থটি  কবি তারক সরকার রচনা করেছিলেন বলেই একটা জাতির ইতিহাস, তার সামাজিক, সাংস্কৃতিক,  সর্বোপরি ধর্মীয় অবস্থাকে সমাজের কাছে তুলে ধরা সম্ভব হয়েছে। তাই এই গ্রন্থ মতুয়াদের কাছে  অমূল্য রতন স্বরূপ। যার জন্য কবি বলেছেন,-
                        ‘এই হরিচাঁদ লীলা, সুধার সাগর।
                         তারকেরে কর হরি তাহাতে মকর।। 
                                       (শ্রীশ্রীহরিলীলামৃত ১ম সংস্করণ পৃ. ২)
আজ আমরাও হরিচাঁদের লীলার সুধার সাগরে সামান্য একটা প্রাণী হয়ে অবগাহন করার চেষ্টা করছি তাঁর কয়েকটি ঘটনা নিয়ে। যাকে আপাতত দৃষ্টিতে মনে করা হয় অলৌকিক কাহিনি।
আমাদের প্রথমে তাহলে জানতে হবে অলৌকিক আর  লৌকিক কথার অর্থ।
অলৌকিক- যেখানে অমানবিক অবৈজ্ঞানিক অযৌক্তিক কাহিনি গাথা আছে সেটা হচ্ছে অলৌকিক। যেখানে একটা  ভগবান থাকবে, তিনি সর্ব শক্তিমান, অসংখ্য দেব-দেবী থাকবে। অনেক অবতার পুরুষ থাকবেন। জন্মান্তরবাদ থাকবে। সেখানে ইনিয়ে বিনিয়ে গল্প কথা থাকবে। একটা শোষণের ধর্ম। এটা অলৌকিক। যেটাকে আমরা এক কথায় বলতে পারি বৈদিকবাদী  ধর্ম। 
 তাহলে লৌকিক?  যেটা  বিজ্ঞানের উপর নির্ভর করে গড়ে উঠেছে। অত্যন্ত মানবিক, বিজ্ঞান ভিত্তিক, পরিসুদ্ধ যুক্তিসংগত, যা মানব জীবনকে ক্রমশঃ উন্নতির দিকে নিয়ে যায়, প্রগতির দিকে  নিয়ে যায়। যেখানে একটা সর্বশক্তিমান ঈশ্বর নেই। তেত্রিশ কোটি দেবতা নেই। অবতার পুরুষ নেই। জন্মান্তরবাদ নেই। আত্মার অস্তিত্ত্ব নেই। সেটাই হচ্ছে লৌকিক। এমন একটা ধর্ম দর্শন হচ্ছে অবৈদিক ধর্মদর্শন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে লীলামৃতে তো অনেক গল্প কাহিনি আছে যেটাকে আপাত দৃষ্টিতে দেখলে মনে  হয় সেগুলো সম্পূর্ণ অলৌকিকতায় পরিপূর্ণ। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, সেই ঘটনাগুলি সত্যি সত্যিই কি  অলৌকিকতার পরিপূর্ণ? সেটা কি করে সম্ভব? আমাদের বোঝার কোন ভুল হচ্ছে না তো? বা  কিছু ধুর্ত পন্ডিতের কলুষতাময় ভাবনার প্রকাশ নয় তো? কারণ আমরা লীলাম্রতের ১ম  সংস্করণে  যে কথা পাই পরবর্তি প্রকাশগুলিতে কেন কথার ও ভাষার মেল বন্ধন ঢুকিয়ে অর্থটাকেই  পাল্টে দেওয়া হয়েছে? আমরাতো লীলামৃতে দেখতে পাই হরিচাঁদ ঠাকুর দৃপ্ত কন্ঠে ঘোষণা করেছেন,-     
                    ‘কুকুরের উচ্ছিষ্ট প্রসাদ পেলেও খাই।
                      বেদবিধি শৌচাচার নাহি মানি তাই।।
                                   (শ্রীশ্রীহরিলীলামৃত ১ম সংস্করণ, পৃ. ১০৪) 

আবার যার কাছে- সর্ব্ব ধর্ম্ম লঙ্ঘি এবে করিলেন স্থূল।
                   শুদ্ধ মানুষেতে আর্ত্তি এই হয় মূল।।
                 ‘জীবে দয়া নামে রুচি মানুষেতে নিষ্ঠা  
                   ইহা ছাড়া আর যত সব ক্রিয়া ভ্রষ্টা।’
                                    -(শ্রীশ্রীহরিলীলামৃত ১ম সংস্করণ, পৃ. ১১)
  
যিনি বলেছেন,     তুমি-স্থূল আমি-সূক্ষ্ম উভয়ে অভিন্ন।
                   দেহ আত্মা মোরা দোঁহে মূলে নহি ভিন্ন।।
              -(শ্রীশ্রীহরিলীলামৃত ১০ম সংস্করণ, পৃ. ১১)     

 তিনি কীভাবে অলৌকিক ক্রিয়া কর্মকে প্রশ্রয় দেবেন? তবুও আমরা এমন কয়েকটি ঘটনা মুখে  মুখে জানি সেখানে বলা হয়েছে, হরিচাঁদ ঠাকুর মরা হীরামনকে বাঁচিয়েছিলেন, তিনি মরা বিশেকে বাঁচিয়ে ছিলেন, মরা গরু বাঁচিয়ে ছিলেন ইত্যাদি ইত্যাদি। তাহলে আমরা ঘটার ভিতরে প্রবেশ করে দেখি প্রকৃত ঘটনা কি?

এবার আমরা দেখি, (১) মৃত হীরামনের জীবন ফিরে পাওয়ার কাহিনি।
আমরা লীলামৃতের ১ম সংস্করণ, ১৩২৩ বঙ্গাব্দে প্রকাশিত, থেকে  হীরামন সম্পর্কে বিষয়ের নাম করণে পৃ. ৮০ তে দেখতে পাই, নামকরণ করা হয়েছে-  
          “হীরামনের জ্বর ও জ্ঞাতি কর্ত্তৃক ত্যাগ ও পুনর্জ্জীবন।”

এখানে কি সরাসরি প্রকাশ করা হয়েছে যে, হীরামন মারা গেছেন?
 না, এখানে প্রকাশ করা হয়েছে, হীরামনের জ্বর হয়েছিল আর তার জ্ঞাতি লোকেরা তাঁকে ফেলে যায়, এবং পরে তাঁর পুনর্জ্জীবন লাভ হয়, অর্থাৎ সেই ব্যাধি থেকে মৃত প্রায় অবস্থা থেকে মুক্তিলাভ করে।
 কিন্তু আমরা, ঠাকুরনগর ঠাকুরবাড়ি থেকে ২০০৯ সালে প্রকাশিত দশম সংস্করণের লীলামৃতে   হীরামন সম্পর্কে বিষয়ের নাম করণে ১১৩ নং পৃষ্ঠায় দেখতে পাই
           “হীরামনের মনের  মৃত্যু ও পুনর্জ্জীবন লাভ।”

 অর্থাৎ হীরামন মারা গিয়েছিলেন। তারপর তাঁর পুনর্জ্জীবন লাভ ঘটে। প্রথমেই মানুষের মনে এক অন্ধ অলৌকিকতার ছাপ দিয়ে মানুষকে প্রভাবিত করা হয়েছে। শুধু এখানেই নয় কাহিনির ভিতরেও এরকম অনেক পরিবর্তন করা হয়েছে।   
কাহিনির শুরুতে আমরা দেখতে পাই, হরিপ্রেমে বিভোর হয়ে হীরামন আত্মহারা হয়ে যান। ফলে ধীরে ধীরে তিনি সংসারের সব কর্ম ত্যাগ করেন। স্নান-খাওয়ার প্রতিও কোন ভ্রুক্ষেপ থাকেনা তাঁর। যার ফলে ধীরে ধীরে তাঁর শরীরে অসুখে বাসা বাধে। প্রায় ছয় মাস ধরে তিনি জ্বরে ভোগেন। যার ফলে তাঁর যকৃত খারাপ হয়ে প্লীহা রোগ হয়। তবে এত কিছু হওয়ার পরেও হীরামন কোন ওষুধ খেতে রাজি না হওয়ায় একদম মরণাপন্ন অবস্থায় উপনিত হন।
   এই অবস্থা দেখে হীরামনের কাকা শ্রীচৈতন্য বালা বলেন, -‘ও যখন কারো কথাই শুনছে না, আর ওষুধও খাচ্ছে না তাহলে ওর ঠাকুরের কাছেই ওকে ফেলে এসো।’ তখন বাড়ির ভৃত্য তিলক মন্ডল নৌকায় করে নিয়ে হীরামনকে ঠাকুরের বাড়ির কাছের গাছতলায় ফেলে রেখে তাড়াতাড়ি করে পালিয়ে আসে। তিলককে ঐভাবে পালাতে দেখে বড়কর্তা কৃষ্ণদাস ওকে ধরার জন্য তাড়া করেন। তখন হরিচাঁদ ওখানে এসে বড়ভাইকে শান্ত করে বলেন-
প্রভু বলে দেখ দাদা হ’য়ে আগুয়ান
একেবারে মরেছে কি? আছে ওর প্রাণ।।
বড় কর্ত্তা দেখে গিয়া নাকে শ্বাস নাই।
কন্ঠ দেশে বাম পার্শ্বে ল’ড়ে দেখে তাই।।
                                  -(শ্রীশ্রীহরিলীলামৃত ১ম সংস্করণ, পৃ. ৮২)   

লীলামৃতের ১ম সংস্করণে(৮২ পৃষ্ঠা) আমরা দেখতে পাই, হরিচাঁদ ঠাকুর বড়ভাইকে এগিয়ে গিয়ে দেখতে বলছেন যে, একেবারে কি মরেগেছে? নাকি প্রাণ একটু আছে। তখন বড়কর্তা গিয়ে চেক করে দেখে বলেন যে, শ্বাস তো চলছে না তবে গলার বাম পাশের শিরাটা একটু নড়ছে। অর্থাৎ একেবারে মরে নাই।
কিন্তু আমরা ১০ম সংস্করণের বইয়ে দেখতে পাই- (১১৫ পৃষ্ঠা)
                                                  প্রভু বলে “দেখ দাদা হ’য়ে আগুয়ান।
                                                একেবারে মরেছে কি আছে ওর প্রাণ?”
বড় কর্ত্তা দেখে গিয়া নাকে শ্বাস নাই।
একেবারে গত প্রাণ শব দেখে তাই।।
দেখুন, এখানে কি বলা হয়েছে?- একেবারে গত প্রাণ শব দেখে তাই। অর্থাৎ একেবারে এটা একটা মরা শব। তাহলে ভাবুন এখানে আপনাদের কে বা কারা  বিভ্রান্ত করছেন? আর এই বিভ্রান্তির কারণই বা কী?
    শুধু এটুকুই নয়, আরো আছে। ১ম প্রকাশে আছে-
প্রভু কহে দেখহে পোদ্দার মহাশয়।
প্রাণ আছে একেবারে মরা শব নয়।।  
আর ঠাকুরবাড়ির বইতে আছে-
প্রভু কহে “দেখহে পোদ্দার মহাশয়।
প্রাণ নাই একেবারে মরা শব হায়।।
আবার আমরা ১ম সংস্করণে দেখতে পাই
প্রভু কহে বড় কর্ত্তা দেখ বিদ্যমান।
একেবারে মরে নাই দেহে আছে প্রাণ।।
নাসাগ্রে ঈষৎমাত্র বহিতেছে শ্বাস।
বাঁচিলে বাঁচিতে পারে হ’তেছে বিশ্বাস।।
আর ঠাকুরবাড়ির বইতে দেখতে পাই-
প্রভু কহে ‘বড় কর্ত্তা দেখ বিদ্যমান।
একেবারে মরা শব দেহে নাই প্রাণ।।
প্রাণহীন দেহে বটে নাহি  কোন শ্বাস।
তবুও বাঁচাতে পারি হ’তেছে বিশ্বাস।।
এই ভাবে মৃত প্রায়কে সম্পূর্ণ মরা ঘোষণা করে দিয়ে পরবর্তী সংস্করণের বইতে মতুয়াদের মধ্যে  বিভ্রান্তিত সৃষ্টি করে চলেছে। আর এই বিভ্রান্তিতে সহায়তা করে চলেছেন তথাকতিত ডিগ্রিধারী মতুয়া গুরুরা। তাঁদের ব্যবসাকে প্রসারিত করার জন্য। তা না হলে দেখতে পেতাম এসব বিভ্রান্তির তাঁরা বিরোধিতা করছেন। কিন্তু সেটা কি আপনারা কি কোথাও দেখেছেন?  
   তাহলে আমরা লীলামৃতের ১ম সংস্করণ অনুযায়ী দেখলাম যে, হীরামন সম্পূর্ণভাবে মরেনি। মৃত প্রায় হীরামনকে ঠাকুর সারারাত ধরে শুশ্রষা করেন আর সকালের দিকে হীরামনের জ্ঞান ফেরে।
এই ঘটনার সত্যতাকে প্রচার না করে আমাদের সমাজের অশিক্ষিত অর্ধশিক্ষিত মানুষদের পূর্ণ শিক্ষিত ডিগ্রিধারীরা তাদের সুবিধার জন্য ভাবের আবেগ মিশিয়ে আরো অন্ধ করে রেখেছেন। যেখানে সম্পূর্ণ মৃত অবস্থার কথা নেই। সেখানে হীরামনকে মেরে দিয়ে ঠাকুরের অলৌকিকতার মিথ্যা প্রচার করে চলেছে।

 (২) মৃতপ্রায় বিশের জীবন দান।

হরিচাঁদ ঠাকুর কি সত্যি সত্যি মৃত বিশেকে বাঁচিয়েছিলেন?

সত্য ঘটনা কি?     

     শৈশবে হরিচাঁদ তাঁর প্রিয় সাথী ব্রজনাথ, নাটু আর বিশ্বনাথের সঙ্গে খেলা করতেন। একদিন খেলতে খেলতে অনেক দেরী হয়ে গিয়েছে, কিন্তু তবুও বিশ্বনাথকে খেলতে আসতে না দেখে নাটুর কাছে হরিচাঁদ জানতে চান বিশে (বিশ্বনাথ) এখনও পর্যন্ত কেন খেলতে এলোনা। তখন নাটু বলল,-

বিশের হয়েছে রাত্রে বিসুচিকা ব্যাধি।

মৃতপ্রায় সবে করিতেছে কাঁদাকাঁদি।। (১ম সংস্করণ পৃ ২৯)  

                                                             (লীলামৃত, ঠাকুরনগর, প্রকাশ 2009, পৃষ্ঠা নং-55)

    অর্থাৎ বিশ্বনাথের কলেরা বা পেট খারাপ হয়েছে। সে মরনাপন্ন অবস্থায় আছে। সবাই বিশের অকাল মৃত্যুর ঘনিয়ে আসার জন্য কান্নাকাটি করছে।

      এই ঘটনা 1920 সাল এর কাছাকাছি সময়ে আমরা ধরে নিতে পারি। তখন গরীব লোকদের পুকুর অথবা নদীর জল পান করতে হত। টিউবওয়েল হয়তঃ রাজা জমিদার বা এই ধরণের ধনী লোকদের বাড়িত থাকত। তাই সাধারণ মানুষের নদী বা পুকুরের জলই ভরসা ছিল। যার ফলে প্রায়ই কলেরা ডায়রিয়া বা এই ধরনের রোগ লেগেই থাকত। আর একবার যদি এই ধরনের অসুখ কারো হত, তার মৃত্যু অনিবার্য ছিল। কারণ তখনকার সময়ে ভাল ডাক্তার পাওয়া ছিল প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। সেজন্যই নাটু বলল- বিশের মৃতপ্রায় অবস্থা।

   নাটুকে করিয়া সঙ্গে ঠাকুর চললি।

   হেনকালে বিশ্বনাথ অজ্ঞান হইল।।

বিশাইর হইয়াছে মৃত্যুর লক্ষ

           ঘনশ্বাস বহে তার উত্তার নয়ন।। (তথ্য ঐ)

নাটুর কথা শুনে হরিচাঁদ নাটুকে সঙ্গে নিয়ে দৌড়ে বিশেদের বাড়িতে পৌঁছান। ততক্ষণে বিশে অজ্ঞান হয়ে যায়। ঘনশ্বাস বইতে শুরু করে, চোখ উপরে উঠে আসে।

    হরিচাঁদ একজন বালক হলেও তাঁর বিচার ধারা, ভাবনা চিন্তা সর্বদা অন্যের থেকে পৃথক এবং বিজ্ঞান সম্মত ও যুক্তিবাদী ছিল। হরিচাঁদ তাড়াতাড়ি ঘরের মধ্যে গিয়ে দেখেন ঘরের মধ্যে হাওয় বা আলো আসার মত কো জায়গা নেই। অন্ধকার অবস্থা। ঘরের একোনে বিশে অচেতন হয়ে  পড়ে আছে। তখন তিনি নাটুর সাহায্য নিয়ে বিশেকে ঘরের বাইরে বের করে খোলা হাওয়াতে রাখেন। তারপর আবার ঘরের মধ্যে গিয়ে কিছু খাবার খুঁজতে গিয়ে দেখেন ভাতের হাড়িতে কিছুটা পান্তা ভাত পড়ে আছে।  

  তখনকার দিনে সাধারণ লোকদের প্রতিদিন খাবার পাওয়া মুশকিল ছিল। একবেলা খেতে পারলেও দ্বিতীয় বার খাবার মিলত না। তাই একবার খাবার রান্না করলে খাবার খাওয়ার পর কিছুটা ভাতে জল দিয়ে রেখে দিত পরে খাবার জন্য।

    হরিচাঁদ পান্তাভাত লবন দিয়ে ভাল করে চটকিয়ে একেবারে ঘোলের মত বানিয়ে একটু একটু করে বিশেকে খাওয়াতে থাকেন। দুই তিন বার একটু একটু করে ভাত চটকানো জল খেয়ে বিশের জ্ঞান ফেরে। তারপর ধীরে ধীরে তার অবস্থার উন্নতি হতে থাকে।     

    বিশের শরীর থেকে অতিরিক্ত dehydration এর ফলে সে অচেতন হয়ে গিয়েছিল। শরীর থেকে জল, লবন পাতলা পায়খানা ও বমির সঙ্গে বেরিয়ে যাওয়ার ফলে সে মরনাপন্ন হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু চটকানো ভাতের জলের সঙ্গে লবন মিলিত থাকায় “ওর সেলাইন”  তৈরী হয়ে ছিল। সেই ওর সেলাইন খাওয়ানোর ফলে বিশের জীবন রক্ষা হয়। ( তথ্য সংগ্রহ- হরিচাঁদ এক মুক্তি সেনা- মনোরঞ্জন ব্যাপারী)

    এই ঘটনা সাধারণ লোকের কাছে অলৌকিক কিছু বলে মনে হয়েছিল। এই ঘটনার কারণ বোঝার মত ক্ষমতা তখনকার বেশিরভাগ লোকের ছিলনা। আর এই সব কারণ খুঁজতে হ’লে বুদ্ধি লাগাতে হয়। কিন্তু সব থেকে সহজ কাজ হচ্ছে কোন বুদ্ধি না লাগিয়ে একবারে অলৌকিক ঘটনা নাম দিয়ে প্রচার করলে বেশি প্রচার হয়হরিচাঁদের ক্ষেত্রেও তাই ঘটল। চারি দিকে   প্রচার হয়ে গেল ‘হরিচাঁদ মরা বিশেকে বাঁচিয়েছে।’  হরিচাঁদ অবশ্যই অবধারিত মৃত্যুর হাত থেকে বিশেকে বাঁচিয়ে ছিলেন। তবে বিশেকে মৃত অবস্থা থেকে জীবন করেননি। যদিও প্রচার হয়ে গেল মরা বিশেকে বাঁচিয়েছেন। হরিচাঁদ একজন প্রকৃতির মানুষ। প্রকৃতি বিরুদ্ধ তিনি বা কেউই করতে পারেন না। তাই তিনিও মারা বিশেকে বাঁচাননি। মৃতপ্রায় বিশেকে বাঁচিয়ে ছিলেন। তবে এই বোধ তখনকার দিনের কথাতো দূরের কথা, বর্তমান কালের শিক্ষিত লোকেরাও এই ধরণের ঘটয়ার বিশ্বাস করেন। তখনকার সাধারণ লোকেরা হরিচাঁদের বিজ্ঞান ভিত্তিক কাজের ব্যাখ্যা খুঁজে না পেয়ে তাঁকে ভগবান বলে মানতে শুরু করে।  

 

() মরা গরু বাঁচানোর কাহিনি

হরিচাঁদ ঠাকুর কি সত্যি সত্যি মরা গরু বাঁচিয়েছিলেন?

সত্য ঘটনা কি?    

     হরিচাঁদ তাঁর প্রিয় সাথী ব্রজনাথ, বিশ্বনাথ আর নাটুকে নিয়ে ঘুরে রেড়াতেন। গ্রামে কারো কোন সমস্যা হ’লে তার সমাধানের চেষ্টা করতেন। কখনও সবাই মিলে গাছে চড়তেন। কখনও গরু চরাতে যেতেন। আর কখনও খোলা মাঠে গলা ছেড়ে দিয়ে গান করতেন। আর এই সব করতে করতে খিদে পেলে কখনও কখনও নিজেদের বাড়ি এসে খেয়ে যেতেন। কিন্তু অধিক সময় বিশের মা এঁদের আদর যত্ন করে যা পারতেন তাই খেতে দিতেন। কারণ হরিচাঁদের জন্যই বিশে মরতে মরতে বেঁচে গেছে।

  এই যে বন্ধুদের মিলন এটা প্রতিদিনই চলত। কখনও কখনও এঁরা প্রয়োজনবোধে কৃষিকাজে হাত লাগাতেন। একত্রে কাজ করে অল্প সময়ে অধিক কাজ করতেন। আবার কোন দিন ইচ্ছা হলে সবাই মিলে ঘুড়ি ওড়াতেন। এইভাবে এঁদের জীবন ধারা চলছিল।

   একদিন দেখা গেল হরিচাঁদের বাড়ির গোয়ালের সব থেকে শক্তিশালী ও কর্মঠ বলদ গুরুটি শুয়ে বা টান টান করে পড়ে আছে। নাক দিয়ে শ্লেষ্মা বের হচ্ছে। এরকম অবস্থা দেখতে পেয়ে বড়ভাই কৃষ্ণদাস আর ছোটভাই স্বরূপদাস গরুর কাছে ছুটে যান। ছোটভাই গরুটির মাথা কোলের মধ্যে নিয়ে সেবা করার চেষ্টা করে। কিন্তু বড়ভাই গরুর অবস্থা দেখে ছোট ভাইকে বলেন-

কেন বসিয়াছ মরা গরু কোলে করে?
পেট ফুলে উঠিয়াছে পা হ
য়েছে টান।

দাঁতে দাঁত লেগে গেছে উত্তার নয়ন।।

বাঁচিবেনা ঐ গরু প্রায় মরে গেছে।

উঠে এস থাক কেন বলদের কাছে।। (১ম সংস্করণ পৃ ৪৩)  

                                                             (লীলামৃত, ঠাকুরনগর, প্রকাশ 2009, পৃষ্ঠা নং-৬১)

 

অর্থাৎ মরা গরু কোলে করে কেন বসে আছ। দেখছোনা দাঁতে দাঁত লেগে গেছে, চোখ বেরিয়ে এসেছে। এ গরু আর বাঁচবে না, এতো প্রায় মরে গেছে। তাই এই গরুর কাছে বৃথা বসে থেকোনা।

পাঠককে বুঝতে হবে গরুর মরনাপন্ন অবস্থার বর্ণনা এখানে করা হয়েছে। প্রথমে বলা হচ্ছে মরা গরু কোলে করে কেন বসে আছ। আবার পরক্ষণেই বলা হোল ঐ গরু বাঁচবেনা প্রায় মরে গেছে। তাহলে আমরা দেখতে পাচ্ছি গরু মরার পুর্বাবস্থার পরিস্থিতিগুলি দেখা যাচ্ছে, তবে গরু যে পুরাপুরি মরেনি সে কথা পরিষ্কার উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও প্রচার হয়েছিল এবং এখনো হয় যে, হরিচাঁদ ঠাকুর মরা গরু বাঁচিয়েছিলেন। এই লেখার উদ্দেশ্য এই ভ্রান্তি দূর করে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরা।  

     হরিচাঁদ তাঁর বন্ধুদের নিয়ে ঐ সময় বাড়িতেই ছিলেন। গোয়াল ঘরের এই ঘটনার কথা তাঁর দৃষ্টিগোচর হলে তিনি সেখানে ছুটে যান বন্ধুদের নিয়ে। কিন্তু গোয়ালের সব থেকে ভাল গরুটি এই ভাবে চোখের সামনে মরে যাচ্ছে দেখে বড় ভাইয়ের খুব দুঃখ হয় কিছু প্রতিকার করতে না পারার জন্য। গ্রামের চাষিদের কাছে হালের গরু হচ্ছে যুবক সন্তানের মত। কারণ জমি চাষ করার জন্য বিশেষ করে বলদ গরু বিশেষে দরকারী। সেই যুবক সন্তানসম গরু যদি চোখের সামনে প্রায় বিনা কারণে হঠাৎ করে মরনাপন্ন হয় তখন চাষির জ্ঞান হারিয়ে যাওয়ার মত অবস্থা হয়।  

     তখন হরিচাঁদকে দেখে বড়ভাই কৃষ্ণদাস দুঃখে ভারাক্রান্ত হয়ে কিছুটা রাগের সঙ্গে বলেন-‘তোমরা কয়জনে মিলে পাড়া ভরে ঠাকুরালী করে বেড়াও। জানিনা কি ভাল কাজ করো তোমরা লোকের। আমিতো দেখি তোমরা শুধু শুধু কোন কাজ না করে অন্ন ধ্বংস করছ। আজ দেখব তোমাদের ঠাকুরালী করার কত প্রভাব আছে। যাও আজ যদি তোমরা গোয়ালের মরনাপন্ন গরুটিকে বাঁচিয়ে তুলতে পার তবেই বুঝবো তোমাদের সত্যি সত্যি কোন ক্ষমতা আছে। আর যদি তোমরা এই গরুকে বাঁচাতে না পার তাহলে এবাড়িতে তোমাদের আর ভাত নেই একথা বলে দিলাম।’

     বড়দাদা কৃষ্ণদাসের মুখে এসব কথা শুনে –

এত শুনি ব্রজ চাহে ঠাকুরের ভিতে।

ঠাকুর ব্রজকে ব’লে দিলেন ইঙ্গিতে।।

যারে ব্রজ আমি তোরে দেই অনুমতি।

ওঠ বলি বলদেরে মার গিয়া লাথি।।

হুঙ্কার করিয়া ব্রজ করি হরিধ্বনি।

বলদেরে লাথি গিয়া মারিল অমনি।।

ওঠ ওঠ ওরে গরু র’লি কেন শুয়ে।

অমনি উঠিয়া গরু গেল দৌড়াইয়ে।। (১ম সংস্করণ পৃ ৪৩)   

অর্থাৎ- বড়কর্তার এই সব কথা শুনে ব্রজনাথ কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে হরিচাঁদের দিকে তাকান। চোখের ভাষায় জানাতে চান এই সমস্যার থেকে কি করে উদ্ধার হওয়া যাবে? তখন হরিচাঁদ ঈশারায় ব্রজকে অনুমতি দেন গরুকে গিয়ে লাথি মেরে ওঠানোর জন্য। ব্রজ আজ্ঞা মত হরিধ্বনি  দিয়ে হুঙ্কার দিয়ে ওঠেন আর বলেন “ওঠ্‌ ওঠ্‌ এখনো শুয়ে রয়েছিস কেন?” এই বলে গরুর পিঠে লাথি মারেন। লাথি খেয়ে গরু উঠে দাঁড়ায়।

     এখানের এই ঘটনার এখন আমরা বিশ্লেষণ করে দেখি-

    প্রথম কথা হচ্ছে- পৃথিবীতে কোন প্রাণী একবার মারা গেলে সেটা আর কখনও জীবিত হয় না। এটা চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রমান্য মতবাদ। তবে কিছু কিছু ঘটনা চিকিৎসা বিজ্ঞানে এমন ঘটেছে যে, আপাত দৃষ্টিতে মৃত মনে হলেও তার মৃত্য হয়নি। বা Brian Death হয়নি। কোমায় চলে গেছে বা এই ধরণের কোন ঘটনা ঘটেছে। তবে সম্পূর্ণরূপে মরেনি। হয়তঃ কখনও কখনও ডাক্তার অসাবধানতা বশতঃ মৃত বলে ঘোষণা করে দেওয়ার পরেও বেঁচে থাকার নিদর্শন পাওয়া গেছে।

    এখানে এই গরুর ক্ষেত্রেও তেমনি কোন কারণ ঘটে থাকবে। গরুকে এমন জায়গায় আঘাত করার ফলে তার নার্ভ System সচল হয়ে যায়। যেটা বেশি যুক্তি সঙ্গত বলে মনে হয়। যার ফলে লাথি খেয়ে গরু উঠে দাঁড়ায়।

আবার এমনও হ তে পারে পালের সব থেকে শক্তিশালী গরুটিকে বেশি বেশি করে কাজ করানো হত। কিন্তু গরুটি কাজ করার ইচ্ছা না থাকায় সেই সময়  মরার মত ভান করে পড়েছিল। আর যখন ব্রজ জোরে হুঙ্কার দিয়ে সেই গরুর পিঠে যোরে লাথি মারে তখন গরুটি ভান করা ছেড়ে দিয়ে আর বেশি মার খাওয়ার থেকে বাচাঁর জন্য উঠে দাঁড়িয়ে পালিয়ে গিয়ে মাঠে গিয়ে ঘাস খেতে শুরু করে।

     এখানে এই দুটি ঘটনা বা অন্য যে ঘটনাই ঘটুক না কেন, এর পিছনে কোন অলৌকিকতার ছাপ নেই। হরিচাঁদ ঠাকুরও আমাদের মতই মানুষ। কিন্তু তাঁর বিচার –বুদ্ধির প্রখরতা সাধারণ  মানুষের থেকে অনেক উচ্চ স্তরের ছিল। যেটা সাধারণ মানুষেরা সেই প্রখরতাকে তাদের ক্ষুদ্র জ্ঞান দিয়ে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা না করে হরিচাঁদের প্রতি দেবত্ব, অলৌকিকত্ব আরোপ করতেন।  যে পরম্পরা আজ বিজ্ঞানের যুগেও সমান তালে ঘটে চলেছে। যার ফলে লোকে আপাত দৃষ্টিতে এই অসম্ভব ঘটনার কারণ বুঝতে না পেরে হরিচাঁদকে অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী মেনে নিয়ে তাদের নির্বুদ্ধিতার প্রকাশ করে চলেছে। আর এই হরিচাঁদকে অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী বলে মেনে নেওয়া ও তাদের নির্বুদ্ধিতার পরিচয় দেওয়ার জন্য কিছু ধুর্ত লোক গুরু সেজে মানুষকে ধোকা দিয়ে অর্থ উপার্জনের ব্যবসা ফেঁদেছে। আর এই ব্যবসার কাজে আগুনে ঘি ঢালার মত কাজ করেছে হরিলীলামৃতের পরবর্তী সংস্করণগুলো। যেখানে পূর্বের চেয়ে আরো বেশি বেশি করে অলৌকিকতাকে সুচতুর ভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

     যাইহোক এই ঘটনা বড়ভাই কৃষ্ণদাস দেখার পরে, হরিচাঁদ ও তাঁর সাথি ব্রজ, নাটু আর বিশ্বনাথকে অন্তরের ভালবাসা প্রেরণ করেন। তাদের বলেন, “তোমরা শুধু অন্ন ধ্বংস করে বেড়াও না। মানুষের উপকার কর সেটা আমি প্রত্যক্ষ করলাম। তাই আজ থেকে আমি তোমাদের বলছি, তোমরা এইভাবে জগতের কল্যান মূলক কাজ করো। তোমাদের ভরন পোষণের সব দায়িত্ব আমার, আমি প্রয়োজনে ভিক্ষা করেও তোমাদের খাওয়াবো।

     উপরের ঘটনা গুলোর  বিশ্লেষণ করে জানলাম যে, এই ঘটগুলিতে কোন অলৌকিকতা বলে কিছু নেই। হরিচাঁদ ঠাকুর আমার আপনার মত একজন রক্ত মাংসের মানুষ ছিলেন। প্রকৃতির মানুষ ছিলেন।    তাই তিনি প্রকৃতি সঙ্গত কাজই করবেন। তাঁর চিন্তা ভাবনা সাধারণ মানুষের থেকে অনেক ঊর্ধে।  যেটাকে সাধারণ বুদ্ধির মানুষ তাঁর কাজের ব্যাখ্যা  করতে না পেরে তাঁর প্রতি অলৌকিকতা আরোপ করেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কবি তারক সরকার যেখানে লৌকিক কথাকে ব্যক্ত করেছেন,  সেখানে লীলামৃতের পরবর্তি সংস্করণগুলোতে কেন এই ভাবে অলৌকিকতার প্রবেশ করানো  হয়েছে? যাঁরা করেছেন তাঁরা নিশ্চয় সাধারণ বুদ্ধির লোক নন। তাহলে তাদের অভিপ্রায় কি? হরিচাঁদ ঠাকুরের সঠিক আদর্শের প্রচার প্রসার নাকি হরিচাঁদ ঠাকুরকে এক অলৌকিক ভগবান বানিয়ে তাদের ব্যবস্যার পসার বৃদ্ধি ঘটানো। এই কাজে কিন্তু কয়েক জন জড়িত নন। অনেকেই জড়িত। কারণ তাই যদি না হবে এখনকার দিনে যারা হরি-গুরুচাঁদ ঠাকুরের নামে অনেক বড় বড় ডিগ্রি উপাধী গ্রহণ করছেন, তাঁরা কেন এর প্রতিবাদ করছেন না। যেহেতু তাঁরা প্রতিবাদ করছেন না বা সঠিক কথার বিশ্লেণমূলক প্রচার করছেন না তাহলে আমরাও ধরে নেব এই ডিগ্রিধারীরাও এক্ষেত্রে সমান অপরাধী। 
    এবার আপনারাই ভাবুন কী করবেন? এই ধরণের অন্যায়কে প্রশ্রয় দেবেন নাকি এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হবেন। আপনারা কার কথা শুনবেন? হরিচাঁদের কথা নাকি হরিচাঁদের নাম  ভাঙ্গিয়ে যারা গুরু সেজে নিজেদের নাম যশ ও অর্থকে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি ঘটাচ্ছেন তাদের?  এই আলোচনা শুধু আলোচনার জন্যই নয়। এর থেকে আমাদের কিছু শিক্ষা গ্রহণ করে নিজেদের জীবনে আচরণ করা তথা দেশ সমাজ ও জাতির মঙ্গলের জন্য অনুপ্রানিত হওয়াই হচ্ছে আসল উদ্দ্যেশ্য। যদি একাজ আমরা কিছুটাও করতে পারি তবেই হবে হরিচাঁদের সঠিক দর্শনের প্রকাশ।  
               ------------------------------------------------------------------

Comments

  1. ঐ পূর্বের গ্রহন্থ কি পাওয়া যাবে?

    ReplyDelete
    Replies
    1. হ্যাঁ। pdf দিতে পারি

      Delete
  2. ঐ পূর্বের গ্রহন্থ কি পাওয়া যাবে?

    ReplyDelete
    Replies
    1. এখানে পিডিএফ লিঙ্ক দিলাম। ১ম সংস্করণের http://www.mediafire.com/file/dlirkunfswq2m52/harililamrita1323+b.pdf

      Delete
  3. http://matuaism--harililamrita.blogspot.com/2014/12/page-053.html

    ReplyDelete
  4. খুব ভালো লাগলো সত্য ইতিহাস যেনে।যে সব মতুয়ারা আমার মত নির্বোধ কে গালাগালি করত তারা কি এবার সুধরাবে?প্রতিটা লাইনে মনের কথা দেখতে পেয়ে অত্যন্ত আনন্দ লাভ করছি।আমি আগেও বলেছি যে ডিগ্রিধারী রা শুধুমাত্র টাকা আয় করার জন্য মনুবাদী গাইডের মাধ্যমে ডিগ্রি অর্জন করেছে।এরা ঠাকুরের মান সম্মান ধুলায় মিশিয়ে দিয়েছে।পারলে সত্যিকারের ঠাকুরের ধর্ম এবং ঠাকুর কে তুলে ধরুন।আর না পারলে ঠাকুরের মান সম্মানকে ধুলায় মিশিয়ে দেবেন না। আরও অনেক বিষয় আছে তা নিয়ে গবেষণা করুন।মুরদে না কুলালে চুপ চাপ থাকুন। উপযুক্ত গবেষক এলে তারাই ঠাকুর এবং তার ধর্মকে সমাজে প্রচার করবে।

    ReplyDelete
  5. দাদা আপনাকে অনুরোধ করব ।এই গবেষণায় এখনো পর্যন্ত সত্য উদঘাটিত হয়েছে তার নিয়ে একটি কনফারেন্স করুন।সেখানে আসল স্রতা থাকবে,গোসাই সাধু পাগল এবং কবিয়াল রা।কারণ তাঁদের কে যদি শোধরানো না যায় সবই বৃথা।প্রয়োজনে আর্থিক সাহায্য সাধ্য মত করব।ঠাকুরকে বাঁচিয়ে তুলতে হবে।

    ReplyDelete
  6. আপনারা কি MATUAISM নামে নতুন মতবাদের সৃষ্টি করছেন?

    ReplyDelete
    Replies
    1. আপনারা কি সনাতন ধর্মের অনুসারী ?

      Delete
    2. আমরা মতুয়া।

      Delete

Post a Comment