Skip to main content

পুজা- পার্বন সহ হিন্দুদের অন্যান্য ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে নিষেধাজ্ঞা:

অস্পৃশ্য ও অনগ্রসর জাতির মুক্তি আন্দোলনে হরি-গুরুচাঁদ ঠাকুর ও মতুয়া ধর্ম-মনি মোহন বৈরাগী
পৃষ্ঠা নং ৩৬ থেকে-

বিষয়:-৭। পুজা- পার্বন সহ হিন্দুদের অন্যান্য ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে নিষেধাজ্ঞা:

তথ্য প্রমাণ থেকে দেখা যায় হরিচাঁদ ঠাকুর বাংলার নিপীড়িত, বঞ্চিত, অবহেলিত, লাঞ্ছিত অগণিত ধর্মহীন অস্পৃশ্য পতিত মানুষকে সামাজিক এবং ধর্মীয় মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তাদেরকে সর্বাগ্রে ব্রাহ্মণ্যবাদী আদব-কায়দা, রীতি-নীতি, ভাবনা-চিন্তা, আচার-আচরন ,সাহিত্য, ধর্ম ইত্যাদি বর্জন করে প্রেম ধর্মের মহামন্ত্র হরিবোলকে পাথেয় করার যেমন উপদেশ দিয়েছিলেন, তেমনি বৈদিক হিন্দু ধর্মশাস্ত্রগুলির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে অনুগামীদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন--
             যাগ-যজ্ঞ তন্ত্র-মন্ত্র        দীক্ষা শিক্ষা পুজাপার্বন
                       কোন কিছুর নাহি প্রয়োজন ।।
                            -------------------------
                      হরিনাম মহামন্ত্র জান সর্বজন ।।
                      -------------------------
                      হাতে কাম,        মুখে নাম ।।
                                                      --হরিলীলামৃত, তারক সরকার ।
    বৈদিক হিন্দুদের যাগ-যজ্ঞ ,তন্ত্র-মন্ত্র,পুজা-পার্বন,দীক্ষাগুরুর দীক্ষা ও শিক্ষা ইত্যাদি যুক্তিহীন বৈদিক ক্রিয়কর্ম সাধারণ মানুষদের মস্তবড় বোকা তৈরীর ধর্মীয় অপকৌশল মাত্র । যুগ যুগ ধরে বিদ্যার দেবী সরস্বতী ও সম্পদের দেবী লক্ষ্মীর পূজা করেও ভারতবর্ষের অধিকাংশ মানুষ এখনও বিদ্যাহীন এবং সম্পদহীন । তাই হরিচাঁদ ঠাকুর কর্মকেই সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম হিসাবে মেনে নিতে বলেছেন । তিনি (হরিচাঁদ ঠাকুর ) ব্রাহ্মণদের অপকৌশল  এবং বৈষ্ণবদের ভেকধারী কুরুচি সম্পন্ন অকর্মন্য মনোভাব হটিয়ে সমাজে যুক্তিনিষ্ঠ সত্য এবং বিজ্ঞানবাদী কর্মধারা প্রবর্তনের জন্যে তার অনুগামীদের উদ্দেশ্যে যথার্থই  বলেছিলেন--
                     কোথায় ব্রাহ্মণ দেখ, কোথায় বৈষ্ণব ।
                     স্বার্থবশে অর্থলোভী যত ভন্ড সব ।।
                     তন্ত্র-মন্ত্র, ভেক ঝোলা সব ধাঁধাঁ বাজী ।
                     পবিত্র হৃদয় রেখে হও কাজে কাজী ।।
                                                   --হরিলীলামৃত, তারক সরকার ।
    বৈষ্ণবদের কুরুচিশীল অকর্মন্য ভাবধারা ত্যাগ করানোর জন্য তাঁর পুত্র গুরুচাঁদ ঠাকুর আরও বলেছিলেন--
                     ভেকধারী বৈরাগীকে ভিক্ষা নাহি দিবে ।
                     ভিক্ষা দিলে ব্যভিচার বাড়িয়া চলিবে ।।
                                                   -গুরুচাঁদ চরিত, মহানন্দ হালদার ।
    ভেকধারী বৈরাগীদের অর্থাৎ কুরুচিশীল  বৈষ্ণবদের  ভিক্ষা না দেওয়ার যুক্তি হল যারা সমাজে কোন প্রকার উৎপাদনের সাথে জড়িত নয় অথচ কুরুচিসম্পন্ন, তাদের অন্যের উৎপাদিত ফসল ভোগ করারও কোন অধিকার নাই । অর্থাৎ বৈরাগীদের ভিক্ষা বন্ধ হলে তারা কর্মমুখী হতে বাধ্য হবে । কারণ, কর্মইতো জীবন । কর্মহীনতাই মৃত্যু ।
   অকর্মন্য, অর্থলোভী, প্রগতির প্রতিবন্ধক গুরুদের হাত হতে নিরীহ অশিক্ষিত এবং শিক্ষিত বোকাদের বাঁচাবার জন্য ঠাকুর হরিচাঁদ যথার্থই বলেছিলেন-
                   দীক্ষা নাহি, করিবেনা তীর্থ পর্যটন ।
                   মুক্তিস্পৃহা শূন্য, নাই সাধন ভজন ।।
                                                        -হরিলীলামৃত, তারক সরকার ।
     কায়েমী স্বার্থান্বেষী দীক্ষাগুরুদের প্ররোচনায় মুগ্ধ হয়ে তাদের লেজ ধরে মানুষ যেন পারলৌকিক জগতের মুক্তির কথা ভেবে স্বর্গরাজ্যের প্রতি লালায়িত না হয় । তাই তাদের এহেন দীক্ষা গুরুদের পিছনে অনর্থক অর্থ ব্যয়ের যেমন কোন প্রয়োজন নেই, তেমনি তারে নিকট দীক্ষা নেওয়ারও কোন দরকার নেই । কারণ ঐ গুরুরাইতো জানে না প্রকৃত মুক্তি কি? তাদের যদি মুক্তির স্বাদ উপভোগ করতে হয় তবে পারলৌকিক জগতের মুক্তির আশা ছেড়ে সৎ, সরল পবিত্র এবং সংযত জীবন যাপন করতে হবে এবং মতুয়ার ত্রিরন্তের কথা স্মরণে রাখতে হবে-
                  পবিত্রতা, সৎবাক্য, মানুষে বিশ্বাস ।
                  তিনরন্ত যার আছে হরি তার বশ ।।
                                                  -গুরুচাঁদ চরিত, মহানন্দ হালদার ।
     অর্থাৎ নিজেকে পবিত্র রাখতে হবে সদা সত্যকথা বলতে হবে, মানুষের প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে এবং তাদের ভালবাসতে হবে । আর এর মধ্য থেকেই পাওয়া যাবে প্রকৃত সুখ ভোগের আনন্দ । আসলে স্বর্গ-নরক বলে আলাদা কোন কিছুরই অস্তিত্বই নেই । সবই এই পৃথিবীতে । তাই কবির ভাষায় বলতে হয়-
          কোথায় স্বর্গ, কোথায় নরক,
                      কে বলে তাহা বহুদূর ?
           মানুষেরই মাঝে স্বর্গ-নরক
                     মানুষেতে সুরাসুর ।
     অন্যদিকে দীক্ষা সম্পর্কে গুরুচাঁদ ঠাকুরের চিন্তাভাবনা হল-
         দীক্ষাতো স্বীকৃতি মাত্র ব আমি ভাল
         “ব ভালো, ব ভালো, ব আমি ভাল ।
                                                 -গুরুচাঁদ চরিত, মহানন্দ হালদার ।
     অর্থাৎ তিনটি ভালোর মিলনই হলো দীক্ষা- ভালো হওয়া, ভালো থাকা ও ভালো কথা বলা । আর এগুলিতো প্রত্যেক মানুষের নিজের উপরই নির্ভর করে । অন্য কার কাছ হতে মন্ত্রনিয়ে এটা শিখতে হয় না । তাই এভাবেই ধীরে ধীরে গুরুচাঁদ ঠাকুরের চিন্তাভাবনা সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রচারের মাধ্যমে মনুবাদী তথাকথিত দীক্ষা প্রক্রিয়াই বরবাদ হয়ে যায় ।

            
                    




Comments