Skip to main content

মতুয়া এক মুক্তি সেনা **** লেখকঃ- * মনোরঞ্জন ব্যাপারী *

                    **** মতুয়া এক মুক্তি সেনা ****
               লেখকঃ- * মনোরঞ্জন ব্যাপারী *
লেখক মনোরঞ্জন ব্যাপারীর এই উপন্যাস থেকে আমরা দেখতে পাই ''একলব্য''সম্পর্কে হরিচাঁদ ঠাকুর তাঁর অনুগামীদের বোঝাচ্ছেন এই ভাবে-
                               
হরিচাঁদের চোখের কোণে বেদণার চিকচিক জল । বলে, এই রকম বর্ণঘৃণা ত্রেতায় ঘটেছে দ্বাপর যুগেও ঘটেছে । এক বালক ছেলো একলব্য । নিষাদ রাজার ছেলে । সেকি করেছেলো ? ধনুর বিদ্যায় দক্ষ হয়ে উঠেছেলো । দ্রোনের কাছে গিছিলো সে অস্ত্র শিক্ষার জন্যি । ছোট জাত বলে  তারে শেখায়নি গুরু দ্রোনাচার্য । তখন সে একা- নিজির চেষ্টায় এত দক্ষতা অর্জন করেছেল যা কোনো উঁচুজাত ক্ষত্রিয় পারবে না । আর তাই তারে বনের মধ্যি একা পেয়ে ধরে বুড়ো আঙ্গুলটা কেটে নেয় পান্ডবেরা ।
      তবে যে শুনি সে সেচ্ছায় আঙুল কেটে গুরু দক্ষিণা দেছোলো ?
      ওইটে হচ্ছে প্রচার । নিজিগার অপরাধ ঢাকা দেবার চেষ্টা । গাছের তলে বিয়োলো গাই সেই সম্পর্কের মামা তো ভাই । কে একলব্যের গুরু ? সে গুরুর  জন্যি কেউ বিদ্যা বিসর্জন দেয় ! আঙুল না থাকলি তার আর এত কষ্টের বিদ্যার কি দাম ? জোর করেই কেটে নেছে পান্ডবেরা বুড়ো দ্রোনের পরামর্শে ।
    প্রায় দশ বারোজন মতুয়া ভক্ত উপস্থিত । একযোগে তারা সবাই চমকে ওঠে হরিচাঁদের কথা শুনে । একলব্যের উপাখ্যান তারা অনেকবার অনেক কথকতায়- যাত্রা পালায়, কবিগানে, দেখে শুনে মুগ্ধ হয়েছে । আজ এই ভিন্ন কথনে তারা যেন হত বিহ্বল । এমন করে তো কেউ বলেনি । যেদি এমনটা যে হতে পারে- ভাবানায় আসেনি ।
    বলে হরিচাঁদ- সেইকালে শূদ্র জাতির কেউ তো লিখতি  পড়তি জানতো না যেত পুঁথি পুস্তক লিখিছে বেরাম্মনেরা- তাই দেখবা সব শাস্তর গ্রন্থে বেরাম্মনদের শত শত মহত্ব গাথা । দোষ মোট্টে নাই । আর যেতো শূদ্র বর্ণ তাদের নীচ হীন দর্শবার শতেক রকম ছল কপট । যেদি শুদ্দুররা শাস্তর লিখতি পারতো- অন্য রকম হতো ।
      সবার মুখগুলো গভীর ভাবে নিরীক্ষণ করে গলায় যুগান্তের ক্ষোভ ভরে ফের বলেন হরিচাঁদ- আমি মোতোদের বলি- তোমাগার কোনো শাস্তর পড়া-শোনবার দরকার নাই । গীতা ভাগবত ওতে কিছু শেখার -পাবার নাই । এই সব পড়া শুনে জাতির কোনো হিত হবে না । আধ্যাত্মিক শান্তির চাইতি তোমাগার জাগতিক মঙ্গলের জন্যি বেশি তৎপর হতি হবে । মরার পরে কোন সে স্বর্গধামে গিয়ে কি সুখ পাবে সেই কল্পনায় বিভোর না থেকে এই জীবনটা কি করে সুসহঃ হয় তার চিন্তা করো । তোমাগার পেটে ভাত নাই, অসুখ হলি তার চিকিচ্ছের ব্যবস্থা নাই । ভাবতি হবে অন্য সবার আছে, তোমার কেন নাই । যে ভাবে সে কিছু করে, যে ভাবে না সে কিছু করে না । আমি তোমাগার সেই ভাবনার মধ্যি নিয়ে ফেলতি চাই । নাম গান গাও, সাধন ভজন করো, কিন্তু শুধু ওই করে তুমি জীবনের দুঃখ ভোগ থিকে মুক্তি পাবা না, রাম কৃষ্ণ যার আর নাম ধরে মানুষ কাঁদুক মুক্তি পাবে না । -----


Comments

Post a Comment