Skip to main content

কৃষ্ণ অবতার //কে এই কৃষ্ণ ? সত্যি সত্যি কি তিনি বৈদিক ধর্মের কোন নায়ক ? নাকি তিনি মূলনিবাসী রাজা ?

কৃষ্ণ অবতার
হরিচাঁদ তত্ত্বামৃত-ডাঃ মণীন্দ্রনাথ বিশ্বাস (পৃঃ নং- ১৭৭ থেকে১৯০)
কৃষ্ণ অবতার (বৈদিক সাহিত্য থেকে কৃষ্ণ ও রাধা সম্পর্কে অনেক কাহিনী জানতে পারি ।কিন্তু কে এই কৃষ্ণ ? সত্যি সত্যি কি তিনি বৈদিক ধর্মের কোন নায়ক ? নাকি তিনি মূলনিবাসী রাজা ? তিনি মূলনিবাসী রাজা বলেই কি তাকে খল নায়ক বানানো হয়েছে বৈদিকতার মাধ্যমে ? আর কৃষ্ণের সঙ্গে এই রাধা কে ? সত্যি সত্যি কি রাধার কোন অস্তিত্ব আছে ? নাকি তাকে কবির কল্পনায় সৃষ্টি করা হয়েছে ? এই সব প্রশ্নের উত্তর খূঁজে পাবেন এই লেখার মধ্যে।)
বৈদিক ধর্মেতে যত আছে অবতার ।
তার মাঝে কৃষ্ণ দেখি সেরা চমৎকার ।।
পরতে পরতে মোড়া বিষ্ময়ের চিত্র ।
কৃষ্ণ নিয়ে গ্রন্থে গ্রন্থে কত না বৈচিত্র ।।
ভিন্ন ভিন্ন গ্রন্থে কভু ভিন্নতর তথ্য ।
নানা রঙে আঁকিতেছে কত মহাত্ম্য ।।
অদ্যাবধি আঁকিতেছে কত মহাজন ।
প্রেমাপুত হৃদে তার মহিমা কীর্তন ।
ভাবাবেগে ঢেলে ঢেলে মনের মাধুরী ।
ভাবের ঘরেতে কত করিতেছে চুরি ।।
কুঠারে না কাটিতে পারে কাঠুরিয়া ।
সেই মত কার্য করে কৃষ্ণকে ধরিয়া ।।
মূলনিবাসীর ধর্ম যেন মহীরুহ ।
নিজ সংস্কৃতি সবই শিকড় সমূহ ।।
মূলনিবাসী কৃষ্ণেরে করিয়া হাতল ।
বৈদিক জল্লাদ একে কর্তন করিল ।।
কৃষ্ণের স্বধর্ম যাহা আদি ভারতীয় ।
কৃষ্ণেরে মাধ্যম করি করে ওরা হেয় ।।
বৌদ্ধধর্মরূপী বৃক্ষ বিশ্বর আশ্রয় ।
কৃষ্ণেরে সম্মুখে রেখে ছেদন করুয় ।।
বৃক্ষের শিকড়রূপী বৌদ্ধ সংস্কার ।
 একে একে সব ওরা করে বহিষ্কার ।।
বেদ ভিত্তি করে গড়ে বৈদিক আচার ।
কৃষ্ণের স্বধর্মী ক্রমে ক্রিয়া তার ।।
                ১৭৮
বৈদিক মডেল করে কৃষ্ণেরে রাখিল ।
বৈদিক আচার হেথা শুরু গেল ।।
স্বধর্ম রক্ষার্থে যুদ্ধ করিল যেজন ।
ধর্ম সংস্কৃতি রক্ষায় লভিল মরণ ।।
মৃত্যু পরে তারে করে ধর্মান্তরিত ।
বৈদিক ধর্মেতে করে স্থানান্তরিত ।।
আরো কিছু পরে দেয় পতোন্নতি তার ।
বৈদিক ঊপাধি শ্রেষ্ঠ বিষ্ণু অবতার ।।
উপাধি ভারতরত্ন যেন মৃত্যু পরে ।
তেমনি অবতারত্ব দানিল কৃষ্ণেরে ।।
নির্দিষ্ট জোরালো তথ্য যদি নাহি থাকে ।
যাহার যেমন খুশি ইচ্ছামত আঁকে ।।
তাই ভিন্ন গ্রন্থে দেখি ভিন্ন ভিন্ন তত্ত্ব ।
ব্যক্তি ইচ্ছা নিয়ে কেখে ভাবে হয়ে মত্ত ।।
গোষ্ঠীস্বার্থ উদ্ধারিতে অনেকে লিখেছে ।
দুরভিসন্ধি নিয়ে কলম ধরেছে ।।
সত্য খুঁজে মুখোমুখী দাঁড়াবে এমন ।
বৈদিক পন্ডিত মাঝে নাই কোনজন ।।
কৃষ্ণের সঠিক যাহা সত্য পরিচয় ।
তাহা প্রকাশিতে এরা পায় বড় ভয় ।।
অতি প্রাচীন বৌদ্ধশাস্ত্র সূত্রপিটক ।
কৃষ্ণ পরিচয় হেথা পাইবে পাঠক ।।
অসুর জাতীয় কৃষ্ণ রয়েছে বর্ণন ।
ঋগবেদে এ তথ্যের মেলে সমর্থন ।।
ঋগবেদ তো বৈদিক আর্য যশোগাথা ।
কিছু ঋকে আছে তার কৃষ্ণ নিয়ে কথা ।।
বিশ্লেষণ করে তথ্য দেখা যায় সেথা ।
অসুর মানব কৃষ্ণ ছিল দলনেতা ।।
অতি বলশালী কৃষ্ণ ছিল যুদ্ধেতে নিপুণ ।
বহুজ্ঞানে পারদর্শী বহু ছিল গুণ ।।
             ১৭৯
দেবতার সনে বহু করিয়াছে যুদ্ধ ।
বেদবিধি এ ভারতে করিবারে রুদ্ধ ।।
ছোট ছোট রাজ্যে ছিল ভারত বিভক্ত ।
সব রাজাগণ  ছিল কৃষ্ণের অনুরক্ত ।।
অসুর রাক্ষস আর নাগ রাজগণ ।
কৃষ্ণে অনুগত ছিল সকলের মন ।।
সকলেরে নিয়ে কৃষ্ণ নামিতেন যুদ্ধে ।
দেবতার যুদ্ধ নেতা ইন্দ্রের বিরুদ্ধে ।।
মানেনিক কৃষ্ণ কভু বৈদিক শাসন ।
সে কারণে ইন্দ্র ছিল অতি ক্রুদ্ধমন ।।
করিত কৃষ্ণের রাজ্যে ইন্দ্র আক্রমন ।
বৈদিক গ্রন্থেও তাহা হয়েছে লিখন ।।
বৈদিক নিয়ম কিছু কৃষ্ণ না মানিত ।
তার প্রতি ইন্দ্র তাই ছিল ক্রোধান্বিত ।।
বজ্র বরিষণ করে ব্রজভূমি পরে ।
গোপাগোপী ধেনুবৎস কেঁপে ওঠে ডরে।।
এদের করিতে রক্ষা গোপের নন্দন ।
ছাতারূপে ধরেছিল গিরিগোবর্ধন ।।
ইংগিত করেছে কিন্তু হেথা ইতিহাস ।
যদিও অলীকে মুড়ে করেছে প্রকাশ ।।
বেদবিধি চলিত না কৃষ্ণের রাজত্বে ।
হয়নিকো নত কৃষ্ণ বৈদিক দাসত্বে ।।
তিষ্ঠাতে না পারে ইন্দ্র তাই কৃষ্ণ পরাক্রমে ।
ভীত হয়ে ইন্দ্র তাই ভাবে ক্রমে ক্রমে ।।
যোগবিদ্যা যুদ্ধবিদ্যা অন্যান্য বিদ্যায় ।
শ্রেষ্ঠ পারঙ্গম এই কৃষ্ণ মহাশয় ।।
সম্পদেও শ্রেষ্ঠ এরা আর মূলনিবাসীগণ ।
গোলাভরা শস্য আর প্রভূত গোধন ।।
এসব দেখিয়া হয় লালায়িত অতি ।
বিদেশী নর্ডিক আর্য ইন্দ্রের স্বজাতি ।।
              ১৮০
ইন্দ্রের সমীপে সদা করে নিবেদন ।
ওদের সম্পদ সব করিতে হরণ ।।
যাণযজ্ঞ করে কিছু নাহি হয় ফল ।
তাই বসে ভাবে ইন্দ্র হইয়া বিফল ।।
কৃষ্ণের নির্দেশে সব দেশীয় রাজন্য ।
জান দিতে পারে এরা স্বদেশের জন্য ।।
সংসদীয় জনসংঘ শক্তির আধার ।
রাষ্ট্র সমন্বয়ে ইহা বৌদ্ধ সংস্কার ।।
অতি বীর্যশালী কৃষ্ণ সংঘের প্রধান ।
তার কাছে পরাক্রমে তিষ্ঠে কোনজন ।।
চিন্তান্বিত হয়ে ইন্দ্র ভাবে মনে মন ।
বিদ্বেষের আগুনে পুড়ে যাবে রাষ্ট্রসংঘ ।
দূর থেকে বসে শুধু দেখিবে সে রঙ্গ ।।
ধূর্তামিতে পারঙ্গম বৈদিক ঐ আর্য ।
কূটকৌশলের স্রষ্টা শুরু করে কার্য ।।
খুঁজে পেল আর্যরা দুই মূলনিবাসী ।
মনু আর অগ্নি নামে দুই সর্বনাশি ।।
বিবস্বনের পুত্র ঐ মনু মির্জাফর ।
বলাসুর পুত্র অগ্নি সাজে গুপ্তচর ।।
অসুর মানব বটে এরা দুইজন ।
আত্মঘাতি কর্মে তবু লিপ্ত করে মন ।।
রাষ্ট্রসংঘ মাঝে এরা ইন্দ্রের নির্দেশে ।
তাতিয়ে তোলে পরস্পরে মহা বিদ্বেষে ।।
বহুজ্ঞানে কৃষ্ণ সত্য ছিল পারদর্শী ।
নারী লিপ্সায় ছিল অপরিণামদর্শী ।।
অনেক রাজার ছিল এ কারণে ক্ষোভ ।
সংঘের আইন ভেঙ্গে করেনি বিক্ষোভ ।।
এ সুযোগ নিয়ে তাই দুই মির্জাফর ।
বিদ্রোহ জাগিয়ে তোলে কৃষ্ণের উপর ।।
                 ১৮১
রাজন্যরা পরস্পরে করে অবিশ্বাস ।
কৃষ্ণ আনুগত্য প্রতি হইল হতাশ ।।
কৃষ্ণের বিদ্রোহী হয় এক এক জন ।
ক্রোধান্বিত কৃষ্ণ করে তাহাকে হনন ।।
ইন্দ্রের কাছেতে কৃষ্ণ চালে গেল হেরে ।
একে একে তাই সব রাজাদের মারে ।।
একে একে মেরে কৃষ্ণ করিল সাবাড় ।
নিজ সাহায্যের কেহ রহিল না আর ।।
অসুর রাজন্য আর নাগ রাজাগণ ।
একে একে কৃষ্ণ হাতে হারাল পরাণ ।।
ডালপালাহীন বৃক্ষ যাহা পায় গতি ।
কৃষ্ণের জীবনে এল সেই পরিণতি ।।
দেখিল না ভেবে কৃষ্ণ নিজ কর্মফল ।
কিছুদিনে পেয়ে গেল এর প্রতিফল ।।
ঋগবেদে বৈদিকেরা করিছে প্রার্থনা ।
যজ্ঞ শেষে করিতেছে ইন্দ্রে অভ্যর্থনা ।।
ইন্দ্র এসে সংসদ করে দাও ভঙ্গ ।
বিচ্ছিন্ন করিয়া ফেল ঐ রাষ্ট্রসংঘ ।।
এর পরে কর তুমি একে একে হত্যা ।
নিষ্কন্টক কর হে মোদের নিরাপত্তা ।।
যাহাকিছু লিখিতেছি ঋগবেদ ধরে ।
সব সূত্র রহিয়াছে বেদের ভিতরে।
এর পরে ঘটে চলে যে সব ঘটনা ।
বড়ই দুঃখের তাহা বড়ই বেদনা ।।
একা একা লড়ে কৃষ্ণ ইন্দ্রের বিরুদ্ধে ।
সাহায্যের কেহ নাই তাহার স্বপক্ষে ।।
শ্রীকৃষ্ণের মনোবল যত হয় ক্ষীণ ।
ইন্দ্রের পতাকা তত হয় উড্ডীন ।।
ইন্দ্রকে করিয়া সঙ্গে রাজা ঋজিশ্বন ।
পত্নীমহল কৃষ্ণের করে আক্রমণ ।।
            ১৮২
গর্ভবতী পত্নী বহু করে এরা হত্যা ।
পারেনিকো কৃষ্ণ দিতে কোন নিরাপত্তা ।।
সেই হইতে কৃষ্ণের ভাঙ্গে মনোবল ।
শক্তিধর বাহু ক্রমে হইল দুর্বল ।।
ঘটিল মর্মান্তিক যা আরো কিছু পরে ।
মূলনিবাসী সবার হৃদয় বিদারে ।।
দশ সহস্র সৈন্য লয়ে অংশুমতী তীরে ।
একদা সেথায় কৃষ্ণ অবস্থান করে ।।
অপেক্ষা করিছে কৃষ্ণ কোথা কোন স্থানে ।
গুপ্তচর দ্বারা ইন্দ্র নিল তাহা জেনে ।।
আদেশ করিল ইন্দ্র মরুৎ সেনাগণে ।
আক্রমণ করে কৃষ্ণে সবে একসনে ।।
আর্য যজমানেদের রক্ষিবার তরে ।
শ্রীকৃষ্ণকের  বহু সেনা এরা হত্যা করে ।।
কৃষ্ণকে করিল হত্যা ইন্দ্র নিজহাতে ।
ভূমিপুত্রগণে যেন গ্রাসে কালরাতে ।।
অংশুমতী নদী তীরে সবার সহিত ।
কৃষ্ণকে করিল ইন্দ্র অগ্নি ভষ্মীভূত ।।
অসুর জাতীর এক গৌরব অধ্যায় ।
কৃষ্ণের সঙ্গেতে তাহা  শেষ হয়ে যায় ।।
ঋগবেদে শ্রীকৃষ্ণের পরিচয় এই ।
এর মাঝে অলীকের গল্প কিছু নেই ।।
বীর্যশালী বুদ্ধিমান কৃষ্ণ নরপতি ।
ইহার বাহিরে তার নাই কিছু অতি ।।
অবতার বলে যারা করেন প্রমাণ ।
বাস্তব ছাড়ি করে কল্পনায় ভ্রমণ।।
মগজে উদ্যেশ্য রেখে হাতের কলমে।
মানুষেরে ফেলে দেয় অন্ধকার ভ্রমে ।।
সাধারণ জীব তারা বুঝিতে না পারে ।
পথের সন্ধানে শুধু আঁধার হাতড়ে ।।
              ১৮৩
কৃষ্ণকে মারিল যারা তারা কিন্তু পরে ।
কৃষ্ণকে প্রতিষ্ঠা করে বিষ্ণু অবতারে ।।
অবতারত্ব করে দান মরনোত্তর।
উদ্দেশ্য সাধনে রাখে সিংহাসন পর ।।
পোষা হাতী দ্বারা হাতী ধরেন শিকারি ।
কৃষ্ণকে রেখেছে ওরা পোষা হাতী করি ।।
আর যত ভূমিপুত্র সবে বুনো হাতী ।
বৈদিক খোঁয়াড়ে যাতে ঢোকে রাতারাতি ।।
সেই মত গ্রন্থ পরে করে প্রণয়ন ।
গ্রন্থ আদি যত কিছু যতেক পুরাণ ।।
যখনে যে অভিসন্ধি এসেছে মগজে ।
সেই মত লিপি তারা লিখেছে কাগজে ।।
তাই ভিন্ন গ্রন্থে তথ্য ভিন্ন দেখা যায় ।
তার মাঝে পাঠকেরা ঘুরপাক খায় ।।
বৈদিক খোঁয়াড় এক গোলকের ধাঁধাঁ ।
খোঁয়াড়ের ভিতরেও হস্তপদ বাঁধা ।।
গোলকের লোভে পড়ে গোলকধাঁধাঁয় ।
দাসত্বের মাঝে শুধু দিনগুলি যায় ।।
এরপরে বড় টোপ পুনর্জন্মবাদ ।
যার লোভে ভুলে যায় সর্ব প্রতিবাদ ।। 
গাঁধার সম্মুখে যেন জোড়া মূলো ঝোলে ।
তার লোভে গাঁধা চলে পিঠে বোঝা ভুলে ।।
স্বাধীন চিন্তার হেথা নাই অবকাশ ।
মৌলিক জ্ঞানের তাই ঘটে না বিকাশ ।।
যুক্তি ও জ্ঞানের হেথা হয় না প্রয়োগ ।
বৈদিক চিন্তাতে ইহা মস্ত বড় রোগ ।।
যবনিকা হতে তারে পুনশ্চ তুলিল ।
মহাভারতে প্রথম তুলিয়া ধরিল ।।
যুদ্ধবাজ ছিল কৃষ্ণ ঋগবেদ মাঝে ।
সেই হেতু সাজাল তারে ঐরূপ সাজে ।।
             ১৮৪
ইচ্ছামত নানা রঙে কৃষ্ণ হল আঁকা ।
নব নব রূপে কৃষ্ণ দিতে থাকে দেখা ।।
মহাভারতের মাঝে স্পষ্ট দেখা যায় ।
গোপী কিম্বা গোপীপ্রেম নাহিকো সেথায় ।।
প্রথম আভাস মেলে ঐ বিষ্ণুপুরাণে ।
শালিন্য বজায় রেখে লিখেছে সেখানে ।।
হরিবংশ তার পরে হয়েছেল লেখা ।
বাঁধন ছিড়েছে গোপী হেথা যায় দেখা ।।
বিলাস ব্যসনে কিছু দেখি আদিরস ।
ভাগবতে ঘটে এর বহুল প্রকাশ ।।
গোপীপ্রেম কিম্বা যাহা গোপীর ভজনা ।
পরকীয়া প্রেমে সেথা হয় লেনাদেনা ।।
ডুবু ডুবু হেথা গোপী যেন আদিরস ।
সবমার্গ রস যত হল এর বশ ।।
অনঙ্গ মদন এথা মূর্ত হয়ে ওঠে ।
স্থান কাল পাত্র ভুলে বন্যা হয়ে ওঠে ।।
বানে ভেসে এল কত জার শঠচারী ।
আর যত মূর্খজনে সংখ্যা করে ভারি ।।
গোপীভাবে গোপীপ্রেম করিয়া স্মরণ ।
অনুকরণ করে ঐ গোপী আচরণ ।।
ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ পুরাণে কনিষ্ঠত।
বৈষ্ণবের কাছে তবু এ পুরাণ শ্রেষ্ঠ ।।
বর্তমানে পোশাকি এ বৈষ্ণব সমাজ ।
এই গ্রন্থ  হতে পেল বর্তমান সাজ ।।
এর পরে যত গ্রন্থ লিখিত হয়েছে ।
সর্বত্রই এ গ্রন্থের ছাপ পড়িয়াছে ।।
বৈষ্ণবীয় মাঝে শ্রেষ্ঠ জয়দেব কবি ।
মনে ধরেছিল ব্রহ্মবৈবর্তের ছবি ।।
            ১৮৫
সাফল্য পেল লিখে কাব্য গীতগোবিন্দ ।
এর মাঝে ভরা উক্ত পুরাণের গন্ধ ।।
আদিরস ছাড়া উহা অন্য কিছু নয় ।
যাহার পঠনে মূর্ত কামের উদয় ।।
পুরাণ ছাপিয়ে তার কাব্যের বাহার ।
কাম রতিক্রীড়া করে কলমে তাহার ।।
এই গ্রন্থ হতে বিদ্যাপতি চন্ডিদাস ।
সংগ্রহ করিল যত্নে বৈষ্ণবীয় রস ।।
কিঞ্চিৎ মিশিয়ে তাহে অন্ত্ররের ভাব ।
বৈষ্ণবের মাঝে সে যে ফেলিল প্রভাব ।।
তার কাব্যে কেলি করে মনের হরষে ।
রতি ও মদন ভেসে ডগমগ রসে ।।
ব্রহ্মবৈবর্ত আর পেয়ে গীতগোবিন্দ ।
শ্রীনিমাই মিশ্র পেল গভীর আনন্দ ।।
বিদ্যাপতি হতে বুঝে ভক্তির প্রভাব ।
শ্রীমিশ্রের  মিটে গেল তত্ত্বের অভাব ।।
কান্তা ভাবে বুঝে হৃদে পাইল চেতন ।
শ্রীচৈতন্য নাম পরে করিল ধারাণ ।।
কান্তা প্রেমে ভক্তিভাবে করিয়া মিশ্রিত ।
অভিনব ভক্তিবাদ করিল স্ফুরিত ।।
ঐ পুরাণ হতে নিয়ে যত ভাবধারা ।
নতুন বৈষ্ণব ধর্ম গড়ে তিনি ত্বরা ।।
এ ভাবেরে করে নাকো কোন সমর্থন ।
ভাগবত হরিবংশ ও বিষ্ণুপুরাণ ।।
এ হেতু বৈষ্ণবধর্মে বহু সম্প্রদায় ।
নিজ নিজ ধারা নিয়ে সবে বয়ে যায় ।।
ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ সব গ্রন্থ ঠেলে ।
বাঙালীর ধর্ম চিন্তা ফেলিয়াছে গিলে ।।
এক তথ্য শুধু এর করেনি গ্রহণ ।
শ্রীচৈতন্য কি কারণে বুঝি না কারণ ।।
                   ১৮৬
শ্রীকৃষ্ণের বিবাহিতা পত্নী রাধারানী ।
ঐ পুরাণে লেখা আছে ইহার বাখানি ।।
শিশু কৃষ্ণ সনে বিয়ে হল শ্রীরাধার ।
পূর্ণ যুবতী রাধিকা রূপে মনোহর ।।
শ্রীরাধাকে ব্রহ্মা এসে করে সম্প্রদান ।
বর বধূ এর পরে করিল বিহার ।
মধুচন্দ্রিমার নিশি দুয়ে একাকার ।।
পরের দিবসে রাধা কৃষ্ণে নিয়ে কোলে ।
নন্দের কোলেতে দিল নন্দদুলালে ।।
এই তথ্য শ্রীচৈতন্য করেনি গ্রহণ ।
নিজ ধর্মমতে কেন কিসের কারণ ।।
মামি সনে কান্তা প্রেম জমে বুঝি ভাল।
সে কারণে মহাপ্রভু এই তথ্য নিল ।।
সেই হেতু বৈষ্ণবীর গ্রন্থে যায় দেখা ।
নিম্নে লেখা দু'লাইন তত্ত্ব নিয়ে লেখা ।।
''স্বকীয়া হইলে নহে ভাবের বিকাশ ।
পরকীয়া রতি তাই জানিবে নির্যাস ।।''
আর যত তথ্য ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে ।
গ্রহণ করিল সব অতি হৃষ্ঠ মনে ।।
গোপী প্রেম গোপী ভাব পরকীয়া রীতি ।
কান্তা শৃঙ্গার আদিরসে পাইল স্থিতি ।।
পরকীওয়া ভজন রীতি বৈষ্ণবের সার ।
ভক্তি নামে মেখে কিছু আচার বিচার ।।
পোষাকে আশাকে আর অঙ্গে ধরে সাজ ।
সৃষ্টি করে শ্রীচৈতন্য বৈষ্ণবের সমাজ ।।
ভাবে রসে মিলে মিশে এই মহারস ।
আস্বাদে বৈষ্ণব যার থাকে সদা বশ ।।
সব প্রেমরস মূলে আছে এক নারী ।
এ ভাবে কেন্দ্রে বসে রাধিকা সুন্দরী ।।
               ১৮৭
রাধাকে আনিল টেনে এই গ্রন্থকার ।
রাধারানী হল এর নব আবিষ্কার ।।
এর পূর্বে গ্রন্থ যত হইয়াছে লেখা ।
রাধা নামে কোন নারী যায় নাকো দেখা ।।
মহাভারত ভাগবত গীতা পুরাণ ।
সর্বত্রই রাধারানী তাই অদর্শন ।।
ব্রহ্মবৈবর্তে  প্রথম কৃষ্ণভক্তগণে ।
পাইল দর্শন সবে রাধিকার সনে ।।
পুনশ্চ সাক্ষাৎ গীতগোবিন্দ কাব্যেতে ।
উন্মুক্ত হইল রাধা সবার সাক্ষাতে ।।
ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ ও গীতগোবিন্দ ।
এই দুই গ্রন্থে শুধু রাধিকার গন্ধ ।।
এর পূর্বে কোন গ্রন্থে নাহি রাধা নাম ।
গোপী সনে ক্রীড়া আছে আছে ব্রজধাম ।।
মূর্ত রতি সম রাধা গীতগোবিন্দ গানে ।
রাধাকেই মাহাপ্রভু গেঁথে নিল মনে ।।
রাধা কেন্দ্র করে গড়ে ধুর্মের বাখানি ।
রাধানানী তাই হেথা হল মক্ষিরানী ।।
রসে বশে সিক্ত হয়ে আছে রাধারানী ।
রাস পঞ্চাধ্যায়ে তারে কেহ নাহি চিনি ।।
কৃষ্ণভাবে মহাভাব যাহা ভাগবতে ।
অথচ সেখানে রাধা নাহি কৃষ্ণ সাথে ।।
বস্ত্রহরণ রাসলীলা কিম্বা গোপী মাঝে ।
রাখেনিকো গ্রন্থকার রাধা কোন কাজে ।।
রাসলীলা মাঝে গ্রন্থে নাই রাধা কথা ।
নিশ্চয়ই জেনে লাগে ভক্ত প্রাণে ব্যথা ।।
কৃষ্ণের পাশেতে গড়ে শ্রীরাধিকা মূর্তি ।
ভক্তগণে কত রঙে করে কত আর্তি ।।
কুহেলিকা পাশে যেন আলো আলেয়ার ।
সেই মত মনে হয় যেন এ ব্যাপার ।।
নিষ্টুর বাস্তব সত্য শাস্ত্রের প্রমাণ ।
রাধা সৃষ্টি করে ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ ।।
শাস্ত্র গ্রন্থ ইতিহাস করিয়া উদ্ধার ।
কিছু তথ্য কেখা হল পুঁথির ভিতর ।।
কৃষ্ণ নিয়ে দেওয়া হল যে সেব বারতা ।
কৃষ্ণভক্ত পেতে পারে অন্তরেতে ব্যথা ।।
 সত্য মানিয়া নেওয়া সর্বধর্ম সার ।
সত্যে উদ্ভাসিত হোক অন্তর সবার ।।
__________________________________
           রাধা অন্বেষণ
ঋগবেদ হতে বহু কেটে গেছে কাল ।
বৈদিক ধর্মটি হল তিল থেকে তাল ।।
স্বপ্নের নায়ক করে নন্দের নন্দনে ।
বসাল যতন করে গ্রন্থ সিংহাসনে ।।
ভাগবতে লেখা  হল দশম স্কন্ধে ।
শ্রীকৃষ্ণের বৃন্দাবন লীলার সম্বন্ধে ।।
লেখা হল নানা রঙে বৃন্দাবন লীলা ।
খেলাল কৃষ্ণকে দিয়ে নানা প্রেমখেলা ।।
পেল নাকো ঠাঁই কৃষ্ণ বাস্তবে সেখানে ।
শক্তি আরাধনা শুধু হত বৃন্দাবনে ।।
শক্তিপীঠ নামে খ্যাত ছিল বৃন্দাবন ।
রাধাহীন কৃষ্ণ সেথা পায়নি আসন ।।
খন্ডিত সতীর হেথা পড়েছিল কেশ ।
সেই থেকে শক্তিপীঠ হেথা সবিশেষ ।।
যখনে বৈদিক ক্রিয়া হেথা শুরু হল ।
তথা হতে শক্তিপূজা হেথা শুধু ছিল ।।
বৃন্দাবনে হত শুধু প্রকৃতি ভজন ।
সেই হেতু কৃষ্ণ হেথা পেত না আসন ।।
ভাগবতে কৃষ্ণ শুধু গ্রন্থ মাঝে ছিল ।
ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ মাটিতে নামাল ।।
                ১৮৯
প্রকৃতির পূজা শুধু হত বৃন্দাবন ।
এ হেতু প্রকৃতি শ্রেষ্ঠা করিল অঙ্কন ।।
বৃষভানু কন্যা রাধা দিল পরিচয় ।
কাত্যায়নী বরে সে যে জন্ম লভয় ।।
শক্তির কৃপাতে শক্তি নামিল ধরাতে ।
রাধার ভজন শুরু হল রাতারাতে ।।
বড় সাবধানী ঐ ব্রহ্মবৈবর্তকার ।
শক্তিরে নাশিতে করে শক্তি ব্যবহার ।।
রাধা সাথে কৃষ্ণ জুড়ে দিল গ্রন্থকার ।
বৃন্দাবনে রাধাকৃষ্ণ হল একাকার ।।
রাধার প্রাধান্য তাই বৃন্দাবনে বেশী ।
রাধা হেথা ভূমিকন্যা কৃষ্ণ পরদেশী ।।
শাক্তদের সাথে যুঝে পারেনি বৈষ্ণব ।
রাধারূপী শক্তি পেয়ে করে কলরব ।।
শাক্ত ও বৈষ্ণবে বৈরীভাব তথা হতে ।
প্রমাণ রয়েছে তার বৈষ্ণব পুঁথিতে ।।
বৈষ্ণবের পথ শাক্ত করে দিত রুদ্ধ ।
 বৈষ্ণব ও শাক্ত মাঝে আজো তাই যুদ্ধ ।।
এক দেহে কালীকৃষ্ণ লিখে এই গল্প ।
শক্তি বিষ্ণু সমন্বয়ে আঁকিল বিকল্প ।।
শুরু হল বৈষ্ণবের জয়জয়কার ।
বৃন্দাবন বৈষ্ণবেরা করে অধিকার ।।
এ সকলি রাধিকার নিজস্ব কৃতিত্ব ।
বৈষ্ণবের রাজ্যে তাই রাধার কর্তৃত্ব ।।
পুরুষ রূপেতে কৃষ্ণ ইতিহাসে ব্যাপ্ত ।
নারীরূপী রাধা কিন্ত শুধুই প্রক্ষিপ্ত ।।
বৈষ্ণব ধর্মেতে মুখ্য চারি সম্প্রদায় ।
নিম্বার্ক নামেতে গোষ্ঠী তার মাঝে রয় ।।
নিম্বার্ক গোষ্ঠীরা ছাড়া মানে নাকো রাধা ।
অন্যদের কাছে রাধা মস্ত এক ধাঁধাঁ ।।
                ১৯০
বৈষ্ণবেরা যাকে পূজে যাকে করে ধ্যান ।
যাকে ভজনের মাঝে করেন সাধন ।।
যার কৃপা লোভে মালা জপে নিশিদিন ।
বাস্তবেতে কিন্তু সেই রাধা ভিত্তিহীন ।।
যার কৃপা আগে হলে পাবে কৃষ্ণ গুণী ।
কল্পনায় সৃষ্টি সেই নারী তপোধনী ।।
পঞ্চদশ অব্দ শেষে নবদ্বিপ পর ।
জন্মিলেন শ্রীচৈতন্য গৌর যষ্ঠিধর ।।
তাহাকে ঘিরিয়া নাচে পন্ডিতের দল ।
সাহিত্য কবিত্ব নিয়ে গুণীরা সকল ।।
সাহিত্য সৃষ্টিতে চাই নায়িকা সুন্দরী ।
অভাব পুরাল এই রাধা  নামে নারী ।।
পান্ডিত্য কবিত্ব রঙে এঁকে রাধা ছবি ।
প্রজাপতি করে কাব্যে রেখে দিল কবি ।।
কাব্যের আকাশে ওড়ে রাধা প্রজাপতি ।
নানা রঙে পাখা মেলে মূর্ত যেন রতি ।।
বৈদিক ধর্মেতে আরো মত আছে যত ।
বঙ্গদেশ হতে তাই সব হল মৃত ।।
মাঝে মধ্যে হেথা হোথা যা কিছু গজায় ।
রাধা রাধা করে সবে ভিখ মেগে খায় ।।
রাধাকে বর্জিত ধর্ম নাহি আজ বঙ্গে ।
হায়রে বুদ্ধের বঙ্গ মজিল কি রঙ্গে ।।
______________________________

Comments

  1. কোন গ্রন্হ থেক নেওয়া? আর আমি জানতে চাইছি যে ভগবতে কি শ্রীশ্রী হরি লীলামৃতের উল্লেখ আছে নাকি? শুনছিলাম আছে। সঠিক জানি না। জানালে খুসী হবো।

    ReplyDelete

Post a Comment