বইঃ অস্পৃশ্য
ও অনগ্রসর জাতির মুক্তি আন্দোলনে হরি-গুরুচাঁদ ঠাকুর ও মতুওয়া ধর্ম
লেখকঃ মনি মোহন
বৈরাগী
বিষয়ঃ- মতুয়া ধর্মকে ‘সুক্ষ্ম
সনাতান ধর্ম ‘ নামে আখ্যায়িত করা হয় কেন ?
{
বিষয় নম্বরঃ ২৩ ; মতুয়া দর্শন সনাতন দর্শনেরই
বিবর্তিত রূপঃ (পৃঃ
নং- ১১১) }
সত্য,
প্রেম, পবিত্রতা এবং বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদের
উপর প্রবর্তিত ধর্ম দর্শনই ভারতের আদি ধর্ম দর্শন ।যা সনাতন (পুরানো) ধর্ম -দর্শন
নামে খ্যাত । যার আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল ৬৫০০ খ্রীঃ পুর্বাব্দেরও পূর্বে । সিন্ধু
সভ্যতার মত নগরকেন্দ্রিক সভ্যতা ছিল এই ধর্ম-দর্শনের উপরেই প্রতিষ্ঠিত । সনাতনী
আদি পুরাণ ছিল সনাতনী সুতদের (যুক্তি ও বিজ্ঞান ভিক্তিক সত্য,প্রেম ও পবিত্রতার
বাহকদের) এযুগের গবেষণালব্ধ বিশেষ জ্ঞানভান্ডার হিসাবে স্বীকৃত । রবীন্দ্রনারথ
তাঁর ‘কর্ণকুন্তি সংবার’-এ মহাবীর
কর্ণকে সুত পুত্র বলে স্বীকার করেছেন । ঋগ
বৈদিক যুগে (১৫০০-১০০০
খ্রীঃ পূঃ) এই সুত-রা (ভারতীয় মূলনিবাসী ) ছিলেন ক্ষত্রিয় বর্ণের অন্তর্ভুক্ত । ডঃ
আম্বেদকর দেখিয়েছেন ব্যাসদেবই
সুতদের এই আদি পুরাণটিকে বিকৃতরূপে সংস্কার করেন। আর পরবর্তীকালে এই আদি পুরাণের বিকৃত সংস্করণ
থেকেই জন্ম হয়েছে বর্তমানের ১৮টিপুরাণের।
যা সনাতনী ধর্ম-দর্শন বহির্ভুত কল্পনাশ্রিত অলীক মতবাদে পরিপুষ্ট যে পুরাণগুলি
হল-(১) মার্কন্ডেয় পুরাণ
(২) বায়ু পুরাণ (৩) ব্রহ্মান্ড পুরাণ (৪) বিষ্ণু পুরাণ (৫)মৎস পুরাণ (৬) ভাগবত
পুরাণ (৭) কুর্ম পুরাণ (৮) বামন পুরাণ (৯) লিঙ্গ পুরাণ (১০) বরাহ পুরাণ (১১) পদ্ম
পুরাণ (১২) ব্রহ্ম-নারদীয় পুরাণ (১৩) অগ্নি পুরাণ (১৪) গরুড় পুরাণ (১৫) ব্রহ্মা
পুরাণ (১৬) স্কন্ধ পুরাণ (১৭) ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ (১৮) ভবিষ্য পুরাণ ।
এই
সনাতন ধর্মকে আবার ভূতের ধর্মও বলা হয় । করাণ এই ধর্ম মূলত ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুৎ ,ব্যোম নামক পঞ্চ ভূতের বৈজ্ঞানিক সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত, যা ছিল সংস্কারের মাধ্যমে পরিবর্তনশীল । ১৯৮৫ সালের ১৪ই অক্টোবর ‘বর্তমান’ পত্রিকায় প্রকাশ-“সম্প্রতি সোভিয়েত রাশিয়ায় জাতিগত বিজ্ঞানের উপর
অনুষ্ঠিত বিজ্ঞানীদের এক আলোচনাচক্রে মন্তব্য করা হয় যে, আর্যদের
ভারতীয় উপমহাদেশে প্রবেশ করার প্রায় ৫০০০ হাজার বৎসর আগে সিন্ধু উপত্যকায় অতি
উন্নতমানের এক সভ্যতা গড়ে উঠেছিল । ক্ষিতি-অপ- তেজ-মরুৎ-বোম এই পঞ্চ ভূতের তত্ত্ব
আর্য সভ্যতা বহির্ভুত প্রাচীনতম ভারতীয় সভ্যতার অপেক্ষা অধিকতর উৎকৃষ্ট ছিল,
সে বিষয়ে বিজ্ঞানীরা একমত ছিলেন । আর্য সভ্যতা এই প্রাচীনতম
সভ্যতাকে ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছিল ।”
পঞ্চ
ভূতের এই বৈজ্ঞানিক সত্যের উপর বিশেষ জ্ঞানার্জনের দ্বারা সনাতনী আদিপুরাণকে
সংস্কারের মাধ্যমে যাঁরা আরও বিজ্ঞানভিত্তিক করে সনাতন ধর্ম-দর্শনকে সমৃদ্ধ আকারে
তুলে ধরতেন তাঁদের বলা হত বুদ্ধ (জ্ঞানী) । কিন্তু ১৫০০ খ্রীঃ পূর্বাব্দে বৈদিক
আর্য আগমণের পর বৈদিক বর্ণধর্মের প্রবর্তনের সাথে সাথেই ধীরে ধীরে পতন ঘটেতে থাকে
সনাতনী এই ভূতের ধর্ম-দর্শনের।
অন্যদিকে
হারিয়ে যাওয়া সনাতনী ভূতের ধর্ম-দর্শনের পুনর্জাগরণ ঘটান বুদ্ধ গৌতম। তবে তা সনাতন
ধর্ম রূপে নয়; বৌদ্ধ ধর্ম রূপে । কারণ সনাতন ধর্ম
সংস্কারকদেরই বলা হত বুদ্ধ । আর এই ‘বুদ্ধ’ শব্দ থেকেই বুদ্ধ গৌতমের বৌদ্ধ ধর্ম নামকরণ । ‘বুদ্ধ’
শব্দটি এসেছে ‘বোধি’ শব্দ
থেকে । যে ‘বোধি’ অর্থ হল জ্ঞান ।
বুদ্ধ গৌতম পঞ্চ ভূতের মহাসত্যের উপর ভূতের ধর্মকে সংস্কার করে তাঁর দর্শনকে
প্রতিষ্ঠিত করেন । যা হল কর্ম ভিত্তিক সত্য, প্রেম ও
পবিত্রতারই নিদর্শন । তাই বৌদ্ধ ধর্ম আসলে সনাতন(পুরানো) ভূতের ধর্মেরই এক সংস্কৃত
রূপ ।
আবার হারিয়ে যাওয়া
বৌদ্ধধর্মের পুনর্জাগরণ ঘটান ঠাকুর হরিচাঁদ । যা বুদ্ধের কর্মভিত্তিক সত্য,
প্রেম ও পবিত্রতারই নিদর্শন । বুদ্ধ গৌতম সংসাররূপ নদী পার হওয়ার
ক্ষেত্রে তার দর্শনকে কার্যসিদ্ধির ভেলারূপ ব্যবহার করেছেন, যে
ভেলাটি কার্যসিদ্ধির পর আর মাথায় করে বয়ে নিয়ে বেড়ানোর কোনো প্রয়োজন নেই । অথএব
বুদ্ধের কর্ম এবং বাণীর ধর্ম যেমন নির্দোষ এবং বিজ্ঞজন প্রশংসিত ঠিক তেমনি ঠাকুর হরিচাঁদের
ধর্ম ‘হাতে কাম (কর্ম), মুখে নামও
(প্রেমের বাণী হরিবোলও), সংসাররূপ নদী পার হওয়ার ক্ষেত্রে
নির্দোষ এবং বিজ্ঞজন প্রশংসিত কর্যসিদ্ধির ধর্ম-দর্শন নামে প্রতিষ্ঠিত । তাই মতুয়া
দর্শন আসলে বৌদ্ধ দর্শনেরই নবরূপ । অতএব বৌদ্ধদর্শন যেহেতু সনাতন ধর্ম-দর্শনেরই
বিবর্তিত রূপ; আর মতুয়া ধর্ম হল বৌদ্ধ ধর্মের নবরূপ, তাই বলা যায় মতুয়া দর্শনও সনাতন দর্শনেরই বিবর্তিত রূপ। এ কারণে মতুয়া
ধর্মকে ‘সূক্ষ্ম সনাতন ধর্ম নামেও আখ্যায়িত করা যায় ।
----------------------------------------------------------
কিন্তু হরিচাদ কোন জ্ঞান বিতরণ করেন নি বুদ্ধের মত। তিনি শুধু বলেছেন হরিনাম করতে যার প্রবর্তন করেছিলেন চৈতন্য মহাপৃভু। উনার মৌলিক কোন সৃষ্টি পাওয়া যায় না।
ReplyDelete