Skip to main content

“ব্রাহ্মণের স্বার্থ তরে শাস্ত্র লেখে তারা/ শাস্ত্রের বিধান মানে অব্রাহ্মণ যারা।-গুরুচাঁদ ঠাকুর


এতদ শাস্ত্র বিষয়ে একটি ঘটনা মনোহর রায়ের পান্ডুলিপিতে ধরা পড়েছে। ওড়াকান্দির নিকটে বহুগ্রামের মহাজন শ্রীআনন্দ মজুমদারের বাড়ীতে দানসাগর যজ্ঞ অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রিত গুরুচাঁদ ঠাকুর পার্ষদবর্গ নিয়ে উপস্থিত ছিলেন। ব্রাহ্মণ পরিবেষ্টিত সেই অনুষ্ঠানে ব্রাহ্মণ্য শাস্ত্র সম্বন্ধে গুরুচাঁদ ভক্ত শ্রী চন্ডীচরণ রায়ের বক্তব্য শুনুনঃ-(নির্দেশ গুরুচাঁদ ঠাকুরের)
“ব্রাহ্মণের স্বার্থ তরে শাস্ত্র লেখে তারা
                           শাস্ত্রের বিধান মানে অব্রাহ্মণ যারা।
                           দেবদেবী পূজা করে সব হিন্দুগণ
                           হয়না তাদের পূজা ব্যতীত ব্রাহ্মণ
                           নিজ পূজা নিজে করা অবশ্য উচিত
                           শাস্ত্রে লেখা নাই তাই হইল গর্হিত।”
   মারাত্মক কথা। আবার গুরুচাঁদ বুঝিয়ে দিলেন হিন্দু শাস্ত্রসমুহ কপট ধুরন্ধ্র ব্রাহ্মণদের স্বার্থ রক্ষার্থে রচিত হয়েছে। সমস্ত হিন্দুরা দেবদেবীর পূজা করে অথচ অব্রাহ্মণ হিন্দুদের পূজা ব্রাহ্মণ ছাড়া সিদ্ধ হবে না। এ কেমন শাস্ত্র? ঐসব ব্রাহ্মণ্য শাস্ত্র দূরে ঠেলে গুরুচাঁদ নির্দেশ দিলেন,- “নিজের পূজা নিজে কর।”  কিন্তু হিন্দুশাস্ত্রকার ব্রাহ্মণরা এই কাজকে ‘গর্হিত’ বলছে কারণ নিজের কাজ নিজে করার কথা শাস্ত্রে লেখা নেই।
   প্রশ্ন থেকে যায়, আমি কাকে মানবো? কোণ বা কার শাস্ত্র বানবো? গুরুচাঁদ শাস্ত্র না ব্রাহ্মণ্য শাস্ত্র? যদি ওদের শাস্ত্র মানি তবে দাসত্বকে স্বীকার করতে হবে। এটাই শূদ্রের জন্য হিন্দুশাস্ত্রের বিধান। ব্রাহ্মণ্য শাস্ত্রীয় নাগপাশে বাঁধা পশুবৎ জীবন থেকে যাদের হরি-গুরুচাঁদ উদ্ধার করলেন তাঁরা এখনও হিন্দুশাস্ত্রের শক্ত ভক্ত। ভক্তির নফর। ফলে তারা গুরুচাঁদকে প্রকারান্তরে অস্বীকার করছে। মতুয়ারা কি মতুয়া? না নামধারী মতুয়া?
    এই মনুবাদী হিন্দুশাস্ত্রের বিরুদ্ধে স্বয়ং গুরুচাঁদের উক্তি মনোহর রায়ের পান্ডুলিপিতে ধরা পড়েছেঃ-                                “গুরুচাঁদ বলে শুন ওহে রামতনু
                           ব্রাহ্মণেরা আমাদের সমাজেতে মনু।
                           ওদের বিধান মোরা সদা মেনে চলি
                           অন্যায় হলেও তাহা মুখে নাহি বলি।
                           অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে
                           শ্রীহরির ঘৃণা তারে সর্বদায় দহে।”
   এখানে রামতনুকে উদ্দ্যেশ্য করে সমস্ত মতুয়াদের বললেন, ব্রাহ্মণেরা আন্যায় করে এবং আন্যায় বিধান দেয় মনুস্মৃতির বিধান অনুযায়ী এবং শূদ্রের অন্যায়ের কোন প্রতিবাদ না করে মুখ বুজে সহ্য করে এবং মেনে নেয়। অর্থাৎ সুতোধারীরাও এক একজন মনু। তিনি বললেন, অন্যায় যে করে আর সেই অন্যায়ের আপ্রতিবাদ না করে যারা সহ্য করে, মুখ বুজে থাকে উভয়কে শ্রীহরি ঘৃণাভরে শাস্তি দিয়ে থাকেন।

    মতুয়া ভক্ত, গুরু, গোসাঁই আপনারা উপরোক্ত গুরুচাঁদ উবাচ অনুযায়ী জীবনধারণ করছেন তো? যদি না করে থাকেন তবে এখনই গুরুচাঁদ বর্ণপরিচয় পড়তে ও বুঝতে চেষ্টা করুন খাঁটি মতুয়া হবার লক্ষ্যে।
(মতুয়া জীবন কেমন হওয়া উচিত-4, কালিদাস বারুরী)
(মতুয়া দর্পণ, ১৬নবর্ষ, অক্টোঃ-ডিসেঃ’২০১৫, কার্তিক-পৌষ’১৪২২, ৬৩ সংখ্যা, ২০৪ হরিচাঁদাব্দ, চতুর্থ পর্ব)


Comments