কায়া ছাড়ি এবে আমি বাহির হইব।
গুরুচাঁদ দেহে গিয়া আপনি মিশিব ।।
আমা ভাবি গুরুচাঁদে ভকতি করিবে ।
গুরুচাঁদ মধ্যে তবে
আমাকে দেখিবে ।। এই
বিষয়ে -
গুরুচাঁদের প্রত্যক্ষ শিক্ষা
ডাঃ মণীন্দনাথ বিশ্বাস page No.125
হরিচাঁদ ঠাকুর তাঁহার
অনুগামীদের ভিতরে একটি মানুষকেও
খুঁজিয়া পান নাই যে তাঁহার
মতুয়া ধর্মদর্শনকে সঠিকভাবে বুঝিয়াছে এবং যাহার উপরে এই ধর্মান্দোলনের ভার অর্পণ
করিয়া নিশ্চিত হইতে পারেন । তাই পুত্র গুরুচাঁদকেই আদর্শ উত্তরসূরী হিসাবে গড়িয়া
তুলিতে সর্বক্ষণ সচেষ্ট থাকিতেন এবং তিনি সফলও হইয়াছিলেন । তাঁহার চিন্তা-চেতনার বৃহদংশ গুরুচাঁদের চেতনায় প্রতিষ্ঠা করিতে পারিয়াছিলেন । তাই তিনি ভক্তদের বলিতেন, গুরুচাঁদের ভিতরে অবস্থান করিবেন । অর্থাৎ গুরুচাঁদের চিন্তা-চেতনা ও
হরিচাঁদের চিন্তা-চেতনা অভিন্ন । তবুও গুরুচাঁদ ঠাকুর মতুয়াদের দুর্বল অনুধাবন ক্ষমতা
এবং গর্হিতকর কার্যকলাপ দেখিয়া মাঝে মাঝে বড় হতাশা প্রকাশ করিতেন ।
এই বিষয়ে -সুকৃতিরঞ্জন
বিশ্বাস তাঁর বই 'মতুয়াধর্ম এক ধর্ম বিপ্লব' এর page No. 46 এ বলেছেন-
হরিচাঁদ পতিত উদ্ধারের মহাযজ্ঞ শুরু করে তার জন্য
প্রয়োজনীয় তত্ত্ব ও মতাতর্শ স্থির করেছিলেন এবং প্রচার করেছিলেন । কাজ খানিকটা এগিয়ে নিয়ে যান তিনি । কিন্তু একজন মনীষীর জীবনকালে এই সুকঠিন ও দীর্ঘ কাজ সম্পন্ন এবং শেষ করা
সম্ভব ছিল না । যার জন্য তিনি পরবর্তী নেতার খোঁজ করছিলেন । হীরামন, মৃত্যুঞ্জয়, গোলক, দশরথ, বিশ্বনাথ, ব্রজ, নাটু- অনেকের কথাই তিনি ভেবেছিলেন । তারা প্রত্যেকেই যোগ্য ও বিশ্বস্ত । কিন্তু যে কাজের দায়িত্ব তিনি অর্পণ করতে চাইছিলেন, সেই গুরুদায়িত্ব বহন করার জন্য আরও বেশি যোগ্য
মানুষের প্রয়োজন বলে ভেবেছিলেন । শেষ পর্যন্ত নিজ পুত্র গুরুচাঁদকে তিনি মনোনীত করেন । তিনি তাঁর অনুগামী সবাইকে নির্দেশ দেন গুরুচাঁদকে মেনে চলতে ও সহযোগিতা করতে এবং যথোচিত শ্রদ্ধা ও সম্মান জানাতে । এটা দিয়েত্ব
গ্রহণ ও পালনের পরম্পরা । হরিচাঁদের প্রবেশ গুরুচাঁদের মধ্যে- এসব ভাবনা বোকামি ।
হরিচাঁদের সিদ্ধান্তের মর্যাদা রেখেছেন গুরুচাঁদ ঠাকুর । তার জীবনকালেই মতুয়া আন্দোলন দেশব্যাপী পরিব্যাপ্ত হয়। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক, সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে পতিত মানুষেরা ধীরে ধীরে নিজেদের জায়গা করে নেবার পথ খুঁজে পান । তারা নিজেদের আবিষ্কার করেন ও আত্মশক্তিতে ভরপুর হয়ে ওঠেন ।
Comments
Post a Comment