গুরুচাঁদ ঠাকুরের শেষ জীবনের আশা ও
তাঁর অনুগামী এবং পরবর্তী বংশধরদের বিপথ গামীতা
পৃষ্ঠা ক্রমাংক ১২৪ থেকে ১২৮
গুরুচাঁদ ঠাকুরের জন্ম হইয়াছিল ১৮৪৬ খ্রীষ্টাব্দে (১৩ই মার্চ) এবং হরিচাঁদ ঠাকুরের মৃত্যু হইয়াছিল ১৮৭৮ খ্রীষ্টাব্দে ৬ই মার্চ)। অর্থাৎ গুরুচাঁদ ঠাকুরের বয়স যখন বত্রিশ বৎসর তখন তাঁহার পিতৃবিয়োগ ঘটে। তাঁহার জীবনের এই বত্রিশটি বৎসরের ভিতরে বারোটি বৎসর মাত্র কাটিয়াছিল প্রাতিষ্ঠানিক বিদ্যাভ্যাসের ভিতর দিয়া। বাকি কুড়ি বৎসর সর্বক্ষণ তিনি পিতার সান্নিধ্যে কাটাইয়াছেন। তিনি পিতার সহিত বিভিন্ন ভক্তমহলে পরিভ্রমণ করিয়া আপন মানুষদের বহুবিধ সমস্যা এবং দুঃখ-দুর্দশার সকরুণ চিত্র স্বচক্ষে দর্শন করিয়াছেন। তাহাদের আর্থিক সামাজিক এবং মানসিক অবস্থাকে হৃদয় দিয়া উপলব্ধি করিয়াছেন। সমস্ত সময় তিনি পিতাকে অনুসরণ করিয়া চলিতেন এবং তাঁহার কার্যকলাপকে অনুধাবন করিতে চেষ্টা করিতেন। তিনি যখন দেখিতেন পিতা তাঁহার অনুগামীদের একটি বাস্তব সত্য বুঝাইবার নিমিত্ত কতভাবে চেষ্টা করিতেছেন। কতই না ফন্দিফিকির আঁকিতেছেন। কিন্তু তাঁহার অনুগামীরা কিছুতেই তাহা বুঝিতে চাহিতেছে না । তাহারা সেই নৈসর্গিক বিষয়ের ভিতরে কেবলই তাহা অবাস্তব জিনিষ খুঁজিবার প্রয়াস চালাইতেছে। তিনি তখন হতাশ হইয়া পড়িতেন। যখন উপলব্ধি করিতেন পিতা সমস্ত নমঃজাতিকে একসূত্রে বন্ধন করিয়া জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ করাইবার উদ্দেশ্যে হরিবোল নামের ব্যবস্থা করিতেছেন। কিন্তু তাহার সেই হরিবোল নামের ভিতরে কাল্পনিক স্বর্গীয় মুক্তি খুঁজিয়া ফিরিতেছে। তখন তাঁহার অন্তর ক্রুদ্ধ হইয়া উঠিত। যখন দেখিতেন পিতা তাঁহার মতুয়া ধর্মান্দোলনের ভার যাহাদের উপরে ন্যস্ত করিতেছেন, তাহারা এই ধর্মান্দোলনের মর্মার্থ উপলব্ধি না করিয়া অনুগামীদের ভ্রান্তপথে পরিচালিত করিতেছেন। তাঁহার হৃদয় বড়ই ব্যথিত হইয়া উঠিত। আবার যখন দেখিতেন বৈদিক ধর্মের প্রতিবাদে যাহাদের জন্য জীবন পণ করিয়া লড়াই করিতেছেন, তাহারাই তাঁহাকে বৈদিকধর্মের ধারকদের সহিত একাসনে বসাইবার চেষ্টা চালাইতেছে। তাঁহার হৃদয় তখন যন্ত্রণায় ছটফট করিয়া উঠিত।
পিতা তাঁহার হৃদয়ের এই
হতাশার বিষয়গুলি গভীরভাবে উপলব্ধি করিতেন। হরিচাঁদ ঠাকুর তাঁহার অনুগামীদের ভিতরে
একটি মানুষকেও খুঁজিয়া পান নাই যে তাঁহার মতুয়া ধর্মদর্শনকে সঠিকভাবে বুঝিয়াছে এবং
যাহার উপরে এই ধর্মান্দোলনের ভার অর্পণ করিয়া নিশ্চিন্ত হইতে পারেন। তাই পুত্র
গুরুচাঁদকেই আদর্শ উত্তরসূরী হিসাবে গড়িয়া তুলিতে সর্বক্ষণ সচেষ্ট থাকিতেন এবং
তিনি সফলও হইয়াছিলেন। তাঁহার চিন্তা-চেতনার বৃহদংশ গুরুচাঁদের চেতনায় প্রতিষ্ঠা
করিতে পারিয়াছিলেন। তাই তিনি ভক্তদের বলিতেন, গুরুচাঁদের নির্দেশকে তাঁহার নির্দেশ
মনে করিয়া মান্য করিতে। তিনি গুরুচাঁদের ভিতরে অবস্থান করিবেন। অর্থাৎ গুরুচাদের
চিন্তা-চেতনা ও হরিচাঁদের চিন্তা-চেতনা অভিন্ন। তবুও গুরুচাঁদ ঠাকুর মতুয়াদের
দুর্বল অনুধাবন ক্ষমতা এবং গর্হিতকর কার্যকলাপ
দেখিয়া মাঝে মাঝে রড় হতাশা প্রকাশ করিতেন । তাই পিতা হরিচাঁদ ঠাকুর মহাপ্রয়াণের পূর্বে
তাঁহাকে একটি আন্দোলনের উপরে বিশেষ জোর দিবার নির্দেশ করিয়াছিলেন। সেই আন্দোলনটি
হইল শিক্ষা-আন্দোলন। নমঃজাতির প্রতিটি গৃহে শিক্ষার
বর্তিকা পৌঁছাইয়া দিবার আন্দোলন। তাই পরবর্তীতে জগজ্জননী শান্তিমাতা যতদিন জীবিত ছিলেন, তিনি পুত্র গুরুচাঁদকে একটি কথাই বলিতেন,"তোকে কিচ্ছু করতে হবে না, তুই শুধু
শিক্ষা-আন্দোলনটা ঠিকমত করে যা। যা করার তোর পিতা সব করে রেখে গেছে।"
এইবার প্রশ্ন-হরিচাঁদ ঠাকুর কী করিয়া রাখিয়া গিয়াছেন এবং জাতির
ঘরে ঘরে শিক্ষার আলো পৌঁছাইবার সঙ্গে তাহার সম্পর্কই বা কী ?
এই বিষয়টি সর্বাগ্রে অনুধাবন করা দরকার।
একটি জাতিকে তাহাদের প্রাপ্য অধিকার আদায় করিতে হইলে সর্বাগ্রে কীসের
প্রয়োজন?
প্রয়োজন জাতিকে দৃঢ়ভাবে সংঘবদ্ধ করা।
একটি বিচ্ছিন্ন জাতিকে সংঘবদ্ধ করিবার পন্থা কী ? একমাত্র পন্থা জাতির প্রতিটি মানুষের চিন্তা-চেতনাকে একই ধর্মদর্শনের
আলোকে আলোকিত করিয়া তোলা।
জাতির প্রতিটি মানুষকে একই
ধর্মদর্শনের আলোকে উদ্ভাসিত করিয়া তুলিবার উপায়ই বা কী ?
উপায়- জাতির
মানুষদের নিজস্ব ধর্মদর্শনের আলোকে সাহিত্য এবং সংস্কৃতি প্রণয়ন করা।
এই সাহিত্যের স্রষ্টা এবং
সংস্কৃতির পথপ্রদর্শক কাহারা ?
উত্তর- জাতির
শিক্ষিত বিদগদ্ধজনেরা ।
অতএব জাতির শিক্ষিত এবং বিদগদ্ধজনেরাই কেবল পারেন হরিচাঁদ ঠাকুর
প্রদত্ত মতুয়াদর্শনের অবৈদিক স্বরূপ প্রচার করিয়া দর্শন অনুযায়ী সংস্কৃতির মাধ্যমে
জাতিকে সংঘবদ্ধ করিয়া তুলিতে। এই ধর্মদর্শনের ভিতর দিয়া একবার সংঘবদ্ধ হইতে পারিলে
আর কাহারও সাধ্য হইবে না জাতিকে খন্ডিত করে। একমাত্র ইহা সম্ভব করিতে পারিলেই
জাতির সমস্ত অপ্রাপ্তি ঘুচাইতে পারিবে। অন্যথায় ছিঁটে ফোঁটা কৃপার দান লাভের
প্রত্যাশায় হিন্দু ক্ষমতাসীনদের পিছনে ঘুরিতে হইবে।
অতএব জাতির শুভাশুভ নির্ভর করিতেছে তাহার শিক্ষিত মানুষের উপর। এই সত্যটি
উপলব্ধি করিয়া হরিচাঁদ ঠাকুর গুরুচাঁদ ঠাকুরকে সর্বাগ্রে শিক্ষা-আন্দোলনে ব্রতী
হইতে নির্দেশ দিয়াছিলেন। গুরুচাঁদ ঠাকুরও এই উপলব্ধি লইয়াই শিক্ষা-আন্দোলনে
ঝাঁপাইয়া পড়িয়াছিলেন। কিন্তু বাস্তবের মাটিতে
দাঁড়াইয়া উপলব্ধি করিলেন, যাহার আশায় পিতা জাতির ছেলেমেয়েদের শিক্ষিত করিয়া তুলিতে
নির্দেশ দিয়াছিলেন, প্রকৃতপক্ষে সেই শিক্ষায় কেহই শিক্ষিত হইতেছে না। তাহারা
লেখাপড়া শিখিয়া চাকুরিপ্রাপ্ত হইয়া উচ্চবর্ণীয় হিন্দুদের মত বিলাসবহুল এবং
জাঁকজমকপূর্ণ জীবনে অভ্যস্থ হইয়া পড়িতেছে।
নিজেকে
তাহাদের একজন প্রমাণ করিবার উদ্দেশ্যে তাহাদের আচার বিচার এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি
অনুকরণ করিতে শুরু করিতেছে। যাহাদের রাজনীতিতে হাতেখড়ি দিবার উদ্দেশ্যে টানিয়া
তুলিলেন তাহারা ক্ষমতার গন্ধ পাইয়া ব্রাহ্মণ্যবাদী দলগুলির চতুষ্পার্শে এঁটোকাঁটার
লোভে ঘুরিতে লাগিল।
শৈশব হইতে দেখিয়া শুনিয়া
গুরুচাঁদ ঠাকুর পাগল, গোঁসাই বা সাধারণ ভক্তদের প্রতি কোনদিনই তেমন কোন প্রত্যাশা
করিতেন না। কিন্তু তাঁহার শিক্ষিতজনেরা তাঁহাকে বড় আশাহত করিয়া তুলিয়াছিল। সেই
হতাশার ভাগীদার হিসাবে তিনি জীবনে একজন সুহৃদকেও পাশে পান নাই। তাঁহার
শিক্ষা-আন্দোলনের প্রথম ফসল স্বীয় জ্যেষ্ঠ পুত্র শশিভূষণের কথাই ধরা যাউক-
তিনি ইংরেজি শিক্ষালাভের ইচ্ছা প্রকাশ করিতেই তিনি (গুরুচাঁদ ঠাকুর) তাহাকে জয়পুরে
তারক সরকারের গৃহে রাখিয়া লক্ষ্মীপাশার স্কুলে ভর্তি করিয়া দিয়াছিলেন। তাঁহাকে
প্রতিদিন নদী পার হইয়া স্কুলে যাতায়াত করিতে
হইত এবং স্কুলে হিন্দুকুলোদ্ভবদের নিকট হইতে নানা রকম কটূক্তি সহ্য করিতে হইত। তাই তিনি
কলিকাতা থাকিয়া শিক্ষালাভের ইচ্ছা প্রকাশ করিতেই পিতা তাঁহাকে সেখানে থাকিয়া
বিদ্যাভ্যাসের সুযোগ করিয়া দিয়াছিলেন এবং তিনি কটন ইংরেজী স্কুলে ভর্তি হইয়াছিলেন।
এই কটন স্কুল হইতেই শশিভূষণ ঠাকুর প্রবেশিকা পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হন।
তাঁহার এই সাফল্যের সংবাদ প্রকাশ হইতেই সমগ্র নমঃসমাজ আনন্দে ফাটিয়া পড়িয়াছিল।
তাহারা ডঙ্কা-কাঁসর বাজাইয়া উৎসবে মাতিয়া উঠিয়াছিল। কিন্তু যাঁহার সাফল্যকে
উপলক্ষ্য করিয়া এত উচ্ছাস, সেই শশিভূষণ ঠাকুরের নজর তখন অন্যদিকে। তিনি কটন স্কুলে
পাঠরত অবস্থায় উচ্চবর্ণীয় হিন্দুদের বিত্তবান ঘরের ছেলেদের সহিত মেলামেশা করিয়া
নিজেকেও তাহাদের সমকক্ষ ঘরের সন্তান হিসাবে প্রকাশ করিতে যন্তবান থাকিতেন। আপনার
পরিবার এবং জাতি-ধর্মকে কখনও সঠিকভাবে প্রকাশ করিতেন না।
তৎকালীন সময়ে বারয়ারি কোনও
দুর্গাপূজা হইত না। বঙ্গদেশের রাজা, জমিদার এবং জোতদারেরা নিজ নিজ বৈভব প্রকাশের
নিমিত্ত নিজবাটিতে দুর্গাপূজার আয়োজন করিত। তাহা দেখিয়া শশিভূষণ ঠাকুর হীনমন্যতায়
ভুগিতেন। তাই গৃহে আসিয়া দুর্গাপূজা করিবার জন্য পিতা নিকট প্রায়ই বায়না ধরিতেন।
পিতা গুরুচাঁদ ঠাকুর মতুয়ার ধর্মদর্শন বুঝাইবার জন্য তাঁহাকে যতই চেষ্টা করিতেন না
কেন, তিনি কিছুতেই তাহা বুঝিতে চাহিতেন না। কেবলই জেদ প্রকাশ করিতেন। তাঁহার প্রথম পুত্র প্রমথরঞ্জনের জন্ম হইলে তিনি দুর্গাপূজা
করিবার জন্য এমন বায়না ধরিলেন যে, শেষ পর্যন্ত অনশন করিতে শুরু করিলেন। গুরুচাঁদ
ঠাকুর বাধ্য হইয়া তাঁহাকে পূজার অনুমতি দিয়াছিলেন। (গুরুচাঁদ) ঠাকুর উৎসবের
দিনগুলিতে কাহারও সম্মুখে বাহির হইতেন না। মনোবেদনা লইয়া আত্মগোপন করিয়া থাকিতেন।
অথচ এই ঘটনাকে মহানন্দ হালদার সহ সমস্ত লিপিকারেরা অলৌকিকতার মোড়কে মুড়িয়া লিখিয়া
চলিয়াছেন যে, গুরুচাঁদ ঠাকুর স্বং মহেশ্বর! তাই স্ত্রীরূপিনী দুর্গার মুখদর্শন
তিনি করেন নাই! কী অপূর্ব ব্যাখ্যা!
উপেন্দ্রনাথ ঠাকুরের মৃত্যুর পর
মায়ের নির্দেশে শশিভূষণ ঢাকার জগন্নাথ কলেজ পরিত্যাগ করিয়া কলিকাতার মেট্রোপলিটন
কলেজে ভর্তি হইয়াছিলেন। তিনি কলেজের প্রথম
বর্ষের পরীক্ষায় অকৃতকার্য হইয়া পিতার ইচ্ছায় নিজগ্রামে ফিরিয়া আসিয়াছিলেন এবং
সেখানে প্রতিষ্ঠিত মধ্যম ইংরেজী স্কুলে প্রধান শিক্ষকের পদে নিযুক্ত হইয়াছিলেন।
কিন্তু কলিকাতামুখী অন্তর অধিকদিন তাঁহাকে তিষ্ঠাইতে দেয় নাই। তিনি পিতার ইচ্ছাকে
উপেক্ষা করিয়া পুনরায় কলিকাতা ফিরিয়া গেলেন এবং কটন স্কুলে শিক্ষকতা করিতে
লাগিলেন।
এই সময় কলিকাতাবাসী বেশ কিছু
পন্ডিতব্যক্তিদের সহিত তাঁহার পরিচয় ঘটে। তাঁহাদের ভিতরে অন্যতম ছিলেন শারদাচরণ
মিত্র, শিবনাথ শাস্ত্রী, নগেন্দ্রনাথ
চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। তাঁহারা প্রত্যেকেই ছিলেন ব্রাহ্মধর্মে পন্ডিত। তাঁহাদের
সান্নিধ্য লাভ করিয়া তিনি ব্রাহ্মধর্মের প্রতি বিশেষভাবে আকৃষ্ট হইয়া পড়েন এবং
ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণের সিদ্ধান্ত পাকা করিয়া পিতার নিকটে অনুমতি লইতে আসেন। পুত্র
শশিভূষণের প্রস্তাব শুনিয়া পিতা গুরুচাঁদ ঠাকুর এতটাই আঘাত পাইয়াছিলেন যে, তাঁহার
চক্ষু ফাটিয়া জল গড়াইয়া পড়িতেছিল। তিনি বেশ কিছুক্ষণ কথাই কহিতে পারিতেছিলেন না।
অনেক্ষণ পরে স্বাভাবিক হইয়া পুত্রকে বিভিন্ন কথার দ্বারা বুঝাইতে সচেষ্ট হইয়াছিলেন
এবং শেষ পর্যন্ত শশিভূষণ সিদ্ধান্ত হইতে কোনক্রমে নিরস্ত হইয়াছিলেন। নিরস্ত
হইয়াছিলেন ঠিকই, কিন্তু অন্তর হইতে কোনদিনই তাহা মুছিয়া ফেলিতে পারেন নাই। তাহা
যদি পারিতেন তবে নিশ্চয়ই পিতা-পিতামহের ধর্মান্দোলন এবং শিক্ষান্দোলনে
পরিপূর্ণভাবে আত্মনিয়োগ করিতেন। পিতার শত চেষ্টা সত্ত্বেও তিনি তাহা কোনদিনই করেন
নাই।
চাকুরিপ্রাপ্তির পর হইতে
অধিকাংশ সময়ই তিনি সপরিবারে কর্মস্থলেই থাকিতেন। সর্বাধিক বেদনা এবং লজ্জার বিষয়
কলিকাতায় অবস্থানকালে তাঁহার ব্রাহ্মধর্মে আকৃষ্ট হওয়া। তিনি পিতা-পিতামহের মানবিক
ধর্মদর্শনের কথা সর্বসমক্ষে সগর্বে তুলিয়া ধরিবার পরিবর্তে হীনমন্যতার বশবর্তী
হইয়া মহান মতুয়াধর্মকে পরিত্যাগ করিয়া ব্রাহ্মধর্মে দিক্ষিত হইবার সিদ্ধান্ত লইয়া
বসিলেন। ঠাকুর পরিবারের নীতিভ্রষ্ট হইবার সূচনা তখন হইতেই
শুরু হইয়াছে। গুরুচাঁদ ঠাকুর এই অপ্রত্যাশিত নির্মম সত্যটিওকে উপলব্ধি করিয়া একাকী
নীরবে অশ্রুবিসর্জন করিতেন। পরবরতী সময়ে শশিভূষণের পুত্রদ্বয়ের নিকট হইতেও আশাহত
হইয়া তিনি সাধারণ ভক্তদের নিকট উদ্ভ্রান্তের ন্যায় প্রায়শই কহিতেন, "মতুয়াধর্মের
সত্ত্বাধিকারী বলে কিছু নাই।"
Comments
Post a Comment