Skip to main content

হরিচাঁদ কোন বৈদিক অবতার নয় ।

হরিচাঁদ তত্ত্বামৃত-ডাঃ মণীন্দ্রনাথ বিশ্বাস (পৃঃ নং- ১৯৯ থেকে ২০৪) 
হরিচাঁদ কোন বৈদিক অবতার নয় ।
গৌরাঙ্গের অবতার বাবা হরিচাঁদ ।
জুড়িয়াছে কেন এই মহা অপবাদ ।।
পুঁথিমাঝে এত কথা হইল লিখিতে ।
ঐ অপবাদ প্রভুর ধুয়ে মুছে দিতে ।।
মিথ্যা ফাঁকি  শতভাগ অবতারবাদে ।।
ছলনায় ভরা শুধু কপট বিস্বাদে ।।
মতুয়ার এর প্রতি কেন এত রোপ ।
হরিচাঁদ প্রতি কেন করিছে আরোপ ।।
বাবাকে ভকতি করে নিজ পিতা মেনে ।
করে কি বাবাকে মান্য পূর্ব জন্ম জেনে ।।
পতিতের মুক্তিদাতা প্রভু হরিচাঁদ ।
বিশ্বের মঙ্গলে  তার শ্রেষ্ঠ মতবাদ ।।
             ২০০
আপনার পিতা ত্রাতা সর্বশ্রেষ্ঠজন ।
বিশ্ব মাঝে শ্রেষ্ঠ সে যে হৃদয়ের ধন ।।
আমার লাগিয়া দিল আমারে স্বধর্ম ।
বর্জন করিয়া বেদ হিন্দুয়ানী কর্ম ।।
মুক্ত ও স্বাধীন ধর্ম সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র ।
নিয়ন্ত্রণ করে অন্যে নেই হেন তন্ত্র ।।
এই তো 'মতুয়াধর্ম' এই তার রূপ ।
রূপাতিত রূপ এর নহেকো অরূপ ।।
সূর্য সম আলো যার সর্বত্র সতত ।
তাকে যারা মনে করে জোনাকির মত ।।
মহাসাগর বুকে থাকে অথৈ বারিধি ।
গোষ্পদের তুল্য তাকে কেহ ভাবে যদি ।।
সেইজনে বলে হরিচাঁদ অবতার ।
শ্রীগৌরাঙ্গ এল পুনঃ এ ধরার পর ।।
হরিচাঁদে একবিন্দু ভক্তি নাহি তার ।
ভক্তি  আর্তি যা কিছু তা গৌরাঙ্গ উপর ।।
গৌরাঙ্গ ভাবিয়া যারা হরিচাঁদে মানে ।
মতুয়ার ভাব তত্ত্ব কিছু নাহি জানে ।।
অবতারবাদে যারা হরিচাঁদে টানে ।
ঠাঁই নাই তার কোন মতুয়া স্থানে ।।
হরিচাঁদে ভাবে যারা বৈদিক অবতার ।
মতুয়ার কাছে সে যে মহা কুলাঙ্গার ।।
হেথা হতে মতুয়ার হলে উত্তরণ
রাখিবে ধরার পরে স্বাধীন চরণ ।।
অন্যথায় এই ধর্ম ক্রমে হবে ক্ষীণ ।
একদা বৈদিক গর্ভে হইবে বিলীন ।।
যুক্তিবাদী সেরা তত্ত্ব সেরা মতবাদ ।
মানবতাবাদী ধর্ম দিল হরিচাঁদ ।।
নির্যাতিত নরনারী বঞ্চিতের দল ।
এই ধর্মাশ্রয়ে মুক্তি লভিবে সকল ।।
               ২০১
অনুকরণ কেন আর বৈদিক ধর্ম ।
বুঝিয়াছি যদি মোরা মতুয়ার মর্ম ।।
মতুয়ার ধর্ম যাহা নিজ সংস্কৃতি ।
তার নিচে ধীরে ধীরে হোক সবে স্থিতি ।।
বৈদিক ধর্মেতে থাক লক্ষ অবতার ।
মতুয়ার তাহা দিয়ে কিবা দরকার ।।
ভগবান থাক সেথা ডজন ডজন ।
মতুয়ার তাহা দিয়া কিবা প্রয়োজন ।।
মরিয়া উহারা যাক বৈকুন্ঠ বা স্বর্গ ।
মতুয়ার তাতে  মনে নাই উপসর্গ ।।
পরজন্মে হোক ওরা রাজা কিম্বা সন্ত ।
মতুয়ারা জানে এই তথ্য মহাভ্রান্ত ।।
দেবদেবী জপতপ নিয়ে থাক মজে ।
মতুয়ার কাছে উহা একেবারে বাজে ।।
ছুতানাতা তুকতাক বাঁধে ওরা হাতে ।
মতুয়ারা জানে মিছে কাজ কি উহাতে ।।
হিন্দুরা তো দীক্ষা নিয়ে করে চিত্তশুদ্ধি ।
মতুয়ার কাছে উহা পাগলের বুদ্ধি ।।
যাগযজ্ঞ পূজা করে ধন জন লোভে ।
মতুয়ারা এই সব পন্ডশ্রম ভাবে ।।
জন্ম মৃত্যু বিয়ে নিয়ে যাহা কিছু কান্ড ।
ব্রাহ্মণ ডাকিয়া ওরা করে অর্থদন্ড ।।
মতুয়ারা বোঝে ইহা সকলি বিফল ।
এইসব কর্ম শুধু দাসত্বের ফল ।।
অস্পৃশ্যতা নিয়ে আছে ওরা নিরবধি ।
মতুয়ারা জানে ইহা মনব বিরোধী ।।
নাম করে মুক্ত হয় কৃত পাপ ফল ।
মতুয়ারা জানে এরা উন্মাদের দল ।।
কৃত পাপকর্ম যদি হয় সংশোধন ।
একমাত্র হতে পারে পাপের মোচন ।।
          ২০১
বাস্তবের সত্য ইহা মতুয়ারা মানে ।
পাপ লুপ্ত নাহি হয় নাম সংকীর্তনে ।।
পুণ্যলোভে ফেরে ওরা তীর্থ হতে তীর্থ ।
মতুয়ারা জানে এই ধূর্তামীর অর্থ ।।
পাপ নাশে পূণ্যলাভে করে গঙ্গা স্নান ।
মতুয়ারা জানে ওরা মূর্খ অভাজন ।।
মঠ ও মিশনে ছোটে ত্যাজিয়া সংসার ।
মতুয়ারা কান্দে হায় ফেলে গেল সার ।।
ভগবান লাভে থাকে পাহাড় গুহায় ।
মতুয়ারা চিন্তে জীবন বিফলে যায় ।।
মৃত্যু পরে মুক্তি লোভে করে সংকীর্তন ।
মতুয়ার কাছে ইহা শুধু অকারাণ ।।
পোশাকি বা পেশাদারি সাধু পিছে ছোটে ।
মতুয়ারা জানে এতে মিছে দিন কাটে ।।
ধর্মচর্চা তরে যারা ছোটেন মন্দির ।
মতুয়ারা জানে এদের মন নহে স্থির ।।
ভগবান লাভে যারা করে ছোটাছুটি ।
মতুয়ারা জানে বৃথা দিন হয় মাটি ।।
ভগবান লাভ তরে করে কান্নাকাটি ।
মতুয়ারা কহে এই ভাব নহে খাটি ।।
অলীকের মাঝে যারা খোঁজে ভগবান ।
মতুয়ারা মানে ইহা মস্ত অবিজ্ঞান ।।
ভগবান নিয়ে ভাবনা মতুয়ার এই ।
অলীকের মাঝে কোন ভগবান নেই ।।
ভগবান নিয়ে চলে সর্বত্র বিতর্ক ।
হরিচাঁদ সেই হেতু করেছে সতর্ক ।।
ভগবান নিয়ে তর্ক মতুয়ার নাই ।
যে যাহারে করে ত্রাণ সে তাহার সাঁই ।।
হরিলীলামৃত মাঝে দিয়েছে নির্দেশ ।
মতুয়ার জন্য হরিচাঁদ সবিশেষ ।।
         ২০৩
'বিশ্বজুড়ে এ নিয়ম দেখি পরস্পর ।
যে যাকে উদ্ধার করে সে তার ঈশ্বর ।।'
এই সূত্রে রাম কৃষ্ণ গৌরাঙ্গ ঈশ্বর ।
তাদের কাছে যাদের করেছে উদ্ধার ।।
যাদের মেরেছে পিষে বেদবিধি চাপে ।
রাখিয়াছে হীন করে পশুত্বের ধাপে ।।
ইহাদের কাছে ওদের কি পরিচয় ।
ধূর্ত প্রবঞ্চক ছাড়া অন্য কিছু নয় ।।
তাই প্রভু হরিচাঁদ মোদের ঈশ্বর ।
মোদের পাতিত্য হতে করেছে উদ্ধার ।।
অন্যান্য ঈশ্বরে আর কিবা প্রয়োজন ।
একে ওকে টানাটানি কিসের কারণ ।
নির্যাতিত পতিতেরে করিতে উদ্ধার ।
লড়িয়াছে হরিচাঁদ আজীবন ভর ।।
লাঞ্ছিতের অধিকার করিতে প্রতিষ্ঠা ।
বহুভাবে প্রভু মোর করেছে প্রচেষ্ঠা।।
ইহাদের অশ্রুজল করিতে মোচন ।
বহু বহু  পন্থা প্রভু করে উদ্ধাবন ।।
বেদবিধি যাহা কিছু ছুঁড়ে ফেলে দূরে ।
চিরপুরাতনে আনে নব কলেবরে ।।
আদি ধর্ম বৌদ্ধধর্ম যুগ আবর্তনে ।
কলুষিত হয়েছিল বৈদিক দূষণে ।।
সব ধুলা ঝেড়ে মুছে করিয়া সুন্দর ।
মতুয়া নামেতে দিলে ধর্ম উপহার ।।
পতিতের হাতে দিল এই ধর্ম তুলি ।
ধর্মহীনে ধর্ম পেয়ে নাচে বাহু তুলি ।।
ধর্মহীন ডুবেছিল হীনমন্যতায় ।
নিজধর্ম পেয়ে মেতে ওঠে প্রত্যাশায় ।।
বুলিহীন মুখে তুলে দিল হরিবোল ।
দিকে দিকে হরিনামে ওঠে মহারোল ।।
          ২০৪
সংঘবদ্ধ হরিনাম রীতি মতুয়ার ।
হৃদয়ে হৃদয় যোগ করে পরস্পর ।।
হরিনামে ভাসে সবে প্রেমের প্লাবনে ।
সকলে আবদ্ধ হয় মধুর বন্ধনে ।।
বর্ণহীন সাম্যবাদে এই পরিণাম ।
তার তরে দিল প্রভু এই হরিনাম ।
সর্বাত্মক মুক্তিলাভ শেষ পরিণতি ।
এ বাসনা নিয়ে মনু রাখিল প্রণতি ।।
হরিভক্ত সবে মিলে তোল মহারোল ।
শংকা ঝেড়ে ডংকা মেরে বল হরিবোল ।।
_________________________

Comments