Skip to main content

শাস্ত্র কি? হরিচাঁদ তত্ত্বামৃত-ডাঃ মণীন্দ্রনাথ বিশ্বাস

হরিচাঁদ তত্ত্বামৃত-ডাঃ মণীন্দ্রনাথ বিশ্বাস (পৃঃ নং- ৪৬ থেকে ৪৯)
শাস্ত্র কি?
"কর্মেরে করেছে পঙ্গু নির্থক আচারে,
জ্ঞানেরে করেছে হত শাস্ত্র কারাগারে ।"
-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
শাস্ত্র শাস্ত্র শাস্ত্র করে      ভক্তিহৃদে করজোড়ে
ভাবে গদগদ মোরা হই ।
শাস্ত্র কথার কী মানে       দেখেছি কি ভেবে মনে
 শাস্ত্র শব্দের কী অর্থ পাই ।
এক সাথে অস্ত্রশস্ত্র        বলি মোরা যত্রতত্র
 অনেকেই না বুঝিয়া অর্থ ।
অস্ত্র শস্ত্র দু'টি কথা       না জানিয়া পৃথকতা
মর্মার্থ বুঝিতে হই ব্যর্থ ।।
অস্ত্র কিন্তু বলে তারে       যাহা দূর থেকে ছোড়ে
শত্রুপ্রাণ করিতে সংহার ।
হাতিয়ার হাতে ধরে         হাতে হাতে শত্রু মারে
শব্দ অর্থে শস্ত্র নাম তার ।।
সব চেয়ে সূক্ষ্ম অস্ত্র        তাকেই তো বলে শাস্ত্র
একবারে মারে শত শত ।
শাস্ত্রকার পন্ডিতেরা        এই অস্ত্র রাখে তারা
ছোড়ে ইহা প্রয়োজন মত ।।
অস্ত্র বল শস্ত্র বল          লাগে এতে পেশীবল
হাতে কিন্তু হাতিয়ার চাই ।
শাস্ত্র একমাত্র অস্ত্র            হননেতে সুপ্রশস্ত
হাতিয়ারে নাহিক বালাই ।।
বুদ্ধিজ্ঞানে হীন যারা       শাস্ত্রবাণে মরে তারা
অলীক প্রত্যয়ে  ভরা মন ।
জ্ঞানবুদ্ধি যার লুপ্ত      অন্ধভক্তি নিয়ে সুপ্ত
সে অভাগা হয় যে হনন ।।
যে পরেছে জ্ঞানবর্ম        বুঝেছে প্রকৃত ধর্ম
অন্ধভক্তি ফেলিয়াছে ছুঁড়ে ।
জ্ঞানবুদ্ধি সহযোগে        মিলিয়েছে ন্যায় আগে
যুক্তিবাদী বিজ্ঞানেতে জুড়ে ।
সাধুসন্ত বৈষ্ণবেরা     যুক্তিজালে পড়ে ধরা
তর্কে তবু নাহি দেয় ক্ষান্ত ।
তৃণ থেকে শ্রেষ্ট অস্ত্র       টেনে বার করে শাস্ত্র
বলে এটা শাস্ত্রের সিদ্ধান্ত ।।
যত কিছু যুক্তিজ্ঞান       সবকিছু হয় ম্লান
সিদ্ধান্ত এড়াবে কার সাধ্য ।।
ব্যক্তি মাঝে জ্ঞান যত      সব জ্ঞান হয় হত
ব্যক্তিসত্ত্বা করে যে হরণ ।
নিত্য নব জ্ঞানধারা         সাজাইবে এই ধরা
সে জ্ঞানের হয় রে মরণ ।।
এইভাবে দিন দিন        জ্ঞানবলে যারা ক্ষীণ
অচৈতন্যে সব যায় ভুলি ।
কুসংস্কার যূপকাষ্ঠে      পিষ্ট হয় আষ্টেপৃষ্ঠে
ধর্মীয় পীড়নে হয় বলি ।
গাধা ছোটে মূলো ছোঁবে     মূর্খ ছোটে স্বর্গ পাবে
এ জগৎ করিয়া উপেক্ষা ।
গাধা বয়ে মরে চিনি        মূর্খ বয়ে ফেরে গ্লানি
এ  মূর্খকে কে করিবে রক্ষা ।।
ব্রাহ্মণে গুরুতে ভক্তি        এরা দিতে পারে মুক্তি
অনন্ত স্বর্গেতে হবে বাস ।
কিম্বা পুনঃ জন্ম লবে     পরজন্মে সব পাবে
মনে থাকে এ ভ্রান্ত বিশাস ।।
যত অন্ধ মোহ সব        শাস্ত্র থেকে উদ্ভব
শাস্ত্রকারের এ কেরামতি ।
ধর্ম নিয়ে করে খায়      যত সব মহাশয়
রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকিয়ে দুর্নীতি ।।
নিশ্চয়ই বোঝা গেল      শস্ত্র থেকে শাস্ত্র এল
অস্ত্র ছাড়া শাস্ত্র কিছু নয় ।
অস্ত্র সে তো থাকে হাতে      শাস্ত্র থাকে মগজেতে
প্রয়োজনে বের করে নেয় ।।
হেন সূক্ষ ধার অস্ত্র           বিনা রক্তপাতে শাস্ত্র
পঙ্গু করে জাতীয় সমাজ ।
এ হল শাস্ত্র মাহাত্ম্য        গন্ডী মাঝে নর মত্ত
বস্ব সৌভ্রাতৃত্ব হত আজ ।।
প্রকৃতি পদত্ত জ্ঞান        সবে করে হেয় জ্ঞান
শাস্ত্র জ্ঞানে হয়ে মদমত্ত ।
এর দেখ প্রতিফল         ফলিতেছে বিষফল
সমাজ বৃক্ষেতে আজি নিত্য ।।
অঙ্গে থাকে সাধু সাজ     বৃত্তিতে সহিংসক আজ
লিপ্ত থাকে নাশকতা কর্মে ।
গড়ে মঠ ও মন্দির       মন নহে কভু স্থির
দৃষ্টি থাকে শকুনির ধর্মে ।।
অতীন্দ্রিয় বলে মুখে       লোভাতুর ইন্দ্রিয় সুখে
প্রকৃতি বিরুদ্ধে করে  কাজ ।
তার পরিণতি আজ      মারণ রোগে এ সমাজ
বোধনেতে বিদায়ের সাজ।।
এড়াইতে এর হাত       প্রকৃতির ধারাপাত
পঠন পাঠনে হও ব্রতী ।
সংস্কারে মাতামাতি     ভুলে যাও ভ্রান্ত নীতি
মানবতা বোধে হও স্থিতি ।।
কে গড়িল এই ধরা      তাকে খুঁজে হও সারা
অবজ্ঞা করিয়া সব সৃষ্টি ।
সৃষ্টিকে করে লোপাট       স্রষ্টা লাগি শাস্ত্রপাঠ
স্রষ্টা নিয়ে রচ অনাসৃষ্টি ।।
যার শিল যার নোড়া       তার ভাঙ্গে দন্তগোড়া
কোথা পেলে সৃষ্টি ছাড়া তত্ব ।
যার অন্নজল খায়         তার মুখে থুথু দেয়
শাস্ত্রপাঠে এমন মাহাত্ম্য ।।
জগত কল্যাণ তরে        জন্ম হল ধরাপরে
হরিচাঁদ রক্ষিবে জগত ।
সহজ সরল মত          প্রকৃতির সহজাত
শাস্ত্রতত্ত্ব করিয়া নস্যাৎ ।।
যত বেদ শাস্ত্রগ্রন্থ      এ থেকে পাবে নিষ্ক্রান্ত
বেদভ্রান্ত ভেদ সংস্কার ।
মতুয়ারা অভিলাষী         মুক্ত হবে বিশ্ববাসী
হরিচাঁদ তত্ত্ব করি সার ।।
___________________________________________________










Comments