“মতুয়া ধর্ম এক ধর্ম বিপ্লব”- সুকৃতি রঞ্জন বিশ্বাস পৃষ্ঠা নং-৪২/৪৩ থেকে।
মতুয়ারা হরি-গুরুচাঁদের অলৌকিক ক্ষমতা নিয়ে খুবই গর্বিত ।অতি অসাধারণ
মানুষের কোন গুণ নিয়ে কারুর সন্দেহ প্রকাশ করা মানায় না । ইন্দ্রিয় ও
যুক্তি গ্রাহ্য যে অসীম গুণের অধিকারি হরি-গুরুচাঁদ, তাতে ওদের মহিমা
বৃদ্ধির জন্য আর কোন অলৌকিক ঘটনা প্রচারের প্রয়োজন পড়ে না ।কিন্তু বাস্তবত সকল মতুয়ারা , মতুয়াধর্মকে গার্হস্থ্য জীবন গঠনে হরি-গুরুচাঁদের অবিস্মরণীয় অবদানের থেকে অলৌকিক ঘটনা গুলিকে কেন এত বেশি গুরুত্ব দেন, তা বোঝা মুশকিল !
তবে এই ভুল ঝোঁকের জন্য শ্রীশ্রীহরি লীলামৃত ও শ্রীশ্রী গুরুচাঁদ চরিত গ্রন্থ দুটির কিছু প্রভাবও অস্বীকার করা যায় না । তবে আমার ধারণা-গ্রন্থ দুটির বক্তব্যেরর সারমর্ম ঠিকমত উপলব্ধি করতে না পারার কারণেই এই সব বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে ।
যেমন নীচের লাইনগুলির কথাই ধরুন-
যারে ব্রজ, আমি তোরে দিনু এই নড়ি ।
ওঠ বলে বলদেরে মার গিয়া বাড়ি ।
হুংকার করিয়া ব্রজ করি হরি ধ্বনি ।
বলদের পৃষ্ঠে বাড়ি মারিল অমনি ।।
ওঠ ওঠ ওরে গরু রলি কেন শুয়ে ?
অমনি উঠিয়া গরু গেল দৌঁড়াইয়ে ।।
-এ জাতীয় বেশ কিছু ঘটনার উল্লেখ আছে ঐ গ্রন্থ দু’টিতে ।
মতুয়ারা যেহেতু গ্রন্থ দুটিকে ‘ধর্ম গ্রন্থ’ হিসাবে মানেন, তাই তারা
গ্রন্থের এসব কথা বিশ্বাস করেন ।
বিশ্বাস এবং যুক্তি—শব্দ দু’টি সমার্থক নয় । বিশ্বাসের ভিত্তিতে সব সময়
যুক্তি ও সত্য নাও থাকতে পারে ।হরিচাঁদ ঠাকুর মৃতপ্রায় বলদটিকে যে সুস্থ
করে তুলেছিলেন, একথা নিশ্চয়ই মিথ্যা নয় । কিন্তু তার থেকে এমন ধারণা গড়ে
নেওয়া ঠিক নয় যে , হরিচাঁদ মৃত দেহে প্রাণ সঞ্চার করতেন । তিনি তা পারতেন
কি পারতেন না – প্রশ্ন তা নয় । মৃতদেহে প্রান সঞ্চার প্রকৃতি বিরোধী ।
হরি-গুরুচাঁদ প্রকুতির সন্তান। প্রকৃতির বা সৃষ্টির সাবলীল স্রোত বহমান
রাখতেই তিনি গার্হস্থ্য ধর্ম প্রবর্তন করেন এবং সন্ন্যাস,বানপ্রস্থ-এসব
কৃত্রিমতাকে অস্বীকার করেন । হরিচাঁদ বলেছেন-
তুই ত বিশ্বাস, আমি বড় অবিশ্বাস ।
তন্ত্র-মন্ত্রে শৌচাচারে না হয় বিশ্বাস ।।
কেনবা আসিলি বাছা আমার নিকটে ।
তুই শুদ্ধাচারী , শৌচ মোর নাই মোটে ।।
তিন বেলা সন্ধ্যা কর আরো স্নানাহ্নিক ।
স্নান পূজা সন্ধ্যাহ্নিক মোর নাহি ঠিক ।।
কুকুরের উচ্ছিষ্ট প্রসাদ পেলে খাই ।
বেদ-বিধি শৌচাচার নাহি মানি তাই ।।
-এখানে আমরা একান্ত বাস্তববাদী বা বস্তুবাদী হরিচাঁদকে পাই
লীলামৃতের বাণী অমোঘ ,সত্য । প্রকৃতির অমৃত রসে লীলামৃত
ভরপুর । প্রকৃতির নানা জটিল রূপ ও খেলা হরি-গুরুচাঁদ আত্মস্থ করতে
পেরেছিলেন । জন্ম মৃত্যু হলো প্রকৃতির সনাতন রীতি । তাই , তারা কখনও
প্রাকৃতিক নিয়মের বিপরীতে কাজ করবেন না-এটাই ধরে নেওয়া যায ।
————-হরি-গুরুচাঁদ মানুষ ছিলেন । মহামানব । মানুষের ঘরে জন্ম এবং রক্ত মাংসের মানুষ । জন্ম ও মুত্যু ঘেরা মানুষ ।
Comments
Post a Comment