Skip to main content

”কুকুরের উচ্চিষ্ট প্রসাদ পেলে খাই । বেদ-বিধি শৌচাচার নাহি মানি তাই

”কুকুরের উচ্চিষ্ট প্রসাদ পেলে খাই ।
বেদ-বিধি শৌচাচার নাহি মানি তাই ।।
সত্যবাদী জিতেন্দ্রিয় হইবেক যেই ।
না থাকুক আচার ক্রিয়া কর্ম হরি তুল্য সেই ।।”
–অর্থাৎ বেদ ও অন্যান্য হিন্দুধর্মীয় শাস্ত্রগ্রন্থ, আচার-আচরণ এসব কিছুকে তিনি পরিহার ও অস্বীকার করেছিলেন । হিন্দুধর্ম ও তার দেব-দেবীকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন । নিজেকে হিন্দুধর্মের একজন বলে কখন ভাবেননি । হিন্দুধর্মকে মানব মুক্তির পথে শত্রু হিসাবে চিহ্নত করেন । তিনি আজীবন ব্রাহ্মণ্যবাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের পতাকা উর্ধে তুলে ধরে বিদ্রোহের প্রতীক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন ।
তিনি কেন হিন্দুধর্মকে অস্বীকার করেছিলেন ? –স্বাভাবিকভাবেই আমাদের এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হয় । হরিচাঁদ ঠাকুর পতিত মানুষকে উদ্ধার বা মুক্ত করার যে ব্রত নিয়ে সংগ্রাম শুরু করেছিলেন হিন্দুধর্মীয় শিক্ষা সে কাজের সম্পুর্ণ পরিপন্থি বলে তার উপলব্ধি হয়েছিল । সেই জন্যই তাকে হিন্দুধর্ম ও হিন্দুধর্মশাস্ত্রগুলিকে অস্বীকার করতে বাধ্য করে । তিনি বুঝেছিলেন –পতিত জনগোষ্ঠির দুর্দশার কারণ পক্ষপাতদুষ্ট হিন্দুধর্মীয় নানা নীতি ও নির্দেশ । তিনি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিলেন যে , হিন্দুশাস্ত্রীয় গ্রন্থ মানুষকে মানসিকভবে পঙ্গু করে দিয়েছে । মানুষের চিত্ত এমনভাবে শাসন করেছে, যাতে, শোষণ ও যন্ত্রণা প্রতিরোধ বিহীন হয় । মানুষ যেন তাদের জীবন- যন্ত্রণাকে ঈশ্বরের আশীর্বাদ হিসাবে গ্রহন করে অলীক পরকালের সৃখ-স্বর্গলাভের আশায় বিভোর থাকে ।
…………..হরিচাঁদ ঠাকুর বর্ণাশ্রম প্রথার গন্ডি ভেঙে বিভিন্ন ধর্ম ও বর্ণের মানুষকে মেলানোর সংগ্রামে ব্রতী হন । এবং এই কাজে তিনি সফলতা লাভ করেন । লীলামৃত গ্রন্থে তার পরিষ্কার উল্লেখ পাওয়া যায় ।–
”ব্রাহ্মণ, কায়স্থ সাহা, শুদ্র সাধু নর ।
ছত্রিশ বর্ণের লোক হল একত্তর ।।
বা-
ব্রাহ্মণ, কায়স্থ কুন্ডু, পাল ঝালো, মালো ।
নমশুদ্র,সাহা, সাধু একত্র হইল”।।
–এ হলো ভাগ করে শাসন -শোষণ করার ব্রাহ্মণ্যবদিী অপকৌশলের বিরুদ্ধে ঐক্যের জন্য তার উদাত্ত অহ্বান । যে ডাকে মানুষ অভাবিত সাড়া দিলেন ।–সময়ের বিচারে যা প্রায় অসম্ভবকে সম্ভব করার সামিল ।

Comments