Skip to main content

মহাকবি তারক চন্দ্র সরকার



কবি তারক চন্দ্র সরকার
মহাকবি তারক চন্দ্র সরকার হরিলীলামৃত গ্রন্থ লিখেছেন ।

জন্মঃ- তারক সরকার ১৮৪৫ সালে যশোর জেলার জয়পুরে জন্মগ্রহন করেন।
( তথ্যঃ ঠাকুর শ্রী শ্রী হরিচাঁদ মানব পুরুষঃ অধ্যাত্ম পুরুষ। পৃঃ সংখ্যা ২৭৮)
বারশ' চুয়ান্ন সালে আষাঢ় মাসেতে ।
  জন্ম নিল শ্রীতারক প্রভু  আজ্ঞামতে ।।
তেরশ' একুশ সালে মার্গশীর্ষ কালে ।
শ্রীতারক ছাড়িলেন এই ধরাতলে ।।
-------------------------------
মার্গ শীর্ষ শেষভাগে তারিখ একুশে ।
    কায়া ছাড়ি  গোস্বামীজী চলে নিজ দেশে ।।
 (গুরুচাঁদ চরিত, পঞ্চম সংস্করণ পৃঃ সংখ্যা- ৩১১)
মার্গ শীর্ষ  অমাবশ্যে  শনিবার দিনে ।
তোর মাতা প্রসব করিল শুভক্ষণে ।।
নাম করণেতে  নাম রাখিল তারক । (হরিলীলামৃত আদি সংস্করণ পৃঃ সংখ্যা ৩৬)
মহাপরিনির্বাণঃ-
১লা অগ্রহায়ণ ১৩২১ সাল(হরিলীলামৃত দশম সংস্করণ পৃঃ সংখ্যা xxvi)
পিতার নামঃ- কাশীনাথ । তিনি কবিয়াল ছিলেন ।
ঢাকা কিংবা কলিকাতা    কাশী যায় যথা তথা
গানে মত্ত ছিল দিন রাত ।
(গুরুচাঁদ চরিত, পঞ্চম সংস্করণ পৃঃ সংখ্যা ২৮৬-২৯৬)

পঞ্চম বরষ কালে   বসিয়া পিতার কোলে
কাব্য গাঁথা করিল রচনা ।
----------------------
ক্রমে বয়ঃবৃদ্ধি হয়    পাঠশালে তাঁরে দেয়
বর্ণশিক্ষা হ'ল একদিনে
সংযুক্ত বর্ণের লেখা     শিক্ষা করে একবেলা
বিস্ময় মানিল সবে মনে ।।
আদি পাঠ দিল তাঁরে তিন দিনে শেষ করে
প্রথম মানের শিক্ষা যত ।
দ্বিতীয় মানের পড়া   সপ্ত দিনে হ'ল সারা
পন্ডিতেরা হ'ল বাক্য-হত ।।
এই ভাবে ছয় মাসে    শিখিলেন সবিশেষ
চাত্রবৃত্তি পাঠ যাহা ছিল ।
কাশীনাথ বলে তাই     আর পড়ে কার্য নাই
কবি গান-শেখা এবে ভাল ।।
ভাগবত রামায়ণ    করিলেন অধ্যায়ন
আর পড়ে শ্রীমহাভারত ।
গীতা পড়ে  স্মৃতি পড়ে যখনে যে পাঠ ধরে
একেবারে করে কন্ঠ-গত ।।
আঠার পুরাণ পড়ে      হেনকালে মনে পড়ে
চৈতন্য  চরিতামৃত নাম ।
সে গ্রন্থ আনিল ত্বরা      দেখে প্রেমরসে ভরা
এতদিনে পূর্ণ মনস্কাম ।।
দিবারাতি পড়ে গ্রন্থ     কভুনাহি  করে ক্ষান্ত
ভাব দেখি সুখী  কাশীনাথ ।
---------------------------------
পঞ্চদশ বর্ষ যবে          তার বয়ঃক্রম হবে
নিয়তির অলঙঘ্য নিয়মে ।
ছাড়িয়া সংসার-মায়া     সাজিয়া নশ্বর কায়া
কাশীনাথ গেল স্বর্গধামে ।।
একা ঘরে নিরুপায়   ঠেকিয়া বষম দায়
সে তারক করিল কল্পনা ।
পিতৃ-ব্যবসায় ধরি      আমি কবি গান করি
তাই হোক আমার সাধনা ।।
পিতার "দোঁহার" যত    সবে করি হস্তগত
মনোমত কবি গান গায় ।
দেখিয়া বালক-প্রায়     কেহ নাহি ডাকে তায়
মনোদুঃখে  বুক ফেটে যায় ।।
একে তো বালক, তারপর কবি গায়ক। তাই কেউ তার গান শুনতে চান না। তখন এই বিপদ থেকে কি করে মুক্তি পাওয়া যাবে সেটা বালক তারক "দোহার" সূর্যনারায়ণ-এর কাছে জানতে চান। তখন তিনি তারককে বলেন সাধু মৃত্যুঞ্জয়-এর কাছে যেতে।
দূরে নহে তাঁর ঘর       থাকে সে কালীনগর
নাম তাঁর সাধু  মৃত্যুঞ্জয় ।
তাঁর মত শক্তিশালী        নমঃশূদ্র বংশাবলী
মধ্যে অন্যে দেখা নাহি যায় ।।
----------------------------
প্রকাশ্য তারক বলে            সূর্যনারায়ণ-স্থলে
"শোন সূর্য! আমার মনন ।
সে কালীনগরে যা'ব    তোমাকেও সঙ্গে নি'ব
মৃত্যুঞ্জয় করি দরশন ।।
বালক কবি তারক সূর্যনারায়ণকে সঙ্গে নিয়ে কালীনগরে মৃত্যুঞ্জয়-এর বাড়িতে যান।
মৃত্যুঞ্জয় বলে "তুই শোন মোর সোনা ।
অদ্য হ'তে মম হাতে তুই হ'লি কেনা ।।
                    বাসনা পূরিবে তোর নাহি কোন ভয় ।
বল দেখি কি বলিতে এলিরে হেথায় ।।"
তারক কান্দিয়া বলে "গুরু তুমি মোর ।
দয়া করে কাট যত মায়া-মোহ-ঘোর ।।
নিজ গুণে দয়া যদি করিয়াছ প্রভু ।
চরণ ছাড়িয়া আমি নাহি যাব কভু ।।
হেসে তায় মৃত্যুঞ্জয়  বলে মিষ্টভাষে ।
"শুক্তি পেয়ে ভুলে গেলি রত্নাকরে এসে ?
যাও বাছা গৃহে যাও এসো পুনর্বার ।
ক্রমে ক্রমে হ'বে জানা সব সমাচার ।।"
পরে এক দিন তারক  মৃত্যুঞ্জয়ের কাছে যান  দেখা করতে।
প্রনাম করিল গিয়া গোস্বামীর পায়।
হাসি হাসি মৃত্যুঞ্জয় তারে ডেকে কয়।
"তারক হে! তুমি নাহি জান সমাচার ।
ওড়াকান্দী হরিচাঁদ হরি-অবতার ।।
মোর যাহা কিছু দেখ সবি তাঁর কৃপাছায়া ।
জনম সফল যদি করিবারে চাও ।
সময় থাকিতে তুমি ওড়াকান্দী যাও ।।
কিন্তু তারক মনে করেন তাঁর গুরুতো মৃত্যুঞ্জয়, তাই ওড়াকান্দী যাওয়ার দরকার নেই
মোর পক্ষে ভগবান গুরু মৃত্যুঞ্জয় ।
তাঁর পদে মন মোর যেন সদা রয় ।।
কাজ নাই ওড়াকান্দী হরিচাঁদে দেখে ।
সদয় আমাতে যদি প্রভু মোর থাকে ।।
এইসব কথা ভেবে তারক-
পুনঃরায় তবে যায় সে কালীনগরে ।
মৃত্যুঞ্জয় হাসি তবে বলিল তাহারে ।।
''হে তারক! আর কেন মনেতে সন্দেহ ?
এক মনে এই বারে মোর বাক্য লহ ।।
দূরে থেকে যে কল্পনা সে সব অলীক ।
ওড়াকান্দী গেলে তুমি সব পাবে ঠিক ।।
সন্দেহ-ভঞ্জন হরি আছে ওড়াকান্দী ।
চল এক সঙ্গে মোরা সেই পদ বন্দি ।।"
এ মত কহিল যদি প্রভু মৃত্যুঞ্জয় ।
তারক স্বীকার করি পড়ে তাঁর পায় ।।
দুই দিন পরে দোঁহে করে শুভযাত্রা ।
--------------------------
হেন-মতে ওড়াকান্দী হইল উদয় ।
চক্ষে জল মৃত্যুঞ্জয় হরি ! হরি ! কয় ।।
স্পর্শ মাত্রে শ্রীধামের পবিত্র প্রাঙ্গণ ।
অকস্মাৎ উচাটন তারকের মন ।।
প্রাঙ্গণের প্রান্তভাগে চটকা তলায় ।
মহাপ্রভু বসিয়াছে ছিন্ন-কন্থা গায় ।।
----------------------------------
যবে মৃত্যুঞ্জয় আসি উপনীত হ'ল ।
হাসি হাসি মহাপ্রভু কহিতে লাগিল ।।
    'ওরে গোলক ! হীরেমন ! তরা দেখে যা ।
     মিত্যুনে' এনেছে সাথে এক তোতার ছা' ।।
----------------------------------
প্রভু কয় "মৃত্যুঞ্জয় ! এই তোতার ছা' ।
আর কারে দিবে তুই মরে দিয়ে যা ।
------------------------------------
মহাপ্রভু ডেকে বলে, "তবে তাই হোক ।
যা' বলি তোতারে আমি সেই বুলি কো'ক ।।'
এ সময়ে তারকের কিছু চিত্ত স্থির ।
দর দর ধারে দুই চক্ষে বহে নীর ।।
যেই মাত্র প্রভু বলে "সেই বুলি কো'ক ।
তারকের জিহ্বাগ্রে আম্নি ফুটিল শ্লোক ।।
অপলকে শ্লোকে শ্লোকে করিল বন্দনা ।
মৃত্যুঞ্জুয় আনন্দিত শুনিয়া রচনা ।।

এর মধ্যে একটি শ্লোক বা স্তব হচ্ছে-
তরুণ-আরুণ          কোমল- করুণ
কম-কান্তি কৃপাময় ।
বুদ্ধ-মুর্ত্তি ধরে'         শুদ্ধোধন ঘরে
রাজপুত্র  রাজালয় ।।
প্রেম পবিত্রতা         অহিংসা-বারতা
হানা'লে জগত-জনে ।
ভাই ভাই তাই      ভিন্ন ভাব নাই
পরম পীরিতি প্রাণে ।।
------------------------
প্রভুর দয়ার গুণে বলিহারি যাই।
    কৃপা-গুণে শ্রীতারক সাজিল গোঁসাই ।।
পিতৃ-ব্যবসায় তাঁর ছিল কবিগান ।
   মনে ইচ্ছা সেই পথে করিবে প্রয়াণ ।
   তাহে বিধি বাদী হ'ল কন্ঠে নাহি সুর ।
     গান-ক্ষেত্রে গেলে সবে করে 'দূর দূর' ।।
তারকের গান কেউ শুনতে চায় না কারন তাঁর কন্ঠে সুর নেই। এই সমস্যার কথা তারক ঠাকুরকে জানালে ঠাকুর বলেন-
প্রভু বলে"রে তারক কোন চিন্তা নাই ।
আমি যাহা বলি বাপু ! তুমি কর তাই ।।
হাটে হাটে সাতহাটে বল সকলেরে ।
"সুর নাই দেখে সবে দূর করে মোরে ।।"
একার্য করিলে তুমি ফলিবে সুফল ।
গলিবে তোমার বাক্যে পাষাণে ও জল ।।"
-----------------------------
প্রভু-আজ্ঞা মতে কার্য করিল সুধীর ।
কন্ঠে সুর হ'ল তাঁর মধুর গম্ভীর ।।
পরে যত গান করে সেই মহা সাধু ।
সবে বলে "শুনিলাম মধু হ'তে মধু ।।
----------------------
ধন্য কবি শ্রীতারক কহে সর্বজনে ।
দেশে দেশে সবে ডাকে গানের কারণে।।
একবার ডাক হ'ল ঢাকার জিলায় ।
মনে মনে তারকের হ'ল কিছু ভয়।।
তারকে ভয়ের কারণ বুঝতে পেরে ঠাকুর তাঁকে সাহস যোগান।
নির্দিষ্ট তারিখে হ'ল ঢাকায় উদয় ।
বহু লোক সমারোহ গানের খোলায় ।
------------------------
বিপক্ষ নায়ক যিনি কবি সরকার ।
গানে, শাস্ত্রে, সর্বভাবে বহু শিক্ষা তার ।।
মনে মনে ছিল তাঁর গর্ব অতিশয় ।
নিশ্চয় তারকচন্দ্রে দিবে পরাজয় ।।
কিন্তু গান যখন শুরু হ'ল তখন দেখা গেল অন্য ঘটনা ।
অন্যপক্ষে সরকার পদে পদে হারে ।
তারকের দলে ছিল প্রবিণ 'দোহার'।
সূর্য নারায়ণ আর ভোলা সাথে তাঁর ।।
উভয়ের কন্ঠে যেন পিকরাজ জিনি ।
সভা শুদ্ধ হ'ল মুগদ্ধ সেই স্বর শুনি ।।
---------------------------------
এই ভাবে সারা রাতি গানের আসরে ।
মন্ত্র-মুগদ্ধ মত থাকে যত নারী নরে ।।
এমনি হইল দশা অত্যাশ্চর্যময় ।
বিপক্ষে নায়ক যবে আসিল সভায় ।।
সবে বলে "শীঘ্র শীঘ্র তুমি সেরে যাও ।
অপর দলের গান শুনিবারে দাও ।।
এই ভাবে তারক সরকারের নামে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
তারক ভাগবত (পৃঃ ৩০০)
শ্রেষ্ঠ কবি বলে হ'ল তারকের নাম।
দেশে দেশে সবে তারে ডাকে অবিরাম ।।
ব্রাহ্মণ পন্ডিত কিবা রাজার সভায় ।
বহু -শাস্ত্র-বেত্তা বলি তাঁর পরিচয় ।।
এবে কহি সর্ব জনে অপূর্ব ঘটনা।
করিল অপূর্ব লীলা তারক রসনা ।।
নড়াইল রাজবাড়ী করির আসরে ।
ব্রাহ্মণ পন্ডিত বসে সভা শোভা করে ।।
বিপক্ষ দলের যিনি ছিল সরকার।
কোন গুণে তারকেরে হ'তে নারে পার ।।
ব্রাহ্মণ পন্ডিত তাহে হ'ল কুতূহলী ।
তারকে পরীক্ষা করে ব্রাহ্মণ মণ্ডলী ।।
ব্রাহ্মণ মন্ডলী কবি তারক সরকারে কাছে কিছু কঠিন প্রশ্নের  উত্তর জানতে চান। কিন্তু কবি তারক সেই প্রশ্নের জবার খুব সুন্দর ভাবে ব্যাখ্যা করে বোঝান ।তাতে ব্রাহ্মণ মন্ডলী খুব খুশি হন । তাঁকে ''শ্রীতারক ভাগবত" উপাধি দেওয়া হয়।

দয়ার সাগর তারকচন্দ্র(পৃঃ ৩০৫)-এর দয়ার একটি ঘটনা। তারক খুব গৃহ পালিত পশুদের  ভালবাসতেন ।
গৃহের পালিত পশু ছিল যত গুলি ।
সকলে তারকে চেনে  শোনে তার বুলি ।।
গরু গুলি তাঁরে দেখে বড় সুখপায় ।
আনন্দে নয়ন মুদে' হস্ত দিলে গায় ।
তারকের স্পর্শ পেতে সকলের আশা ।
তারকের কাছে তারা চায় ভালবাসা ।।
------------------------------
গান করিবারে যবে বিদেশেতে যায় ।
'হাম্বা' রব করে গাভী চারি দিকে চায় ।।
---------------------------------
গান গাহি যেই কালে ফিরে আসে ঘরে ।
আনন্দের মাত্রা যেন কোথা নাহি ধরে ।।
দড়ি ছিড়ি গরুগুলি আসিবারে চায় ।
মুখের 'গেরাস' ফেলে বিড়াল দৌড়ায় ।।
একবার এরকম একটি গরু বেঁচে দেয় গরুর মালিক। কিন্তু সেই গরুটি কিছুতেই যেতে চায় না। একদিন সেই গরুর মালিক গরুটিকে হালে জুড়ে জমি চাষ করছিল । কিন্তু গরুটি হটাৎ পাশের রাস্তা দিয়ে তারককে যেতে দেখে। তখন গরুটি হাল ভেঙ্গে 'হাম্বা' 'হাম্বা' করতে করতে ছুটে আসে ।
দরদী বান্ধবে দেখি মন নাহি মানে ।
হাল ভেঙ্গে চলে ছুটে প্রভুর সদনে ।।
'হাম্বা' 'হাম্বা' রব করে চক্ষে বহে জল ।
ভাব দেখে তারকের দেহে নাহি বল ।।
তারকের গাত্র গরু চাটিতে লাগিল ।
তাহা দেখি গোস্বামীর হৃদয় ফাটিল ।।

তখন তারক বলেন গরুটি মালিক বলেন-
যে-টাকা দিয়াছ তুমি লহ তাহা ফিরে ।
দয়া করে ছেড়ে দাও গরুটি আমারে ।।
-------------------------------
গরুরে উদ্ধার করি তারক চলিল ।
সেই গরু তারকের সঙ্গে সঙ্গে গেল । 
তারকের দয়া প্রদর্শনের আর একটি ঘটনা-
একবার তারক যাদবকে সঙ্গে নিয়ে পদুমা গ্রামে মল্লিক ভবনে যাচ্ছিলেন । তখন পথের মধ্যে হঠাৎ একটা বালক বলে তাঁকে তাদের বাড়িতে অবশ্যই যেতে হবে । তার মা তারককে নিয়ে যেতে বলেছে । বালকটির নাছোড় বান্ধা অবস্তায় পড়ে অগত্যা তারক ও যাদব সেই বালকটির সঙ্গে তাদের বাড়িতে যান।

অল্পক্ষণে উপস্থিত বালকের বাড়ী ।
বসিবারে এনে দিল দুইখানা পীড়ি ।।
গৃহ মধ্যে কথা কয় বালকের মাতা ।
বাহিরে গোস্বামী বসি শোনে সেই কথা ।।
গোস্বামী ডকিয়া বলে সেই রমণীরে ।
"মাগো! কথা বল না'ক আসিয়া বাহিরে ।।
আমি ত তোমার পুত্র তুমি ও জননী ।
কাছে এসে বল কথা প্রাণ ভরে' শুনি।।"
গোস্বামীর কথা শুনি নারী কেন্দে কয় ।
"বাহিরে আসিতে বাবা নাহিক উপায় ।।
জির্ণ দীন বস্ত্র-হীন আমি আভাগিনী ।
মোর দিন কাটে বাবা পরে' এক কাণি ।।
শত ছিন্ন বস্ত্রে করি লজ্জা নিবারণ ।
কেমনে বাহিরে আসি বল বাপধন ।।
তোমার গুণের কথা সর্ব দেশে কয় ।
দীনজনে ধনী হয় তোমার কৃপায়।।
'নাড়ী-ছেঁড়া-ধন' মোর এক মাত্র ছেলে ।
স্বর্গে চলে গেছে স্বামী বালকেরে ফেলে ।।
দয়া করে আশীর্বাদ কর তুমি তারে ।
আর কষ্ট তার যেন না হয় সংসারে ।।
এই লাগি' কষ্ট দিতে এনেছি ডাকিয়া ।
কাঙ্গালেরে আশীর্বাদ কর মন দিয়া ।।"
এই কথা বলে নারী ফুকারিয়া কান্দে ।
বড়ই বাজিল ব্যথা সে তারকচাঁন্দে ।।
আপনার উত্তরীয় করি পরিধান ।
নিজবস্ত্র রমণীরে করিলেন দান ।।
যত অর্থ ছিল সাথে সব তারে দিল ।
প্রাণ ভরে সে-বালকে আশীষ করিল ।।
গোস্বামীর আশীর্বাদে সে দীন বালক ।
ধন পেয়ে ভবিষ্যতে হয় ধনী লোক ।।
"দীন বন্ধু" সে তারক দীনের সহায় ।
কত জনে করে দয়া তুলনা কোথায় ? 
হাকবি তারক সরকার হরিচাঁদ সান্যিধ্যে এসে সব ধরনে
 বৈদিক ক্রিয়া কর্ম ছেড়ে দিয়েছেলেন ।
তন্ত্র, মন্ত্র, দীক্ষা শিক্ষা করিলেন ত্যাগ
শুধু হরিচাদে রাখে দৃঢ় অনুরাগ ।।
( গুরুচাঁদ চরিত, পঞ্চম সংস্করণ পৃঃ সংখ্যা ৩০৬)















Comments